পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭০৯-[১২] অপর এক বর্ণনায় আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা নবীদের একে অপরের মধ্যে একজনকে আরেকজনের ওপর প্রধান্য দিয়ো না। (বুখারী ও মুসলিম)
আর আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) -এর অপর এক বর্ণনায় আছে- তিনি (সা.) বলেছেন: তোমরা নবীদের মধ্যে একজনকে আরেকজনের ওপর মর্যাদা প্রদান করো না।
الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَفِي رِوَايَةِ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: «لَا تُخَيِّرُوا بَيْنَ الْأَنْبِيَاءِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي هُرَيْرَة: «لَا تفضلوا بَين أَنْبيَاء الله»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6916) و مسلم (163 / 2374)، (6156) و روایۃ سیدنا ابی ھریرۃ رضی اللہ عنہ ، رواھا البخاری (3414) و مسلم (159 / 2372)، (6156) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উভয় বর্ণনার মর্ম এক। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর উক্তি “আমাকে মূসার ওপর মর্যাদা দিও না”, “আমাকে মূসার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না।” এটা তিনি প্রথম দিকে বিনয়ের আকারে বলেছেন; যাতে উম্মত নিজ থেকে নবীদের মাঝে তুলনা না করে এবং একজনকে অপরজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব না দেয়। কেননা এটা গোড়ামীর দিকে পৌছিয়ে দিবে এবং শয়তান তাদের ওপর আরোহী হয়ে তাদেরকে কারো বেলায় সীমালঙ্ঘন এবং কারো বেলায় যথাযথ মর্যাদা না দেয়ার দিকে পৌছিয়ে দিবে। তখন শ্ৰেষ্ঠকে তার শ্রেষ্ঠত্বের সীমা ছড়িয়ে দিবে এবং যিনি তুলনামূলক কম শ্রেষ্ঠ তাকে তার মর্যাদা থেকে নামিয়ে দিবে। এভাবে তারা ভ্রান্তিতে নিপতিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কথাও একই ধরনের অর্থ বহন করে। لَا أَقُوْلُ إِنَّ أَحَدًا أَفْضَلُ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى
“আমি কাউকে ইউনুস ইবনু মাত্তা থেকে শ্রেষ্ঠ বলি না।” (সহীহুল বুখারী- অধ্যায়: নবীদের বর্ণনা, হা. ৩৪১৫)
অর্থাৎ আমি আমার নিজের পক্ষ থেকে কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দেই না। কেননা রিসালাত ও নুবুওয়্যাতের দিক থেকে সবাই সমান। বরং যাকেই নুবুওয়্যাত দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছে তাদের সকলের সম্মানের কথা বলি। এদিকেই কুরআন মাজীদের ইঙ্গিত হলো
(لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ) “আমরা তাদের কারো মাঝে পার্থক্য করি না।” (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৩৬)
অন্যান্য নবীদের মাঝে ইউনুস আলায়হিস সালাম -এর কথা বিশেষভাবে বলার কারণ হলো, আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে ইউনুস আলায়হিস সালাম -এর কিছু কাহিনী তুলে ধরেছেন, যেখানে তাঁর পলায়ন ও উম্মতের ওপর বিরক্ত হওয়া, ধৈর্য না ধরার কথা রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ لَا تَکُنۡ کَصَاحِبِ الۡحُوۡتِ) “আর তুমি মাছওয়ালার মতো হয়ো না”- (সূরা আল কলাম ৬৮ : ৪৮)। অন্যত্র বলেন, (وَ هُوَ مُلِیۡمٌ) “আর সে তিরস্কৃত”- (সূরাহ্ আস্ সফফাত ৩৭ : ১৪২)। এগুলো রাসূল (সা.) তাঁর উম্মাতের বেলায় ইউনুস আলায়হিস সালাম -এর সম্মানহানী ঘটানোর ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত হতে পারেননি। তাই উম্মাতকে সতর্ক করার জন্য নবী (সা.) ইউনুস আলায়হিস সালাম -এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তার জীবনের যেসব ঘটনা ঘটেছে এগুলো তার নুবুওয়্যাতকে কলঙ্কিত করে না বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।