“মু’মিন তো শুধুমাত্র তারাই যারা আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি প্রতি বিশ্বাস (ঈমান) রাখে অতঃপর সন্দেহ করে না।” (৪৯-সূরা আল হুজরাতঃ আয়াত-১৫)
অন্যদের সম্পর্কে (অর্থাৎ মুনাফিকদের সম্বন্ধে) বলা হয়েছেঃ
“অতএব তারা তাদের সন্দেহে দোদুল্যমান।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-৪৫)
একলোক চার বছর যাবৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে, সে তার অসভ্য ও ঝগড়াটে স্ত্রীকে তালাক দিবে কি না, অবশেষে সে উপদেশ চাওয়ার জন্য একজন জ্ঞানী লোকের নিকট গেল। জ্ঞানী লোকটি তাকে জিজ্ঞেস করল যে,
কতদিন যাবৎ সে তাকে (ঐ মহিলাকে) বিয়ে করেছে, আর লোকটি উত্তর দিল- “চার বছর”। জ্ঞানী লোকটি বিস্মিত হয়ে বলল, “এখন পর্যন্ত চার বছর যাবৎ তুমি বিষপান করে আসছ!”
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পূর্বোক্ত গল্পের সদৃশ অবস্থাতেই ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কখন পর্যন্ত? (উত্তর) যে অবস্থায় আমরা বলি, যথেষ্ট হয়েছে (সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হয়)। একজন সচেতন মানুষের ভালো ধারণা আছে যে, এ ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা ভালো না মন্দ, এবং তখন সে পদক্ষেপ নেয়।
সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মানুষকে বিভিন্ন অবস্থায় আক্রমণ করে। কিন্তু বিশেষ করে নিম্নোক্ত চার অবস্থায়-
১. গুরুত্বপূর্ণ পড়াশুনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে; যে ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিতে দুর্বল কোন বিভাগে (তাকে) ভর্তি হতে হবে সে বিষয়ে সে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কেউ কেউ রেজিষ্ট্রেশনের সময় পার হয়ে যাবার পরও সিদ্ধান্তহীন থাকে। আবার কেউ কেউ কোন বিভাগে দু’ এক বছর পড়ার পর অন্য বিভাগে বদলী (ট্রান্সফার) হয়ে যায়; (যেমন) প্রথমে তারা ইসলামিক স্টাডিজের দিকে ঝুঁকে পড়বে, তারপর অর্থনীতির দিকে, তারপর চিকিৎসা বিদ্যার দিকে।
এ ঢংয়ে ধীরে ধীরে তারা তাদের জীবনকে শেষ করে দেয়।
একই ব্যক্তি যদি অন্যান্য জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করত এবং আল্লাহর নিকট সঠিক পথ প্রার্থনা করত তবে সে তার সময়কে উত্তমরূপে কাজে লাগাতে পারত।
২. যথাযথ কাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। কিছু লোক তাদের ধাতের সাথে সর্বাপেক্ষা মানানসই (তাদের মেজাজের সাথে সবচেয়ে বেশি খাপ খায় এমন) কাজকে নির্ধারণ করতে পারে না। তারা এ কাজ ছেড়ে সে কাজ ধরে, সর্বদা আগের কাজের প্রতি অতৃপ্ত থাকে। অবশেষে তারা ব্যবসাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ধরনের অস্থির সংকল্প প্রায়ই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যায়।
এমন লোকদেরকে আমি বলি, “আপনি যে কাজ করছেন এতে যদি আপনি স্বস্তির সাথে টাকা রোজগার করতে থাকেন তবে আপনার উচিত এ কাজে লেগে থাকা।”
৩. বিয়ের ব্যাপারেঃ তাদের সঙ্গী নির্বাচন করা কঠিন দেখে অনেক লোকই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। এ ব্যাপারে কেউ সহজেই অন্যদের মতামতে প্রভাবিত হতে পারে, মাঝে মাঝে পিতা হয়ত কোন মেয়েকে (ছেলের) বিয়ের যোগ্য মনে করেন অথচ মাতা আপত্তি তোলেন। (স্ত্রী নির্বাচনের দৃশ্য সীমাহীন।)
বিশেষ করে বিয়ের ব্যাপারে আমার উপদেশ হলো- যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি মেয়ের ধর্ম, রূপ ও চরিত্র সম্বন্ধে সন্তুষ্ট হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার অপেক্ষা করা উচিত। কেননা, বিয়ের ব্যাপারে (কথা বলার অর্থ হলো) আমরা একটি মহিলার জীবনের ব্যাপারে কথা বলছি- এমন কোন তুচ্ছ বিষয়ের কথা বলছি না যাকে বিরক্ত হলেই ছুড়ে ফেলা যায়।
৪. দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও স্থির সংকল্পের অভাব সাধারণত সেসব লোকের মাঝে দেখা দেয় যারা তালাকের কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। স্বামী হয়ত একদিন সিদ্ধান্ত নিল যে, বিচ্ছেদই ভালো, আরেক দিন সিদ্ধান্ত নেয় সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এ ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ফলে জীবনে যে অশান্তির সৃষ্টি হয় তা স্থীর সংকল্পের মাধ্যমে সারাতে হবে। জীবন সংক্ষিপ্ত, তাই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে সুখী করার জন্য আমাদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করা উচিত। (আমাদের নিজেদের জীবনকে সুখী করার জন্য এবং আমাদের প্রতিবেশীদের জীবনকেও সুখী করার জন্য আমাদের চেষ্টা করা উচিত।)