নিদ্রা আল্লাহর দেওয়া মানুষের জন্য একটি বড় নিয়ামত। মহান আল্লাহ বলেন,
وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا
অর্থাৎ, তোমাদের নিদ্রা দিয়েছি বিশ্রামের জন্য। (সূরা নাবাঃ ৯ আয়াত)
মহান আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে নিদ্রা অন্যতম নিদর্শন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاؤُكُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَسْمَعُون
অর্থাৎ, তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন হল, রাত্রে ও দিবাভাগে তোমাদের নিদ্রা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ। (সূরা রূম ২৩ আয়াত)
ঘুমের এই স্বাদ ঘুমের আগে, পরে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় অনুভূত হয়। ঘুমের মাঝেই মানুষ তার কর্মশক্তি পুনরায় নতুন ও সতেজভাবে ফিরিয়ে পায়।
ঘুম হল মৃত্যুর ভাই। তাই ঘুমের আগে এমন কিছু পালনীয় আদব আছে, যা পালন করলে মানুষ নিরাপদে রাত্রিযাপন করতে পারে। সেই সকল আদব নিম্নরূপঃ
শোয়ার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বাড়ির দরজাসমূহ বন্ধ করে দিন। এতে আপনার জন্য পর্দা এবং শয়তান ও মানুষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হবে।
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘সন্ধ্যা হলে শিশুদেরকে বাইরে ছেড়ো না। কারণ ঐ সময় শয়তানদল ছড়িয়ে পরে। রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। (শয়নকালে) সমস্ত দরজা অর্গলবদ্ধ কর এবং (সেই সাথে) আল্লাহর নামের স্মরণ নাও। আর আল্লাহর নামের স্মরণ নিয়ে বিভিন্ন (পাত্র-আধার ও) বাসনাদি ঢেকে রাখ। ঢাকার কিছু না থাকলে অন্ততপক্ষে একটি কাষ্টখন্ড (বা অন্য কিছু) দ্বারা ঢাকো। আর (বিশেষ করে তৈল-জ্বালিত) বাতিসমূদয় নির্বাপিত কর।’’[1] কারণ, শয়তান বন্ধ দরজা খুলে না, কোন আবৃত পাত্রও খুলে না এবং ইঁদুর (তৈল জ্বালিত প্রদীপ দ্বারা) গৃহবাসীর উপর তাদের গৃহ জ্বালিয়ে দেয়।’’[2]
(শীতের রাতে ধুনি অথবা বাতি জ্বালিয়ে রেখে অথবা উননে বা গোয়ালে ধুঁয়া দিয়ে) ‘‘তোমরা ঘুমাবার সময় আগুন ছেড়ে রেখো না।’’[3]
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/২০১২, ৬২৫৯
[3]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৬২৯৩, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৫ প্রমুখ
বিছানায় যাওয়ার আগে ওযূ করে নেওয়া মুস্তাহাব। এ কাজের ফযীলত রয়েছে বিরাট। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ওযু অবস্থায় রাত্রি যাপন করে তার অন্তর্বাসে এক ফিরিশ্তাও রাত্রিযাপন করেন। সুতরাং যখনই সে জাগ্রত হয় তখনই ঐ ফিরিশ্তা বলেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার বান্দা অমুককে ক্ষমা করে দাও, কারণ সে ওযু অবস্থায় রাত্রি যাপন করেছে।’’[1]
তিনি আরো বলেন, যে কোনও মুসলিম যখনই ওযু অবস্থায় রাত্রিযাপন করে, অতঃপর রাত্রিতে (সবাক্) জেগে উঠে ইহকাল ও পরকাল বিষয়ক কোন মঙ্গল প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তাকে তা প্রদান করে থাকেন।’’[2]
অবশ্য আগে ওযূ থাকলে এবং তা নবায়ন না করলেও ঐ ফযীলত পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া ওযূ অবস্থায় ঘুমালে শয়তানের তামাশা থেকে নিরাপত্তা লাভ করা সম্ভব হবে।
[2]. আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সহীহ তারগীব ৫৯৫
বিছানায় গিয়ে বিছানা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিন। বিছানা তুলে ঝাড়াই উত্তম। যেহেতু বিছানা বা তার চাদরের নিচে সাপ-বিছা বা অন্য কোন পোকা-মাকড় থাকলে তাও দূর হয়ে যাবে। আল্লাহর নবী (ﷺ) উম্মতকে সেই নির্দেশই দিয়েছেন।[1]
বিছানায় দেহ রেখে ডান কাতে শুয়ে যান এবং ডান গালকে ডান হাতের উপর রাখেন। মহানবী (ﷺ) নিজে এই আমল করেছেন এবং উম্মতকে করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[1] যেহেতু এইভাবে শোওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ফলপ্রসূ।
এরপর আয়াতুল কুরসী পড়ুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে দেহরক্ষী পাবেন এবং রাতে আপনার কাছে শয়তান আসবে না।[1]
সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করুন।মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাত্রে সূরা বাক্বারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য সকল বস্ত্তর অনিষ্ট হতে ঐ দুটিই যথেষ্ট করবে।’’[1]
কোন কোন বর্ণনায় আছে, ঐ দুই আয়াত বাড়িতে তিন রাত পাঠ করলে শয়তান সে বাড়ির নিকটবর্তী হবে না অথবা তা (একবার) পাঠ করলে তিন রাত শয়তান সে বাড়ির নিকটবর্তী হবে না।[2]
[2]. সহীহ তারগীব ১৪৬৭
দুই হাত একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিয়ে, সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পড়ে যথাসম্ভব সারা দেহে বুলিয়ে নিন। এমনটি ৩ বার করতে হয়।[1]
অবশিষ্ট আরো দু‘আ ‘দু‘আ ও জিকির’ পুস্তিকায় দেখে নিন।
এই হল ঘর বন্ধ করার আসল পদ্ধতি। অন্যথা ভাড়াটিয়া ওঝা এনে কয়েক ঘন্টার মত কুরআন অথবা মন্ত্র পড়ে ঘরের চার কোণে শির্কী মাটির ভাঁড় পুঁতে, বাঁশের ডগায় আয়না বেঁধে, দরজায় দরজায় শির্কী তাবীয চিটিয়ে ঘর বন্ধ হয় না। বরং তাতে শয়তানের জন্য যাতায়াতের দরজা বেশী করে খোলা যায়।
প্রকাশ থাকে যে, রাতে সূরা ওয়াক্বিআহ পাঠ করার বা তা পাঠ করলে উপোস বা অভাব স্পর্শ না করার হাদীস সহীহ নয়।
সম্ভব হলে ঘুমাবার আগে সূরা মুল্ক, সাজদাহ, বানী ইসরাঈল, যুমার এবং আদিতে তাসবিহবিশিষ্ট সূরা পাঠ করুন।
সম্ভব হলে কোন ঘরে একাকী শোবেন না। কারণ মহানবী (ﷺ) একাকী রাত্রিবাস ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।[1]