“আমি অবশ্যই মানুষ সৃষ্টি করেছি কষ্টে থাকার জন্য (তারা যাতে কষ্ট সহ্য করে পরিশ্রম ও নেক আমল করে) (৯০-সূরা আল বালাদঃ আয়াত-৪)

ইমাম আহমদ ইবনে হাস্কল (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “কখন বিশ্রাম পাওয়া যাবে?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “তুমি যখন জান্নাতে পা রাখবে তখন তুমি বিশ্রাম পাবে।”

জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত স্থায়ী প্রকৃতির কোন বিশ্রামও নেই, কোন শান্তিও (স্বস্তিও) নেই। এ জীবন সমস্যা, ফেতনা-ফাসাদ, রোগ-শোক ও দুশ্চিন্তায় ভরা।

আমার এক নাইজেরিয়ার সহকর্ম (সহপাঠি) আমাকে বলেছেন যে, সে যখন শিশু ছিল তখন তার মা তাকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সালাত পড়ার জন্য জাগিয়ে দিত। তখন সে বলত, “মা, আমি আরেকটু বিশ্রাম করতে চাই।” তার মা তখন বলত, “শুধুমাত্র তোমার আরামের খাতিরেই আমি তোমাকে জাগাচ্ছি, বাবা, তুমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তুমি পরম শান্তি পাবে।”

মাসরূক নামে ইসলামের প্রাথমিক জাতির একজন আলেম সেজদায় গিয়ে এত সময় থাকতেন যে তার ঘুম এসে পড়ত। একবার এমন ঘটনার সময় তাঁর এক সঙ্গী তাকে বললেন, “খানিক বিশ্রাম করুন” তিনি উত্তর দিলেন, “আমি তো বিশ্রামই খুঁজছি।”

বাধ্যতামূলক (ফরজ, ওয়াজিব) সালাত বাদ দিয়ে যারা এ দুনিয়ায় শান্তি তালাশ করে তারা শুধুমাত্র ত্বরিত শাস্তির ব্যবস্থা করছে। অবিশ্বাসী (কাফের) এখানে (এ দুনিয়াতে) তার পূর্ণ শান্তি চায়, একারণেই সে বলে-

وَقَالُوا رَبَّنَا عَجِّل لَّنَا قِطَّنَا قَبْلَ يَوْمِ الْحِسَابِ

হে আমাদের প্রতিপালক বিচার দিবসের পূর্বেই আমাদেরকে আমাদের প্রাপ্য দিয়ে দিন।” (৩৮-সূরা ছোয়াদঃ আয়াত-১৬)

আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ ক্বিত্তানা (قطنا) অর্থ হলো আমাদের ভালো-মন্দ কাজের নথিপত্র অর্থাৎ আমাদেরকে বিচার দিবসের আগেই আমাদের ভালো-মন্দ কাজের নথিপত্র দিয়ে দিন যাতে আমরা তা দেখতে পারি। কোন কোন আলেম কিত্তানার ব্যাখ্যা করেছেন, “আমাদের ভালো অংশ এবং আমাদের রিযিকের অংশ বিচার দিবসের পূর্বেই আমাদেরকে দিয়ে দিন।”

“নিশ্চয় এরা (এই কাফেররা) এ দুনিয়ার জীবনকে ভালোবাসে এবং তাদের পিছনে রেখে দেয় এক গুরুভার দিনকে।” (৭৬-সূরা দাহর বা ইনসানঃ আয়াত-২৭)

তারা আগামীকাল বা ভবিষ্যতের কথা ভাবে না। আর এ কারণেই তারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাই হারায়। এ জীবন সদা পরিবর্তনশীল তরল পদার্থের মতো (আসলে দ্রুত বিলীয়মান তরল পদার্থের মতো); এ জীবন একদিন শান্তির ও বড়লোকির (ধনাঢ্যতার) আরেক দিন কষ্টের ও অভাবের (দরিদ্রতার)। এটাই এ দুনিয়ার সার কথা।

ثُمَّ رُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ أَلَا لَهُ الْحُكْمُ وَهُوَ أَسْرَعُ الْحَاسِبِينَ

“অতঃপর তাদেরকে তাদের সত্যিকার প্রভুর নিকট ফিরিয়ে আনা হবে। জেনে রাখ! বিচার করার অধিকার তারই। আর তিনি সর্বাপেক্ষা ত্বরিত হিসাব গ্রহণকারী।” (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-৬২)