সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তার প্রশংসা করছি। তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। তার নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আমাদের আত্মিক অনিষ্ট ও কর্মসমূহের অমঙ্গল থেকে আশ্রয় কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা যাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন, কেউই তাকে সঠিকপথ প্রদর্শন করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ‘ইলাহ’ নেই। তিনি একক। তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বান্দা ও রসূল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ }
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (সূরা আলে ইমরান ৩:১০২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
{ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيباً }
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক আত্মা থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে (জনম বিস্তারের মাধ্যমে) ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের নিকট চাও। আর ভয় করো রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়তার ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক রূপে রয়েছেন (সূরা আন নিসা ৪:১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً - يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيماً }
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। এবং তোমরা সঠিক কথা বল। (তাহলে) তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করলো (সূরা আল আহযাব ৩৩:৭০-৭১)।
পরকথা হলো, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি প্রত্যেক রসূলের মৃত্যুর পর এমন কিছু আলিম তৈরি করেছেন; যারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্টতা বর্জন করে হিদায়াতের পথে আহবান করেন। যারা তাদের (স্ব স্ব উম্মাতের পক্ষ থেকে) প্রদত্ত কষ্টে ধৈর্য ধারণ করেন, যারা কুরআন দ্বারা মৃতকে তথা ইসলাম থেকে বিমুখ ব্যক্তিদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেন, যারা অন্ধদেরকে আল্লাহর আলো দ্বারা দৃষ্টিবান করেন। তারা কতই না শয়তান কর্তৃক আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করলেন, কতই না বিপথগামী বিভ্রান্তকে সুপথের দিশা দিলেন! জনসাধারণের সাথে তাদের আচরণ কতই না সুন্দর ছিল! কিন্তু তাদের সাথে জনসাধারণের আচরণ ছিল কতই না খারাপ! তারা আল্লাহর কিতাব কুরআনুল কারীমকে বাড়াবাড়িকারীদের বাড়াবাড়ি, পরিবর্তনকারীদের পরিবর্তন ও অপব্যাখ্যা কারীদের অপব্যাখ্যা থেকে মুক্ত করেন।
আমরা আশা করি যে, আমাদের সম্মানিত শায়েখ সলিহ ইবনে ফাওযান ইবনে আব্দুল্লাহ আল ফাওযান হাফিযাহুল্লাহও (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
বর্তমান যুগে বিভিন্ন ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ ঢেউয়ের মতো পরস্পর আছড়ে পড়ছে। বিদআত, ফিতনা ও গোমরাহির প্রতি আহবানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্দেহ-সংশয়বাদীদের সংখ্যা, প্রকাশ পাচ্ছে এমন কিছু বই ও পত্রিকা-যেগুলো সুন্নাহর আবরণে শিক্ষার্থীদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। আর সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তাদের ধোঁকার ব্যাপকতা সম্পর্কে কিই বা বলব!
এমতাবস্থায় সম্মানিত শায়েখ ছাত্রদেরকে সুন্নাহর আলোকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা পেশ করেছেন। সুন্নাহর বিভিন্ন ব্যাখ্যাকে সুস্পষ্ট করেছেন। সংশয় নিরসন করেছেন। আর সালাফে সালেহীনের কর্মপদ্ধতির সাথে দ্বিমত পোষণকারী বিভিন্ন বিধ্বংসী পথের আহবায়ক ও কুরআন-সুন্নাহ বিদ্বেষীদের মতামতকে ১৪১৩ হিজরীতে তায়েফ শহরের গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রে দরস, বক্তৃতা ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিশুদ্ধ দলীল প্রমাণ ও সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা খণ্ডন করেছেন।
আমি প্রথমে সেগুলোর রেকর্ড ধারণ করেছি। অতঃপর কিছু ভাইয়ের সাহায্যে সেগুলোকে বিন্যস্ত করেছি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। এরপর আয়াত-হাদীছ সমূহের তথ্যসূত্র ও প্রয়োজনীয় স্থানে টীকা-টিপ্পনি সংযোজন করেছি।
আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর দলীল ভিত্তিক ও সালাফে সালেহীনের বুঝ অনুযায়ী শারঈ জ্ঞান প্রচার-প্রসার করে সুন্নাহর খিদমত করার জন্যই এ কিতাব প্রকাশে আগ্রহী হয়েছি।
সংকলন শেষ করার পর সম্মানিত শায়েখ সলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান (আল্লাহ তাকে হিফাযতে রাখুন এবং আমাদেরকে তার ইলম দ্বারা উপকৃত করুন) এ সমীপে পেশ করেছি। তিনি দেখেছেন ও কিছু সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। এরপর এর উপকারিতা যেন ব্যাপকতা লাভ করে সেজন্য তিনি আমাকে লিখিত অনুমতি প্রদান করেছেন। সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি তাওফীক দান করেছেন।
আল্লাহর সাহায্যে, এই ছিল সালাফদের দাওয়াত প্রচারে আগ্রহী এ অধমের প্রচেষ্টা। ইচ্ছের পেছনে মূল শক্তির যোগান দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা। আল্লাহ তা‘আলা নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার-পরিজন ও সাথীবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।
আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থী বান্দা
আবূ ফুরাইহান জামাল ইবনে ফুরাইহান আল হুমায়লী আল হারিসী
সোমবার, ৬ই রবিউল আওয়াল ১৪১৪ হি.।
তায়েফ।