লগইন করুন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ﴾ [النور: ٣٠، ٣١]
“(হে নবী আপনি) মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]
আমাদের শাইখ আমিন শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৬/১৮৬ ও ১৮৭) গ্রন্থে বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারী ও পুরুষদের চোখ অবনত ও লজ্জাস্থান হিফাযত করার নির্দেশ দিয়েছেন। লজ্জাস্থান হিফাযত করার একটি অংশ যেনা, সমকামিতা, মানুষের সামনে উলঙ্গ হওয়া ও তাদের সামনে গুপ্তাঙ্গ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা... অতঃপর তিনি বলেন: নারী ও পুরুষ যারাই এ আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর নিদের্শসমূহ পালন করবে তাদের জন্য তিনি মাগফিরাত ও সাওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন, যদি তারা এর সাথে সূরা আহযাবের নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত সিফাতগুলো বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [الاحزاب: ٣٥]
“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]” ‘আদওয়াউল বায়ান’ থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত হলো।
নারী-নারী পরস্পর শরীর ঘর্ষণ করে যৌনকামনা হাসিল করা বড় গুনাহ। এতে লিপ্ত নারীরা কঠিন শাস্তির যোগ্য।
ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনি’: (৮/১৯৮) গ্রন্থে বলেন: যদি দু’জন নারী পরস্পর শরীর ঘর্ষণ করে তারা উভয় অভিশপ্ত ও যিনাকারী। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»إذا أتت المرأة المرأة فهما زانيتان«
“যদি নারী নারীগমন করে তারা উভয়ে যিনাকারিনী”।
তাদেরকে বিচারক সমুচিত শাস্তি দিবে। কারণ, এটা এমন যিনা যার জন্য শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি নেই।[1] সমাপ্ত।
অতএব নারীদের বিশেষ করে যুবতীদের এসব ঘৃণ্য অপকর্ম থেকে সাবধান থাকা জরুরি।
চোখ সংযত রাখা সম্পর্কে ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-জাওয়াবুল কাফি’: (পৃ.১২৯ ও ১৩৫) গ্রন্থে বলেন: চোখের চাহনি হচ্ছে প্রবৃত্তির অগ্রদূত ও বার্তাবহ, তাকে সংযত করাই লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করার মূলমন্ত্র। যে তার দৃষ্টিকে উন্মুক্ত ছেড়ে দিল, সে তার নফসকে ধ্বংসের ঘাটে দাঁড় করাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»يا علي، لا تتبع النظرة النظرة فإنما لك الأولى«
“হে আলী, দৃষ্টির পশ্চাতে দৃষ্টি দিয়ো না, প্রথম দৃষ্টিটি তোমার”।[2] প্রথম দৃষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্য হঠাৎ দৃষ্টি যা অনিচ্ছায় পতিত হয়। তিনি বলেন: ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে আলী থেকে আরো বর্ণিত:
»النظر سهم مسموم من سهام إبليس«
“দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের তীরসমূহ থেকে একটি বিষাক্ত তীর”
... অতঃপর তিনি বলেন: মানুষ যেসব মুসীবতে গ্রেফতার হয় তার মূল হচ্ছে দৃষ্টি। দৃষ্টি চাহিদা সৃষ্টি করে, চাহিদা চিন্তাকে জন্ম দেয়, অতঃপর চিন্তা প্রবৃত্তিকে জন্ম দেয়, অতঃপর প্রবৃত্তি ইচ্ছাকে জন্ম দেয়। অতঃপর ইচ্ছা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত দৃঢ়তায় রূপ নেয়, এভাবেই কার্য বাস্তবায়িত হয় যদি কোনো বাধা প্রতিবন্ধক না হয়। এ জন্য বলা হয়: চোখ অবনত রাখার কষ্ট সহ্য করা তার পরবর্তী দুঃখকে সহ্য করার চেয়ে অনেক সহজ।” সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন, তুমি পুরুষদের থেকে তোমার দৃষ্টি অবনত রাখ। ফিতনা সৃষ্টিকারী ছবির দিকে তাকিয়ো না, যা প্রকাশ করা হয় কতক পত্রিকায় অথবা টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ভিডিওতে, তাহলে তুমি খারাপ পরিণতি থেকে হিফাযতে থাকবে। কত দৃষ্টি যে ব্যক্তির জন্য অনুশোচনার কারণ হয়েছে তার হিসেব নেই। সত্যিই ছোট স্ফুলিঙ্গ থেকে বৃহৎ আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।
[2] আহমদ: (১/১৫৯); দারেমী, হাদীস নং ১৭০৯