পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২০-[২৩] উক্ত রাবী [আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: একদিন সুলায়মান ’আলায়হিস সালাম (কসম করে) বললেন, অবশ্যই আমি আজ রাত্রে আমার নব্বইজন স্ত্রীর নিকটে গমন করব, অন্য এক বর্ণনায় আছে, একশত স্ত্রীর কাছে গমন করব। আর প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে অশ্বারোহী মুজাহিদ গর্ভে ধারণ করবে এবং এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন মালাক (ফেরেশতা) তাঁকে বললেন, ’ইনশা-আল্লা-হ’ বলুন! কিন্তু সুলায়মান আলায়হিস সালাম তা বলতে ভুলে যান। অতঃপর তিনি সমস্ত স্ত্রীদের কাছে গমন করলেন, কিন্তু একজন স্ত্রী ছাড়া তাদের আর কেউই গর্ভধারণ করল না। সেও অর্ধ অঙ্গের একটি সন্তান। [নবী (সা.) বলেন] সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার মুহাম্মাদ -এর প্রাণ! যদি তিনি ইনশা-আল্লা-হ বলতেন, তাহলে (সবগুলো সন্তানই জন্ম নিত এবং) তারা সকলেই অশ্বারোহী হয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ سُلَيْمَانُ: لَأَطُوفَنَّ اللَّيْلَةَ عَلَى تِسْعِينَ امْرَأَةٍ - وَفِي رِوَايَةٍ: بِمِائَةِ امْرَأَةٍ - كُلُّهُنَّ تَأْتِي بِفَارِسٍ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. فَقَالَ لَهُ الْمَلَكُ: قُلْ إِنْ شَاءَ اللَّهُ. فَلَمْ يَقُلْ وَنَسِيَ فَطَافَ عَلَيْهِنَّ فَلَمْ تحملْ منهنَّ إِلا امرأةٌ واحدةٌ جاءتْ بشقِّ رَجُلٍ وَأَيْمُ الَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ قَالَ: إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ الله فُرْسَانًا أجمعونَ . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2819) و مسلم (25 / 1654)، (4286) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (لَأَطُوفَنَّ) শাব্দিক অর্থ আমি প্রদক্ষিণ করব, ঘুরব। স্ত্রীদের কাছে প্রদক্ষিণ বলে সহবাসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
(وَفِي رِوَايَةٍ: بِمِائَةِ امْرَأَةٍ) “একটি বর্ণনায় একশো স্ত্রীর কথা রয়েছে।” স্ত্রীদের সংখ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রে হাদীসটি মুযতারাব। বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন সংখ্যা কথা বলা হয়েছে। নব্বই ও একশোর বর্ণনা ছাড়াও কোন কোন বর্ণনায় ষাট, কোন বর্ণনায় সত্তর, আবার কোন বর্ণনায় নিরান্নব্বই সংখ্যার কথা রয়েছে। আবার বুখারীর বর্ণনায় সংখ্যা ছাড়া (على نِسَائِ) বলা হয়েছে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সংখ্যা বর্ণনার এ ভিন্নতা পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়। কেননা ছোট সংখ্যা উল্লেখের দ্বারা বড় সংখ্যা নাকচ করা হয় না। এটা হলো সংখ্যার বিপরীত মর্ম। আর সংখ্যার ক্ষেত্রে বিপরীত গ্রহণযোগ্য না হওয়া জামহুর উসূলবিদদের মতামত। এখানে নবীদের শক্তি ও ক্ষমতার বিশেষত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। একই রাতে এত জন নারীর সাথে সহবাস করার শক্তি ও সামর্থ্য কেবল নবীর বৈশিষ্ট্য হতে পারে। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: শপথ, অনুচ্ছেদ: শপথে ইসতিসনা)
(فَقَالَ لَهُ الْمَلَكُ) “মালাক (ফেরেশতা) তাকে বলল।” মালাক বলতে ডান কাঁধে নিয়োজিত মালাক হতে পারেন, আবার জিবরীল হতে পারেন, আবার অন্য কোন মালাকও হতে পারেন।
(فَلَمْ يَقُلْ وَنَسِيَ) “তিনি বলেননি, আর ভুলে গেছেন” এর দ্বারা বুঝা যায় তিনি মালাকের (ফেরেশতার) নির্দেশের সাথে সাথে তৎক্ষণাৎ ‘ইনশা-আল্লা-হ' না বললেও পরে বলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পরে ভুলে গেছেন। অথবা মন থেকে ‘ইনশা-আল্ল-হ’র স্বীকারোক্তিকে তিনি যথেষ্ট মনে করেছেন। কিন্তু অন্তর ও মুখ দিয়ে ‘ইনশা-আল্ল-হ' বলাটাই হলো পূর্ণাঙ্গ ‘ইনশা-আল্ল-হ', যা উচ্চ স্তরের ব্যক্তির জন্য বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরের মানুষের নবীর ক্ষেত্রে এই পদস্খলন হওয়ায় আল্লাহ তাকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন।
(بشقِّ رَجُلٍ) অর্থাৎ অর্ধেক বাচ্চা, বা অসম্পন্ন বাচ্চা। সম্পন্ন বাচ্চা না হওয়াকে অর্ধ বাচ্চা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।
হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, কোন কাজ করার ইচ্ছা করলে কাজের শুরুতে ‘ইনশা-আল্লা-হ’ বলা মুসতাহাব। অর্থাৎ ‘ইনশা-আল্ল-হ আমি এ কাজটি করব' এমন বলা। এর উদ্দেশ্য হলো কাজের মাঝে আল্লাহর নামের বরকত লাভ এবং কাজটি সহজ হওয়ার প্রার্থনা। এই নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِکَ غَدًا ﴿ۙ۲۳﴾ اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰهُ.. ﴿۲۴﴾) “আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামীকাল করব। আল্লাহ ইচ্ছা করলে বলা ব্যতিরেকে..."- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ : ২৩-২৪)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)