প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলে ৩৮ নং, ক্যাথলিক বাইবেলে ৪৫ নং ও ইহুদি বাইবেলে ২৫ নং পুস্তক সখরিয় বা জাকারিয়া (Zechariah)। সখরিয় ৯/৯ বলছে:

‘‘হে সিয়োন-কন্যা, অতিশয় উল্লাস কর; হে জেরুশালেম-কন্যা, জয়ধ্বনি কর। দেখ, তোমার বাদশাহ তোমার কাছে আসছেন; তিনি ধর্মময় ও তাঁর কাছে উদ্ধার আছে (RSV তিনি বিজয়দৃপ্ত এবং বিজয়ী: triumphant and victorious is he; CJB: তিনি ন্যায়নিষ্ঠ এবং তিনি বিজয়দৃপ্ত: He is righteous, and he is victorious)। তিনি নম্র ও গাধার উপর উপবিষ্ট, গাধার বাচ্চার উপর উপবিষ্ট।’’ (মো.-১৩)

বাইবেলের এ বক্তব্যকে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা যীশু খ্রিষ্টের জেরুজালেম আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী বলে গণ্য করেছেন। তিনি গাধার পিঠে বসে জেরুজালেমে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু অনেক গবেষক এ বক্তব্যকে দ্বিতীয় খলীফা উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা) জেরুজালেম আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে গণ্য করেছেন। তারা বলেন, যীশু বিজয়দৃপ্তভাবে জেরুজালেমে প্রবেশ করেননি এবং তিনি জেরুজালেম নিবাসীদেরকে উদ্ধার করেননি। কিন্তু উমার (রা) গাধার পিঠে চড়ে জেরুজালেমে প্রবেশ করেন, তিনি বিজয়দৃপ্তভাবে সেখানে গমন করেন এবং তাঁর এ বিজয়ের মাধ্যমে ইহুদিরা বিগত প্রায় অর্ধ শতাব্দীর নিপীড়ন থেকে উদ্ধার লাভ করেন। বস্ত্তত জেরুজালেমের ইতিহাসে উমার (রা) ছাড়া কোনো প্রকৃত রাজাই এভাবে বিজয় ও বিনয় একত্রিত করে জেরুজালেমে প্রবেশ করেননি।

প্রথম খ্রিষ্টীয় শতক থেকেই ইহুদি জাতির উপরে রোমান শাসকদের নিপীড়ন প্রচণ্ড হয়। ৭০-৭২ খ্রিষ্টাব্দে জেরুজালেম ও মাসজিদুল আকসাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়। লক্ষলক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয় এবং অবশিষ্ট ইহুদিদেরকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৩৬ সালের যুদ্ধের পর সম্রাট হার্ডিয়ান (Hadrian) ইহুদিদের জন্য জেরুজালেমে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেন। শুধু বছরে একদিন ক্রন্দনের জন্য তারা সেখানে আসতে পারতেন। রোমান শাসকদের খ্রিষ্টধর্ম গ্রহনের পরেও এ নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন অব্যাহত থাকে। এ অবস্থাতে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে উমারের (রা) হাতে জেরুজালেম মুসলিম শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়। ইহুদিদের উপর থেকে সকল নিপীড়ন প্রত্যাহার করা হয়। তারা ধর্মপালন ও অন্যান্য স্বাধীনতা লাভ করেন।[1]

৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে উমার (রা) যখন জেরুজালেম আগমন করেন তখন তথাকার খ্রিষ্টান মহাযাজক ছিলেন সফরনিয়াস (Sophronius)। তিনিই খলীফার সাথে আত্মসমর্পনের চুক্তি করেন।[2] মুসলিম ঐতিহাসিক ওয়াকিদী উল্লেখ করেছেন যে, সফরনিয়াস ও তার সহকর্মীগণ উমারকে বাইবেলে উল্লেখকৃত উদ্ধৃারকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করেন।[3]

উল্লেখ্য যে, পরবর্তী ১৪ শ্লোক বলছে: ‘‘আর মাবুদ তাদের উপরে দর্শন দেবেন ও তাঁর তীর বিদ্যুতের মত বের হবে; এবং সার্বভৌম মাবুদ তূরী বাজাবেন, আর দক্ষিণের ঘুর্ণিবাতাস সহকারে গমন করবেন।’’ (জাকারিয়া ৯/১৪, মো.-১৩)

এখানে ‘দক্ষিণের ঘুণিবাতাস’ বলতে ইয়ারমুকের যুদ্ধ বোঝানো হয়েছে বলে মনে করা হয়।[4]

[1] https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_in_the_Bible
[2] https://en.wikipedia.org/wiki/Sophronius_of_Jerusalem
[3] ওয়াকিদী, ফুতুহুল বুলদান, ১ম খণ্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা।
[4] https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_in_the_Bible