কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাঅত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালামনেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ্ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক আষার বর্ণিত হয়েছে। (ইবনে আবী শাইবা, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৬৯পৃ:)
এই সিজদাহ করার বড় ফযীলত ও মাহাত্ম রয়েছে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘হায় ধ্বংস আমার! ও সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করে, ফলে ওর জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ ৮৯৫নং, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
তিলাওয়াতের সিজদা কুরআন তেলাওয়াতকারী ও শ্রোতার জন্য সুন্নত। একদা হযরত উমার (রাঃ) জুমআর দিন মিম্বরের উপরে সূরা নাহল পাঠ করলেন। সিজদার আয়াত এলে তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদাহ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সিজদাহ করল। অতঃপর পরবর্তী জুমআতেও তিনি ঐ সূরা পাঠ করলেন। যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! আমরা (তিলাওয়াতের সিজদাহ করতে) আদিষ্ট নই। সুতরাং যে সিজদাহ করবে, সে ঠিক করবে। আর যে করবে না, তার কোন গুনাহ হবে না।’
অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের উপর (তিলাওয়াতের) সিজদাহ ফরয করেন নি। আমরা চাইলে তা করতে পারি।’ (বুখারী ১০৭৭নং)
যায়দ বিন সাবেত (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর কাছে সূরা নাজম পাঠ করলাম। তিনি সিজদাহ করলেন না।’ (বুখারী ১০৭৩, মুসলিম, মিশকাত ১০২৬নং)
কুরআন মাজীদে মোট ১৫ জায়গায় সিজদাহ করা সুন্নত। তা যথাক্রমে নিম্নরুপ:-
- সূরা আ’রাফ ২০৬ নং আয়াত (৭:২০৬)।
- সূরা রা’দ ১৫নং আয়াত (১৩ঃ১৫)।
- সূরা নাহল ৫০নং আয়াত (১৬ঃ৫০)।
- সূরা ইসরা’ (বানী ইসরাঈল) ১০৯নং আয়াত (১৭ঃ১০৯)।
- সূরা মারয়্যাম ৫৮নং আয়াত (১৯ঃ৫৮)।
- সূরা হাজ্জ ১৮নং আয়াত (২২ঃ১৮)।
- সূরা হাজ্জ ৭৭নং আয়াত (২২ঃ৭৭)।
- সূরা ফুরক্বান ৬০নং আয়াত (২৫ঃ৬০)।
- সূরা নামল ২৬নং আয়াত (২৭ঃ২৬)।
- সূরা সাজদাহ ১৫নং আয়াত (৩২ঃ১৫)।
- সূরা স্বা-দ ২৪নং আয়াত (৩৮ঃ২৪)।
- সূরা ফুস্সিলাত (হা-মিম সাজদাহ) ৩৮ নং আয়াত (৪১ঃ৩৮)।
- সূরা নাজম ৬২নং আয়াত (৫৩ঃ৬২)।
- সূরা ইনশিক্বাক্ব ২১নং আয়াত (৮৪ঃ২১)।
- সূরা আলাক্ব ১৯নং আয়াত (৯৬ঃ১৯)।
তিলাওয়াতের সিজদার জন্য ওযূ শর্ত নয়। শরমগাহ্ ঢাকা থাকলে কেবলামুখে এই সিজদাহ করা যায়। যেহেতু ওযূ শর্ত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। (নাইলুল আউতার, শাওকানী, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/১২৬, ফিকহুস সুন্নাহ্ আরবী ১/১৯৬)
১- سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ।
উচ্চারণ- সাজাদা অজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু অশাক্বক্বা সামআহু অবাস্বারাহু বিহাউলিহী অক্বুউওয়াতিহ্।
অর্থ- আমার মুখমণ্ডল তাঁর জন্য সিজদাবনত হল যিনি ওকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় শক্তি ও ক্ষমতায় ওর চক্ষু ও কর্ণকে উদগত করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান, সহীহ তিরমিযী, সুনান৪৭৪নং, আহ্মদ ৬/৩০)
আবূ দাউদের বর্ণনায় আছে, এই দুআ সিজদায় একাধিকবার পাঠ করতে হয়।
২- اَللّهُمَّ اكْتُبْ لِيْ بِهَا عِنْدَكَ أَجْراً، وَّضَعْ عَنِّيْ بِهَا وِزْراً، وَّاجْعَلْهَا لِيْ عِنْدَكَ ذُخْراً، وَّتَقَبَّلْهَا مِنِّيْ كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُوْدَ।
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মাকতুব লী বিহা ইন্দাকা আজরা, অযা’ আন্নী বিহা বিযরা, অজ্আলহা লী ইন্দাকা যুখরা, অতাক্বাব্বালহা মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাঊদ।
অর্থ- হে আল্লাহ! এর (সিজদার) বিনিময়ে তোমার নিকট আমার জন্য পুণ্য লিপিবদ্ধ কর, পাপ মোচন কর, তোমার নিকট এ আমার জন্য জমা রাখ এবং এ আমার নিকট হতে গ্রহণ কর যেমন তুমি তোমার বান্দা দাঊদ (আহমাদ, মুসনাদ) থেকে গ্রহণ করেছ। (সহীহ তিরমিযী, সুনান ৮৭নং,হাকেম১/২১৯, ইবনে মাজাহ্ ১০৫৩নং)
একাকী বা ইমাম সকলের জন্য নামাযে সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করা বৈধ এবং সকলের জন্য সিজদাহ করা সুন্নত। অবশ্য সির্রী নামাযে ইমামের জন্য সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা না করাই উত্তম। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ১/২৭০পৃ:) কারণ, এতে মুক্তাদীদের মাঝে গোলমাল সৃষ্টি হয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩২৯, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/৩০০) মুক্তাদীর জন্য ইমামের ইক্তিদায় ঐ সিজদাহ করা জরুরী। যেমন, সিজদার আয়াত তিলাঅত করতে শুনলেও যদি ইমাম সিজদাহ না করেন, তাহলে মুক্তাদী সিজদাহ করতে পারে না।
প্রকাশ থাকে যে, একই সঙ্গে কয়েকটি সিজদার আয়াত পড়লে সবশেষে একটি সিজদাই যথেষ্ট। যেমন হিফয করার সময় সিজদার আয়াত বারবার পড়লেও সবশেষে একটি সিজদাহ করে নেওয়া যথেষ্ট।
সিজদার আয়াত পাঠ বা শ্রবণ করার পর সিজদাহ করার সুযোগ না হলে সামান্য ক্ষণ পরে সিজদাহ কাযা করে নেওয়া যায়। দেরী লম্বা হয়ে গেলে কাযা করা যাবে না। (ফিকহুস সুন্নাহ্ আরবী ১/১৯৮)
প্রকাশ থাকে যে, এই সিজদার পরহাত তুলে মুনাজাত করা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ২৮০পৃ:)
মহান প্রতিপালক আল্লাহ আমাদেরকে কত নেয়ামত দান করেছেন, তা গুনে শেষ করা যায় না। এই সকল নেয়ামতের শুক্র আদায় করা বান্দার জন্য ফরয। শুক্র আদায়ের নিয়ম হল, প্রথমত: অন্তরে এই স্বীকার করা যে, এই নেয়ামত আল্লাহর তরফ থেকে আগত। দ্বিতীয়ত: মুখে তার শুক্র আদায় করা। তৃতীয়ত: কাজেও শুক্র প্রকাশ করা। অর্থাৎ, সেই নেয়ামত তাঁরই সন্তুষ্টির পথে খরচ করা। অন্যথা নাশুকরী বা কৃতঘ্নতা হবে।
হ্ঠাৎ কোন সুসংবাদ, সুখের খবর বা সম্পদ লাভের খবর পেলে অথবা বড় বিপদ দূর হওয়ার সংবাদ শুনলে মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে শুকরানার (একটি) সিজদাহ মুস্তাহাব।
মহানবী (ﷺ) কোন আনন্দদায়ক সংবাদ শুনলে অথবা শুভ সংবাদ পেলে আল্লাহ তাআলাকে শুকরিয়া জানানোর জন্য সিজদায় পতিত হতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১৪৯৪নং)
হযরত আলী (রাঃ) যখন মহানবী (ﷺ)-কেহামাযান গোত্রের লোকেদের ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার কথা লিখলেন, তখন তিনি সিজদাহ করলেন এবং উঠে বললেন, “হামাযানের উপর সালাম,হামাযানের উপর সালাম।” (বায়হাকী)
আব্দুর রহ্মান বিন আওফ (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) বের হয়ে এক খেজুর বাগানে প্রবেশ করে সিজদায় গেলেন। তিনি এত লম্বা সময় ধরে সিজদায় থাকলেন যে, আমি আশঙ্কা করলাম, হয়তো বা আল্লাহ তাঁর প্রাণ হ্রণ করে নিয়েছেন। আমি নিকটে উপস্থিত হয়ে দেখতে গেলাম। তিনি মাথা তুলে বললেন, “আব্দুর রহ্মান! কি ব্যাপার তোমার?” আমি ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন, “জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে সুসংবাদ দেব না? আল্লাহ আয্যা জাল্ল্ আপনাকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার প্রতি দরুদ পড়বে, আমি তার প্রতি রহ্মত বর্ষণ করব। আর যে ব্যক্তি তোমার প্রতি সালাম জানাবে, আমি তাকে শান্তি দান করব।’ এ খবর শুনে আমি আল্লাহ আয্যা অজাল্লার নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করলাম।” (আহমাদ, মুসনাদ,হাকেম, মুস্তাদরাক)
তওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ এলে কা’ব বিন মালেক সিজদাহ করেছিলেন। (বুখারী)
শুকরানার সিজদার জন্য ওযূ জরুরী নয়। জরুরী নয় তকবীরও।
সহু সিজদা বা সিজদা-এ সাহও (ভুলের সিজদাহ) ফরয বা নফল নামাযে ভুল করে কোন ওয়াজেব অংশ ত্যাগ করলে ঐ ভুলের খেসারত স্বরুপ এবং ভুল আনয়নকারী শয়তানের প্রতি চাবুক স্বরুপ দুটি সিজদাহ করতে হয়। ভুল অনুপাতে সিজদার আগে বা পরে হাদীসে বর্ণিত নিয়মানুসারে সিজদাহ করা জরুরী।
নামায কম পড়ে সালাম ফিরে দিলে :
ভুলবশত: ১ বা ২ রাকআত নামায কম পড়ে সালাম ফিরে থাকলে যদি অল্প (৫/৭ মিনিট) সময়ের মধ্যে মনে পড়ে, তাহলে (মাঝে কথা বলে থাকলেও) নামাযী বাকী নামায সম্পন্ন করে সালাম ফিরার পর তকবীর ও তাসবীহ সহ্ দুটি সিজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরবে।
এ ব্যাপারে যুল-য়্যাদাইনের হাদীস প্রসিদ্ধ। একদা মহানবী (ﷺ) যোহ্র কিংবা আসরের নামায ভুল করে ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে উঠে অন্য জায়গায় বসলেন। লোকেরা ভাবল, নামায সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। আবূ বাক্র, উমার কেউই ভয়ে তাঁর সাথে কথা বললেন না। অবশেষে যুল-য়্যাদাইন বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি নামায কম হয়ে গেল?’ তিনি বললেন, “আমি ভুলিও নি, নামায কমও হয় নি।” অতঃপর সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, “যুল-য়্যাদাইন যা বলছে তা কি ঠিক?” সকলে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ সুতরাং তিনি অগ্রসর হয়ে বাকী নামায পূরণ করে সালাম ফিরলেন। অতঃপর তকবীর দিয়ে অনুরুপ অথবা তার চেয়ে লম্বা সিজদা দিলেন। তারপর আবার তকবীর দিয়ে মাথা তুললেন। পুনরায় তকবীর দিয়ে অনুরুপ অথবা তার চেয়ে লম্বা আরো একটি সিজদাহ করলেন। তারপর আবার তকবীর দিয়ে মাথা তুলে সালাম ফিরলেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১০১৭নং)
অবশ্য দীর্ঘ সময়ের পর মনে পড়লে নূতন করে পুরো নামাযটাই পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে।
নামাযের কোন রুক্ন (যেমন কিয়াম, রুকূ, সিজদাহ প্রভৃতি) ভুলে ত্যাগ করলে নামাযই হবে না। যে রাকআতের রুক্ন ত্যক্ত হবে, সে রাকআত বাতিল গণ্য হবে। ঐ ভুল নামাযের মধ্যে প্রথম রাকআতের রুক্ন ছেড়ে দ্বিতীয় রাকআতে মনে পড়লে, দ্বিতীয়কে প্রথম রাকআত গণ্য করে বাকী নামায সম্পন্ন করবে নামাযী। অতঃপর সালাম ফিরার পর দুই সিজদা করে পুনরায় সালাম ফিরবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২৭/৩৯) পক্ষান্তরে নামাযের সালাম ফিরার পর মনে পড়লে এক রাকআত নামায পড়ে ঐরুপ সিজদাহ করবে।
নামায বেশী পড়লে :
নামাযে ভুলবশত: ১ রাকআত বা ১টি সিজদাহ বা বৈঠক অতিরিক্ত হয়ে গেলে সালাম ফিরার পর ২টি সহু সিজদা করে পুনরায় সালাম ফিরবে নামাযী।
একদা মহানবী (ﷺ) ৫ রাকআত নামায পড়ে সালাম ফিরলেন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, নামায কি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, “ব্যাপার কি?” লোকেরা বলল, ‘আপনি ৫ রাকআত নামায পড়লেন।’ এ কথা শুনে তিনি দুটি সিজদাহ করলেন। (অতঃপর সালাম ফিরলেন।) (বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১০১৬নং)
রাকআতে সন্দেহ্ হলে :
নামায পড়তে পড়তে কয় রাকআত হল -এই সন্দেহ্ হলে যেদিকের সঠিকতার ধারণা অধিক প্রবল হবে, তার উপর ভিত্তি করে নামায শেষ করে সালাম ফিরার পর ২টি সিজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরবে।
যদি দুই দিকের মধ্যে কোন দিকেরই সঠিকতার ধারণা প্রবল না হয়, তাহলে দৃঢ় প্রত্যয়ের উপর আমল করবে নামাযী। অর্থাৎ, কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করলে নামায অসম্পূর্ণ হওয়ার আশংকা থাকবে না। সুতরাং সেই প্রত্যয়ের সাথে বাকী নামায সম্পন্ন করে সালাম ফিরার পূর্বে দুটি সিজদা-এ সাহও করে সালাম ফিরবে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাযে সন্দেহ্ করে এবং বুঝতে পারে না যে, সে কয় রাকআত পড়েছে; ৪ রাকআত, না ৩ রাকআত? তখন তার উচিৎ, সন্দেহ্ দূর করে দিয়ে যা একীন (দৃঢ় প্রত্যয়) হয় তার উপর ভিত্তি করা। অতঃপর সালাম ফিরার পূর্বে দুটি সিজদাহ করা। এতে সে যদি ৫ রাকআত পড়ে থাকে তাহলে ঐ সিজদাহ মিলে তার নামায জোড় হয়ে যাবে। অন্যথা যদি পূর্ণ ৪ রাকআত পড়ে থাকে, তাহলে ঐ সিজদাহ শয়তানের জন্য লাঞ্ছনাকর হবে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত ১০১৫নং)
প্রথম তাশাহহুদ ত্যাগ করলে :
নামাযী নামাযের প্রথম তাশাহহুদের বৈঠকে বসতে ভুলে গেলে যদি অর্ধেক উঠে খাড়া না হয়ে যায়, (হাঁটুদ্বয় মাটি ত্যাগ না করে) তাহলে মনে পড়লে পুনরায় বসে ‘আত্-তাহিয়্যাত’ পড়ে নেবে। আর এতে সাহু সিজদার প্রয়োজন নেই। অর্ধেকের বেশী উঠে খাড়া হয়ে গেলে এবং সম্পূর্ণ খাড়া না হয়ে মনে পড়লে পুনরায় বসে ‘আত্-তাহিয়্যাত’ পড়ে নেবে এবং শেষে সহু সিজদাহ করবে। কিন্তু যদি সম্পূর্ণ খাড়া হয়ে যায়, তাহলে আর পুনরায় না বসে বাকী নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরার পূর্বে দুই সিজদা করে সালাম ফিরবে।
অবৈধ জানার পরেও সম্পূর্ণ খাড়া হওয়ার পর পুনরায় বসে তাশাহহুদ পড়লে নামায বাতিল নয়। কিন্তু ক্বিরাআত শুরু করার পর বসলে নামায বাতিল গণ্য হবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৫১১-৫১৩)
একদা মহানবী (ﷺ) নামাযে প্রথম বৈঠকে না বসে উঠে পড়েন। লোকেরা তাসবীহ বললেও তিনি না বসে নামায শেষে দুই সিজদাহ করে সালাম ফিরেন। (বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১০১৮নং)
তিনি বলেন, “ইমাম ভুলে গিয়ে (তাশাহহুদ না পড়ে) সম্পূর্ণ খাড়া হয়ে গেলে তাকে ২টি সহু সিজদাহ করতে হবে। অবশ্য সম্পূর্ণ খাড়া না হলে সহু সিজদাহ করতে হবে না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম জামে ৬২৩নং)
প্রকাশ যে, ৪ রাকআত পড়ে ৫ রাকআতের জন্য ভুলে উঠে সম্পূর্ণ খাড়া হয়ে গেলেও স্মরণ হওয়া বা করানোর সাথে সাথে নামাযী বসে যাবে। কিন্তু প্রথম বৈঠকের জন্য স্মরণ হওয়া বা করানোর পরেও বসবে না।
সহু সিজদার আনুষঙ্গিক মাসায়েল :
ভুলবশত: যে কোনও ওয়াজেব (যেমন রুকূ বা সিজদার তাসবীহ ইত্যাদি মূলেই) ত্যাগ করলে ঐ একই নিয়মে সিজদাহ করতে হবে।
ইমাম সহু সিজদাহ করলে মুক্তাদী ভুল না করলেও তাঁর অনুসরণে তাঁর সাথে সিজদাহ করতে বাধ্য। ইমামের পশ্চাতে মুক্তাদী ভুল করলে যদি সে প্রথম রাকআত থেকেই ইমামের সাথে থাকে, তাহলে তাকে পৃথকভাবে সিজদাহ করতে হবে না। কারণ, তার এ ভুল ইমাম বহন করে নেবে। অবশ্য মসবূক (জামাআতে পিছিয়ে পড়া মুক্তাদী) হলে, ইমামের সালাম ফিরার পর তার বাকী নামায আদায় করতে উঠলে শেষে ভুল অনুসারে যথানিয়মে সিজদাহ করবে।
কিন্তু যদি ইমাম সালাম ফিরার পর সিজদাহ করেন, তাহলে তাঁর সাথে মসবূকের সহু সিজদাহ করা সম্ভব নয়। কারণ সে সালাম ফিরতে পাবে না। তাই সে উঠে বাকী নামায আদায় করে শেষে যথানিয়মে একাকী সিজদাহ করে নেবে। অবশ্য সে যদি ইমামের ভুলের পর জামাআতে শামিল হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে সিজদাহ করতে হবে না।
ইমাম ভুল করে এক রাকআত নামায বেশী পড়লে এক রাকআত ছুটে গেছে এমন মসবূক (পিছে পড়ে যাওয়া) নামাযী সেই রাকআত গণ্য করতে পারে না। সে রাকআত যেহেতু ইমামের বাতিল, সেহেতু তারও বাতিল। তাকে নিয়ম মত উঠে বাকী এক রাকআত কাযা পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩০৯)
সতর্কতার বিষয় যে, ভুল করে নামাযের কোন রুক্ন ছুটে গেলে নামাযই হয় না। কোন ওয়াজেব ছুটে গেলে সিজদা-এ সাহও দ্বারা পূরণ হয়ে যায় এবং কোন সুন্নত ছুটে গেলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না তথা সহু সিজদারও প্রয়োজন হয় না।
ক্বিরাআত করতে করতে ভুলে গেলে অথবা কাশিতে ধরলে যদি পরিমাণ মত পড়া হয়ে থাকে, তাহলে ইমাম তখনই রুকূতে চলে যাবেন। অবশ্য ক্বিরাআত ছোট মনে হলে অন্য সূরাও পড়তে পারেন। আটকে যাওয়ার পর সূরা ইখলাস পড়েও রুকূ যেতে পারেন। অবশ্য ক্বিরাআত ভুল পড়লে শেষে ঐ সূরা পড়তে হয় -এ কথা মনে করা ঠিক নয়।