১. লজ্জাস্থান হিফাযত ও চোখ অবনত রাখার ক্ষেত্রে নারীও পুরুষের ন্যায় আদিষ্ট।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ﴾ [النور: ٣٠،  ٣١]

“(হে নবী আপনি) মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]

আমাদের শাইখ আমিন শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৬/১৮৬ ও ১৮৭) গ্রন্থে বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারী ও পুরুষদের চোখ অবনত ও লজ্জাস্থান হিফাযত করার নির্দেশ দিয়েছেন। লজ্জাস্থান হিফাযত করার একটি অংশ যেনা, সমকামিতা, মানুষের সামনে উলঙ্গ হওয়া ও তাদের সামনে গুপ্তাঙ্গ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা... অতঃপর তিনি বলেন: নারী ও পুরুষ যারাই এ আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর নিদের্শসমূহ পালন করবে তাদের জন্য তিনি মাগফিরাত ও সাওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন, যদি তারা এর সাথে সূরা আহযাবের নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত সিফাতগুলো বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [الاحزاب: ٣٥]

“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]” ‘আদওয়াউল বায়ান’ থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত হলো।

নারী-নারী পরস্পর শরীর ঘর্ষণ করে যৌনকামনা হাসিল করা বড় গুনাহ। এতে লিপ্ত নারীরা কঠিন শাস্তির যোগ্য।

ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনি’: (৮/১৯৮) গ্রন্থে বলেন: যদি দু’জন নারী পরস্পর শরীর ঘর্ষণ করে তারা উভয় অভিশপ্ত ও যিনাকারী। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

»إذا أتت المرأة المرأة فهما زانيتان«

“যদি নারী নারীগমন করে তারা উভয়ে যিনাকারিনী”।

তাদেরকে বিচারক সমুচিত শাস্তি দিবে। কারণ, এটা এমন যিনা যার জন্য শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি নেই।[1] সমাপ্ত।

অতএব নারীদের বিশেষ করে যুবতীদের এসব ঘৃণ্য অপকর্ম থেকে সাবধান থাকা জরুরি।

চোখ সংযত রাখা সম্পর্কে ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘আল-জাওয়াবুল কাফি’: (পৃ.১২৯ ও ১৩৫) গ্রন্থে বলেন: চোখের চাহনি হচ্ছে প্রবৃত্তির অগ্রদূত ও বার্তাবহ, তাকে সংযত করাই লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করার মূলমন্ত্র। যে তার দৃষ্টিকে উন্মুক্ত ছেড়ে দিল, সে তার নফসকে ধ্বংসের ঘাটে দাঁড় করাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

»يا علي، لا تتبع النظرة النظرة فإنما لك الأولى«   

“হে আলী, দৃষ্টির পশ্চাতে দৃষ্টি দিয়ো না, প্রথম দৃষ্টিটি তোমার”।[2] প্রথম দৃষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্য হঠাৎ দৃষ্টি যা অনিচ্ছায় পতিত হয়। তিনি বলেন: ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে আলী থেকে আরো বর্ণিত:

»النظر سهم مسموم من سهام إبليس«

“দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের তীরসমূহ থেকে একটি বিষাক্ত তীর”

... অতঃপর তিনি বলেন: মানুষ যেসব মুসীবতে গ্রেফতার হয় তার মূল হচ্ছে দৃষ্টি। দৃষ্টি চাহিদা সৃষ্টি করে, চাহিদা চিন্তাকে জন্ম দেয়, অতঃপর চিন্তা প্রবৃত্তিকে জন্ম দেয়, অতঃপর প্রবৃত্তি ইচ্ছাকে জন্ম দেয়। অতঃপর ইচ্ছা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত দৃঢ়তায় রূপ নেয়, এভাবেই কার্য বাস্তবায়িত হয় যদি কোনো বাধা প্রতিবন্ধক না হয়। এ জন্য বলা হয়: চোখ অবনত রাখার কষ্ট সহ্য করা তার পরবর্তী দুঃখকে সহ্য করার চেয়ে অনেক সহজ।” সমাপ্ত।

হে মুসলিম বোন, তুমি পুরুষদের থেকে তোমার দৃষ্টি অবনত রাখ। ফিতনা সৃষ্টিকারী ছবির দিকে তাকিয়ো না, যা প্রকাশ করা হয় কতক পত্রিকায় অথবা টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ভিডিওতে, তাহলে তুমি খারাপ পরিণতি থেকে হিফাযতে থাকবে। কত দৃষ্টি যে ব্যক্তির জন্য অনুশোচনার কারণ হয়েছে তার হিসেব নেই। সত্যিই ছোট স্ফুলিঙ্গ থেকে বৃহৎ আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।

[1] ইবন তাইমিয়্যাহ মাজমুউল ফতোয়ায়: (১৫/৩২১) বলেন: এ হিসেবে পরস্পর শরীর ঘর্ষণকারী নারীরা ব্যভিচারী। যেমন, হাদীসে এসেছে “নারীদের যিনা হচ্ছে ঘর্ষণ করা।”
[2] আহমদ: (১/১৫৯); দারেমী, হাদীস নং ১৭০৯
২. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: গান-বাদ্য না শোনা:

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘ইগাসাতুল লাহফান’: (১/২৪২, ২৪৮, ২৬৪ ও ২৬৫) গ্রন্থে বলেন: “শয়তানের একটি ষড়যন্ত্র, যার দ্বারা সে দুর্বল দীনদার, সামান্য বিবেক ও অল্প ইলমের ধারকদের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ করে, মূর্খ ও বাতিলপন্থীদের অন্তর শিকার করে, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মুখের শীষ, হাততালি ও হারাম বাদ্য-যন্ত্রসহ গান, যা অন্তরকে কুরআন থেকে বিমুখ করে পাপাচার ও অপরাধে জড়িত করে। এগুলো মূলত শয়তানের কুরআন ও রহমান থেকে কঠিন অন্তরায়, যিনা ও সমকামিতার মন্ত্র। এসব দ্বারা পাপাচারী আশেক তার প্রেমিকা থেকে চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হাসিল করে... অতঃপর তিনি বলেন: নারী ও কিশোরদের কণ্ঠ থেকে এসব শ্রবণ করা আরো হারাম ও দীনকে কঠিনভাবে ধ্বংসকারী... অতঃপর বলেন: এতে সন্দেহ নেই যে, আত্মসম্মানী লোক স্বীয় পরিবারকে গান থেকে দূরে রাখে, যেমন তাদেরকে দূরে রাখে সন্দেহপূর্ণ বস্তু থেকে। তিনি আরো বলেন: প্রেমিক ও আশেক মহলে প্রচলিত যে, তাদের জন্য নারীকে হাসিল করা কঠিন হলে তারা নারীকে গান শোনাতে চেষ্টা করে, তখন সে বিগলিত হয়। কারণ, নারীরা আওয়াজ দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয়। গানের আওয়াজ তাদের অনুভূতি শক্তিকে দু’ভাবে ক্রিয়াশীল করে: শব্দ ও অর্থ উভয় দিক থেকে। তিনি বলেন: এসবের সাথে যদি দফ, যুবতী ও নাচ সঙ্গী হয়, তাহলে তো জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে। যদি নারীরা গান দ্বারা গর্ভবতী হত, তবে অবশ্যই এসব গান তার উপযুক্ত ছিল। আল্লাহর কসম, গানের কারণে বহু সম্ভ্রান্ত নারী পতিতা হয়েছে!!” সমাপ্ত।

হে মুসলিম নারী তুমি আল্লাহকে ভয় কর, চরিত্র বিনষ্টকারী রোগ অর্থাৎ গান শ্রবণ থেকে দূরে থাক, যা মুসলিম সমাজে বিভিন্ন পদ্ধতি ও উপায়ে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, আর মূর্খ নারীরা তা সংগ্রহ করে নিজেদের মাঝে আদান-প্রদান করছে।

৩. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর না করা

লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে না দেওয়া, যে মাহরাম তাকে লোলুপ ও পাপাচারীদের থেকে সংরক্ষণ করবে ও নিরাপত্তা দিবে।

বিশুদ্ধ হাদীসে নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا تسافر المرأة ثلاثة أيام إلا مع ذي محرم«   

“নারী তিন দিনের সফর মাহরাম ব্যতীত করবে না”।[1]

আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

»أن النبي صلى الله عليه وسلم  نهى أن تسافر المرأة مسيرة يومين أو ليلتين إلا ومعها زوجها، أو ذو محرم«    

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর দু’দিন অথবা দু’রাতের সফরকে নিষেধ করেছেন, যদি তার সাথে স্বামী অথবা মাহরাম না থাকে”।[2]

অনুরূপ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر تسافر مسيرة يوم ولبلة إلا مع ذي محرم عليها«

“কোনো নারীর জন্য বৈধ নয়, যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে মাহরাম ব্যতীত এক দিন ও এক রাতের দূরত্ব সফর করা”।[3]

এসব হাদীসে তিন দিন, দু’দিন ও এক দিন এক রাত সফর না করার যে পরিমাণ এসেছে তা মূলত সে সময় সফর করার প্রচলিত রেওয়াজের ভিত্ততে। তখন মানুষ পায়ে হেঁটে ও বাহনে চড়ে এক দিন, দু’দিন ও তিন দিন সফর করত। হাদীসে উল্লেখিত তিন দিন, দু’দিন ও এক দিন এক রাত দ্বারা হাদীসের বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে যার নাম সফর সেটাই মাহরাম ব্যতীত নারীদের জন্য নিষেধ।

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায়’: (৯/১০৩) বলেন: “মুদ্দাকথা: যার নাম সফর তার থেকে নারীকে বারণ করা হবে স্বামী অথবা মাহরাম ব্যতীত, হোক সেটা তিন দিন অথবা দু’দিন অথবা এক দিন এক রাত অথবা এক সকাল অথবা অন্য কিছু। কারণ, ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার হাদীসটি ব্যাপক, তাতে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের উল্লেখ নেই, যা মুসলিমের অত্র অধ্যায়ের সর্বশেষ হাদিস:

»لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم«

“মাহরাম ব্যতীত নারী সফর করবে না”।[4] এ হাদীস সকল প্রকার সফরকে অন্তর্ভুক্ত করে, যার নাম সফর।” আল্লাহ ভালো জানেন।

নারীদের গ্রুপের সাথে যারা নারীকে ওয়াজিব হজের অনুমতি প্রদান করেছে তারা সুন্নত পরিপন্থী সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করেছেন, অতএব শর্ত ব্যতীত তাকে হজের সফরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা সুন্নত পরিপন্থী, যে সুন্নত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবায়ন করেছেন। মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর পাপ তাই তার ওপর হজ ওয়াজিব বলা দুরস্ত নয়। এ আদেশ মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করবে”। সমাপ্ত।

আমি (গ্রন্থকার) বলছি: যারা নারীকে গ্রপের সাথে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে তারাও নারীকে মাহরাম ব্যতীত যে কোনো সফরের জন্য অনুমতি প্রদান করেন নি, তারা অনুমতি দিয়েছেন শুধু ওয়াজিব হজের জন্য।

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/২৪৯) গ্রন্থে বলেন: “নফল ইবাদত, ব্যবসা, যিয়ারত ও এ জাতীয় সফর মাহরাম ব্যতীত বৈধ নয়।” সমাপ্ত।

অতএব, এ যুগে যারা মাহরাম ব্যতীত নারীর প্রত্যেক সফরের ক্ষেত্রে শিথিলতা করেন তাদের কথার সাথে গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম নেই।

তারা বলেন: এক মাহরাম প্লেনে উঠিয়ে দেন, অতঃপর অপর মাহরাম ইয়ারপোর্ট থেকে তাকে নিয়ে যান যখন প্লেন সেখানে পৌঁছে। তাদের ধারণায় বহু নারী পুরুষ একসাথে থাকার কারণে প্লেন নিরাপদ।

আমরা তাদেরকে বলি: এ জাতীয় সফর কখনো নিরাপদ নয়, প্লেন অন্যান্য যানবাহন থেকে বেশি  ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এতে যাত্রীদের সিট পাশাপাশি, হয়তো নারী কোনো পুরুষের পাশে বসবে অথবা এমন কোনো সমস্যা প্লেনে হতে পারে, যদ্দরূন তা গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য কোনো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে, যেখানে তাকে গ্রহণকারী কেউ নেই, ফলে ফিতনার সম্মুখীন হবে। নারীর যে দেশ চেনা নেই এবং যেখানে তাকে গ্রহণকারী কোনো মাহরাম নেই, সেখানে তার অবস্থা কী হতে পারে?

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৭; আহমদ (২/১৪৩)
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯৮; আহমদ, (৩/৩৪); দারেমী, হাদীস নং ২৬৭৮
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৩৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৭০; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৩; ইবন মাজাহ, হাদসি নং ২৮৯৯; আহমদ (২/৫০৬); মালিক, হদীস নং ১৮৩৩
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২৭; আহমদ (৩/৭১)
৪. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: নারী এমন পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না, যে তার মাহরাম নয়।

নারীকে মাহরাম ব্যতীত পর-পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত থেকে বিরত রাখা লজ্জাস্থান হিফাযত করার একটি অংশ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يخلون بامرأة ليس معها ذو محرم منها، فإن ثالثهما الشيطان«

“যে আল্লাহ ও পরকাল দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে এমন নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না যার সাথে মাহরাম নেই। কারণ, তাদের তৃতীয়জন হচ্ছে শয়তান”।[1]

আমের ইবন রাবি‘আহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»ألا لا يخلون رجل بامرأة لا تحل له، فإن ثالثهما الشيطان، إلا محرم«         

“জেনে রেখ, কোনো পুরুষ এমন নারীর সাথে একান্ত সাক্ষাত করবে না, যে তার জন্য হালাল নয়। কারণ, তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান, যদি না সে পুরুষটি হয় মাহরাম”।[2]

ইমাম মাজদ ইবন তাইমিয়্যাহ ‘মুনতাকা’ গ্রন্থে বলেন: ইমাম আহমদ উপর্যুক্ত হাদীস দু’টি বর্ণনা করেছেন, তবে এ হাদীসের ভাবার্থ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, যা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত।

ইমাম শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২০) গ্রন্থে বলেন: “পর-নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত ঐকমত্যে হারাম। অনুরূপ ঐক্যমত্য নকল করেছেন হাফেয ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে। হারাম হওয়ার কারণ তাদের তৃতীয়জন শয়তান, যা হাদীসেই স্পষ্ট। শয়তানের উপস্থিতি তাদেরকে হারাম লিপ্ত করবে, তবে মাহরামসহ সাক্ষাত বৈধ। কারণ, তার উপস্থিতিতে পাপ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” সমাপ্ত।

কতক নারী ও তাদের অভিভাবক বেশ কিছু নির্জন সাক্ষাত সম্পর্কে শিথিলতা করেন:

ক. স্বামীর নিকটাত্মীয়দের সাথে নির্জন সাক্ষাত করা ও তাদের সামনে চেহারা উন্মুক্ত রাখা। বস্তুত তাদের সাথে নির্জন সাক্ষাত অন্যান্য সাক্ষাত থেকে বেশি  ক্ষতিকর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:   

»إياكم والدخول على النساء، فقال رجل من الأنصار: يا رسول الله أفرأيت الحمو ؟ قال: الحمو: الموت«

“খবরদার, তোমরা নারীদের নিকট প্রবেশ করবে না, তখন এক আনসারী ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, حمو বা দেবর সম্পর্কে কী বলেন? তিনি বললেন: দেবর হচ্ছে মৃত্যু”। আরবিতে স্বামীর ভাইকে الحمو বলা হয়। তিনি দেবরের সাথে নির্জন সাক্ষাতকে মৃত্যুর মতো অপছন্দ করেছেন।

হাফেয ইবন হাজার রহ. ‘ফাতহুল বারী’: (৯/৩৩১) গ্রন্থে বলেন: ইমাম নাওয়াওয়ী বলেছেন: “ভাষাবিদগণ সবাই একমত যে, الحمو অর্থ স্বামীর নিকটাত্মীয়, যেমন স্বামীর বাবা, স্বামীর চাচা, স্বামীর ভাই, স্বামীর ভাইয়ের ছেলে ও স্বামীর চাচার ছেলে প্রমুখগণ।” তিনি আরো বলেন: “হাদীসে স্বামীর নিকটাত্মীয় দ্বারা উদ্দেশ্য স্বামীর বাবা ও স্বামীর সন্তান ব্যতীত অন্যান্য পুরুষ, কারণ তারা স্ত্রীর জন্য মাহরাম, তাদের সাথে একান্ত সাক্ষাত বৈধ। তাদেরকে মৃত্যু বলা যাবে না।” তিনি বলেন: “ভাইয়ের স্ত্রী তথা ভাবীর সাথে নির্জন সাক্ষাত করার বিষয়টি মানুষ সচরাচর শিথিলভাবে দেখে অথচ তার উদাহরণ হচ্ছে মৃত্যু। সে-ই সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞার পাত্র।” সমাপ্ত।

শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২২) গ্রন্থে বলেন: “الحمو: الموت এ কথার অর্থ হচ্ছে অন্যদের অপেক্ষা তার থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা বেশি, যেমন অন্যান্য ভীতিকর বস্তু থেকে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ভীতিজনক।” সমাপ্ত।

হে মুসলিম বোন! আল্লাহকে ভয় কর, এ বিষয়ে শিথিলতা করো না, যদিও মানুষেরা শিথিলতা করে। কারণ, শরী‘আতের নির্দেশ উপদেশ হিসেবে উত্তম মানুষের অভ্যাস নয়।

খ. কতক নারী ও তাদের অভিভাবক মাহরাম ছাড়া ড্রাইভারের সাথে একাকী চলাফেরার ক্ষেত্রে শিথিলতা করে অথচ এটাও হারাম নির্জনতা।

সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (১০/৫২) বলেন: বর্তমান এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, অপরের গাড়িতে মাহরাম ব্যতীত পর-নারীর একাকী চড়া অনেক অনিষ্টের সঙ্গী হয়। এতে বহু অনিষ্ট রয়েছে যার ব্যাপারে শিথিলতা করা কখনো সমীচীন নয়। হোক সে লজ্জাশীল নারী কিংবা বেশি বয়সের পবিত্রা নারী, যে সাধারণত পুরুষের সাথে কথা বলে থাকে। যে ব্যক্তি তার মাহরাম নারীর জন্য এ জাতীয় আচরণ পছন্দ করে তার দীনদারী দুর্বল, সে পুরুষত্বহীন ও আত্মমর্যাদাবোধশূন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان«           

“কোনো পুরুষ নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হবে না, হলে অবশ্যই তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”।[3]

পর-পুরুষের সাথে গাড়িতে চড়া ঘর ও ঘরের ন্যায় নির্জন সাক্ষাতের চেয়ে বেশি  ক্ষতিকর। এতে যে অনিষ্ট রয়েছে তা নির্জন সাক্ষাতেও নেই।” সমাপ্ত।

মাহরামকে অবশ্যই বড় হওয়া জরুরি, যার উপস্থিতিতে নির্জন সাক্ষাত হয় না, বাচ্চা সাথে থাকাই যথেষ্ট নয়। কতক নারী মনে করে ছোট বাচ্চা থাকলেই নির্জনতা চলে যায় -ভুল ধারণা।

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন: যদি পর-পুরুষ পর-নারীর সাথে তৃতীয় ব্যক্তি ব্যতীত নির্জনে সাক্ষাত করে তবে তা সবার নিকট হারাম। অনুরূপ যদি তার সাথে ছোট কেউ থাকে যার উপস্থিতিতে লজ্জা হয় না বয়স কম হওয়ার কারণে, এরূপ বাচ্চা দ্বারা হারাম নির্জনতা ভঙ্গ হয় না।

গ. কতক নারী ও তার অভিভাবক চিকিৎসার নামে ডাক্তারের সাক্ষাত সম্পর্কে শিথিলতা করেন, এটাও বড় অপরাধ। এতে রয়েছে বড় অনিষ্ট যা মেনে নেওয়া ও যার ওপর চুপ থাকা জায়েয নেই।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. ‘মাজমু‘উল ফতোয়া’য়: (১০/১৩) বলেন: “যাই হোক পর-নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম, চিকিৎসক ডাক্তারের জন্যও হারাম। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان«

“কোনো পুরুষ নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হবে না, হলে অবশ্যই তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”।[4]

অবশ্যই নারীর সাথে কারো থাকা জরুরি, হোক সে তার স্বামী কিংবা কোনো মাহরাম পুরুষ। যদি পুরুষ না পাওয়া যায় অবশ্যই তার নিকট আত্মীয় নারী থাকা জরুরি। যদি উল্লিখিত কাউকে পাওয়া না যায়, এ দিকে অসুখও কঠিন হয় যে বিলম্ব করা সম্ভব নয়, তাহলে অবশ্যই রোগীর সাথে সেবিকা বা তার ন্যায় কাউকে উপস্থিত থাকা জরুরি, যেন নিষিদ্ধ নির্জনতা না হয়।” সমাপ্ত।

অনুরূপ ডাক্তারের পক্ষে কোনো পর-নারীর সাথে সাক্ষাত করা জায়েয নেই, হোক পর-নারী রোগী বা তার ডাক্তারি পেশার সঙ্গী অথবা নার্স। অনুরূপ অন্ধ শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর নির্জন সাক্ষাত বৈধ নয়। অনুরূপ পর-পুরুষের সাথে বিমানে বিমানবালার নির্জন সাক্ষাত বৈধ নয়। পশ্চিমা সভ্যতা ও কাফেরদের অন্ধ অনুকরণের নামে মানুষ তার ব্যাপারে শিথিলতা করছে। কারণ, দীনী বিধানের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। লা-হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ।

অনুরূপ খাদেমার সাথে নির্জন সাক্ষাতও বৈধ নয়, যে তার বাড়িতে কাজ করে। অনুরূপ গৃহিনীর পক্ষে বৈধ নয় খাদেমের সাথে নির্জন সাক্ষাত করা। সেবক-সেবিকা ও খাদেম-খাদ্দামার সমস্যাটি বর্তমান যুগে বিরাট আকার ধারণ করেছে। কারণ, নারীরা পড়াশুনা ও ঘরের বাইরের কাজে ব্যস্ত। তাই মুমিন নারী ও পুরুষদের খুব সতর্ক হওয়া জরুরি। সাবধানতামূলক উপকরণ গ্রহণ করা, কখনো বদ অভ্যাসের সাথে জড়িত না হওয়া।

[1] আহমদ: (৩/৩৩৯)
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৬৫; আহমদ: (১/১৮)
[3] আহমদ: (৩/৩৩৯)
[4] আহমদ: (৩/৩৩৯)
পরিসমাপ্তি: নারীর পর-পুরুষের সাথে সাক্ষাত করা হারাম।

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন: পর-পুরুষের সাথে নারীদের মুসাফা করা কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। হোক তারা যুবতী কিংবা বুড়ো, যুবক কিংবা বৃদ্ধ। কারণ, এতে উভয়ের অনিষ্টের আশঙ্কা রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন:

»إني لا أصافح النساء«

“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”।[1]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:

»ما مست يد رسول الله صلى الله عليه وسلم  يد امرأة قط، ما كان يبايعهن إلا بالكلام«

“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত কখনো কোনো নারীর হাত স্পর্শ করে নি, তিনি তাদেরকে শুধু কথার দ্বারাই বায়‘আত করতেন”।[2]

পর্দার আড়াল কিংবা পর্দা ছাড়া মুসাফাহার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, দলীল কাউকে বাদ দেয় নি। ফিতনার সুড়ঙ্গ পথ বন্ধ করার স্বার্থে সবাইকে নিষেধ করাই শ্রেয়”। সমাপ্ত।

শাইখ মুহাম্মাদ আমীন শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদ-ওয়াউল বায়ান’: (৬/৬০২) গ্রন্থে বলেন: জেনে রাখ যে, পুরুষের পর-নারীর সাথে মুসাফাহা করা বৈধ নয়। নারীর কোনো অঙ্গ পুরুষের কোনো অঙ্গকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। দলীল:

এক. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন:

» إني لا أصافح النساء«

“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”।[3]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَة﴾ [الاحزاب: ٢١]

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। [সূরা আল- আহযাব, আয়াত: ২১]

অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করে নারীদের সাথে মুসাফা না করাই আমাদের কর্তব্য। (পূর্বে আমরা “ইহরাম ও গায়রে ইহরাম কোনো অবস্থায় পুরুষের জন্য জাফরানি রঙ দ্বারা রঙিন করা কাপড় পরিধান করা যাবে না” আলোচনার অধীন সূরা হজে উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদান করেছি এবং সূরা আহযাবের পর্দা সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।[4]) বায়‘আতের সময় নারীদের সাথে মুসাফাহা না করা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, পুরুষ কখনো নারীর সাথে মুসাফাহা করবে না। পুরুষের শরীরের কোনো অংশ নারীর শরীরকে স্পর্শ করবে না। মুসাফাহা অপেক্ষাকৃত হালকা স্পর্শ। বায়‘আতের মুহূর্তেও যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সাথে মুসাফাহা করেন নি, এটিই প্রমাণ করে যে, তাদের সাথে মুসাফাহা করা বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হওয়ার সুযোগ নেই, তিনি স্বীয় কথা, কাজ ও সমর্থন দ্বারা উম্মতকে করণীয় বাতলে দিয়েছেন।

দুই. আমরা পূর্বে বলেছি যে, নারী পুরোটাই সতর, তাই পর্দা করা তার জন্য জরুরি। ফিতনার আশঙ্কায় চোখ অবনত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে সন্দেহ নেই যে, শরীরের সাথে শরীরের স্পর্শ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে, যা চোখের দৃষ্টির চেয়েও অধিক ক্ষতিকর। এ বিষয়গুলো কম-বেশি  সবাই জানে।

তিন. তাকওয়ার অনুপস্থিতি, আমানতদারী না থাকা ও সন্দেহপূর্ণ স্থান পরিহার না করার দরুন পর-নারীর শরীরের স্পর্শই এক প্রকার ভোগ। আমাদের কানে একাধিকবার এসেছে যে, কতক পুরুষ স্বীয় স্ত্রীর বোনের মুখের উপর মুখ রেখে চুমু খায়, যা তাদের নিকট সালামের চুমু হিসেবে খ্যাত। তারা বলে: সালাম করেছে অর্থাৎ চুমু খেয়েছে। সত্যি কথা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, সকল প্রকার ফিতনা, সন্দেহ ও তার উপকরণের পথ বন্ধ করা জরুরি, যার অন্যতম হচ্ছে নারীর শরীরের কোনো অংশকে পুরুষের স্পর্শ করা। হারামের পথ বন্ধ করা ওয়াজিব...”। সমাপ্ত।

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৯৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৪১৮১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৭৪; আহমদ: (৬/৩৫৭) মালিক, হাদীস নং ১৮৪২
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৭৫; আহমদ: (৬/২৭০)
[3] তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৯৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৪১৮১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৭৪; আহমদ: (৬/৩৫৭) মালিক, হাদীস নং ১৮৪২
[4] অর্থাৎ শাইখ শানকীতী রহ. তার তাফসীরে তা আলোচনা করেছেন। এ কিতাবে নয়।

হে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, তোমাদেরকে আল্লাহর উপদেশ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, তিনি বলেন:

﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [النور: ٣٠،  ٣١] 

“(হে নবী আপনি) মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনা মুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপান অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে