ইসলামী জীবন-ধারা দাঁত (ও অন্যান্য) পরিষ্কার করার আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
আঙ্গুল

আঙ্গুলের গিরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইসলাম মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই সাথে আঙ্গুলে অঙ্গুরীয় বা আংটি ব্যবহারকে বৈধ করেছে। আল্লাহর রসূল (ﷺ) আংটি ব্যবহার করেছেন।[1] তাঁর আংটি ছিল রৌপ্যনির্মিত।[2] তাতে অঙ্কিত ছিল ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’। অবশ্য সে আংটি তিনি শীলমোহর স্বরূপ ব্যবহার করতেন।[3]

তিনি ডান হাতে আংটি ব্যবহার করতেন।[4] ঐ আংটি তিনি অনামিকা (কনিষ্ঠা বা কড়ে আঙ্গুলের পাশের) আঙ্গুলে পরতেন।[5] তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলে আংটি পরতে নিষেধ করতেন।[6]

জ্ঞাতব্য যে, বাম হাতেও আংটি পরা বৈধ। রাসুল (ﷺ) কখনো কখনো বাম হাতে আংটি পরেছেন।[7] হাসান-হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি ব্যবহার করতেন।[8]

প্রকাশ থাকে যে, বিজাতির অনুকরণে বিবাহের পয়গামের দিন অনুষ্ঠান করে পয়গামের আংটি পরা এবং তা প্রেমের প্রতীক ও ধারক স্বরূপ ব্যবহার করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। অনেকে ঐ আংটি আঙ্গুল থেকে খুলে ফেললে অমঙ্গলের আশঙ্কা করে। সুতরাং এরুপ ধারণা করা শিরক।

অনেকে প্রেমিকের পরানো ঐ আংটি বাম হাতে ব্যবহার করে এবং খামাখা ধারণা করে যে, বাম হাতের আঙ্গুলের শিরার সাথে নাকি সরাসরি হৃদয়ের সংযোগ আছে!!

পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা হারাম; যেমন এ কথা পূর্বেও আলোচিত হয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখলেন। তিনি তার হাত হতে তা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি ইচ্ছাকৃত দোযখের আঙ্গারকে হাতে নিয়ে ব্যবহার করে?’’

অতঃপর রাসুল (ﷺ) চলে গেলে লোকটিকে বলা হল, ‘তোমার আংটিটা কুড়িয়ে নিয়ে অন্য কাজে লাগাও। (অথবা তা বিক্রয় করে মূল্যটা কাজে লাগাও।)’ কিন্তু লোকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি আর কক্ষনো তা গ্রহণ করব না, যা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।’’[9]

কথিত মতে, ‘চার আনা সোনার আংটি আঙ্গুলে রাখা বৈধ’ কথাটির দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং এক আনা বা তার চেয়ে কম সোনারও আংটি ব্যবহার পুরুষের জন্য বৈধ নয়।

বৈধ নয় লোহার আংটি ব্যবহার করাও। যেহেতু রাসুল (ﷺ) সোনা ও লোহার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।[10]

একদা এক ব্যক্তি রাসুল (ﷺ)-এর নিকট এল। তার হাতে ছিল সোনার আংটি। তা দেখে তিনি তার নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি তাঁর অপছন্দের কথা বুঝতে পেরে ফিরে গিয়ে সেটি খুলে ফেলে একটি লোহার আংটি পরে এল। রাসুল (ﷺ) তা দেখে বললেন, ‘‘এটি তো আরো খারাপ। এটি তো জাহান্নামবাসীদের অলংকার!’’ এ কথা শুনে লোকটি ফিরে গেল এবং সেটিকেও খুলে ফেলে একটি চাঁদির আংটি আঙ্গুলে নিল। তা দেখে রাসুল (ﷺ) নীরব থাকলেন।[11]

এখানে জ্ঞাতব্য যে, বিবাহের মোহরের জন্য এক সাহাবীকে তাঁর লোহার আংটি খুঁজতে বলা তা ব্যবহার বৈধ হওয়ার দলীল নয়।[12]

অষ্টধাতু-নির্মিত আংটি কোন রোগ-বালা দূরীভূত করার জন্য ব্যবহার করা শির্ক।

পাথর বসানো আংটি পরা বৈধ। কিন্তু পাথরের কোন অমূলক তাসীরের কথা বিশ্বাস করা শির্ক।

প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর আংটি কিন্তু সৌন্দর্যের জন্য ছিল না। সেটি ছিল তাঁর শীলমোহর। তাই শীলমোহরযুক্ত আংটি ব্যবহার সুন্নাত। পক্ষান্তরে কেবল সৌন্দর্যের জন্য আংটি ব্যবহার করা সুন্নাত নয়, ততো অবৈধও নয়।

[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৭৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯২ প্রমুখ

[2]. মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়াহ ৭৩

[3]. ঐ ৭৪

[4]. ঐ ৭৭-৮১

[5]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৭৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯২

[6]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৭৮, আবূ দাঊদ হা/৪২২৫

[7]. মুসলিম, আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৪৮৯৯

[8]. মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়াহ ৮২

[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯০

[10]. বাইহাক্বী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১২৪২

[11]. আল-আদাবুল মুফরাদ ১০২১

[12]. ফাতহুল বারী ১০/২৬৬, আদাবুয যিফাফ, আলবানী দ্রঃ