৩২৭৫

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুল্‘ই (খুলা‘ তালাক) ও তালাক প্রসঙ্গে

৩২৭৫-[২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তিনি স্বীয় স্ত্রীকে মাসিক (ঋতুস্রাব) অবস্থায় তালাক দেন। এ বিষয়টি ’উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানালেন। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, সে যেন তাকে রুজু করে (অর্থাৎ- প্রত্যাহার করে) নেয় এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। অতঃপর একান্তই তালাক দিতে চাইলে, তবে এক ঋতুস্রাব হতে পবিত্রাবস্থায় উপনীত হলে সহবাসের পূর্বে সে তালাক দিতে পারে। এটাই ত্বলাক (তালাক)ের ’ইদ্দত, আল্লাহ তা’আলা যা নির্দেশ করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে- তাকে রজ্’আহ্ (প্রত্যাহার) করার আদেশ দাও। অতঃপর (একান্ত প্রয়োজনে) সে যেন পবিত্রাবস্থায় অথবা গর্ভাবস্থায় তালাক দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْخُلْعِ وَالطَّلَاقِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَةً لَهُ وَهِيَ حَائِضٌ فَذَكَرَ عُمَرُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَغَيَّظَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «ليراجعها ثمَّ يمْسِكهَا حَتَّى تطهر ثمَّ تحيض فَتطهر فَإِن بدا لَهُ أَنْ يُطْلِّقَهَا فَلْيُطْلِّقْهَا طَاهِرًا قَبْلَ أَنْ يَمَسَّهَا فَتِلْكَ الْعِدَّةُ الَّتِي أَمَرَ اللَّهُ أَنْ تُطْلَّقَ لَهَا النِّسَاءُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا ثُمَّ لْيُطَلِّقْهَا طَاهِرًا أَوْ حَامِلًا»

وعن عبد الله بن عمر: انه طلق امراة له وهي حاىض فذكر عمر لرسول الله صلى الله عليه وسلم فتغيظ فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال: «ليراجعها ثم يمسكها حتى تطهر ثم تحيض فتطهر فان بدا له ان يطلقها فليطلقها طاهرا قبل ان يمسها فتلك العدة التي امر الله ان تطلق لها النساء» . وفي رواية: «مره فليراجعها ثم ليطلقها طاهرا او حاملا»

ব্যাখ্যা: তালাক দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করার শারী‘আত ব্যবস্থা। এটা কখন ও কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং তা কিভাবে কার্যকর হবে ইসলামে তার সুবিধিবদ্ধ বিধান রয়েছে। স্ত্রীকে ঋতুকালীন সময়ে কখনো তালাক প্রদান করা যাবে না। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার তার স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের সময় তালাক প্রদান করেছিলেন, যা শারী‘আতসিদ্ধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ খবর পেয়ে ভীষণভাবে রাগান্বিত হয়ে যান এবং তার তালাক অকার্যকর করে দিয়ে স্ত্রীকে ফেরত আনতে নির্দেশ করেন। অতঃপর তার প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন যে, একান্তই তালাক দেয়ার প্রয়োজন হলে ঋতুস্রাব অতিবাহিত হয়ে, প্রথম পবিত্রকালে তালাক না দিয়ে দ্বিতীয় পবিত্রকালে তালাক দিবে।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ দ্বিতীয় তুহর বা পরবর্তী পবিত্রকাল পর্যন্ত তালাককে বিলম্বিত করার নির্দেশনার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কারণ হলো- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার স্ত্রীর সাথে মনের দূরত্বের কারণেই তালাক দিয়েছিলেন। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীকে ফেরত এনে তার সাথে স্বাভাবিক সংসার জীবন যাপনের দীর্ঘ সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে এই সময়ের মধ্যে তার সাথে দৈহিক মিলন ঘটায়, এতে তার মনের সঞ্চিত রাগ ও ঘৃণা দূর হয়ে যায় যা ত্বলাকের মূল কারণ, এটা নিঃশেষ হয়ে গেলে ত্বলাকের আর প্রয়োজনই যেন না হয় এবং তাকে স্ত্রী হিসেবে রেখে দেয়।

মুসলিম উম্মাহ ঋতুস্রাবকালে তালাক প্রদানকে হারাম বলেছেন। এ অবস্থায় তালাক প্রদান করলে গুনাহগার হবে এবং তাকে রজ্‘আহ্ করতে হবে, অর্থাৎ স্ত্রীকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফি‘ঈসহ জুমহূর ইমাম ও ফুকাহার মতে এই রজ্‘আহ্ মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। অবশ্য ইমাম মালিক ও তার অনুসারীগণ ওয়াজিব বলেছেন।

হাদীসে যে তুহর বা পবিত্রকালে (স্বামী-স্ত্রী) সহবাস হয়নি সেই সময় তালাক দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর কারণ পরবর্তীতে যাতে গর্ভ প্রকাশিত হয়ে লজ্জিত হতে না হয় এবং প্রসবকাল পর্যন্ত ‘ইদ্দতও দীর্ঘ না হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯০৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৭১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)