খারেজা বিনতে সালত তার চাচা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি তার নিকট হতে ফিরে আসছিলেন। পথিমধ্যে তিনি এক গোত্রের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এমন সময় তিনি দেখতে পান যে, এক পাগল জিঞ্জিরে আবদ্ধ রয়েছে। তার সাথের লোকজন বললঃ আমরা খবর পেয়েছি, আপনাদের সেই মহান সাথী নাকি এক মহান কল্যাণসহ আর্বিভূত হয়েছেন। সুতরাং আপনাদের নিকট এমন কিছু কি আছে যা দ্বারা এ পাগলকে চিকিৎসা করতে পারেন?
অতঃপর আমি সূরা ফাতিহা পড়ে তাকে ঝাড়-ফুক করলে সে সুস্থ হয়ে গেল। তারা আমাকে এর বিনিময়ে ১০০টি ছাগল দিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম। বললেন তুমি কি সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছুও পড়েছিলে? আমি বললামঃ না। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! কত কত মানুষ ভ্রান্ত ঝাড়-ফুকের দ্বারা কামাই করে খায়; আর তুমি তা সঠিক ঝাড়-ফুকে অর্জন করেছ।” অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে যে, সেই সাহাবী সূরা ফাতেহা পড়ে তিন দিন সকাল সন্ধ্যা ঝাড়-ফুক করেন। যখনই সূরা ফাতেহা পড়া শেষ করতেন মুখের থুতু জমা করে রোগীর উপর নিক্ষেপ করতেন। (আবু দাউদঃ ত্বিব ১৯, ইমাম নববী সহীহ বলেছেন এবং শায়খ আলবানীও।)
১। অস্থিরতা, দিশাহারা ও ভুল-ভ্রান্তি বেশি হওয়া।
২। কথা-বার্তায় সামঞ্জস্যহীনতা।
৩। চোখের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া এবং অসুন্দর হওয়া।
৪ । কোন এক স্থানে স্ত্রীর না থাকা।
৫। কোন এক কর্মে স্থীর না থাকা।
৬। নিজে পরিপাটি থাকায় উদাসীনতা ।
৭। আর যে সময় তা চূড়ান্তরূপ ধারণ করে সেই রোগী অজানা পথে চলতে থাকে। আর কখনও কখনও নির্জন স্থানে শুয়ে যায়।
যেই জ্বিনের উপর এই যাদুর কাজ অপিত হয় (যাদুকরের নির্দেশ অনুযায়ী) সেই জ্বিন রোগীর মস্তিষ্কে অবস্থান করে তার স্মরণশক্তি ও চালিকা শক্তির উপর এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করে ও কন্ট্রোল করে যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যার ফলে পাগলের অবস্থায় পতিত হয়।
১। ইতিপূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলি পড়তে হবে।
২ । যখন রোগী বেহুশ হয়ে যাবে, তখন তার সাথে সেই পদ্ধতিই গ্রহণ করতে হবে যেমন পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
৩। আর যদি রোগী বেহুশ না হয় তবে উল্লেখিত পন্থায় তিন বার অথবা এরও অধিকবার ঝাড়-ফুক করতে হবে। এরপরও যদি বেহুশ না হয় তবে সেই সব সূরাকে কোন ক্যাসেটে রেকর্ড করে তাকে প্রতিদিন দুই অথবা তিনবার এক মাস পর্যন্ত শুনাতে হবেঃ ঝাড়-ফুকের আয়াতসমূহও সূরাগুলি হলোঃ
সূরা বাকারা, হুদ, হিজর, সাফফাত, ক্বাফ, আর-রহমান, মূলক, জ্বিন, আ'লা, যিলযাল, হুমাযা, কাফিরুন, ফালাক, ও সূরা নাস। দেখা যাবে এসব সূরা শুনার ফলে রোগীর অন্তরে ধড়ফড় শুরু করবে এমনকি রোগী আয়াত শুনতে শুনতে বেহুশ হয়ে যেতে পারে। এরপর জ্বিন কথা বলতে থাকবে আর কখনও কষ্ট বৃদ্ধি পেয়ে পনের দিনের অধিকও থাকতে পারে। অতঃপর ধীরে ধীরে কমতে কমতে মাসের শেষে একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় রোগীকে আয়াতগুলো তার উপর স্বাভাবিকতা আসার জন্য পড়তে থাকতে হবে।
৪ । চিকিৎসাকালীন সময়ে রোগীকে ব্যাথা কমের কোন ঔষধ ব্যহার করতে দেয়া যাবে না। কেননা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খারাপ হতে পারে।
৫। চিকিৎসাকালীন সময়ে বিদ্যুতের ঝটকা দেয়া যেতে পারে। কেননা তাতে যেমন দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে তেমনি জিনের জন্যও বেশি কষ্টের কারণ হয়ে থাকে।
৬ । এমনও হতে পারে যে, আপনি এক মাসের সময় থেকে কম নির্ধারণ করতে পারেন। অথবা তিন মাস অথবা এর অধিকও হতে পারে।
৭। চিকিৎসার সময়কালে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, রোগী যেন কোন সাগীরা ও কাবীরা গোনাহ যেন না করে। যেমনঃ গান-শোনা ধুমপান, অথবা নামায না পড়া ইত্যাদি। আর যদি মহিলা হয় তবে বেপর্দা যাতে না থাকে ।
৮। যদি রোগীর পেটে ব্যাথা হয় তবে বুঝতে হবে যে, রোগীকে যাদু করা বস্তু পান করানো হয়েছে অথবা খাওয়ানো হয়েছে। আপনি তখন উল্লেখিত আয়াত তিলাওয়াত করে পানিতে ফু দিয়ে রোগীকে সুস্থ হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত পান করাবেন, যাতে যাদুর প্রতিক্রিয়া নিঃশেষ হয়ে যায়। অথবা রোগী বমি করে দেয়।
প্রথম উদাহরণঃ
কিছু লোক এক ব্যক্তিকে জিঞ্জিরে বেঁধে আমার কাছে নিয়ে আসল সে আমাকে দেখামাত্র যারা তাকে বন্দি করে নিয়ে আসছিল তাদেরকে এমন জোরে লাথ মারল যে, তারা অনেক দূরে গিয়ে পড়ল। এরপর তাদের সবাই মিলে তাকে বশে এনে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর আমি কুরআন পড়ে ঝাড়তে লাগলাম এরই মধ্যে সে আমার চেহারায় থুতু দিতে লাগল। এরপর আমি কতক ক্যাসেট ৪৫ দিন পর্যন্ত শুনতে দিলাম আর ৪৫ দিন পর আমার কাছে আসতে বললাম। আর যখন তারা পুনরায় রোগীকে নিয়ে আসল তখন চেতনা ও অনুভূতি রোগীর মধ্যে ছিল। আর প্রথমবার যেই বেআদবী করেছিল তাতে সে লজ্জিত ছিল, কেননা সে তখন পাগল অবস্থায় ছিল। আর এখন সেই কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত করে তাকে কোন দূর্ঘটনা পরিলক্ষিত হয়নি। অতঃপর সে পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফেরত চলে গেল। আর সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমাকে আল্লাহ সুস্থ করে দেয়ায় কোন দান খয়রাত দিতে হবে কি না? অথবা রোযা রাখা জরুরী কিনা? আমি উত্তরে বললাম তা তোমার জন্যে ওয়াজিব নয় তবে যদি তুমি সাদকা কর তবে তা উত্তম।
একদিন আমার কাছে এক এমন যুবক আসল সে যে পাগল তাতে কোন সন্দেহ নেই।
যখনই আমি কুরআন পড়তে লাগলাম তখন বুঝা গেল যে, যাদুর দ্বারা তাকে পাগল করা হয়েছে, সে কয়েকদিন পর বিয়ে করতে যাচ্ছিল। অতঃপর আমি আরও আয়াত পড়ে তাকে ঝাড়লাম এবং কুরআনের ক্যাসেট এক মাস পর্যন্ত শুনতে বললাম। আর এরপর আসতে বললাম। প্রায় বিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার এক আত্মীয় সুসংবাদ দিল যে, সে পূর্ণ সুস্থ এবং সে বিয়েও করেছে।
আলহামদুলিল্লাহ এই সব আল্লাহ তায়ালার দয়া ও কৃপার ফল।