উক্ত শির্ক অতি মারাত্মক ও অতিশয় ঘৃণ্য। যা ছিলো ফির‘আউনের শির্ক। কারণ, সে বলেছিলো:
«وَمَا رَبُّ الْعَالَمِيْنَ»
‘‘জগতগুলোর প্রভু আবার কে?’’ (শু‘আরা’ : ২৩)
সে আরো বলে:
«يٰهَامَانُ ابْنِ لِيْ صَرْحًا، لَعَلِّيْ أَبْلُغُ الْأَسْبَابَ، أَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَأَطَّلِعَ إِلٰى إِلٰهِ مُوْسٰى وَإِنِّيْ لَأَظُنُّهُ كَاذِبًا»
‘‘হে হা’মান! তুমি আমার জন্য একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরি করো যাতে আমি আকাশের দরোজা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারি এবং আমি স্বচক্ষে দেখতে পাই মূসা (আঃ) এর মা’বূদকে। আমার ধারণা, নিশ্চয়ই সে (মূসা (আঃ)) মিথ্যাবাদী’’। (গা’ফির/মু’মিন : ৩৬-৩৭)
শির্ক বলতেই অস্বীকার অথবা যে কোন ভাবে আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার খর্ব করাকে বুঝায়। চাই তা সামান্যটুকুই হোক না কেন। সুতরাং প্রতিটি মুশ্রিকই অস্বীকারকারী বা আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার খর্বকারী এবং প্রতিটি অস্বীকারকারী বা অধিকার খর্বকারীই মুশ্রিক।
অস্বীকার বা অধিকার খর্ব করণ আবার তিন প্রকার:
১. সৃষ্টিকুলের সব কিছুই আল্লাহ্ তা‘আলা সৃষ্টি করেননি। বরং কোন কোন জিনিস মানুষও সৃষ্টি করেছে বা এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে এমন মনে করা।
২. আল্লাহ্ তা‘আলার নাম, কাম বা গুণাবলীর কিয়দংশ বা সম্পূর্ণটুকুই অস্বীকার করা।
৩. মানুষ থেকে প্রাপ্য আল্লাহ্ তা‘আলার অধিকার তথা একচ্ছত্র আনুগত্য ও শির্ক অবিমিশ্র ইবাদাত আদায় না করা।
ওয়াহ্দাতুল্ উজূদ্ (সৃষ্টিই স্রষ্টা) মতবাদ, বিশ্ব অবিনশ্বর মতবাদ এবং আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ নাম, কাম ও গুণাবলী শূন্য মতবাদ ইত্যাদি উক্ত শির্কেরই অন্তর্গত।
২. আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য ইলাহ্ স্বীকার করার শির্ক:
উক্ত মুশ্রিকরা আল্লাহ্ তা‘আলার নাম, গুণাবলী ও প্রভুত্ব স্বীকার করে। তবে তারা তাঁরই পাশাপাশি অন্য ইলাহ্তেও বিশ্বাস করে।
যেমন: খ্রিস্টানদের শির্ক। তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি ’ঈসা (আঃ) ও তাঁর মাকে ইলাহ্ বলে স্বীকার করে।
অগ্নিপূজকদের শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তারা সকল কল্যাণকর কর্মকান্ডকে আলো এবং সকল অকল্যাণকর কর্মকান্ডকে আঁধারের সৃষ্টি বলে মনে করে।
তাক্বদীর বা ভাগ্যে অবিশ্বাসীদের শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তারা মনে করে, মানুষ বা যে কোন প্রাণী আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা-অনুমতি ছাড়াও নিরেট নিজ ইচ্ছায় যে কোন কাজ করতে পারে। এরা বাস্তবে অগ্নিপূজকদেরই অনুরূপ।
ইব্রাহীম (আঃ) এর সঙ্গে তর্ককারী ‘‘নাম্রূদ্ বিন্ কিন্‘আন’’ এর শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তার অন্যতম দাবি এটিও ছিলো যে, সে ইচ্ছে করলেই কাউকে মারতে বা জীবিত করতে পারে।
কবরপূজারীদের শির্কও উক্ত শির্কের অন্তর্গত। কারণ, তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি নিজ পীর-বুযুর্গদেরকেও রব্ ও ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছে।
রাশি-নক্ষত্রে বিশ্বাসী এবং সূর্যপূজারীদের শির্কও উক্ত শির্কের অধীন।
উক্ত মুশ্রিকদের কেউ কেউ আল্লাহ্ তা‘আলাকে বাস্তব মা’বূদ বলেও বিশ্বাস করে। আবার কেউ কেউ আল্লাহ্ তা‘আলাকে বড় মা’বূদ বা মা’বূদদের অন্যতম বলেও মনে করে। আবার কেউ কেউ এমনো মনে করে যে, তাদের ছোট মা’বূদগুলো অতি তাড়াতাড়ি তাদেরকে তাদের বড় মা’বূদের নিকটবর্তী করে দিবে।