ইবাদাতের শির্ক কিন্তু উপরোক্ত শির্ক অপেক্ষা সামান্যটুকু গৌণ। তম্মধ্যে কিছু রয়েছে ক্ষমার অযোগ্য। আবার কিছু কিছু রয়েছে ক্ষমাযোগ্য। কারণ, তা প্রকাশ পায় এমন ব্যক্তি থেকে যিনি বিশ্বাস করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবূদ নেই। তিনি ছাড়া কেউ কারোর কোন ক্ষতি বা লাভ করতে পারে না। কিছু দিতে বা বঞ্চিত করতে পারে না। তিনিই একমাত্র প্রভু। তিনি ভিন্ন অন্য কোন প্রতিপালক নেই। তবে তার সমস্যা এই যে, সে ব্যক্তি ইবাদাত করতে গেলে একনিষ্ঠার সাথে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য করে না। বরং তা কখনো কখনো নিজের সুবিধার জন্যে, আবার কখনো কখনো দুনিয়া কামানোর জন্যে, আবার কখনো কখনো সমাজের নিকট নিজ পজিশন, সম্মান ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য করে থাকে। সুতরাং তার ইবাদাতের কিয়দংশ আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য, আবার কিছু নিজ নফ্স ও প্রবৃত্তির জন্য, আবার কিছু অংশ শয়তানের জন্য, আবার কিছু মানুষের জন্যও হয়ে থাকে।
মুসলিমদের মধ্যকার অধিকাংশ মানুষই উক্ত শির্কে নিমগ্ন এবং এ শির্ক সম্পর্কেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
الشِّرْكُ فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَخْفَى مِنْ دَبِيْبِ النَّمْلَةِ، قَالُوْا: كَيْفَ نَنْجُوْ مِنْهُ يَا رَسُوْلَ الله! قَالَ: قُلِ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ.
‘‘শির্ক এ উম্মতের মধ্যে লুক্কায়িত বা অস্পষ্ট যেমন লুক্কায়িত বা অস্পষ্ট পিপীলিকার চলন। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! তবে আমরা কিভাবে তা থেকে বাঁচতে পারি? তিনি বললেন: তুমি বলবে: হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি জেনেবুঝে শির্ক করা থেকে। তেমনিভাবে আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি আমার অজানা শির্ক থেকে’’। (আহমাদ : ৪/৪০৩ সা’হী’হুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৭৩১)
যেমন: কোন আমল কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা শির্ক।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوْحَى إِلَيَّ، أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ، فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَآءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا، وَلَا يُشْرِكُ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا»
‘‘হে নবী! তুমি বলে দাও: আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ মাত্র। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, নিশ্চয়ই তোমাদের মা’বূদই একমাত্র মা’বূদ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে’’।
(কাহ্ফ : ১১০)
যখন আল্লাহ্ তা‘আলা একক। তাঁর কোন শরীক নেই। তখন সকল ইবাদাতও একমাত্র তাঁরই জন্য হতে হবে। আর নেক আমল বলতে এমন আমলকেই বুঝানো হয় যা সম্পাদন করা হবে একমাত্র সুন্নাত ভিত্তিক এবং যা কাউকে দেখানোর জন্য সংঘটিত হবে না।
’উমর (রাঃ) আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিম্নোক্ত দো‘আ করতেন:
اللَّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِيْ كُلَّهُ صَالِحًا، وَاجْعَلْهُ لِوَجْهِكَ خَالِصًا، وَلَا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيْهِ شَيْئًا.
‘‘হে আল্লাহ্! আমার সকল আমল যেন নেক আমল হয় এবং তা যেন একমাত্র আপনারই জন্য হয়। উহার কিয়দংশও যেন আপনি ভিন্ন অন্য কারোর জন্য না হয়’’।
উক্ত শির্ক যে কোন আমলের সাওয়াব বিনষ্টকারী। বরং কখনো কখনো এ জাতীয় আমলকারীকে এ জন্য শাস্তির সম্মুখীনও হতে হবে। বিশেষ করে সে আমল যখন তার উপর ওয়াজিব হয়ে থাকে এবং শির্কযুক্ত হওয়ার দরুন তা আদায় বলে গণ্য না হয়। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা মানব জাতিকে একমাত্র খাঁটি আমল করারই আদেশ করেছেন। শির্ক মিশ্রিত আমলের নয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَمَآ أُمِرُوْا إلاَّ لِيَعْبُدُوْا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ»
‘‘তাদেরকে তো আদেশই করা হয়েছে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই ইবাদাত করবে নিষ্ঠা ও ঈমানের সাথে এবং শির্কমুক্তভাবে’’।
(বাইয়িনাহ্ : ৫)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْـرِيْ، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ.
‘‘আমি শরীকদের শির্ক তথা অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমলের মধ্যে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করলো তখন আমি তাকেও প্রত্যাখ্যান করি এবং তার শির্ককেও’’। (মুসলিম ২৯৮৫)
উক্ত শির্ক (ইবাদাতের শির্ক) আবার দু’ প্রকার:
১. ক্ষমার অযোগ্য শির্ক।
২. ক্ষমাযোগ্য শির্ক।
প্রথম প্রকার আবার বৃহৎ এবং সর্ববৃহৎও হয়ে থাকে। যা বিনা তাওবায় কখনো ক্ষমা করা হয় না। যেমন: ভালোবাসার শির্ক, ভয়ের শির্ক, একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজ্দাহ্ করার শির্ক, কা’বা শরীফ ছাড়া অন্য কোন গৃহ তাওয়াফের শির্ক, হাজরে আস্ওয়াদ্ ছাড়া অন্য কোন পাথর চুম্বন করার শির্ক ইত্যাদি ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ছোট শির্ক। যা ক্ষমাযোগ্য। যেমন: শব্দ ও নিয়্যাতের শির্ক।