পরিচ্ছেদঃ ৩৬) নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো থেকে ভীতি প্রদর্শন
৫৫২. (সহীহ্) হারেছ আল আশআরী থেকে বর্ণিত। নবী (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ’’পাঁচটি বিষয়ে আমল করার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া (আঃ)কে আদেশ করেছেন। আর তিনি যেন বানী ইসরাঈলকেও সেগুলোর প্রতি আমল করার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে একটু দেরী করছিলেন, তখন ঈসা (আঃ) বললেনঃ আল্লাহ্ আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন পাঁচটি বিষয়ের প্রতি আমল করতে এবং বানী ইসরাঈলকেও সেগুলোর প্রতি আমল করার জন্য বলতে বলেছেন। হয় আপনি তাদেরকে আদেশ দিবেন না হয় আমি আদেশ দিব। ইয়াহইয়া বললেন, আমি আশংকা করছি তুমি আমার পূর্বে একাজ করে ফেললে, আমাকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে অথবা শাস্তি দেয়া হবে। এরপর তিনি লোকদেরকে বায়তুল মুকাদ্দাসে একত্রিত করলেন। লোকে মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেল এবং লোকেরা উঁচু জায়গাতেও বসে গেল। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ
আল্লাহ্ আমাকে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি আমল করার নির্দেশ করেছেন এবং এটাও নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাদেরকে সেগুলোর প্রতি আমল করার জন্য আদেশ করি। সেগুলো হচ্ছেঃ
১) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। যে লোক আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির সাথে, যে নিজের খাঁটি স্বর্ণ বা রৌপ্যের সম্পদ দ্বারা একজন ক্রীতদাস খরিদ করে নিয়ে আসল তারপর তাকে বলল, এটা আমার গৃহ আর এ হচ্ছে আমার কাজ। কাজ কর আর উপার্জন আমার কাছে জমা দাও। সে কাজ করতে লাগলো কিন্তু উপার্জন মালিক ভিন্ন আরেক লোকের কাছে জমা দিল। তোমাদের মধ্যে কোন লোক আছে কি কৃতদাসের এই ব্যবহারে সন্তুষ্ট হবে?
২) আল্লাহ্ তোমাদেরকে নামাযের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা নামায আদায় করলে এদিক-ওদিক তাকাবে না। কেননা বান্দা যতক্ষণ এদিক-ওদিক না তাকায় ততক্ষণ আল্লাহ্ তার মুখমণ্ডল বান্দার মুখমণ্ডল ে স্থাপন করে রাখেন।
৩) তিনি তোমাদেরকে সিয়ামের নির্দেশ দিয়েছেন। সিয়ামের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির সাথে যে এক দল লোকের মধ্যে অবস্থান করছে, যার কাছে আছে মিসকে-আম্বর ভর্তি একটি কলসি। সবাই তার ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে। রোযাদারের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকে-আম্বরের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।
৪) তিনি তোমাদেরকে দান-সাদকার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির সাথে যাকে শত্রুরা বন্দী করে নিয়ে গেছে। তার হাতকে গলার সাথে বেঁধে দিয়েছে। তার শিরচ্ছেদ করার জন্য অগ্রসর হয়েছে। এমন সময় সে বলল, আমি তোমাদেরকে আমার অল্প-বেশী যাবতীয় সম্পদের বিনিময়ে আমার জানের ফিদিয়া প্রদান করছি। অতঃপর সে মুক্তিপন দিয়ে তাদের থেকে ছাড়া পেয়ে গেল।
৫) তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহকে স্মরণ করার। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির সাথে যাকে শত্রুরা পাকড়াও করার জন্য ধাওয়া করছে। সে পালিয়ে এসে একটি সুরক্ষিত কেল্লায় ঢুকে পড়ল এবং তাদের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিল। অনুরূপভাবে বান্দা আল্লাহর যিকির ছাড়া নিজেকে শয়তান থেকে বাঁচাতে পারবে না।
নবী (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি। আল্লাহ্ আমাকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেনঃ (১) নেতার কথা শোনা (২) তার কথা মান্য করা (৩) জিহাদ করা (৪) হিজরত করা এবং (৫) জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকা। কেননা যে লোক মুসলমানদের জামাআত থেকে এক বিঘত দূরে চলে যাবে, তার কাঁধ থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে যাবে- যতক্ষণ সে তওবা করে তাতে ফিরে না আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলীয়াতের দিকে আহবান করবে, সে জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’
জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল! যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে? তিনি বললেনঃ ’’যদিও সে নামায পড়ে, রোযা রাখে। তোমরা আল্লাহর কথা বলে আহবান করবে। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান, মুমিন- আল্লাহর বান্দা।’’
(তিরমিযী ২৮৬, নাসাঈ হাদীছটির কিছু বর্ণনা করেছেন। আরো বর্ণনা করেছেন ইবনে খুযাইমা ২/৬৪, ইবনে হিব্বান ৬২০০ ও হাকেম ১/২৩৬। এই হাদীছের বাক্য তিরমিযীর, হাকেম বলেনঃ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ্)
الترهيب من الالتفات في الصلاة وغيره مما يذكر
(صحيح) عن الْحَارِثَ الْأَشْعَرِيَّ حَدَّثَهُ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا قَالَ عِيسَى إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنْ آمُرَهُمْ فَقَالَ يَحْيَى أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلَأَ وَقَعَدَّوْا عَلَى الشُّرَفِ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ
1- أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ فَقَالَ هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَيَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ 2- وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلَاةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلَا تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ
3- وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ
4- وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَ أَنَا أَفْدِيهِ نَفْسِي مِنْكُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ
5- وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لَا يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنْ الشَّيْطَانِ إِلَّا بِذِكْرِ اللَّهِ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَقَالَ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمْ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللَّهِ
رواه الترمذي وهذا لفظه وقال حديث حسن صحيح والنسائي ببعضه وابن خزيمة وابن حبان في صحيحيهما والحاكم وقال صحيح على شرط البخاري ومسلم
পরিচ্ছেদঃ ৩৬) নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো থেকে ভীতি প্রদর্শন
৫৫৩. (সহীহ্) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নামাযের মধ্যে এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ ’’এটা এক প্রকার চুরি, যা শয়তান বান্দার নামায থেকে করে থাকে।’’
(বুখারী ৭৫১, নাসাঈ ৩/৮, আবু দাউদ ৯১০ ও ইবনে খুযাইমা ২/৬৫)
الترهيب من الالتفات في الصلاة وغيره مما يذكر
(صحيح) و عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُا قَالَتْ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ التَّفَلُّتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ هُوَ اخْتِلَاسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ . رواه البخاري والنسائي وأبو داود وابن خزيمة
পরিচ্ছেদঃ ৩৬) নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো থেকে ভীতি প্রদর্শন
৫৫৪. (হাসান লি গাইরিহী) আবুল আহওয়াস থেকে বর্ণিত। তিনি আবু যার্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ’’আল্লাহ্ বান্দার নামাযের প্রতি আগ্রহী থাকেন, যে পর্যন্ত সে এদিক-ওদিক না তাকায়। যখন সে এদিক-ওদিক তাকানোর জন্য নিজের মুখে ফিরিয়ে নেয় আল্লাহও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।’’
(আহমাদ ৫/১৭২, আবু দাউদ ৯০৯, নাসাঈ ৩/৮, ইবনে খুযাইমা ২/৬২ ও হাকেম ১/২৩৬। হাকেম হাদীছটিকে সহীহ বলেন)
الترهيب من الالتفات في الصلاة وغيره مما يذكر
) (حسن لغيره) وَعَنْ أبي الأحوص عن أبي ذر رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "لَا يَزَالُ اللهُ مُقْبِلًا عَلَى الْعَبْدِ فِي صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ، فَإِذَا صَرَفَ وَجْهَهُ، انْصَرَفَ عَنْهُ.
رواه أحمد وأبو داود والنسائي وابن خزيمة في صحيحه والحاكم وصححه
পরিচ্ছেদঃ ৩৬) নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো থেকে ভীতি প্রদর্শন
৫৫৫. (হাসান লি গাইরিহী) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ’’আমার বন্ধু মুহাম্মাদ (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেছেন এবং তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাকে নিষেধ করেছেনঃ মোরগের ঠোকর দেয়ার মত করে সিজদা করতে, কুকুরের মত করে বসতে এবং শৃগালের মত এদিক-ওদিক তাকাতে।’
(ইমাম আহমাদ ৮১০৬ ও আবু ইয়ালা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
ইবনে আবী শায়বার বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ ’বাঁদরের মত বসতে নিষেধ করেছেন।’
[কুকুরের মত বসার ব্যাখ্যায় আবু উবাইদ বলেনঃ নিজের নিতম্ব দু’টিকে মাটিতে রেখে দিয়ে দু’পাকে খাড়া রাখা আর দু’হাত মাটিতে রাখা- যেমন কুকুর বসে থাকে।]
الترهيب من الالتفات في الصلاة وغيره مما يذكر
(حسن لغيره) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أوْصاَنِيْ خَلِيْلِيْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ، وَنَهَانِي عَنْ ثَلَاثٍ: نَهَانِي عَنْ نَقْرَةٍ كَنَقْرَةِ الدِّيكِ، وَإِقْعَاءٍ كَإِقْعَاءِ الْكَلْبِ، وَالْتِفَاتٍ كَالْتِفَاتِ الثَّعْلَبِ. رواه أحمد وأبو يعلى وإسناد أحمد حسن ورواه ابن أبي شيبة وقال كإقعاء القرد