ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ বলেছেন- “যখন আমি একটি ধর্মীয় বিষয় বুঝতে পারছিলাম না তখন অবিলম্বে আমি কম-বেশি এক হাজার বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। তখন আল্লাহ আমাকে তা বুঝার তাওকীক (বা ক্ষমতা) দান করলেন।
“আমি তাই (তাদেরকে) বললাম: “তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহা ক্ষমাশীল। (তাহলে) তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।” (৭০-সূরা আল মাআরিজঃ আয়াত-১০-১১)
মনের ভিতরে শান্তি পাওয়ার একটি পথ হলো সর্বদা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। ঈমানদার যদি কোন পাপ করে পরে অনুতাপ সহকারে তার প্রভুর নিকট তাওবা করে তবে সে পাপই পুণ্যে বা সওয়াবে পরিণত হয়।
মুসনাদে আহমদে একটি হাদীস আছে। তাতে বলা হয়েছে- “আল্লাহ তার বান্দার জন্য যাই করেন না কেন তা তার ভালোর জন্য করেন।”
এ হাদীস সম্বন্ধে ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “পাপ কি তার ভালোর জন্য?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ, যদি পাপ করার পর তওবা, অনুশোচনা, অনুতাপ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়ে থাকে।”
“যখন তারা আপনার নিকট আসল যদিও তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল- ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, তখন তারা আল্লাহকে অবশ্যই পাপ ক্ষমাকারী ও দয়ালু হিসেবে পেল।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত ৪)
وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ
এবং দিনসমূহও অনুরূপ (ভালো ও মন্দ) আমি পর্যায়ক্রমে মানুষের মাঝে ওগুলোকে আবর্তন করি।” (৩-সূরা আলে ইমরান : আয়াত-১৪০)
“সেদিন তাদের মনে হবে, তারা যেন (পৃথিবীতে) শুধুমাত্র এক সন্ধ্যা বা এক সকাল অবস্থান করেছিল।” (৭৯-সূরা আন নাযিআত: আয়াত ৪৬)
আমি কতিপয় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে যখন ভাবি তখন আশ্চর্যবোধ করি। যদিও তারা সংকটের মুখে পড়েছেন তবুও তাদের কাছে সে সংকট যেন পানির ফোটার মতো স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এই অভিজাত সম্প্রদায়ের একেবারে পুরোভাগে রয়েছেন সৃষ্টির নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আবু বকর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে তিনি গুহাতে ছিলেন আর তখন তার শক্ররা কাছেই ছিল তবুও তিনি (বিচলিত না হয়ে) তার সাথীকে বললেন: “হতাশ হবেন না (বা ভয় করবেন না), নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪০)
بشرى من الغيب ألقت في فم الغار
وحيـا وأفضـت إلـى الدنيـا بأسـرار
“গুহার মুখে গায়েব হতে ওহী আকারে সুসংবাদ এলো এবং সারা জাহানে সুখের ঢল বয়ে গেল।”
বদরের যুদ্ধের ঠিক আগ মুহুর্তে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাগ্রহে তার বর্ম পরিধান করে নিলেন আর তখন বলতে ছিলেন-
سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ
“এই দলতো অচিরেই পরাজিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে (পালিয়ে) যাবে।” (৫৪-সূরা আল ক্বামার: আয়াত-৪৫)
ওহুদের যুদ্ধে তার কিছু সাহাবী শহীদ ও কিছু সাহাবী আহত হওয়ার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: “তোমরা আমার পিছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়াও যাতে আমি আমার প্রভুর প্রশংসা করতে পারি।” একজন নবীর প্রতিজ্ঞা ও ইচ্ছা শক্তি এমনই ছিল যা পাহাড়-পর্বতকেও কাঁপিয়ে দিতে পারত।
আরবদের মাঝে ক্বায়েস ইবনে আসিম আল-মানক্বারি তার ধৈর্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। একদা তিনি তার কতিপয় সঙ্গীদের নিকট একটি গল্প বলতে ছিলেন। এমন সময় একটি লোক এসে কায়েসকে বলল: অমুকের পুত্র আপনার পুত্রকে হত্যা করে ফেলেছে।” কায়েস তার গল্পকে সংক্ষিপ্ত না করে বরং শান্তভাবে তা বর্ণনা করে শেষ করলেন। তারপর তিনি বললেন, “আমার ছেলেকে গোসল দাও, তাকে কাফনের কাপড় পরাও এবং আমাকে তার জানাজার সালাত পড়তে দাও।”
وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ
“এবং তারা যারা অভাব-অনটনে, রোগ-শোক-দুঃখ-কষ্ট ও সংকটে এবং যুদ্ধের সময় ধৈর্যশীল।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৭৭)
মৃত্যুর সময়ে ইকরিমা ইবনে আবু জেহেল (রাঃ)-কে পানি পান করতে দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, “অমুক অমুককে পানি দাও।” সেখানে (এক যুদ্ধের ময়দানে) অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত ছিল এবং প্রত্যেককেই এভাবে পানি দেয়া হয়েছিল এবং প্রত্যেকেই পানি পান না করে বরং অন্যের কথা বলেছিল। আর এরকম আশ্চর্যজনক ভ্রাতৃত্ব দেখিয়ে সকলেই ইন্তেকাল করেছিল।