মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) ভূমিকা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান ৩ টি

সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তার প্রশংসা করছি। তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। তার নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আমাদের আত্মিক অনিষ্ট ও কর্মসমূহের অমঙ্গল থেকে আশ্রয় কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা যাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন, কেউই তাকে সঠিকপথ প্রদর্শন করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ‘ইলাহ’ নেই। তিনি একক। তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বান্দা ও রসূল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ }

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (সূরা আলে ইমরান ৩:১০২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,


{ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيباً }

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক আত্মা থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে (জনম বিস্তারের মাধ্যমে) ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের নিকট চাও। আর ভয় করো রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়তার ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক রূপে রয়েছেন (সূরা আন নিসা ৪:১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً - يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيماً }

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। এবং তোমরা সঠিক কথা বল। (তাহলে) তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করলো (সূরা আল আহযাব ৩৩:৭০-৭১)।
পরকথা হলো, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি প্রত্যেক রসূলের মৃত্যুর পর এমন কিছু আলিম তৈরি করেছেন; যারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্টতা বর্জন করে হিদায়াতের পথে আহবান করেন। যারা তাদের (স্ব স্ব উম্মাতের পক্ষ থেকে) প্রদত্ত কষ্টে ধৈর্য ধারণ করেন, যারা কুরআন দ্বারা মৃতকে তথা ইসলাম থেকে বিমুখ ব্যক্তিদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেন, যারা অন্ধদেরকে আল্লাহর আলো দ্বারা দৃষ্টিবান করেন। তারা কতই না শয়তান কর্তৃক আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করলেন, কতই না বিপথগামী বিভ্রান্তকে সুপথের দিশা দিলেন! জনসাধারণের সাথে তাদের আচরণ কতই না সুন্দর ছিল! কিন্তু তাদের সাথে জনসাধারণের আচরণ ছিল কতই না খারাপ! তারা আল্লাহর কিতাব কুরআনুল কারীমকে বাড়াবাড়িকারীদের বাড়াবাড়ি, পরিবর্তনকারীদের পরিবর্তন ও অপব্যাখ্যা কারীদের অপব্যাখ্যা থেকে মুক্ত করেন।
আমরা আশা করি যে, আমাদের সম্মানিত শায়েখ সলিহ ইবনে ফাওযান ইবনে আব্দুল্লাহ আল ফাওযান হাফিযাহুল্লাহও (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।


বর্তমান যুগে বিভিন্ন ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ ঢেউয়ের মতো পরস্পর আছড়ে পড়ছে। বিদআত, ফিতনা ও গোমরাহির প্রতি আহবানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্দেহ-সংশয়বাদীদের সংখ্যা, প্রকাশ পাচ্ছে এমন কিছু বই ও পত্রিকা-যেগুলো সুন্নাহর আবরণে শিক্ষার্থীদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। আর সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তাদের ধোঁকার ব্যাপকতা সম্পর্কে কিই বা বলব!
এমতাবস্থায় সম্মানিত শায়েখ ছাত্রদেরকে সুন্নাহর আলোকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা পেশ করেছেন। সুন্নাহর বিভিন্ন ব্যাখ্যাকে সুস্পষ্ট করেছেন। সংশয় নিরসন করেছেন। আর সালাফে সালেহীনের কর্মপদ্ধতির সাথে দ্বিমত পোষণকারী বিভিন্ন বিধ্বংসী পথের আহবায়ক ও কুরআন-সুন্নাহ বিদ্বেষীদের মতামতকে ১৪১৩ হিজরীতে তায়েফ শহরের গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রে দরস, বক্তৃতা ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিশুদ্ধ দলীল প্রমাণ ও সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা খণ্ডন করেছেন।


আমি প্রথমে সেগুলোর রেকর্ড ধারণ করেছি। অতঃপর কিছু ভাইয়ের সাহায্যে সেগুলোকে বিন্যস্ত করেছি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। এরপর আয়াত-হাদীছ সমূহের তথ্যসূত্র ও প্রয়োজনীয় স্থানে টীকা-টিপ্পনি সংযোজন করেছি।
আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর দলীল ভিত্তিক ও সালাফে সালেহীনের বুঝ অনুযায়ী শারঈ জ্ঞান প্রচার-প্রসার করে সুন্নাহর খিদমত করার জন্যই এ কিতাব প্রকাশে আগ্রহী হয়েছি।


সংকলন শেষ করার পর সম্মানিত শায়েখ সলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান (আল্লাহ তাকে হিফাযতে রাখুন এবং আমাদেরকে তার ইলম দ্বারা উপকৃত করুন) এ সমীপে পেশ করেছি। তিনি দেখেছেন ও কিছু সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। এরপর এর উপকারিতা যেন ব্যাপকতা লাভ করে সেজন্য তিনি আমাকে লিখিত অনুমতি প্রদান করেছেন। সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি তাওফীক দান করেছেন।
আল্লাহর সাহায্যে, এই ছিল সালাফদের দাওয়াত প্রচারে আগ্রহী এ অধমের  প্রচেষ্টা। ইচ্ছের পেছনে মূল শক্তির যোগান দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা। আল্লাহ তা‘আলা নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার-পরিজন ও সাথীবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।


আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থী বান্দা
আবূ ফুরাইহান জামাল ইবনে ফুরাইহান আল হুমায়লী আল হারিসী
সোমবার, ৬ই রবিউল আওয়াল ১৪১৪ হি.।
তায়েফ।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করি। তার সাহায্য কামনা করি। তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। এবং আমাদের আত্মিক অনিষ্ট ও কর্মসমূহের অমঙ্গল হতে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ তা‘আলা যাকে সঠিক পথের দিশা দেন কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন কেউই তাকে সঠিকপথ প্রদর্শন করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তার কোনো শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বান্দা ও রসূল।

অতঃপর- গবেষকগণ মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে অত্যন্ত আশ্চর্যবোধ করেন যে, মূর্খ, প্রতারিত-প্রতারক, পথভ্রষ্ট, প্রবৃত্তি পূজারী, আত্মপ্রকাশকারী, জ্ঞানী দাবিদার এবং আমলকারী আলিম, হিদায়াতপ্রাপ্ত অনুসারী, সুপথের অনুসন্ধানকারী, সুন্নাতের সাহায্যকারী, যাদের মাঝে কতই না মতপার্থক্য ও দলাদলি বিদ্যমান। এ ব্যাপারে সত্যবাদী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথার্থই সত্য বলেছেন। তিনি বলেন,

مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلاَفاً كَثِيْراً..

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঐ সময় বেঁচে থাকবে সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে।[1]

কিন্তু এ বোকামি ও পরস্পর মারামারি থেকে উত্তরণের উপায় কী?

নিঃসন্দেহে আল্লাহর কিতাব ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরাই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ مِنْ بَعْدِيْ

তোমাদের উপর আমার সুন্নাহ ও আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা অত্যাবশ্যক।[2]

 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمِا كِتِابَ اللهِ وَسُنَّتِيْ

তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন তোমরা সে দুটোকে আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন বিপথগামী হবে না। তা হচ্ছে- আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) এবং আমার সুন্নাহ (হাদীছ)।[3]

যখনই অধিকাংশ মানুষ এ দুটোকে গুরুত্ব দেয়া ও আঁকড়ে ধরা ছেড়ে দিয়ে প্রবৃত্তি ও যুক্তিকে ওহীর উপর প্রাধান্য দিয়েছে এবং আবেগের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে; তখুনি প্রবৃত্তি তাদেরকে নীচে নামিয়ে দিয়েছে। তাদের পা পিছলে গিয়েছে। ফলে তারা ফিতনায় পতিত হয়েছে। আর এ রশিদ্বয় তথা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহকে ধারণকারীগণ -যারা মাড়ির দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে তারাই সালাফে সালেহীনের পদ্ধতির উপর সুপথপ্রাপ্ত। তারাই হলেন ‘আল ফিরকা আন নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত দল), ‘আত ত্বয়িফাহ আল মানসূরাহ’ (সাহায্যপ্রাপ্ত দল) এবং ‘আল জামাত’। যদিও তারা ছাগলের রাখালই হোক না কেন।

তাদের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِّنْ أُمَّتِيْ عَلىَ الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ وَلَا مَنْ خَالَفَهُمْ.

আমার উম্মাহর একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে তাদের থেকে যারা বিচ্ছিন্ন থাকবে এবং যারা বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।[4]

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মতপার্থক্য বিষয়ক হাদীছে বলেন,

ستفترق أمتي على ثلاث وسبعين فرقة كلها في النار إلا واحدة

‘অচিরেই আমার উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটা দল ব্যতিরেকে তাদের  সকল দলই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[5]

قلنا من هي قال : ( الجماعة )، وقال : من كان على مثل ما أنا عليه اليوم وأصحابي

(ছাহাবায়ে কিরাম বলেন) আমরা বললাম, সে দল কোনটি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (সে দলটি হলো) আল জামাত। তিনি আরো বললেন, আমি এবং আমার ছাহাবীরা যার উপর প্রতিষ্ঠিত আছি এর উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।[6]

সুতরাং সকল মুসলিমের উপর বিশেষত যুবকদের উপর -যারা পরকালীন মুক্তিকামনা করে, আর দুনিয়াতে সুখে থাকতে চায়- তাদের জন্য ওয়াজিব হলো ফিতনার স্থানসমূহ থেকে সতর্ক থাকা, নিরাপদ দূরতেব অবস্থান করা, যাতে তারা ফিতনায় নিমজ্জিত না হয়। যদি তা না করে তবে তারা ফিতনায় নিমজ্জিত হবে।

আর পথভ্রষ্ট দাঈদের থেকে পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। যারা সুন্নাহর লিবাস পরিধান করে, সুন্নাহর নামে কথা বলে। অথচ তারা সুন্নাহ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। কেননা হয় তারা শত্রুদের স্বার্থে কাজ করে নতুবা সুন্নাহর মর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ।

আর আমাদের ধারণা দ্বিতীয় বিষয়টিই তথা তাদের সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলিমদের নিকট থেকে সরাসরি জ্ঞানার্জন করেনি। আর এটাই যখন তাদের অবস্থা তখন কীভাবে তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে? কীভাবেই বা তাদের উপর নির্ভর করা যাবে? আমরা কীভাবেই বা তাদের থেকে ইলম, ফাতওয়া ও দিক নির্দেশনা গ্রহণ করতে পারি? দুর্বলের দ্বারা শুধু দুর্বলতাই বৃদ্ধি পায়।

কুরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণ ছাড়া সঠিক পথের উপর অটল থাকা সম্ভব নয়। আর তা অর্জিত হয় ইলম অন্বেষণ, আলিমদের সংস্পর্শে থাকা, সঠিক পথের দিক-নির্দেশক পূর্ববর্তী আলিমদের বই-পুস্তক অধ্যয়ন, আর তাদের উপকারী ইলম অর্জনে প্রচেষ্টা চালানো, গ্রহণযোগ্য আলিমগণের মত গ্রহণ করা, অপ্রয়োজনীয় বিষয়াবলী বর্জন করা, প্রবৃত্তিপূজারী ও বিদাতীদের কথা ও মত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে।

কেননা প্রবৃত্তিপূজারীরা উম্মাহর জন্য বিপজ্জনক। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আহলে বাইতের নাম উল্লেখ পূর্বক আলোচনা করে। আর এই সুন্দর আলোচনা দ্বারা মূর্খ লোকদের প্রতারিত করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। ঐ সকল প্রবৃত্তিপূজারীদের উদাহরণ হলো মধুর নামে গাছের তিক্ত রস পরিবেশনকারীর মতো, যা সে কখনো কখনো প্রাণনাশক বিষকে প্রতিষেধক হিসাবে পান করায়।

তুমি তাদের ব্যাপারে (সতর্কতামূলক) লক্ষ্য রাখবে। যদিও তুমি পানির সাগরে জনম গ্রহণ করোনি। কিন্তু তুমি প্রবৃত্তির সাগরে জনম গ্রহণ করেছ যা পানির সাগরের থেকেও অধিক গভীর ও অধিক বিশৃঙখল, অধিক গর্জনকারী ও কূল কিনারাহীন।

তোমার এই বিভ্রান্তিপূর্ণ পথ অতিক্রম করার একমাত্র বাহন হলো সুন্নাহর অনুসরণ করা। সুন্নাতের অনুসরণরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়। আমাদের একাকিত্ব, ভাইদের ইমিত্মকাল, সাহায্য কম হওয়া, বিদআত প্রকাশ পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর নিকটই অভিযোগ পেশ করবো। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলিমদের মৃত্যুতে এবং বিদআত প্রকাশিত হওয়ায় এ উম্মাহ কতই না মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হয়েছে! তবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথায় আমাদের জন্য সান্তবনা রয়েছে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لا تزال طائفة من أمتي على الحق ظاهرين

আমার উম্মাহর একটি দল হকের উপর সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।[7]

পর সমাচার হলো,

এটা ‘আল আজউইবাতুল মুফীদাহ আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ’ নামক গ্রন্থের নতুন মোড়কে সজ্জিত তৃতীয় সংস্করণ। যা ১ম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার দীর্ঘদিন পর প্রকাশ পেল। ইতোমধ্যে অনেক নিত্য নতুন ঘটনা ঘটেছে। অনেকেরই পদস্খলন ঘটেছে। অনেকেরই চিন্তা-চেতনা পরিবর্তিত হয়েছে। সুতরাং এমতাবস্থায় উল্লেখিত ঘটনার ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলিমদের মত ও তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে জানা শরীরের জন্য খাবার ও পানীয় গ্রহণের চেয়েও বেশি প্রয়োজন। কেননা শারীরিক রোগ আর অন্তরের রোগ সমান নয়। অন্তরে রোগ প্রবেশ করলে যদি তা বের করে ফেলার মতো কেউ না থাকে তাহলে তা ব্যক্তির দুনিয়া এবং আখিরাত সবই নষ্ট করে দেয়।

আল্লাহর নিকট দু‘আ করি তিনি যেন আমাদেরকে সত্য সঠিক পথ প্রদান করেন। আর আমাদের শায়েখকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। দরূদ ও শান্তিধারা বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার ও ছাহাবীগণের উপর।


আবূ ফুরাইহান জামাল ইবনে ফুরাইহান আল হুমায়লী আল হারিসী

১৩ ই শাবান, ১৪২৩ হি., শনিবার ফজরের পর।

[1]. সহীহ: সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪৩, সুনানুল কুবরা বাইহাকী হা/২০৩৩৮, মুসনাদে আহমাদ।

[2]. সহীহ: সুনানে আবু দাউদ হা/৪৬০৭।

[3]. সহীহ: মুস্তাদরাক হাকীম হা/৩১৯, সুনানুল ক্বুবরা বাইহাকী হা/২০১২৪, সহীহ জামি হা/৩২৩২, ২৯৩৭।

[4]. সহীহ: মুসলিম হা/১৯২০

[5]. হাকিম ০১/১২৯

[6]. হাসান: তিরমিযি হা/২৬৪১

[7]. সহীহ: সুনানে তিরমিযী হা/২২২৯
এই পুস্তিকার ৩য় সংস্করণ প্রকাশের ব্যাপারে শায়খের অনুমতি

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। অতঃপর আমি শায়েখ জামাল ইবনে ফুরাইহান আল হারিসীকে ‘আল আজউইবাতুল মুফীদাহ আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ’ বইটি পুনঃমুদ্রণের অনুমতি প্রদান করলাম। এ বইটি মূলতঃ বিভিন্ন শ্রেণিতে ছাত্রদের প্রশ্নের সমাধানে আমার প্রদেয় জবাবের সংকলন।
আমি তার অপূর্ব সংযোজন ও টীকা টিপ্পনীসহ পুনঃপ্রকাশের অনুমতি প্রদান করেছি।
আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে সত্য জেনে তদনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আল্লাহর রহমত ও শান্তিধারা বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবারবর্গ ও ছাহাবীগণের উপর।

ড. সলিহ ইবনে ফাওযান ইবনে আব্দুল্লাহ আল ফাওযান
২৩ জিলহজব ১৪২৩ হিজরী

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে