৫৪৯৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা

৫৪৯৪-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (আমার পিতা) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদল সাহাবীসহ সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর কাছে গমন করলেন। তারা সকলে ইবনু সাইয়্যাদ-কে বানী মাগালাহ্-এর টিলার পাদদেশে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলাধুলা করতে দেখতে পান। সে সময় ইবনু সাইয়্যাদ প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার কাছাকাছি বয়সী ছিল। কিন্তু সে নবী (সা.) -এর আগমন অনুভব করতে পারেনি। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার পিঠে হাত মেরে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনু সাইয়্যাদ রাসূল (সা.) -কে লক্ষ্য করে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, আমি (ইবনু সাইয়্যাদ) আল্লাহর রাসূল? তখন নবী (সা.) তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। এরপর তিনি (সা.) ইবনু সাইয়্যাদ-কে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখতে পাও? সে বলল, আমার কাছে সত্যবাদী (ফেরেশতা) ও মিথ্যাবাদী (শয়তান) উভয়েই আগমন করে থাকে।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার নিকট প্রকৃত ব্যাপার হজবরল হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি (আমার অন্তরে) একটি বিষয় তোমার নিকট গোপন করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) (یَوۡمَ تَاۡتِی السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِیۡنٍ) অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে যা সুস্পষ্ট (দেখা যাবে)”- (সূরাহ আদ দুখান ৪৪: ১০) তা থেকে গোপন রাখলেন।
ইবনু সাইয়্যাদ বলল, লুক্কায়িত কথা হলো, ’দুখ’ (ধোঁয়া)। তিনি (সা.) বললেন, তুমি দূর হও। কখনো তুমি নিজের সীমার বাইরে যেতে পারবে না। (অর্থাৎ ওয়াহী সম্পর্কে তোমার কোন ধারণাই নেই) এ সময় ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। সেই যদি (দাজ্জাল) হয়, তাহলে তুমি তাকে কাবু করতে সক্ষম হবে না।

আর যদি সে না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করায় কোন লাভ নেই। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, এরপর একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও উবাই ইবনু কা’ব আল আনসারী (রাঃ) সেই খেজুর উদ্যানের দিকে রওয়ানা হলেন, যেখানে ইবনু সাইয়্যাদ ছিল। তিনি খেজুর গাছের আড়ালে গোপনে অগ্রসর হলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল ইবনু সাইয়্যাদ তাকে দেখার আগেই তিনি তার কিছু কথা শুনে নেবেন। তখন ইবনু সাইয়্যাদ একটি চাদর জড়িয়ে তার বিছানায় শোয়া ছিল এবং গুনগুন শব্দ করছিল। তখন সাইয়্যাদ-এর মা দেখতে পেল, নবী (সা.) খেজুর গাছের ডালের আড়ালে রয়েছেন। অতএব সে ইবনু সাইয়্যাদকে ডাক দিল, হে সফ! আর এটা ইবনু সাইয়্যাদ এর নাম, এই যে মুহাম্মাদ! তৎক্ষণাৎ ইবনু সাইয়্যাদ চুপ হয়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তার মা তাকে ঐভাবে থাকতে দিত, তাহলে সমস্ত কিছু স্পষ্ট হয়ে যেত। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও জনগণের মাঝে (ভাষণ দিতে) দাঁড়ালেন। আল্লাহ তা’আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করে দাজ্জালের বিষয় উল্লেখ করে বললেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে বিশেষভাবে সাবধান করে দিচ্ছি। মূলত এমন কোন নবী অতীত হননি যিনি তাঁর জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করেন নাই। কিন্তু আমি তার সম্পর্কে এমন একটি কথা বলতে চাই, যা অন্য কোন নবী স্বীয় জাতিকে বলেননি। তোমরা জেনে রাখ, সে (দাজ্জাল) কানা, আর তোমরা এটাও জেনে রাখ যে, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بن الْخطاب انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِهِ قِبَلَ ابْنِ الصياد حَتَّى وجدوهُ يلعبُ مَعَ الصّبيانِ فِي أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ يَوْمَئِذٍ الْحُلُمَ فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظَهْرَهُ بِيَدِهِ ثمَّ قَالَ: «أتشهدُ أَنِّي رسولُ الله؟» فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الْأُمِّيِّينَ. ثُمَّ قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ فَرَصَّهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «آمَنت بِاللَّه وبرسلِه» ثمَّ قَالَ لِابْنِ صيَّاد: «مَاذَا تَرَى؟» قَالَ: يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُلِّطَ عَلَيْكَ الْأَمْرُ» . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي خَبَّأْتُ لَكَ خَبِيئًا» وَخَبَّأَ لَه: (يومَ تَأتي السَّماءُ بدُخانٍ مُبينٍ) فَقَالَ: هُوَ الدُّخُّ. فَقَالَ: «اخْسَأْ فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ» . قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَأْذَنُ لي فِي أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ يَكُنْ هُوَ لَا تُسَلَّطْ عَلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ هُوَ فَلَا خير لَك فِي قَتْلِهِ» . قَالَ ابْنُ عُمَرَ: انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بْنُ كَعْبٍ الْأَنْصَارِيُّ يَؤُمَّانِ النَّخْلَ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ وَهُوَ يَخْتِلُ أنْ يسمعَ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ وَابْنُ صَيَّادٍ مُضْطَجِعٌ عَلَى فِرَاشِهِ فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا زَمْزَمَةٌ فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ. فَقَالَتْ: أَيْ صَافُ - وَهُوَ اسْمُهُ - هَذَا مُحَمَّدٌ. فَتَنَاهَى ابْنُ صَيَّادٍ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ» . قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: «إِنِّي أُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (1354 ۔ 1355) و مسلم (95 / 2930)، (7354) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن عبد الله بن عمر ان عمر بن الخطاب انطلق مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في رهط من اصحابه قبل ابن الصياد حتى وجدوه يلعب مع الصبيان في اطم بني مغالة وقد قارب ابن صياد يومىذ الحلم فلم يشعر حتى ضرب رسول الله صلى الله عليه وسلم ظهره بيده ثم قال: «اتشهد اني رسول الله؟» فقال: اشهد انك رسول الاميين. ثم قال ابن صياد: اتشهد اني رسول الله؟ فرصه النبي صلى الله عليه وسلم ثم قال: «امنت بالله وبرسله» ثم قال لابن صياد: «ماذا ترى؟» قال: ياتيني صادق وكاذب. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خلط عليك الامر» . قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اني خبات لك خبيىا» وخبا له: (يوم تاتي السماء بدخان مبين) فقال: هو الدخ. فقال: «اخسا فلن تعدو قدرك» . قال عمر: يا رسول الله اتاذن لي في ان اضرب عنقه؟ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان يكن هو لا تسلط عليه وان لم يكن هو فلا خير لك في قتله» . قال ابن عمر: انطلق بعد ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم وابي بن كعب الانصاري يومان النخل التي فيها ابن صياد فطفق رسول الله صلى الله عليه وسلم يتقي بجذوع النخل وهو يختل ان يسمع من ابن صياد شيىا قبل ان يراه وابن صياد مضطجع على فراشه في قطيفة له فيها زمزمة فرات ام ابن صياد النبي صلى الله عليه وسلم وهو يتقي بجذوع النخل. فقالت: اي صاف - وهو اسمه - هذا محمد. فتناهى ابن صياد. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لو تركته بين» . قال عبد الله بن عمر: قام رسول الله صلى الله عليه وسلم في الناس فاثنى على الله بما هو اهله ثم ذكر الدجال فقال: «اني انذركموه وما من نبي الا وقد انذر قومه لقد انذر نوح قومه ولكني ساقول لكم فيه قولا لم يقله نبي لقومه تعلمون انه اعور وان الله ليس باعور» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (1354 ۔ 1355) و مسلم (95 / 2930)، (7354) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ) উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) সাহাবীদের একটি ছোট দলসহ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর উদ্দেশে বের হলেন। তারা তাকে মুগালাবাহ্ গোত্রের ছেলেদের সাথে খেলা রত অবস্থায় পেলেন। সে সময় ইবনু সাইয়্যাদ ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালেগ হওয়ার উপক্রম। নবী (সা.)
তার অজান্তেই পিছন দিক থেকে তার পিঠের উপর হাত রেখে বললেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর সে হতচকিত হয়ে অথবা রাগান্বিত হয়ে তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিরক্ষর ‘আরবদের নবী।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে ‘আরবদের কথা বলেছে, কারণ সে সময় অধিকাংশ ‘আরব লেখাপড়া জানত না। ইবনু সাইয়্যাদ তার কথায় যদিও একদিকে সত্যবাদী কিন্তু অপরদিকে শুধু ‘আরবের প্রতি রিসালাতকে সম্পৃক্ত করে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হয়। কেননা তিনি 'আরব ও অনরাব সকলের জন্য প্রেরিত নবী। তার এ কথা ইয়াহুদীদের কথার মতই। এটা শয়তান কর্তৃক তাকে শিখানো কথা অথবা সে ইয়াহূদীদের কাছে শুনে এ কথা বলেছে।

(ثُمَّ قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟) অতঃপর ইবনু সাইয়্যাদ বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল। সে এ কথা দ্বারা নুবুওয়্যাত দাবী করছে অথবা শাব্দিক অর্থে রাসূল বলেছে। তথা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিতনাহ্ ও পরীক্ষার জন্য প্রেরিত হয়েছে।
(فَرَصَّهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «آمَنت بِاللَّه وبرسلِه») নবী (সা.): ইবনু সাইয়্যাদ-এর কথার উত্তর দিলেন এভাবে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার ভাবার্থ হচ্ছে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করি অতএব চিন্তা করে দেখ তুমি কি সেই দলের কিনা?

রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এই উত্তরে বাহ্যিকভাবে সংশয় দেখা দিচ্ছে বাস্তবেই সে রাসূল কিনা? তবে তার ফিতনার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সঠিক কথা হচ্ছে, নবী (সা.) বলেছেন, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস রাখি এবং বিশ্বাস করি, তুমি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত নও। যদি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে তাহলে অবশ্যই তোমার প্রতি ঈমান আনতাম। নবী (সা.) -এর এই বক্তব্য সে সময়ের জন্য প্রযোজ্য যখন তিনি জানতেন না যে, তিনিই শেষ নবী, তারপর আর কোন নবী আসবে না।

নবী (সা.) -এর উপস্থিতিতে সে নবী দাবী করা সত্ত্বেও নবী (সা.) তাকে হত্যা করেননি। কারণ সে ছিল শিশু আর ইসলামে শিশু হত্যা নিষেধ অথবা সে সময় ইয়াহুদীদের সাথে মুসলিমদের শান্তি চুক্তি ছিল আর ইবনু সাইয়্যাদ তাদের মিত্র গোষ্ঠীর লোক ছিল। তার উক্ত কথার কারণে জিম্মা থেকে সে বেরিয়ে যায়নি। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে স্পষ্ট করে নুবুওয়্যাতের দাবী করেনি যেমন তার কথা, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি নবী? এটা ছিল প্রশ্নমূলক কথা, স্পষ্ট দাবীমূলক কথা নয়।
(إِنِّي خَبَّأْتُ لَكَ خَبِيئًا) আমি তোমার পরীক্ষার জন্য একটি কথা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর প্রকৃত অবস্থা সাহাবীদের নিকট প্রকাশ করার জন্য তাকে পরীক্ষা করলেন, সে সময় একটা যাদুকর শয়তান এসে তার মুখ দ্বারা কথা বলায়। নবী (সা.) যে কথা মনে লুকিয়ে রেখেছিলেন তা হলো পবিত্র কুরআনের আয়াত, (فَارۡتَقِبۡ یَوۡمَ تَاۡتِی السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِیۡنٍ) “অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা কারণ যখন আকাশ ধুঁয়ায় ছেয়ে যাবে”- (সূরাহ আদ দুখান ৪৪: ১০)।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু সাইয়্যাদ নবী (সা.) -এর মনের কথার মধ্য থেকে শুধু একটি শব্দ বলতে সক্ষম হয়েছে আর তা হল (الدُّخٌّ ধোঁয়া) সে সম্পূর্ণ আয়াত বলতে সক্ষম হয়নি যেহেতু শয়তান এতটুকুই আসমান থেকে সংগ্রহ করে তার নিকট এসে বলেছে।

(لَا تُسَلَّطْ عَلَيْهِ) উমার (রাঃ) তাকে হত্যা করতে চাইলে নবী (সা.) বলেন, সে যদি সত্যিই তার দাবীতে সত্য হয় অর্থাৎ দাজ্জাল হয় তাহলে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। কেননা তাকে হত্যা করার জন্য ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আগমন করবেন ও হত্যা করবেন। আর যদি তা না হয় তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। ইতোপূর্বে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) এর উক্ত কথা দ্বারা ইঙ্গিত করছেন সম্ভবত সে দাজ্জাল কিন্তু স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
ইমাম বায়হাকী তাঁর “আল বা'সা আন্ নুসূর” কিতাবে উল্লেখ করেন, ইবনু সাইয়্যাদ-এর ব্যাপারে ‘আলিমদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। কেউ বলেন, সে দাজ্জাল; আবার কেউ বলেন, সে দাজ্জাল নয় অন্য কেউ। তাদের দলীল হলো, সহীহ হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে এই উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের সাথে অধিক সাদৃশ্য হবে ‘আবদুল উযযা ইবনু কুতুন ইয়াহুদীর সাথে। অতএব ইবনু সাইয়্যাদ দাজ্জাল নয়। তামীম আদ দারীর হাদীসে দাজ্জালের যে ফিতনার কথা বলা হয়েছে তার সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর আলোচনা এক জিনিস নয়। কিন্তু ইবনু উমার (রাঃ) এবং জাবির (রাঃ) শপথ করে বলেন, ইবনু সাইয়্যাদই মূলত দাজ্জাল, এতে কোন সন্দেহ নেই।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন, ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনাটি মূলত সন্দেহভাজন এবং সমস্যামূলক। তাই তাকে কেউ দাজ্জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ বলেন সে অন্য কেউ। আর এজন্যই নবী (সা.) তার বাণীতে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বরং তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার মধ্যে দাজ্জালের কিছু গুণাবলি রয়েছে। অতএব সে দাজ্জাল হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
(تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ) তোমরা নিশ্চিত করে জেনে রাখ, তোমাদের রব্ অন্ধ নন, ত্রুটিযুক্ত নন। কিন্তু সে অন্ধ জ্যোতিহীন চোখবিশিষ্ট। যা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, সে ইলাহ হওয়ার উপযুক্ত নয়।

‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পূর্ববর্তী সকল নবীই দাজ্জাল সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে গেছেন কিন্তু সে যে অন্ধ বা আলোকহীন চোখবিশিষ্ট হবে, এ কথা কেউ হয়তো জানতেন না বা কেউ এ কথা স্পষ্ট করে বলে যাননি যে, সে হবে অন্ধ, আলোহীন, ত্রুটিযুক্ত চোখবিশিষ্ট। অথবা বলা যেতে পারে, নবী (সা.) -এর এই খবর প্রদান করার মাধ্যমে তার কারামত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কথাও জানা যায় যে, সর্বসাধারণ এমনকি তাদের জ্ঞানীরাও এ ব্যাপারে বুঝতে সক্ষম হবে যে, দাজ্জাল মিথ্যাবাদী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ৩০৫৫; শারহুন্ নাবাবী ১৮শ খণ্ড, হা. ২৯৩০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)