হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

শির্কের মূল রহস্য কথা দু’টি:

১. আল্লাহ্ তা‘আলার কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে তুলনা করা।

২. কোন বান্দাহ্ নিজকে আল্লাহ্ তা‘আলার ন্যায় মনে করা।

একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই লাভ-ক্ষতির মালিক। একমাত্র তিনিই কাউকে কোন কিছু দেন বা তা থেকে বঞ্চিত করেন। সুতরাং একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটই কোন কিছু চাইতে হবে। তাঁকেই ভয় করতে হবে এবং তাঁর নিকটই কোন কিছু কামনা করতে হবে। তাঁরই উপর ভরসা করতে হবে। যদি কেউ আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করলো অথবা অন্য কারো উপর ভরসা করলো তাহলে সে অবশ্যই ওব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে তুলনা করেই তা করলো।

আল্লাহ্ তা‘আলাই সকল গুণের একচ্ছত্র মালিক। সুতরাং সকল ইবাদাত তাঁরই জন্য হতে হবে। একান্ত সম্মান, ভয়, আশা, ভালোবাসা, নম্রতা, অধীনতা, তাওবা, দো‘আ, ভরসা, সাহায্য প্রার্থনা ও শপথ করা ইত্যাদি শরীয়তের দৃষ্টিকোণানুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে তাঁরই জন্য হতে হবে। মানুষের বিবেক এবং তার সহজাত প্রকৃতিও তা সমর্থন করে।

যে ব্যক্তি নিজকে বড় মনে করে মানুষের প্রশংসা, সম্মান, অধীনতা কামনা করে এবং সে চায় সকল মানুষ তাকেই ভয় করুক, তারই নিকট আশ্রয় কামনা করুক, তারই নিকট কোন কিছু আশা করুক, তারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুক তাহলে সে অবশ্যই নিজকে প্রভুত্ব ও উপাসনায় আল্লাহ্ তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করেই তা করছে।

যদি কোন ছবিকারকে শুধু ছবি তৈরির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাদৃশ্যতার দরুন কিয়ামতের দিন সর্ববৃহৎ শাস্তির অধিকারী হতে হয় তা হলে যে ব্যক্তি নিজকে প্রভুত্ব ও উপাসনায় আল্লাহ্ তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করে তার শাস্তি বাস্তবে কি হতে পারে তা আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ.

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ছবিকাররা’’। (বুখারী ৫৯৫০; মুসলিম ২১০৯)

যদি কোন মানুষ শাহানশাহ্ নামী হওয়ার দরুন কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বনিকৃষ্ট এবং সে জন্য তাঁর কোপানলে পতিত হতে হয় তাহলে যে ব্যক্তি নিজকে প্রভুত্ব ও উপাসনায় আল্লাহ্ তা‘আলার সমপর্যায়ের মনে করে তার শাস্তি বাস্তবে কি হতে পারে তা আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَغْيَظُ رَجُلٍ عَلَى اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَخْبَثُهُ وَأَغْيَظُهُ عَلَيْهِ رَجُلٌ كَانَ يُسَمَّى مَلِكَ الْأَمْلَاكِ، لَا مَلِكَ إِلاَّ اللهُ.

‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বনিকৃষ্ট এবং সে জন্য তাঁর কোপানলে পতিত সে ব্যক্তি যার নাম শাহেনশাহ্ বা রাজাধিরাজ। কারণ, সত্যিকারের রাজা বা সমরাট তো একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই’’। (মুসলিম ২১৪৩)

উক্ত আলোচনার পাশাপাশি আরেকটি গূঢ় রহস্যের কথা আমাদেরকে ভালোভাবে জানতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ববৃহৎ গুনাহ্ হচ্ছে তাঁর সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর শানে খারাপ ধারণাকারীদের সম্পর্কে বলেন:

«عَلَيْهِمْ دَآئِرَةُ السَّوْءِ وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَلَعَنَهُمْ وَأَعَدَّ لَـهُمْ جَهَنَّمَ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا»

‘‘অমঙ্গল চক্র তাদের জন্যই। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। উপরন্তু তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন জাহান্নাম এবং ওটা কতইনা নিকৃষ্ট গন্তব্য’’। (ফাত্হ : ৬)

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করে এবং তিনি ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে কাউকে মাধ্যম স্থির করে তারা নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার শানে ভালো ধারণা রাখে না। সুতরাং ইসলামী শরীয়ত কখনো আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে কোন মাধ্যম স্বীকার করতে পারে না। মানব প্রকৃতি এবং তার বিবেকও তা সম্ভব বলে মনে করতে পারে না।

ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«مَا ذَا تَعْبُدُوْنَ، أَئِفْكًا آلِهَةً دُوْنَ اللهِ تُرِيْدُوْنَ، فَمَا ظَنُّكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ»

‘‘তোমরা কিসের পূজা করছো? তোমরা কি আল্লাহ্ তা‘আলার পরিবর্তে কতক অলীক মা’বূদকেই চাচ্ছো? জগতপ্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। তোমাদের ধারণা কি এই যে, তিনি তোমাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দিবেন? তা অবশ্যই নয়’’। (সা’ফ্ফাত : ৮৫-৮৭)

কোন মালিকই নিজ ভৃত্যকে তার কোন নিজস্ব অধিকারের অংশীদার মনে করতে কখনোই রাজি নয়। সুতরাং যারা কোন মানুষকে আল্লাহ্ তা‘আলার নিজস্ব অধিকারের অংশীদার মনে করে তার জন্য তা ব্যয় করে তারা কিছুতেই আল্লাহ্ তা‘আলার সঠিক সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখেনি।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«ضَرَبَ لَكُمْ مَّثَلًا مِّنْ أَنْفُسِكُمْ هَلْ لَكُمْ مِّنْ مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِّنْ شُرَكَآءَ فِيْ مَا رَزَقْنَاكُمْ فَأَنْتُمْ فِيْهِ سَوَآءٌ، تَخَافُوْنَهُمْ كَخِيْفَتِكُمْ أَنْفُسَـكُمْ، كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ»

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তোমাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে তোমাদের সমান অংশীদার? ফলে তোমরা তাদেরকে সেরূপ ভয় করো যেরূপ তোমরা পরস্পরকে ভয় করো। আমি এভাবেই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী বিবৃত করি’’। (রূম : ২৮)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«يَآ أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوْا لَهُ، إِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ لَنْ يَّخْلُقُوْا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوْا لَهُ، وَإِنْ يَّسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لاَّ يَسْتَنْقِذُوْهُ مِنْهُ، ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْـمَطْلُوْبُ، مَا قَدَرُوْا اللهَ حَقَّ قَدْرِهِ، إِنَّ اللهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ»

‘‘হে মানব সকল! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে। খুব মনোযোগ দিয়ে তোমরা তা শ্রবণ করো। তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার পরিবর্তে যাদেরকে ডাকছো তারা সবাই একত্রিত হয়েও একটি মাছি পর্যন্ত তৈরি করতে পারবে না। এমনকি কোন মাছি যদি তাদের সম্মুখ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয় তারা তাও উদ্ধার করতে পারবে না। পূজারী ও দেবতা কতই না দূর্বল। বস্ত্তত: তারা আল্লাহ্ তা‘আলার যথোচিত সম্মান রক্ষা করেনি। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমতাবান ও পরাক্রমশালী’’। (হাজ্জ : ৭৩-৭৪)

যারা পীর-বুযুর্গ পূজা করে তাদের পীর-বুযুর্গ একটি মাছিও বানাতে সক্ষম নয়। সুতরাং তারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে ওদেরকে মাধ্যম মেনে সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা‘আলাকেই অসম্মান করেছে। কারণ, তিনিই হচ্ছেন ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের একমাত্র মালিক। সুতরাং সবাইকে সরাসরি তাঁরই শরণাপন্ন হতে হবে। অন্য কারোর নয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَمَا قَدَرُوْا اللهَ حَقَّ قَدْرِهِ، وَالْأَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِيْنِهِ، سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ»

‘‘তারা আল্লাহ্ তা‘আলার যথোচিত সম্মান করেনি; অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁরই মুষ্টিতে এবং আকাশমন্ডলও আবদ্ধ থাকবে তাঁরই ডান হাতে। তিনি পবিত্র ও সুমহান তাদের শির্ক থেকে’’। (যুমার : ৬৭)

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন রাসূল পাঠাননি এবং কোন কিতাবও অবতীর্ণ করেননি। প্রতিটি ব্যক্তিই স্বাধীন। সে যাচ্ছেতাই আচরণ করবে। তারা সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার সুন্দর গুণাবলীর সরাসরি অর্থে বিশ্বাসী নয় এবং যারা মনে করে, তিনি শুনেন না, দেখেন না, কোন কিছুর ইচ্ছেও করেন না, তাঁর কোন স্বাধীনতা নেই, তিনি সকল সৃষ্টির উপরে নন। বরং তিনি সর্বস্থানে বিরাজমান, তিনি যখন ইচ্ছে এবং যার সাথে ইচ্ছে কথা বলেন না এবং সকল মানব কর্মকান্ড তাঁর ইচ্ছে, ক্ষমতা ও সৃষ্টির বাইরে তারা সবাই নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, মানুষ যা করে তা সে একান্ত বাধ্য হয়েই করে। তাতে তার কোন স্বাধীনতা নেই। অতএব মানুষ যা করেছে তা পরোক্ষভাবে আল্লাহ্ই করেছেন। তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা খারাপ কাজের জন্য পরকালে বান্দাহ্কে শাস্তি দিবেন তারাও সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে সর্বস্থানে মনে করে। এমনকি টয়লেট এবং সকল অপবিত্র স্থানেও। যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে নিজ আর্শে ‘আযীমে সমাসীন বলে মনে করে না তারাও নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, বাস্তবার্থে আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে ভালোবাসেন না, কারো প্রতি দয়া করেন না, কারো উপর সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হন না, তাঁর কোন কাজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে না, তিনি সরাসরি কোন কাজ করেন না। অতএব তিনি আর্শে সমাসীন নন, রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন না, মূসা (আঃ) এর সাথে তিনি ত্বূর পাহাড়ের দিক থেকে কথা বলেননি, কিয়ামতের দিন তিনি নিজ বান্দাহ্দের মধ্যে ফায়সালা করার জন্যে আসবেন না তারাও তাঁকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলার স্ত্রী-সন্তান আছে, তিনি তাঁর খাছ বান্দাহ্দের মধ্যে ঢুকে পড়েন। যেমন: সূফী মান্সূর হাল্লাজ অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়ার সকল বস্ত্তর মাঝে বিরাজমান তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রাসূল ও তদীয় পরিবারবর্গের শত্রুদেরকে সম্মান দিয়েছেন, তাদেরকে রাসূলের মৃত্যুর পরপরই মুসলিম বিশ্বের খিলাফত ও রাষ্ট্র দিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল ও তদীয় পরিবারবর্গ প্রেমীদেরকে তথা শিয়াদেরকে অসম্মান ও লাঞ্ছিত করেছেন তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

উক্ত বিশ্বাস ইহুদী ও খ্রিস্টান থেকে চয়িত। তারাও আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে মনে করতো, তিনি একদা এক যালিম রাষ্ট্রপতি তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠিয়েছেন। যে মিথ্যাভাবে নবী হওয়ার দাবি করেছে। এমনকি সে দীর্ঘদিন বেঁচেও ছিলো। সর্বদা মিথ্যা কথা বলতো। বলতো: আল্লাহ্ তা‘আলা এ কথা বলেছেন, এ কাজের আদেশ করেছেন, এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, পূর্বের সকল নবী ও রাসূলদের শরীয়তকে রহিত করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সে ও তার অনুসারীদের জন্য পূর্বের সকল নবী ও রাসূলদের অনুসারী হওয়ার এ যুগের দাবিদারদের জান, মাল ও স্ত্রী-সন্তান হালাল করে দিয়েছেন, এতদসত্ত্বেও আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সার্বিকভাবে সাহায্য করেছেন, তার সকল দো‘আ কবুল করেছেন, তার শত্রুদের উপর তাকে জয়ী করেছেন।

যারা মনে করে, পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর খাঁটি ওলীদেরকে শাস্তি ও জাহান্নাম এবং তাঁর শত্রুদেরকে তিনি শান্তি ও জান্নাত দিতে পারেন। উভয়ই তাঁর নিকট সমান। কুর‘আন ও হাদীসে এ ব্যাপারে যা রয়েছে তা সংবাদ মাত্র। তিনি এর উল্টাও করতে পারেন। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদের মধ্যে এ জাতীয় চিন্তা-চেতনার কঠোর নিন্দা করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَمْ نَجْعَلُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ كَالْـمُفْسِدِيْنَ فِيْ الْأَرْضِ، أَمْ نَجْعَلُ الْـمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ»

‘‘কাফিররা কি এমন ধারণা করে যে, যারা আমার উপর ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, তেমনিভাবে যারা আমাকে কঠিন ভয় করে এবং যারা অপরাধী তাদের সকলকে আমি সমপর্যায়ের মনে করবো? কখনোই তা হতে পারে না’’। (সোয়াদ্ : ২৮)

তিনি আরো বলেন:

«أَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ اجْتَرَحُوْا السَّيِّئَاتِ أَنْ نَّجْعَلَهُمْ كَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ، سَوَآءً مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ، سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ، وَخَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ، وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ»

‘‘দুষ্কৃতীরা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের ন্যায় মনে করবো। তা কখনোই হতে পারে না। বরং তাদের উক্ত সিদ্ধান্ত কতইনা মন্দ। আল্লাহ্ তা‘আলা আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে তৈরি করেছেন যথার্থভাবে এবং (তাতে প্রত্যেককে কর্ম স্বাধীনতাও দিয়েছেন) যেন প্রত্যেককে তার কর্মানুযায়ী ফলাফল দেয়া যেতে পারে এবং তাদের প্রতি এতটুকুও যুলুম করা হবে না’’। (জা’সিয়াহ্ : ২১-২২)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«أَفَنَجْعَلُ الْـمُسْلِمِيْنَ كَالْـمُجْرِمِيْنَ، مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُوْنَ»

‘‘আমি কি আত্মসমর্পণকারীদেরকে অপরাধীদের ন্যায় মনে করবো? তোমাদের কি হয়েছে? তোমাদের এ কেমন সিদ্ধান্ত’’। (ক্বালাম : ৩৫-৩৬)

যারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা মৃতদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। যে দিন আল্লাহ্ তা‘আলা সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করবেন এবং অপরাধীদেরকে শাস্তি দিবেন। অত্যাচারী থেকে অত্যাচারিতের অধিকার আদায় করবেন। যারা এ দুনিয়াতে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য দু:সহ ক্লান্তি সহ্য করেছে তাদেরকে উপযুক্ত সম্মান করবেন। তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে, তাঁর অধিকার বিনষ্ট করে, তাঁর স্মরণ থেকে গাফিল থাকে, তাঁর সন্তুষ্টির পরিবর্তে নিজেদের প্রবৃত্তির সন্তুষ্টি কামনা করে, মানুষের আনুগত্য যাদের নিকট আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের চাইতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ, যারা তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিকে অধিক মূল্যায়ন করে আল্লাহ্ তা‘আলার দৃষ্টির চাইতে, যারা মানুষকে লজ্জা করে; আল্লাহ্ তা‘আলাকে নয়, মানুষকে ভয় করে; নিজ প্রভুকে নয়, মানুষের সাথে সাধ্যমতো ভালো আচরণ করে; আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে নয়, যারা নিজ প্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়েও খুব মনোযোগ সহকারে অন্য মানুষের পূজা করে; কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদাতে তাদের মন এতটুকুও বসে না তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে।

যারা আল্লাহ্ তা‘আলার চরম অবাধ্য শয়তান ইবলিসকে তাঁর সাথে সম্মান, আনুগত্য, অধীনতা, ভয় ও আশায় শরীক করেছে তারাও আল্লাহ্ তা‘আলাকে অসম্মান করেছে। কারণ, মানুষ দুনিয়াতে আললাহ্ তা‘আলা ছাড়া যারই ইবাদাত করুক না কেন তা পরোক্ষভাবে শয়তানের ইবাদাত বলেই গণ্য। যেহেতু মূল পলিসিদাতা সেই।

তাই আল্লাহ্ তা‘আলা যথার্থই বলেছেন:

«أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِيْ آدَمَ أَنْ لاَّ تَعْبُدُوْا الشَّيْطَانَ، إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ»

‘‘হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের পূজা করো না। কারণ, সে হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’’। (ইয়াসীন : ৬০)

উক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে নিম্ন বিষয়গুলো জানতে পারলাম:

ক. কেনই বা শির্ক সর্ববৃহৎ গুনাহ্।

খ. কেনই বা আল্লাহ্ তা‘আলা তা তাওবা ব্যতীত কখনোই ক্ষমা করবেন না।

গ. মুশ্রিক ব্যক্তি কেনই বা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। কখনোই সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।

ঘ. আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর বান্দাহ্’র মাঝে কেনই বা মাধ্যম গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হবে। যা দুনিয়ার নীতিতে নিষিদ্ধ নয়।

উক্ত কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বনাশা বলে আখ্যায়িত সাতটি কবীরা গুনাহ্’র সর্বশীর্ষে শির্কের কথাই উল্লেখ করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْـمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْـمُحْصَنَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ.

‘‘তোমরা বিধ্বংসী সাতটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকো। সাহাবারা বললেন: হে আল­াহ্’র রাসূল! ওগুলো কি? তিনি বলেন: আল­াহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে অংশীদার করা, যাদু আদান-প্রদান, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ ভক্ষণ, সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন এবং সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলাদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো’’। (বুখারী ২৭৬৬, ৬৮৫৭; মুসলিম ৮৯)

নিম্নে উক্ত বিষয়সমূহের ধারাবাহিক বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো: