প্রত্যেক ওযূর আগে, ওযূ না করলেও নামাযের আগে, কুরআন তিলাওয়াতের আগে, ঘুম থেকে জেগে উঠে, বাইরে থেকে স্বগৃহে প্রবেশ করে, মুখ দুর্গন্ধময় অথবা দাঁত হলুদবর্ণ হলে দাঁতন করা সুন্নাত।
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘আমি উম্মতের জন্য কষ্টকর না জানলে এশার নামাযকে দেরী করে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাযের সময় দাঁতন করতে আদেশ দিতাম।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর না জানলে (প্রত্যেক) ওযুর সাথে দাঁতন করা ফরয করতাম এবং এশার নামায অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তাম।’’[2]
তাই সাহাবী যায়েদ বিন খালেদ জুহানী (রাঃ) মসজিদে নামায পড়তে হাজির হতেন, আর তাঁর দাঁতনকে কলমের মত তাঁর কানে গুঁজে রাখতেন। নামাযে দাঁড়াবার সময় তিনি দাঁতন করে পুনরায় কানে গুঁজে নিতেন।[3]
মুসলিমের প্রকৃতিগত কর্মসমূহের একটি হল, মিসওয়াক করে মুখ সাফ করা।[4]
বিশেষ করে জুমআর দিন গোসল ও দাঁতন করা এবং আতর ব্যবহার করা কর্তব্য।[5]
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘জিবরীল (আঃ) আমাকে (এত বেশী) দাঁতন করতে আদেশ করেছেন, যাতে আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’’[6] অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘‘---এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে।’’[7]
বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র তিনি প্রথম যে কাজ করতেন, তা হল দাঁতন।[8] তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলেই তিনি দাঁতন করে দাঁত মাজতেন।[9] আবার রাত্রের অন্যান্য সময়েও যখন জেগে উঠতেন, তখন মিসওয়াক করতেন।[10] আর এই জন্যই রাত্রে শোবার সময় শিথানে দাঁতন রেখে নিতেন।[11]
তিনি বলেন, ‘‘দাঁতন করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা এবং প্রতিপালক আল্লাহর সন্তুষ্টি। [12]
একদা হযরত আলী (রাঃ) দাঁতন আনতে আদেশ করে বললেন, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘বান্দা যখন নামায পড়তে দণ্ডায়মান হয় তখন ফিরিশ্তা তার পিছনে দণ্ডায়মান হয়ে তার ক্বিরাআত শুনতে থাকেন। ফিরিশ্তা তার নিকটবর্তী হন; পরিশেষে তিনি নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন! ফলে তার মুখ হতে কুরআনের যেটুকুই অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফিরিশ্তার পেটে প্রবেশ করে যায়। সুতরাং কুরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর।’’[13]
তিনি বলেন, ‘‘মিসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর। কারণ, মুখ হল কুরআনের পথ।’’[14]
১। দাঁতন করা বিধেয় দিবারাত্রির যে কোন সময়। এমনকি রোযার দিনেও সকালে-বিকালে যে কোন সময় দাঁতন করা বিধেয়।
২। একটি দাঁতন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ব্যবহার করতে পারে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) মিসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মিসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’[15]
তাঁর নিকট মিসওয়াকের এত গুরুত্ব ছিল যে, তিরোধানের পূর্ব মুহূর্তেও তিনি হযরত আয়েশার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে নিজে দাঁতন করেছেন।[16]
৩। দাঁতন করুন ভিজে বা শুকনা গাছের ডাল বা শিকড় দিয়ে। তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন করতেন।[17]
আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মাজা যায়। তবে এটা সুন্নাত কি না বা এতেও ঐ সওয়াব অর্জন হবে কি না, সে ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস মিলে না। হাফেয ইবনে হাজার (রঃ) তালখীসে (১/৭০) এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এগুলির চেয়ে মুসনাদে আহমাদে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি অধিকতর সহীহ।’ কিন্তু সে হাদীসটিরও সনদ যয়ীফ।[18]
৪। আপনার ডান চোয়ালের দাঁত থেকে দাঁতন ঘষতে শুরু করুন। এটাই হল সুন্নাত।
৫। দাঁতন করার সময় কোন দু‘আ নেই। দাঁতন আধ হাতের বেশী লম্বা হলে তার উপর শয়তান চাপে ধারণা অমূলক।
হেঁটে হেঁটে দাঁতন করলে পরিবারে ও জীবনে অশান্তি নেমে আসে ধারণা করা একটি বিদআত।
[2]. হাকেম, বাইহাক্বী, সহীহুল জা’মে হা/৫৩১৯
[3]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৩৯০
[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৯
[5]. আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৪১৭৮
[6]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৫৫৬
[7]. সহীহুল জা’মে হা/১৩৭৬
[8] (মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৭
[9]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৮
[10] (সহীহুল জা’মে হা/৪৮৫৩
[11] (ঐ ৪৮৭২
[12]. আহমাদ, দারেমী, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিববান, বুখারীঃ বিনা সনদে, মিশকাত হা/ ৩৮১
[13]. বায্যার, সহীহ তারগীব ২১০
[14]. বায্যার, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১২১৩
[15]. আবূ দাঊদ, মিশকাত হা/ ৩৮৪
[16]. বুখারী, মিশকাত হা/ ৫৯৫৯
[17]. আহমাদ, ইরওয়াউল গালীল ১/১০৪
[18]. মুসনাদে আহমাদ, তাহক্বীক্ব আহমাদ শাকের ১৩৫৫
জিভ পরিষ্কার রাখাও মুসলিমের পরিচ্ছন্নতার একটি কর্তব্য। রাসুল (ﷺ) দাঁতনের সাহায্যেই নিজের জিভ মেজে পরিষ্কার করতেন এবং সেই সময় তাঁর মুখে বমি করার মত শব্দ হত।[1]
মুসলিমের গলার আওয়াজ হবে মিষ্টি ও বিনত। মু’মিন কর্কশভাষী হয় না।
গলার লেবাস হিসাবে গলাবন্ধ (কম্ফর্টার) বা মাফলার ব্যবহার অবৈধ নয়। তবে টাই ব্যবহার বৈধ নয়। যেহেতু তা বিজাতির বিশেষ প্রতীক।
বুকের লোম তোলা বৈধ। যেমন পিঠ বা জাঙ্গের লোম তুলে ফেলা অবৈধ নয়।[1]
বগলের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও ইসলাম মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। অতএব বগলের গন্ধে যাতে অন্য কেউ কষ্ট না পায়, তার খেয়াল রাখা উচিত প্রত্যেক মুসলিমের। যেমন বগলের লোম তুলে বা ছিঁড়ে ফেলা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত। এই সুন্নাত পালন করেও পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা সকলের কর্তব্য।
প্রকাশ থাকে যে, সুন্নাত হল বগলের লোম তুলে বা ছিঁড়ে ফেলা। অবশ্য তা কষ্টকর হলে কেটে, চেঁছে বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ফেলা বৈধ।[1]
পুরুষের জন্য কোন সময় হাত-পায়ে কোন রঙ ব্যবহার করা বৈধ নয়; বিবাহের সময়ও নয়। কারণ রঙ হল মহিলার জন্য।
উল্লেখ্য যে, বিবাহের সময় পুরুষের হাতে মেহেদী লাগানো মহিলাদেরই সাদৃশ্য অবলম্বন।
সৌন্দর্যের জন্য নয়; বরং টাইম দেখার জন্য হাতে ঘড়ি বাঁধা বৈধ। যে হাতে ঘড়ি নিরাপদে থাকবে এবং ঝাঁকুনি কম লাগবে সেই হাতে বেঁধে রাখা দোষাবহ নয়। যেহেতু রসূল (ﷺ) এর যুগে ঘড়ি ছিল না, সেহেতু তা ডান হাতে বাঁধা সুন্নাত -এ কথা বলা যায় না।
সতর্কতার বিষয় যে, যে ঘড়ি আংশিক অথবা পূর্ণরূপে সোনার তৈরী (তা পুরুষের জন্য) এবং যে ঘড়িতে কোন বিজাতির প্রতীক অথবা মূর্তি থাকে সে ঘড়ি ব্যবহার করা বৈধ নয়।
আঙ্গুলের গিরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইসলাম মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই সাথে আঙ্গুলে অঙ্গুরীয় বা আংটি ব্যবহারকে বৈধ করেছে। আল্লাহর রসূল (ﷺ) আংটি ব্যবহার করেছেন।[1] তাঁর আংটি ছিল রৌপ্যনির্মিত।[2] তাতে অঙ্কিত ছিল ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’। অবশ্য সে আংটি তিনি শীলমোহর স্বরূপ ব্যবহার করতেন।[3]
তিনি ডান হাতে আংটি ব্যবহার করতেন।[4] ঐ আংটি তিনি অনামিকা (কনিষ্ঠা বা কড়ে আঙ্গুলের পাশের) আঙ্গুলে পরতেন।[5] তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করতেন।[6]
জ্ঞাতব্য যে, বাম হাতেও আংটি পরা বৈধ। রাসুল (ﷺ) কখনো কখনো বাম হাতে আংটি পরেছেন।[7] হাসান-হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি ব্যবহার করতেন।[8]
প্রকাশ থাকে যে, বিজাতির অনুকরণে বিবাহের পয়গামের দিন অনুষ্ঠান করে পয়গামের আংটি পরা এবং তা প্রেমের প্রতীক ও ধারক স্বরূপ ব্যবহার করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। অনেকে ঐ আংটি আঙ্গুল থেকে খুলে ফেললে অমঙ্গলের আশঙ্কা করে। সুতরাং এরুপ ধারণা করা শিরক।
অনেকে প্রেমিকের পরানো ঐ আংটি বাম হাতে ব্যবহার করে এবং খামাখা ধারণা করে যে, বাম হাতের আঙ্গুলের শিরার সাথে নাকি সরাসরি হৃদয়ের সংযোগ আছে!!
পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা হারাম; যেমন এ কথা পূর্বেও আলোচিত হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখলেন। তিনি তার হাত হতে তা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি ইচ্ছাকৃত দোযখের আঙ্গারকে হাতে নিয়ে ব্যবহার করে?’’
অতঃপর রাসুল (ﷺ) চলে গেলে লোকটিকে বলা হল, ‘তোমার আংটিটা কুড়িয়ে নিয়ে অন্য কাজে লাগাও। (অথবা তা বিক্রয় করে মূল্যটা কাজে লাগাও।)’ কিন্তু লোকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি আর কক্ষনো তা গ্রহণ করব না, যা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।’’[9]
কথিত মতে, ‘চার আনা সোনার আংটি আঙ্গুলে রাখা বৈধ’ কথাটির দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং এক আনা বা তার চেয়ে কম সোনারও আংটি ব্যবহার পুরুষের জন্য বৈধ নয়।
বৈধ নয় লোহার আংটি ব্যবহার করাও। যেহেতু রাসুল (ﷺ) সোনা ও লোহার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।[10]
একদা এক ব্যক্তি রাসুল (ﷺ)-এর নিকট এল। তার হাতে ছিল সোনার আংটি। তা দেখে তিনি তার নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি তাঁর অপছন্দের কথা বুঝতে পেরে ফিরে গিয়ে সেটি খুলে ফেলে একটি লোহার আংটি পরে এল। রাসুল (ﷺ) তা দেখে বললেন, ‘‘এটি তো আরো খারাপ। এটি তো জাহান্নামবাসীদের অলংকার!’’ এ কথা শুনে লোকটি ফিরে গেল এবং সেটিকেও খুলে ফেলে একটি চাঁদির আংটি আঙ্গুলে নিল। তা দেখে রাসুল (ﷺ) নীরব থাকলেন।[11]
এখানে জ্ঞাতব্য যে, বিবাহের মোহরের জন্য এক সাহাবীকে তাঁর লোহার আংটি খুঁজতে বলা তা ব্যবহার বৈধ হওয়ার দলীল নয়।[12]
অষ্টধাতু-নির্মিত আংটি কোন রোগ-বালা দূরীভূত করার জন্য ব্যবহার করা শির্ক।
পাথর বসানো আংটি পরা বৈধ। কিন্তু পাথরের কোন অমূলক তাসীরের কথা বিশ্বাস করা শির্ক।
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর আংটি কিন্তু সৌন্দর্যের জন্য ছিল না। সেটি ছিল তাঁর শীলমোহর। তাই শীলমোহরযুক্ত আংটি ব্যবহার সুন্নাত। পক্ষান্তরে কেবল সৌন্দর্যের জন্য আংটি ব্যবহার করা সুন্নাত নয়, ততো অবৈধও নয়।
[2]. মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়াহ ৭৩
[3]. ঐ ৭৪
[4]. ঐ ৭৭-৮১
[5]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৭৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯২
[6]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৭৮, আবূ দাঊদ হা/৪২২৫
[7]. মুসলিম, আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৪৮৯৯
[8]. মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়াহ ৮২
[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯০
[10]. বাইহাক্বী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১২৪২
[11]. আল-আদাবুল মুফরাদ ১০২১
[12]. ফাতহুল বারী ১০/২৬৬, আদাবুয যিফাফ, আলবানী দ্রঃ
পায়ের লেবাস মোজা ও জুতা। ইসলাম মুসলিমকে জুতা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে।[1] যেহেতু জুতা পরে পথ চললে কোন সওয়ারীর উপর চড়ে থাকার মত পা নিরাপদে থাকে, পথ চলতেও আরাম লাগে। জুতা পরার আদব রয়েছে ইসলামে, যা নিম্নরূপঃ
১। জুতা (ও মোজা) পরার সময় ডান পায়েরটা আগে পরুন এবং খোলার সময় বাম পায়েরটা আগে খুলুন।
প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের যখন কেউ জুতা পরে, তখন সে যেন ডান পা থেকে শুরু করে এবং যখন খোলে, তখন সে যেন বাম পা থেকে শুরু করে। যাতে ডান পায়ের জুতা আগে পরা হয় এবং শেষে খোলা হয়।’’[2]
প্রকাশ থাকে যে, কোন হিংস্র জন্তু মোজার ভিতরে লুকিয়ে থাকতে পারে -এই আশঙ্কায় তা ঝেড়ে পরা উত্তম। তবে তা না ঝেড়ে পরা নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস সহীহ নয়।[3]
২। জুতা পরার সময় যদি হাত লাগাতে হয় অথবা তার ফিতা বাঁধতে হয়, তাহলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে বসে বসে পরুন। যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) খাড়া হয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন।[4]
৩। এক পায়ে জুতা দিয়ে পথ চলবেন না। হয়তো বা তাতে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি থাকতে পারে। অন্যের চোখে অসভ্য দেখাতে পারে। আর তা ছাড়া এক পায়ে জুতা দিয়ে চলে শয়তান। অতএব পথ চলতে একটি জুতা নষ্ট হয়ে গেলে, অপর জুতাটি পায়ে না রেখে উভয় জুতা হাতে নিয়ে পথ চলুন। এ ব্যাপারে একাধিক হাদীস রয়েছে।[5]
৪। কখনো কখনো খালি পায়েও পথ চলুন।
ফাযালাহ বিন উবাইদ যখন মিসরে (বা শামে) আমীর মুআবিয়ার নায়েব ছিলেন, তখন এক সাহাবী (মদীনা থেকে গিয়ে) তাঁকে দেখলেন, তিনি এলোমেলা বেশে অবস্থান করছেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি ব্যাপার যে, আমি আপনাকে এলোমেলা বেশে দেখছি, অথচ আপনি দেশের আমীর?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে অতিরিক্ত বিলাসিতা করতে নিষেধ করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘কিন্তু আপনার পায়ে জুতা দেখছি না কেন?’ উত্তরে ফাযালাহ বললেন, ‘যেহেতু রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে কখনো কখনো খালি পায়ে চলতে আদেশ করতেন।’[6]
বলাই বাহুল্য যে, বিশেষ করে সবুজ ঘাসের উপর চলতে আধুনিক যুগের ডাক্তারগণও উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তা মানুষের মাঝে বিনয় সৃষ্টি করে।
৫। খালি ময়দানে অথবা মাটির উপর নামায পড়লে এবং জুতা পরিষ্কার থাকলে জুতা পরেই নামায পড়ুন। অবশ্য পবিত্র হলেও কার্পেট বিছানো বা মেঝে বিশিষ্ট মসজিদের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মসজিদ নোংরা করবেন না। বরং নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে নামায পড়ুন। চুরির ভয় হলে ব্যাগে নিয়ে কাছে রেখে নামায পড়ুন।
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৫৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৭ প্রমুখ
[3]. সিলসিলাহ যয়ীফাহ হা/২৪৪০
[4]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৭১৯
[5]. আহমাদ ৯১৯৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৮, নাসাঈ হা/ ৫৩৬৯, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৫৫, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৭, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৪৮
[6]. আহমাদ ২৩৪৪৯, আবূ দাঊদ হা/৪১৬০
নখ কাটা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত। নখ ছেড়ে রাখা বৈধ নয়। মানুষ একটি সভ্য জাতি। সে জাতি এবং বিশেষ করে কোন মুসলিম অসভ্য পশুর সদৃশ হতে পারে না।
হাতের নখ কাটার সময় প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাতের নখ কাটতে হয়। পায়ের নখ কাটার সময় ডান পায়ের নখ আগে কাটতে হয়। তবে কোন আঙ্গুলের নখ আগে কাটতে হয়, তার কোন দলীল নেই। সর্বপ্রথম ডান হাতের কনিষ্ঠা, তারপর মধ্যমা, তারপর বৃদ্ধা, তারপর অনামিকা, তারপর তর্জনী, তারপর বাম হাতের বৃদ্ধা--- বলে যে পর্যায়ক্রম বর্ণনা করা হয়, তার কোন দলীল নেই। ইবনে দাক্বীক্বুল ঈদ বলেন, শরীয়তে এর কোন দলীল নেই। এইভাবে নখ কাটা মুস্তাহাব হওয়ার কথা বিশ্বাস করা জায়েয নয়। যেহেতু কোন কিছুকে মুস্তাহাব মনে করা শরয়ী বিধান। আর তা প্রমাণের জন্য দলীল জরুরী।[1]
নখ কাটার পর হাত ধোয়ায় যদি স্বাস্থ্যগত কোন উপকার থাকে, তাহলে তা করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু তা সুন্নাত বা মুস্তাহাব মনে করে করলে তারও দলীল থাকা জরুরী।
প্রকাশ থাকে যে, জিহাদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নখ লম্বা রাখা হারাম নয়।[2]
[2]. কাশশাফুল ক্বিনা’ ১/৯৪-৯৫
পুরুষের লজ্জাস্থান হল নাভি থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত। এই স্থানকে গুপ্তস্থানও বলা হয়। মানুষের জন্য সে স্থান গুপ্ত রাখা ওয়াজেব। এমনকি একাকী থাকলেও তা প্রকাশ করা বা খুলে রাখা উচিত নয়। তদনুরূপ অপরের ঐ স্থানের দিকে চেয়ে দেখা বৈধ নয়। সামনে কেউ না থাকলেও আল্লাহকে লজ্জা করা ঈমানের অন্যতম পরিচয়। অবশ্য স্ত্রীর কাছে থাকলে সে কথা আলাদা।
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘(পুরুষের) নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থান হল লজ্জাস্থান।’’[1]
উল্লেখ্য যে, নাভির উপরে কাপড় বেঁধে রাখা মুসলিমের কর্তব্য। আর উচিত নয় তার নিচে কাপড় বাঁধা।
আর ঊরুর ব্যাপারে রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তুমি তোমার ঊরু খুলে রেখো না এবং কোন জীবিত অথবা মৃতের ঊরুর দিকে তাকিয়ে দেখো না।’’[2]
অন্যত্র বলেন, ‘‘তুমি তোমার জাং ঢেকে নাও। কারণ, জাং হল লজ্জাস্থান।’’[3]
[2]. আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৭৪৪০
[3]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম, ইবনে হিববান, সহীহুল জা’মে হা/৭৯০৬