লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৭৯-[১৪] আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রব আমাদের কাছে না আসেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ স্থানে অপেক্ষা করব। যখন আমাদের রব আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। আর আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর বর্ণনাতে আছে, আল্লাহ তআলা প্রশ্ন করবেন, তোমাদের এবং তোমাদের প্রভুর মধ্যে এমন কোন চিহ্ন আছে কি, যাতে তোমরা তাকে চিনতে পারবে? তারা বলবে, হ্যা, তখন আল্লাহ তা’আলা স্বীয় পায়ের নলা উন্মোচিত করবে। তখন যে ব্যক্তি সচ্ছতার সাথে আল্লাহ তা’আলাকে সিজদাহ্ করত, শুধু তাকেই আল্লাহ তা’আলা সিজদার অনুমতি দেবেন। আর যারা কারো প্রভাবে বা ভয়ে কিংবা মানুষকে দেখানোর জন্য সিজদাহ্ করত, তারা থেকে যাবে। তাদের মেরুদণ্ডের হাড়কে আল্লাহ তা’আলা একটি তক্তার মতো শক্ত করে দেবেন, বরং যখনই সিজদাহ্ করতে চাবে, তখনই পিছনের দিকে চিৎ হয়ে পড়ে যাবে। অতঃপর জাহান্নামের উপর দিয়ে পুলসিরাত পাতা হবে এবং শাফা’আতের অনুমতি দেয়া হবে। তখন নবী-রাসূলগণ (স্ব-স্ব উম্মতের জন্য) এ ফরিয়াদ করবেন, হে আল্লাহ! নিরাপদে রাখ! নিরাপদে রাখ! এ পুলসিরাতের উপর দিয়ে মু’মিনদের কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ পাখির গতিতে এবং কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে আবার কেউ উটের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ নিরাপদে বেঁচে যাবে। আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হবে এবং কেউ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে জাহান্নামে পড়বে।
অবশেষে মু’মিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের যে কেউ নিজের অধিকারের দাবিতে কত কঠোর, তা তো তোমাদের কাছে পরিষ্কার। কিন্তু কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ তাদের সেই সকল ভাইদের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আরো অধিক ঝগড়া করবে, যারা তখনো জাহান্নামে পড়ে রয়েছে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! এ সকল আমাদের সাথে সিয়াম রাখত, সালাত আদায় করত এবং হজ্জ আদায় করত। (অতএব তুমি তাদেরকে মুক্তি দাও) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, যাও তোমরা। যাদেরকে চিন তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে আন, তাদের চেহারা-আকৃতি পরিবর্তন করা জাহান্নামের আগুনের উপর হারাম করা হবে। তখন তারা জাহান্নাম থেকে বহু সংখ্যক লোককে বের করে আনবে। অতঃপর বলবে, হে আমাদের প্রভূ! এখন সেখানে এমন আর একজন লোকও অবশিষ্ট নেই যাদেরকে বের করার জন্য আপনি আদেশ দিয়েছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আবার যাও, যাদের হৃদয়ে এক দানার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের সকলকে বের করে আন। তাতেও তারা বহু সংখ্যক লোককে বের করে আনবে।
তারপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আবার যাও, যাদের হৃদয়ে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের সকলকে বের করে আন। অতএব তাতেও বহু সংখ্যককে বের করে আনবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আবারো যাও, যাদের হৃদয়ে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের সকলকে বের করে আন। এবারও তারা বহু সংখ্যককে বের করে এনে বলবে, হে আমাদের প্রভু! ঈমানদার কোন ব্যক্তিকেই আমরা আর জাহান্নামে রেখে আসিনি।
তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ), নবীগণ এবং মুমিনগণ সকলেই শাফা’আত করেছেন, এখন এক ’আরহামুর রহিমীন’ তথা আমি পরম দয়ালু ছাড়া আর কেউই অবশিষ্ট নেই- এই বলে তিনি মুষ্টিভরে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন যারা কখনো কোন ভালো কাজ করেনি। যারা জ্বলে-পুড়ে কালো কয়লা হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের সম্মুখ ভাগের একটি নহরে নিক্ষেপ করবেন, যার নাম হলো ’নহরে হায়াত’। এটাতে থেকে তারা স্রোতের ধারে যেমনভাবে ঘাসের বীজ গজায় তেমনিভাবে বের হয়ে আসবে এবং তারা মুক্তার মতো (চকচকে অবস্থায় বের হবে) তাদের স্কন্দ্বে সিলমোহর থাকবে। জান্নাতবাসীগণ তাদের দেখে বলবে, এরা পরম দয়ালু আল্লাহর আজাদকৃত। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, অথচ তারা পূর্বে কোন ’আমল বা কল্যাণকর কাজ করেনি। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, এই জান্নাতে তোমরা যা দেখছ, তা তোমাদেরকে দেয়া হলো এবং এর সাথে অনুরূপ পরিমাণ আরো দেয়া হলো। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَفِي رِوَايَةِ أَبِي هُرَيْرَةَ فَيَقُولُونَ: هَذَا مَكَانُنَا حَتَّى يَأْتِيَنَا رَبُّنَا فَإِذَا جَاءَ رَبُّنَا عَرَفْنَاهُ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي سَعِيدٍ: فَيَقُولُ هَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ آيَةٌ تَعْرِفُونَهُ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ فَيُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ فَلَا يَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ لِلَّهِ مِنْ تِلْقَاءِ نَفْسِهِ إِلَّا أَذِنَ اللَّهُ لَهُ بِالسُّجُودِ وَلَا يَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ اتِّقَاءً وَرِيَاءً إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ ظَهْرَهُ طَبَقَةً وَاحِدَةً كُلَّمَا أَرَادَ أَنْ يَسْجُدَ خَرَّ عَلَى قَفَاهُ ثُمَّ يُضْرَبُ الْجِسْرُ عَلَى جَهَنَّمَ وَتَحِلُّ الشَّفَاعَةُ وَيَقُولُونَ اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ فَيَمُرُّ الْمُؤْمِنُونَ كَطَرَفِ الْعَيْنِ وَكَالْبَرْقِ وَكَالرِّيحِ وَكَالطَّيْرِ وَكَأَجَاوِيدِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ وَمَخْدُوشٌ مُرْسَلٌ وَمَكْدُوسٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ حَتَّى إِذَا خَلَصَ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ أحد مِنْكُم بأشدَّ مُناشدةً فِي الْحق - قد تبين لَكُمْ - مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِلَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ فِي النَّارِ يَقُولُونَ رَبَّنَا كَانُوا يَصُومُونَ مَعَنَا وَيُصَلُّونَ وَيَحُجُّونَ فَيُقَالُ لَهُمْ: أَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ فَتُحَرَّمُ صُوَرَهُمْ عَلَى النَّارِ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا مَا بَقِيَ فِيهَا أَحَدٌ مِمَّنْ أَمَرْتَنَا بِهِ. فَيَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وجدْتُم فِي قلبه مِثْقَال دنيار مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ نِصْفِ دِينَارٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا لَمْ نَذَرْ فِيهَا خَيِّرًا فَيَقُولُ اللَّهُ شُفِّعَتِ الْمَلَائِكَةُ وَشُفِّعَ النَّبِيُّونَ وَشُفِّعَ الْمُؤْمِنُونَ وَلَمْ يَبْقَ إِلَّا أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ فَيُخْرِجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوا خَيْرًا قَطُّ قَدْ عَادُوا حُمَمًا فَيُلْقِيهِمْ فِي نَهْرٍ فِي أَفْوَاهِ الْجَنَّةِ يُقَالُ لَهُ: نَهْرُ الْحَيَاةِ فَيَخْرُجُونَ كَمَا تَخْرُجُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ فَيَخْرُجُونَ كَاللُّؤْلُؤِ فِي رِقَابِهِمُ الْخَوَاتِمُ فَيَقُولُ أَهْلُ الْجَنَّةِ: هَؤُلَاءِ عُتَقَاءُ الرَّحْمَن أدخلهم الْجنَّة بِغَيْر عمل وَلَا خَيْرٍ قَدَّمُوهُ فَيُقَالُ لَهُمْ لَكُمْ مَا رَأَيْتُمْ وَمثله مَعَه . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (7439) و مسلم (302 / 183)، (454) ۔ (متفّق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাশরের ময়দানে মুমিনদের বলবেন, তোমরা এখানে কার প্রতিক্ষা করছ? মুমিনগণ বলবেন, এটা আমাদের অবস্থানস্থল, আমরা এখানেই অবস্থান করব যতক্ষণ না আমাদের রব আমাদের নিকট আগমন করেন। এ সময় আল্লাহ তা'আলা তার পায়ের নলা তাদের সামনে প্রকাশ করবেন অর্থাৎ তিনি তার নূরের তাজাল্লী প্রকাশ করবেন।
মু'মিনদের প্রথম দর্শন অস্বীকার সম্ভবত তাদের সাথে মুনাফিকরা থাকবে সেজন্য, কেননা তারা আল্লাহকে দর্শনের হাক্ব রাখে না। মুনাফিকরা যখন পৃথক হয়ে যাবে তখন মু'মিনদের সামনে থেকে পর্দা উঠিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তারা যখন আল্লাহকে দর্শন করবে তখন বলবে, হ্যা, আপনি আমাদের রব। আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ বলবেন, তোমাদের আল্লাহকে চেনার কি কোন নিদর্শন আছে? মুমিনেরা উত্তর দিবে, হ্যা, আছে; এমন সময় আল্লাহ তা'আলা তার পায়ের নলা উন্মোচিত করে দিবেন। মুমিনেরা তা দর্শন মাত্রই চিনতে পারবেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহে বা অনুমতিসাপেক্ষে সিজদায় পড়ে যাবেন। এ সময় মুনাফিক অপরের দ্বারা প্রভাবিত, রিয়াকার ইত্যাদি ব্যক্তিরাও সিজদার চেষ্টা করবে কিন্তু সিজদাহ করতে গিয়ে পিছনের দিকে উল্টে পড়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, “সেদিন পায়ের গোছা উন্মুক্ত করা হবে এবং লোকেদের সিজদার প্রতি আহ্বান করা হবে, তখন তারা সিজদাহ্ দিতে পারবে না।” (সূরাহ্ আল কলাম ৬৮: ৪২)
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসের মাধ্যমে অনেকে ধারণা করে যে, মুনাফিকরাও আল্লাহকে দেখবে, যেহেতু তারা মুমিনদের সাথেই রয়ে গেছে; অতঃপর আল্লাহ সিজদার মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করবেন। যে সিজদাহ্ করতে পারবে সে খাটি মু'মিন, আর যে তাতে সক্ষম হবে না সে হবে মুনাফিক।
এরপর আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের উপর ব্রীজ স্থাপন করবেন। একেই বলা হয় পুলসিরাত। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই এই পুল পার হয়ে যেতে হবে। মুমিনেরা তাদের ‘আমল ও ঈমান অনুসারে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ পাখির গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার এবং কেউ উটের গতিতে পার হবে। কেউ নিরাপদেই পার হবে, কেউ পার হবে এমনভাবে তার দেহ ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবে, কেউ তো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে জাহান্নামে পড়েই যাবে।
এ সময় আল্লাহ তা'আলা নবী-রাসূল এবং মুমিনদের শাফা'আতের অনুমতি দিবেন। তারা বলবেন, “আল্ল-হুম্মা সাল্লিম আল্ল-হুম্মা সাল্লিম”, হে আল্লাহ! শান্তি দাও, হে আল্লাহ! শান্তি দাও। যে সকল মু'মিন জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছে অথবা পুলসিরাত পাড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে তারা জাহান্নামে পড়ে থাকা মুমিনদের মুক্তির জন্য জোর দাবী পেশ করতে থাকবে। তারা বলবেন, হে আল্লাহ! এরা আমাদের সাথে আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করেছে, সিয়াম পালন এবং সঠিক হজ্জ পালন করেছে, অতএব তাদের মুক্তি দাও। তখন মুমিনদের বলা হবে ঠিক আছে যাও সালাত, সওম, হজ্জ ইত্যাদি পালনকারী হিসেবে যাদের চিনতে পার তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের কর।
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত সালাত আদায়কারী মু'মিনগণের সর্বাঙ্গ পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও সিজদার জায়গাগুলো পুড়বে না, ফলে ঐ সকল চিহ্ন দেখে বহু সংখ্যক জাহান্নামীদেরকে তারা বের করে এনে বলবেন, হে আল্লাহ! জাহান্নামে এ গুণের আর কোন মুমিন অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ সালাত আদায়কারী, সিয়াম পালনকারী, হজ্জ পালনকারী আর কেউ বাকী নেই। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, আবার যাও দেখ যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ খায়র বা কল্যাণ পাও তাদের বের করে আন।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (خير) (খায়র) শব্দের অর্থ ইয়াকীন। সহীহ হলো নিরেট ঈমানের পর অতিরিক্ত কোন নেক কর্ম। এবারও তারা গিয়ে বহু মানুষকে বের করে আনবেন। আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদের আবার বলবেন, যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ খায়র রয়েছে তাদের বের কর, অতঃপর তাদের বের করা হবে। এদের সংখ্যাও হবে অনেক। আবার বলা হবে, ফিরে যাও যার অন্তরে এক যাররা পরিমাণ খায়র পাও তাকেও বের কর। এবারও অনেক মানুষকে বের করা হবে। তারা বলবেন, হে আল্লাহ! আমরা খায়র থাকা কোন ব্যক্তিকে রেখে আসিনি।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, সবাই শাফা'আত করেছে এখন কেবল বাকি আমি আরহামুর রহীমীন, যার রহমত সমগ্র স্থানে পরিব্যপ্ত এবং সকল কিছু তার রহমতে ধন্য। এ বলে আল্লাহ তা'আলা মুষ্ঠিভরে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন যারা কখনও কোন خير (খায়র) নেক আমল করেনি। শুধু ঈমানের বিশ্বাসটুকুই তাদের ছিল, নেক ‘আমল বলতে কিছুই ছিল না।
তাদের আদৌ কোন নেক আমল না থাকা এবং ঈমান অতীব সূক্ষ্ম এবং হালকা থাকায় নবী-রাসূল এবং মু'মিনগণের দৃষ্টিতে তা আসেনি, ফলে তারা তাদের জন্য শাফা'আত করতে পারেননি। অবশেষে আহকামুল হাকিমীন তাদের মধ্যে ঐ লুক্কায়িত ঈমান দেখে জাহান্নাম থেকে বের করবেন।
এদের জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতের দরজার সামনে উপস্থিত করা হবে, “হায়াত’ নামক নহরে গোসল করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এদের গর্দানে জাহান্নাম থেকে মুক্তির মোহর অঙ্কিত থাকবে, যা দেখে জান্নাতের সকল লোক তাদের চিনতে পারবে যে, এরা দয়াময় রহমানের অনুগ্রহপ্রাপ্ত এবং বিনা আমালে জান্নাতপ্রাপ্ত লোক।
তারা জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তোমরা যে জান্নাত দেখছ, অর্থাৎ তোমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে এর বাগ-বাগিচা, বালাখানা ও হুর গেলেমান যা রয়েছে এটা তোমাদের জন্য এবং এর সমপরিমাণ আরো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড, হা. ২৯৯)