৫৭১৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭১৯-[২২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)] নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: দু’জন মহিলা এবং তাদের সঙ্গে তাদের দু’টি শিশু সন্তানও ছিল। এমন সময় আকস্মাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের শিশুটি নিয়ে গেল। তখন সাথের অন্য মহিলাটি বলল, বাঘে তোমার শিশুটি নিয়েছে। দ্বিতীয় মহিলাটি বলল, বাঘে নিয়েছে তোমার শিশু। অতঃপর উভয় মহিলা দাউদ আলায়হিস সালাম-এর কাছে এর মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হলো। তখন দাউদ আলায়হিস সালাম শিশুটির ব্যাপারে বয়স্ক মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। এরপর মহিলা দু’জন বের হয়ে দাউদ আলায়হিস সালাম-এর পুত্র সুলায়মান ’আলায়হিস সালাম-এর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল এবং তারা উভয়ে তাকে সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ের বর্ণনা শুনাল। তখন সুলায়মান আলায়হিস সালাম উপস্থিত লোকজনকে বললেন, তোমরা আমার কাছে একখানা চাকু নিয়ে আস। আমি শিশুটিকে কেটে দ্বিখণ্ডিত করে তাদের মধ্যে ভাগ করে দেব। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠল, এ কাজ করবেন না। আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। (আমি মেনে নিয়েছি) শিশুটি তারই। তখন তিনি সেই অল্পবয়স্ক মহিলাটির পক্ষেই রায় দিয়ে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَانَتِ امْرَأَتَانِ مَعَهُمَا ابْنَاهُمَا جَاءَ الذِّئْبُ فَذَهَبَ بِابْنِ إِحْدَاهُمَا فَقَالَتْ صَاحِبَتُهَا: إِنَّمَا ذَهَبَ بابنك. وَقَالَت الْأُخْرَى: إِنَّمَا ذهب بابنك فتحاكما إِلَى دَاوُدَ فَقَضَى بِهِ لِلْكُبْرَى فَخَرَجَتَا عَلَى سُلَيْمَانَ بْنِ دَاوُدَ فَأَخْبَرَتَاهُ فَقَالَ: ائْتُونِي بِالسِّكِّينِ أَشُقُّهُ بَيْنَكُمَا. فَقَالَتِ الصُّغْرَى: لَا تَفْعَلُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ هُوَ ابْنُهَا فَقَضَى بِهِ لِلصُّغْرَى مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3427) و مسلم (20 / 1720)، (4495) ۔ (مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: উভয়ে সন্তানটির দাবীর কারণ এই হতে পারে যে, সন্তান দুটো সদৃশ্য ছিল। অথবা একজন মিথ্যা বলেছে। নিজের ছেলে হারিয়ে যাওয়ায় সে অন্যের সন্তান দিয়ে সেই শোক নিবারণ করতে চাচ্ছিল। অন্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য বা ষড়যন্ত্রের কারণেও করতে পারে।

(فَقَضَى بِهِ لِلْكُبْرَى) দাউদ 'আলায়হিস সালাম বাচ্চাটির ফয়সালা বড়জনের জন্য করার কারণ এই হতে পারে যে, বাচ্চাটি বড় জনের কাছে ছিল। এমতাবস্থায় অন্যজনের কাছে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকায় যার কাছে ছিল তার জন্য ফয়সালা করেন। কেননা কোন ধরনের প্রমাণ না থাকলে ব্যক্তির কাছে থাকার বস্তুটি তার বলে একটি প্রমাণ। যদিও প্রমাণটি দুর্বল। তারপরও এর চেয়ে শক্তিশালী দলীল না থাকলে এটিই কার্যকর হয়। আবার এমনও হতে পারে যে, বাচ্চাটি বড়জনের সাথে অধিক সদৃশ্য ছিল। তাই অন্য দলীল না থাকাবস্থায় কিয়াফার (চিহ্ন অনুসরণ সংক্রান্ত) জ্ঞানের আলোকে দাউদ আলায়হিস সালাম বাচ্চাটিকে বড়জনের বলে ফয়সালা করেন।

(فَقَضَى بِهِ لِلصُّغْرَى) সন্তানটি কার এই প্রমাণ কারো কাছে না থাকায় সুলায়মান আলায়হিস সালাম কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার আশ্রয় নিয়ে বিচার করেন। ছোটজন যখন বাচ্চাটি দ্বিখণ্ডিত হওয়াতে রাজি হয়নি বরং দ্বিখণ্ডিত হয়ে অনিবার্য মরণ থেকে অন্যজনের হাতে থেকে বাচ্চার বেঁচে থাকা পছন্দ করল। সুলায়মান আলায়হিস সালাম বাচ্চার প্রতি তার স্নেহ মমতার প্রকাশ দেখে বুঝতে পারলেন বাচ্চাটি মূলত ছোটজনের। বড়জনের কাছ থেকে এমন নিদর্শন পাননি, বরং হতে পারে শত্রুতার ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, উভয়ের সমাধান সঠিক; কেননা উভয় জনই মুজতাহিদ ও ইজতিহাদের আলোকে এই ফয়সালা দিয়েছেন। তবে যেসব আকার ইঙ্গিতের আলোকে সুলায়মান আলায়হিস সালাম সমাধান দিয়েছেন তা অধিক শক্তিশালী। বিষয়টি এমনও হতে পারে যে, অবস্থার আকার ইঙ্গিত তাদের শারী'আতে দলীলের পর্যায়ভুক্ত ছিল। তাই একজনের হাতে থাকলেও আকার ইঙ্গিতে অন্যের বুঝতে পারায় সুলায়মান আলায়হি তার জন্য ফয়সালা করেন।
 ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাউদ আলায়হিস সালাম বাচ্চাটিকে বড় মেয়ের জন্য ফয়সালার কারণ এই হতে পারে যে, তিনি বাচ্চা ও তার মাঝে সাদৃশ্যতা দেখেছেন, অথবা বাচ্চাটি তার হাতে ছিল। কিন্তু সুলায়মান আলায়হিস সালাম কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার আলোকে সমস্যাটির গভীরে প্রবেশ করেছেন এবং বাচ্চার প্রতি উভয়ের মমতার পরীক্ষা করতে চেয়েছেন; যাতে রহস্যটি উদঘাটিত আসে। বাস্তবে বাচ্চাকে দ্বিখণ্ডিত করা উদ্দেশ্য ছিল না। অতঃপর যখন বিষয়টি তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, তিনি বাচ্চাটিকে ছোটজনের বলে ফয়সালা করেন। যদি বলা হয়, সুলায়মান আলায়হিস সালাম তার পিতা নবী (সা.) দাউদ 'আলায়হিস সালাম-এর দেয়া ফয়সালা কিভাবে ভঙ্গ করলেন? এর কয়েকটি উত্তর হতে পারে:
 [এক] দাউদ আলায়হিস সালাম-এর ফয়সালাটি চূড়ান্ত ছিল না। [দুই] দাউদ আলায়হিস সালাম-এর ফয়সালাটি একটি ফাতাওয়া হিসেবে ছিল, বিচারের ফয়সালা হিসেবে নয়। [তিন] হয়তো তাঁর শরী'আতে ফয়সালা ভঙ্গের নীতি ছিল, যদি ফয়সালাটি আরেক বিচারকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বিচারক পূর্ববর্তী ফয়সালার বিপরীত ফয়সালাকে উত্তম বলে মনে করে থাকেন।
(নবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ, অধ্যায়: বিচারকার্য, অনুচ্ছেদ: দুই মুজতাহিদের মতানৈক্য)