পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭০৮-[১১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] বলেন, একবার একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহূদী একে অপরে গালাগালিতে লিপ্ত হলো। মুসলিম লোকটি বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি মুহাম্মাদ (সা.) - কে সমস্ত জগতের উপর নির্বাচন করেছেন। তখন ইয়াহুদী বলে উঠল, শপথ সেই সত্তার! যিনি মূসা আলায়হিস সালামকে সারা জগতের উপর নির্বাচন করেছেন। (এ কথাটি শুনামাত্রই) মুসলিম লোকটি তৎক্ষণাৎ ইয়াহূদীর গালে একটি থাপ্পড় মারল। অতঃপর সেই ইয়াহূদী নবী (সা.) -এর কাছে গিয়ে তার ও মুসলিম লোকটির মধ্যে সংঘটিত ব্যাপারটি তাঁকে জানাল। তখন নবী (সা.) লোকটিকে ডেকে আনলেন এবং ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, সেও ঘটনাটি বর্ণনা করল। তখন নবী (সা.) বললেন, ’আমাকে মূসা আলায়হিস সালাম -এর ওপর প্রাধান্য দিতে যেয়ো না। কেননা কিয়ামতের দিন সকল মানুষই হুশ হারিয়ে ফেলবে, আমিও তাদের সাথে বেহুশ থাকব। তবে আমি সর্বপ্রথম হুঁশ ফিরে পেতেই দেখব, মূসা আলায়হিস সালাম ’আরশের এক কিনারা ধরে রয়েছেন। তবে আমি জানি না, তিনিও বেহুশ হয়েছেন এবং আমার পূর্বেই হুঁশপ্রাপ্ত হয়েছেন অথবা তিনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে মহান আল্লাহ (বেহুঁশ হওয়া হতে) বাদ রেখেছেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে -
নবী (সা.) বলেছেন: আমি জানি না, তূর পাহাড়ের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুশ হয়েছিলেন, তা হিসাবে রাখা হয়েছে অথবা আমার পূর্বেই তিনি হুঁশ ফিরে পেয়েছেন? তিনি আরো বলেছেন, ’আমি এটাও বলব না যে, কোন লোক ইউনুস ইবনু মাত্তা অপেক্ষা উত্তম।
الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْهُ قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَرَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ. فَقَالَ الْمُسْلِمُ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُحَمَّدًا عَلَى الْعَالَمِينَ. فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُوسَى عَلَى الْعَالَمِينَ. فَرَفَعَ الْمُسْلِمُ يَدَهُ عِنْدَ ذَلِكَ فَلَطَمَ وَجْهَ الْيَهُودِيِّ فَذَهَبَ الْيَهُودِيُّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ بِمَا كَانَ من أمره وأمرِ الْمُسلم فَدَعَا النَّبِي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُسْلِمَ فَسَأَلَهُ عَنْ ذَلِكَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُخَيِّرُونِي عَلَى مُوسَى فَإِنَّ النَّاسَ يُصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأُصْعَقُ مَعَهُمْ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ فَإِذَا مُوسَى بَاطِشٌ بِجَانِبِ الْعَرْشِ فَلَا أَدْرَى كَانَ فِيمَنْ صُعِقَ فَأَفَاقَ قَبْلِي أَوْ كَانَ فِيمَنِ اسْتَثْنَى اللَّهُ.» . وَفِي رِوَايَةٍ: فَلَا أَدْرِي أَحُوسِبَ بِصَعْقَةِ يَوْمِ الطُّورِ أَوْ بُعِثَ قَبْلِي؟ وَلَا أَقُولُ: أَنَّ أَحَدًا أَفْضَلَ مِنْ يُونُسَ بنِ مَتَّى
رواہ البخاری (2411) [و مسلم (160 / 2373)، (6151) الروایۃ الثانیۃ : البخاری (3415)] ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (اسْتَبَّ رَجُلٌ) বুখারীর এক বর্ণনায় এই ঘটনার শুরুর বিবরণ এভাবে রয়েছে, “একবার এক ইয়াহূদী তার কিছু দ্রব্য-সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাকে এমন কিছু দেয়া হলো যা সে পছন্দ করল না। তখন সে বলল, না! সেই সত্তার কসম, যে মূসা আলায়হিস সালাম-কে মানব জাতির ওপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনসারী (মুসলিম) শুনলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আর তার (ইয়াহুদীর) মুখের উপর এক চড় মারলেন।” (সহীহুল বুখারী- অধ্যায়: তাফসীর, হা. ৩২৬১)
এ থেকে বুঝা যায়, মূলত দ্রব্য-সামগ্রীর কেনাবেচা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কের এক পর্যায়ে ইয়াহূদী মূসা আলায়হিস সালাম-কে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ বলার কারণে মুসলিম আনসার ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মূলত রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা তাকে এমন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
(لَا تُخَيِّرُونِي عَلَى مُوسَى) অর্থাৎ আমাকে মূসার ওপর বেশি মর্যাদা দিও না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, (لا تفضلو ابين أنبياء اللَّه) “আল্লাহর নবীগণের মধ্যে কাউকে কারো ওপর মর্যাদা দান করো না।” এর কারণ হলো, অন্যের সাথে তুলনা করে কারো শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করলে অন্যজনের প্রতি অবজ্ঞা ও হেয় প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কোন নবীর প্রতি অবজ্ঞা ও হেয় প্রদর্শন বৈধ নয়।
(يُصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) “কিয়ামত দিবসে বেহুশ হবে” কিয়ামতের দিন চারবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। প্রথম ফুৎকার হবে সবাইকে মেরে ফেলার ফুৎকার। এই ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে পৃথিবীতে যারা জীবিত ছিল তাদের সবাই মারা যাবে। দ্বিতীয় ফুৎকার; এই ফুৎকার দিলে আবার সবাই কবর থেকে জেগে উঠবে এবং হিসাবের জন্য সমবেত হবে। তৃতীয় ফুৎকার; ভীতি ও বেহুশের। চতুর্থ ফুৎকার; সবার হুশ ফিরে আসার জন্য। (ফাতহুল বারী হা, ৬/৪৪৬)
বাহ্যত তৃতীয় ফুৎকারই উদ্দেশ্য, যা কিয়ামত দিবসে সমবেত হওয়ার পরের প্রথম ফুৎকার। এই ফুঁৎকারে বেহুশ হওয়ার পর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হুঁশ ফিরে পাবেন তখন দেখবেন মূসা আলায়হিস সালাম ‘আরশের একটি খুঁটি ধরে রয়েছেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বুঝতে পারেননি, তিনি বেহুশ হয়ে সবার আগে হুঁশ ফিরে পেয়েছেন, নাকি বেঁহুশই হননি। অর্থাৎ আমার আগে তিনি হুঁশ ফিরে পেলে এখানে তার মর্যাদা স্পষ্ট। আর যদি তিনি বেঁহুশ না-ই হন বরং আল্লাহ তা'আলাকে তাকে ব্যতিক্রম করে রাখেন, তবে এখানেও তার মর্যাদা স্পষ্ট। নবীদের মাঝে তুলনা ও কাউকে কারো ওপর মর্যাদা দেয়া নিষেধের কারণ সম্পর্কে ‘উলামারা বলেন, এই নিষেধ ঐ ব্যক্তির জন্য যে তার নিজের রায় থেকে একে অপরকে মর্যাদা দিবে। দলীলটি কোন নবীর ওপর অন্য কোন নবীকে মর্যাদাগতভাবে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে নয়। অথবা যে এমনভাবে কারো মর্যাদা দিবে যার কারণে অন্যের মর্যাদার অসম্মান করা হয় এবং এর মাধ্যমে পরস্পর ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। অথবা হাদীসের অর্থ এই যে, সব গুণে একজনকে অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। (ফাতহুল বারী হা, ৬/৪৪৬)