৪৩৬৯

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৩৬৯-[৬৬] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় হেঁচড়িয়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে তাকাবেন না। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! অসাবধানতাবশতঃ অনেক সময় আমার লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলে যায়। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বললেনঃ যারা অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলায় আপনি তাদের অন্তরভুক্ত নন। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِزَارِي يَسْتَرْخِي إِلَّا أَنْ أَتَعَاهَدَهُ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكَ لَسْتَ مِمَّنْ يَفْعَلُهُ خُيَلَاءَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যাঃ পুরুষের জন্য লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরার ব্যাপারে এ হাদীসটি দিয়ে অনেকে দলীল পেশ করেন যে, অহংকারবশতঃ না হলে টাখনুর নিচে কাপড় পরা যাবে। তাই এ বিষয়টি বিস্তারিত বলার প্রয়োজন রয়েছে।

লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি কাপড় যদি টাখনুর সামান্য নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা হয় এবং তাঁর উদ্দেশ্য হয় অহংকার করা, তবে তাঁর শাস্তি হলো কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দিকে রহমাতের দৃষ্টি দিবেন না, তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যদিও এ হাদীসে শুধু তাকানোর কথা আছে তবে অন্য হাদীসে বাকীগুলোর কথা এসেছে। আর যদি অহংকারের সাথে নয় বরং সাধারণভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তবে তাঁর শাস্তি হলো, তাঁর টাখনুদ্বয়কে জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلّمُهُمُ اللّٰهُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ ألِيْم : المُسْبِلُ وَالمَنَّانُ وَالْمُنْفِقُ سِـلْعَتَهٗ بـاِلْحَلِفِ الكـاَذِبِ.

‘‘কিয়ামত দিবসে আল্লাহ‌ তা‘আলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেই তিনি ব্যক্তি হলো : (১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী, (২) দান করে খোটাদানকারী এবং (৩) মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রয়কারী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ হাদীসেই বলেনঃ إلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَـةِ خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِالله مَنْ جَرَّ ثَوْبَهٗ ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ‌ তাঁর দিকে রহমাতের দৃষ্টিপাত করবেন না’’ এ বিধান ঐ ব্যক্তির জন্য যে অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরে।

আর যে ব্যক্তি অহংকারের উদ্দেশ্য ছাড়া কাপড় ঝুলিয়ে পরবে তাঁর ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা  বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (مَا أَسْفَلَ الْكعبين مِنَ الْإِزَارِ فَفِى النَّارِ) ‘‘যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হবে তা আগুনের মধ্যে জ্বলবে’’ এ হাদীসে জাহান্নামের আগুনে টাখনু জ্বলার ব্যাপারে অহঙ্কারের কথা উলে­খ নেই।

আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

إِزْرَةُ الْمُؤْمِنِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ وَلا حَرَجَ أَوْ لا جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهٗ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ ومَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَمَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَةِ

‘‘মু’মিন ব্যক্তির কাপড় অর্ধ নলা পর্যন্ত, এতে কোন অসুবিধা নেই’’ (হাঁটু থেকে পায়ের তলার মধ্যভাগকে নলা বলা হয়)। অন্য বর্ণনায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ বলেনঃ ‘‘পায়ের টাখনু এবং হাঁটুর মধ্যবর্তী স্থানে কাপড় পরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হবে তা জাহান্নামে যাবে, আর যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না।’’

অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে এবং যুক্তি দেখায় যে, আমি তো অহংকারবশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিনি, সুতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। উল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ ব্যক্তির যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়।

অতএব অহংকারের উদ্দেশ্য ব্যতীত এমনিই সাধারণভাবে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আর তাঁর সাথে যদি অহংকারযুক্ত হয় তবে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন, তা হলো আল্লাহ‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ইমাম ইবনু ‘আবদুল বার্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অহংকার ছাড়াও টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরা নিন্দনীয়।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি মাকরূহ। মূল সুন্নাহ্ হলো অর্ধ নলা পর্যন্ত পরা। কিন্তু কেউ যদি চায় তাহলে সে টাখনু পর্যন্ত নামিয়ে পরতে পারে। কিন্তু অহংকার করে হলে পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম। আর অহংকার ছাড়া হলে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তা মাকরূহ। আবূ বকর  এই নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তির হুমকির মধ্যে পড়বেন না। কারণ তিনি ইচ্ছা করে এমনটা করতেন না।

আবূ বকর (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা যারা দলীল পেশ করতে চায় দু’দিক থেকে তাদের যুক্তি খন্ডন : প্রথম কথা : আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন, ‘‘আমার কাপড়ের এক পার্শ্ব (অনিচ্ছাকৃত) ঝুলে পড়ে কিন্তু আমি তা বারবার উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি।’’ অতএব তিনি তো ইচ্ছাকৃত এ কাজ করতেন না। বরং তাঁর শরীর অধিক ক্ষীণ হওয়ার কারণে অনিচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলে যেত। তাছাড়া তিনি তা উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু যারা কাপড় ঝুলিয়ে পরে এবং ধারণা করে যে তারা অহংকার করে না, তারা তো ইচ্ছাকৃত এ কাজ করে। অতএব তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলব, অহংকারের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলিয়ে পরলে তার টাখনু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। যেমনটি আবূ হুরায়রার হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর যদি অহংকারবশতঃ হয় তবে তার শাস্তি হচ্ছে, আল্লাহ‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

দ্বিতীয় কথা : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই আবূ বকর (রাঃ)-কে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি সেই সকল লোকেদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকারবশতঃ এ কাজ করে থাকে। অতএব বর্তমানে যারা টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে তারা কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে এরূপ সচ্চরিত্রের সানাদ ও তাঁর সাক্ষ্য লাভ করেছে? কিন্তু শয়তান প্রবৃত্তির অনুসারী লোকেদেরকে কুরআন-সুন্নাহ্‌ থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্তিসমূহকে খেয়াল-খুশির উপর ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহ যাকে ইচছা সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকেন। মোটকথা কোন অজুহাত ছাড়া কোন পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি পরা বৈধ নয়। [সম্পাদক]