পরিচ্ছেদঃ সালাত সিয়াম ও যাকাতের উদাহরণ।
২৮৬৩. মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল (রহঃ) ..... হারিছ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহু তা’আলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া (আঃ)-কে নিজে আমল করতে এবং বনূ ইসরাঈলকেও আমল করতে বলার জন্য পাঁচটি কথার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি (লোকদের) বিষয়গুলো জানাতে প্রায় বিলম্বই করে ফেলেছিলেন। তখন ঈসা (আঃ) তাকে বললেনঃ আপনি নিজে আমল করতে এবং বনূ ইসরাঈলকেও আমল করার জন্য বলতে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে দিয়েছিলেন। হয় আপনি লোকদের এগুলো করতে নির্দেশ দিন, না হয় আমিই তাদের সেগুলো করতে নির্দেশ দিব।
ইয়াহ্ইয়া (আঃ) বললেনঃ আপনি যদি এই বিষয়ে আমার অগ্রগামী হয়ে যান তবে আমার আশংকা হয় যে আমাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেওয়া হবে বা অন্য কোন আযাব দেওয়া হবে। অনন্তর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে লোকদের একত্রিত করলেন। মসজিদ লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এমন কি বুরুজগুলোতে গিয়েও তারা বসল।
তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে পাঁচ বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমি নিজেও সেগুলোর উপর আমল করি এবং তোমাদেরকেও সেগুলোর উপর আমলের নির্দেশ দিই। প্রথম হল, আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর সঙ্গে কিছুর শরীক করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে তার উদাহরণ হল, সেই ব্যক্তির মত যে তার সোনা বা রূপা নির্ভেজাল সম্পদ দিয়ে একটি দাস ক্রয় করল। তাকে বলল, এ হল আমার বাড়ি আর এ হল আমার কাজ। তুমি কাজ কর এবং আমাকে আমার হক দিবে। অনন্তর সে কাজ করতে থাকল কিন্তু তার মালিক ভিন্ন অন্যের হক আদায় করল। তোমাদের মধ্যে কেউ কি এই কথার উপর রাযী আছে যে, তার দাস এ ধরনের হোক?
আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা যখন সালাত (নামায) আদায় করবে তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না। কেননা যতক্ষণ বান্দা এদিক-সেদিক না তাকায় ততক্ষণ সারাতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নেক দৃষ্টি তাঁর বান্দার চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন।
তোমাদের আমি সিয়ামের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি একটি দলে অবস্থান করছে। তার সঙ্গে আছে মিশক ভর্তি একটি থলে। দলের প্রত্যেকের কাছেই এ সুগন্ধি ভাল লাগে। আল্লাহ্ তা’আলার কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা সিয়াম পালনকারীর (মুখের) গন্ধ অনেক বেশী সুগন্ধময়।
তোমাদের আমি সাদাকা-এর নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে শত্রুরা বন্দী করে তার ঘাড় পেঁচিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেছে এবং গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে চলেছে। তখন সে ব্যক্তি বললঃ আমার কম বেশী যা কিছু আছে সব কিছু মুক্তিপণ হিসাবে তোমাদের দিচ্ছি। অনন্তর সে এভাবে তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল। (সাদাকার মাধ্যমেও মানুষ নিজেকে আযাব থেকে মুক্ত করে নেয়।)
তোমাদের আমি আল্লাহর যিকরের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে তার দুশমণ দ্রুত পশ্চাদ্ধাবণ করছে। শেষে সে একটি সুন্দর কেল্লার ভিতরে এসে নিজেকে শত্রুদের থেকে হেফাজত করে নিল। এমনি ভাবে বান্দা আল্লাহর যিকরের কেল্লা ছাড়া নিজেকে হেফাযত করতে পারে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর নির্দেশ তিনি আমাকে দিয়েছেনঃ কথা শুনবে ও ফরমাবরদারী করবে। জিহাদ, হিজরত এবং মুসলিমদের জামা’আত অবলম্বন করবে। কেননা, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল সে তার গলা থেকে ইসলামের বেড়ী খুলে ফেলে দিল- যতক্ষণ না সে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে। যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের ডাকে ডাকবে সে হল জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি তখন বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সে যদি সালাত (নামায) ও সিয়াম পালন করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদিও সে সালাত (নামায) আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। সুতরাং মুসলিম, মুমিন, আল্লাহর বান্দা রূপে যে নামে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের নামকরণ করেছেন সেই আল্লাহর ডাকেই তোমরা নিজেদের ডাকবে।
সহীহ, মিশকাত ৩৬৯৪, তা’লীকুর রাগীব ১/১৮৯-১৯০, সহিহুল জামি’ ১৭২৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৮৬৩ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদিসটি হাসান-সহীহ-গারীব। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল বুখারী (রহঃ) বলেছেনঃ হারিছ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসর্গে পেয়েছেন। এ হাদীসটি ছাড়াও তাঁর বর্ণিত আরো হাদীস রয়েছে।
بَابُ مَا جَاءَ فِي مَثَلِ الصَّلاَةِ وَالصِّيَامِ وَالصَّدَقَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، أَنَّ أَبَا سَلاَّمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ الْحَارِثَ الأَشْعَرِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا فَقَالَ عِيسَى إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ . فَقَالَ يَحْيَى أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ وَقَعَدُوا عَلَى الشُّرَفِ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ فَقَالَ هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَىَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَ أَنَا أَفْدِيهِ مِنْكُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ . فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللَّهِ " . قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ وَمَنِ ادَّعَى دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ " . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ قَالَ " وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللَّهِ " . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْحَارِثُ الأَشْعَرِيُّ لَهُ صُحْبَةٌ وَلَهُ غَيْرُ هَذَا الْحَدِيثِ .
Narrated Al-Harith Al-Ash'ari:
that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "Indeed Allah commanded Yahya bin Zakariyya with five commandments to abide by, and to command the Children of Isra'il to abide by them. But he was slow in doing so. So 'Eisa said: 'Indeed Allah commanded you with five commandments to abide by and to command the Children of Isra'il to abide by. Either you command them, or I shall command them.' So Yahya said: 'I fear that if you precede me in this, then the earth may swallow me, or I shall be punished.' So he gathered the people in Jerusalem, and they filled [the Masjid] and sat upon its balconies. So he said: 'Indeed Allah has commanded me with five commandments to abide by, and to command you to abide by. The first of them is that you worship Allah and not associate anything with him. The parable of the one who associates others with Allah is that of a man who buys a servant with his own gold or silver, then he says to him: "This is my home and this is my business so take care of it and give me the profits." So he takes care of it and gives the profits to someone other than his master. Which of you would live to have a servant like that? And Allah commands you to perform Salat, and when you perform Salat then do not turn away, for Allah is facing the face of His worshipers as long as he does not turn away. And He commands you with fasting. For indeed the parable of fasting, is that of a man in a group with a sachet containing musk. All of them enjoy its fragrance. Indeed the breath of the fasting person is more pleasant to Allah than the scent of musk. And He commands you to give charity. The parable of that, is a man captured by his enemies, tying his hands to his neck, and they come to him to beat his neck. Then he said: "I can ransom myself from you with a little or a lot" so he ransoms himself from them. And He commands you to remember Allah. For indeed the parable of that, is a man whose enemy quickly tracks him until he reaches an impermeable fortress in which he protects himself from them. This is how the worshiper is; he does not protect himself from Ash-Shaitan except by the remembrance of Allah.'" The Prophet (ﷺ) said: "And I command you with five that Allah commanded me: Listening and obeying, Jihad, Hijrah, and the Jama'ah. For indeed whoever parts from the Jama'ah the measure of a hand-span, then he has cast off the yoke of Islam from his neck, unless he returns. And whoever calls with the call of Jahiliyyah then he is from the coals of Hell." A man said: "O Messenger of Allah! Even if he performs Salat and fasts?" So he (ﷺ) said: "Even if he performs Salat and fasts. So call with the call that Allah named you with: Muslims, believers, worshipers of Allah."
পরিচ্ছেদঃ সালাত সিয়াম ও যাকাতের উদাহরণ।
২৮৬৪. মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহঃ) ..... হারিছ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উক্ত মর্মে অনূরূপ বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান-সহীহ-গারীব। রাবী আবূ সাল্লাম (রহঃ) এর নাম হল মামতূর। আলী ইবন মুবরাক (রহঃ)-ও এ হাদিসটি ইয়াহ্ইয়া ইবন আবূ কাছীর (রহঃ) এর বরাতে বর্ণনা করেছেন।
তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৮৬৪ [আল মাদানী প্রকাশনী]
بَابُ مَا جَاءَ فِي مَثَلِ الصَّلاَةِ وَالصِّيَامِ وَالصَّدَقَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، عَنْ أَبِي سَلاَّمٍ، عَنِ الْحَارِثِ الأَشْعَرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ بِمَعْنَاهُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . وَأَبُو سَلاَّمٍ الْحَبَشِيُّ اسْمُهُ مَمْطُورٌ وَقَدْ رَوَاهُ عَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ .
(Another chain) with similar in meaning. (see previous Hadith)
পরিচ্ছেদঃ ৭৮. নামায, রোযা ও দান-খাইরাতের উপমা
২৮৬৩। আল-হারিস আল-আশ’আরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ)-কে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করলেন যেন তিনি নিজেও তদনুযায়ী আমল করেন এবং বনী ইসরাঈলকেও তা ’আমল করার আদেশ করেন। তিনি এ নির্দেশগুলো লোকদেরকে জানাতে বিলম্ব করলে ঈসা (আঃ) তাকে বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনি সে মুতাবিক ’আমল করেন এবং বনী ইসরাঈলকেও তা আমল করার আদেশ করেন। এখন আপনি তাদেরকে এগুলো করতে নির্দেশ দিন, তা না হলে আমিই তাদেরকে সেগুলো করতে নির্দেশ দিব। ইয়াহইয়া (আঃ) বললেনঃ আপনি এ বিষয়ে যদি আমার অগ্রবর্তী হয়ে যান তবে আমার ভয় হচ্ছে যে, আমাকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে কিংবা আযাব নেমে আসবে।সুতরাং তিনি লোকদেরকে বাইতুল মাকদিসে একত্র করলেন। সব লোক সমবেত হওয়াতে মসজিদ ভরে গেল, এমনকি তারা ঝুলন্ত বারান্দায় গিয়েও বসল।
তারপর ইয়াহইয়া (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেন আমি সে মুতাবিক ’আমল করি এবং তোমাদেরকেও আমল করার আদেশ করি।
এগুলোর প্রথম নির্দেশটি হলঃ তোমরা আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সাথে অংশীদার স্থাপন করে তার উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তি যে তার খালিস সম্পদ অর্থাৎ- সোনা অথবা রুপার বিনিময়ে একটি দাস কিনল। সে তাকে (বাড়ী এনে) বলল, এটা আমার বাড়ী আর এগুলো আমার কাজ। তুমি কাজ করবে এবং আমাকে আমার প্রাপ্য দিবে। তারপর সেই দাস কাজ করত ঠিকই কিন্তু মালিকের প্রাপ্য দিয়ে দিত অন্যকে। তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে স্বীয় দাসের এমন আচরণে সন্তুষ্ট থাকতে পারে?
আর আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে নামায আদায়ের জন্য আদেশ করেছেন। তোমরা নামায আদায়কালে এদিক সেদিক তাকাবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তার চেহারা নামাযীর চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন বান্দা নামাযের মধ্যে এদিক সেদিক না তাকানো পর্যন্ত।
আর আমি তোমাদের রোযার নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তি যে কস্তুরীভর্তি একটি থলেসহ একদল মানুষের সাথে আছে। কস্তুরীর সুগন্ধ দলের সবার নিকট খুবই ভালো লাগে। আর রোযাদারের মুখের সুগন্ধ আল্লাহ তা’আলার নিকট কস্তুরীর সুগন্ধের চাইতেও অধিক প্রিয়।
আমি তোমাদের দান-খাইরাতের আদেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে শত্রুরা বন্দী করে তার ঘাড়ের সাথে হাত বেঁধে ফেলেছে এবং তাকে হত্যার জন্য বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বলল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে আমার সমস্ত সম্পদ তোমাদেরকে দিচ্ছি। তারপর সে নিজেকে মালের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিল (দান-খাইরাতের মাধ্যমেও বান্দা নিজেকে বিপদমুক্ত করে নেয়)।
আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যেন তোমরা আল্লাহ তা’আলার যিকর কর। যিকরের উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির ন্যায় যার দুশমনেরা তার পিছু ধাওয়া করছে। অবশেষে সে একটি সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে শত্রু হতে নিজের প্রাণ রক্ষা করল। তদ্রুপ কোন বান্দা আল্লাহ তা’আলার যিকির ব্যতীত নিজেকে শাইতানের হাত থেকে মুক্ত করতে পারে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা আমাকে আদেশ করেছেন। কথা শুনবে, আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরত করবে এবং জামা’আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। যে লোক জামাআত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হল সে ইসলামের বন্ধন তার ঘাড় হতে ফেলে দিল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে লোক জাহিলিয়াত আমলের রীতি-নীতির দিকে আহবান করে সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত।
জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে নামায আদায় করলেও, রোযা রাখলেও? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, সে নামায-রোযা করলেও। সুতরাং তোমরা সেই আল্লাহ তা’আলার ডাকেই নিজেদেরকে ডাকবে যিনি তোমাদেরকে মুসলিম, মু’মিন ও আল্লাহ তা’আলার বান্দা নাম রেখেছেন।
সহীহঃ মিশকাত (৩৬৯৪), তা’লীকুর রাগীব (১/১৮৯-১৯০), সহীহুল জামি’ (১৭২৪)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আল-বুখারী বলেন, আল-হারিস আল-আশ’আরী (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন। এটি ব্যতীত তার বর্ণিত আরো হাদীস আছে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، أَنَّ أَبَا سَلاَّمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ الْحَارِثَ الأَشْعَرِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا فَقَالَ عِيسَى إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ . فَقَالَ يَحْيَى أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ وَقَعَدُوا عَلَى الشُّرَفِ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ فَقَالَ هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَىَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَ أَنَا أَفْدِيهِ مِنْكُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ . فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللَّهِ " . قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ وَمَنِ ادَّعَى دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ " . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ قَالَ " وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللَّهِ " . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْحَارِثُ الأَشْعَرِيُّ لَهُ صُحْبَةٌ وَلَهُ غَيْرُ هَذَا الْحَدِيثِ .
Narrated Al-Harith Al-Ash'ari:
that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "Indeed Allah commanded Yahya bin Zakariyya with five commandments to abide by, and to command the Children of Isra'il to abide by them. But he was slow in doing so. So 'Eisa said: 'Indeed Allah commanded you with five commandments to abide by and to command the Children of Isra'il to abide by. Either you command them, or I shall command them.' So Yahya said: 'I fear that if you precede me in this, then the earth may swallow me, or I shall be punished.' So he gathered the people in Jerusalem, and they filled [the Masjid] and sat upon its balconies. So he said: 'Indeed Allah has commanded me with five commandments to abide by, and to command you to abide by. The first of them is that you worship Allah and not associate anything with him. The parable of the one who associates others with Allah is that of a man who buys a servant with his own gold or silver, then he says to him: "This is my home and this is my business so take care of it and give me the profits." So he takes care of it and gives the profits to someone other than his master. Which of you would live to have a servant like that? And Allah commands you to perform Salat, and when you perform Salat then do not turn away, for Allah is facing the face of His worshipers as long as he does not turn away. And He commands you with fasting. For indeed the parable of fasting, is that of a man in a group with a sachet containing musk. All of them enjoy its fragrance. Indeed the breath of the fasting person is more pleasant to Allah than the scent of musk. And He commands you to give charity. The parable of that, is a man captured by his enemies, tying his hands to his neck, and they come to him to beat his neck. Then he said: "I can ransom myself from you with a little or a lot" so he ransoms himself from them. And He commands you to remember Allah. For indeed the parable of that, is a man whose enemy quickly tracks him until he reaches an impermeable fortress in which he protects himself from them. This is how the worshiper is; he does not protect himself from Ash-Shaitan except by the remembrance of Allah.'" The Prophet (ﷺ) said: "And I command you with five that Allah commanded me: Listening and obeying, Jihad, Hijrah, and the Jama'ah. For indeed whoever parts from the Jama'ah the measure of a hand-span, then he has cast off the yoke of Islam from his neck, unless he returns. And whoever calls with the call of Jahiliyyah then he is from the coals of Hell." A man said: "O Messenger of Allah! Even if he performs Salat and fasts?" So he (ﷺ) said: "Even if he performs Salat and fasts. So call with the call that Allah named you with: Muslims, believers, worshipers of Allah."
পরিচ্ছেদঃ ৭৮. নামায, রোযা ও দান-খাইরাতের উপমা
২৮৬৪। মুহাম্মাদ ইববু বাশশার-আবূ দাউদ আত-তাইয়ালিসী হতে, তিনি যাইদ ইবনু সাল্লাম হতে, তিনি আবূ সাল্লাম-আল-হারিস আল-আশ’আর (রাযিঃ) হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এই সূত্রে একই মর্মে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবূ সাল্লাম আল-হাবশী’র নাম মামতুর। আলী ইবনুল মুবারাক-ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর-এর সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، عَنْ أَبِي سَلاَّمٍ، عَنِ الْحَارِثِ الأَشْعَرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ بِمَعْنَاهُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . وَأَبُو سَلاَّمٍ الْحَبَشِيُّ اسْمُهُ مَمْطُورٌ وَقَدْ رَوَاهُ عَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ .
(Another chain) with similar in meaning.
পরিচ্ছেদঃ যিকর তথা আল্লাহকে স্মরণ করার ফযীলত ও তার প্রতি উৎসাহ দান
(৩৬৮১) হারেস আশআরী কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আল্লাহ সুবহানাহু অতাআলা য়্যাহয়্যা বিন যাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঁচটি বাক্য দিয়ে তার উপর আমল করতে এবং বানী ইস্রাঈলকে আমল করতে আদেশ দিতে বললেন। অতঃপর তিনি সে ব্যাপারে প্রায় দেরী করে ফেলেছিলেন। সুতরাং ঈসা (আঃ) তাঁকে বললেন, ’আল্লাহ তাআলা আপনাকে পাঁচটি বাক্য দিয়ে তার উপর আমল করতে এবং বানী ইস্রাঈলকে আমল করতে আদেশ দিতে বলেছেন। অতএব আপনি কি তাদেরকে আদেশ করবেন, নাকি আমি তাদেরকে আদেশ করব?’ য়্যাহয়্যা বললেন, ’আমার ভয় হয়, আপনি আমার আগে বললে আমাকে মাটিতে ধসিয়ে দেওয়া হবে এবং শাস্তি দেওয়া হবে।’ সুতরাং য়্যাহয়্যা বায়তুল মাক্বদিসে লোকেদেরকে জমা করলেন। মসজিদ ভরে গেলে লোকেরা উঁচু জায়গাতেও বসল।
অতঃপর তিনি বললেন, ’আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঁচটি বাক্য দিয়ে তার উপর আমল করতে এবং তোমাদেরকে আমল করতে আদেশ দিতে বলেছেন।’ উক্ত বাক্যাবলীর পঞ্চম বাক্য ছিল, ’’আমি তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহর যিকর কর। যেহেতু এর উপমা হল সেই ব্যক্তির মতো, যার পশ্চাতে শত্রু ত্রস্তপদে ধাওয়া করেছে। পরিশেষে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে এসে নিজেকে তাদের হাত হতে রক্ষা করেছে। অনুরূপই আল্লাহর যিকর ছাড়া বান্দা নিজেকে শয়তান থেকে রক্ষা করতে পারে না।’’ (আহমাদ ১৭৩০২, তিরমিযী ২৮৬৩, নাসাঈর কুবরা ৮৮১৫, সহীহুল জামে’ হা/ ১৭২৪)
উক্ত হাদীসেই আছে, ’’আর আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন নামাযের। সুতরাং যখন তোমরা নামায পড়বে, তখন অন্যমনস্ক হয়ো না। যেহেতু আল্লাহ নিজের চেহারা নামাযে নিজ বান্দার চেহারার সাথে স্থির রাখেন, যতক্ষণ সে অন্যমনস্ক হয় না।’’
وَعَن الْحَارِثِ الأَشْعَرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا فَقَالَ عِيسَى : إِنَّ اللهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ فَقَالَ يَحْيَى : أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ وَقَعَدُوا عَلَى الشُّرَفِ فَقَالَ : إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذٰلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتّٰـى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذٰلِكَ الْعَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللهِ وَإِنَّ اللهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ
পরিচ্ছেদঃ ৩৬) নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো থেকে ভীতি প্রদর্শন
৫৫২. (সহীহ্) হারেছ আল আশআরী থেকে বর্ণিত। নবী (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ’’পাঁচটি বিষয়ে আমল করার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া (আঃ)কে আদেশ করেছেন। আর তিনি যেন বানী ইসরাঈলকেও সেগুলোর প্রতি আমল করার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে একটু দেরী করছিলেন, তখন ঈসা (আঃ) বললেনঃ আল্লাহ্ আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন পাঁচটি বিষয়ের প্রতি আমল করতে এবং বানী ইসরাঈলকেও সেগুলোর প্রতি আমল করার জন্য বলতে বলেছেন। হয় আপনি তাদেরকে আদেশ দিবেন না হয় আমি আদেশ দিব। ইয়াহইয়া বললেন, আমি আশংকা করছি তুমি আমার পূর্বে একাজ করে ফেললে, আমাকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে অথবা শাস্তি দেয়া হবে। এরপর তিনি লোকদেরকে বায়তুল মুকাদ্দাসে একত্রিত করলেন। লোকে মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেল এবং লোকেরা উঁচু জায়গাতেও বসে গেল। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ
আল্লাহ্ আমাকে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি আমল করার নির্দেশ করেছেন এবং এটাও নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাদেরকে সেগুলোর প্রতি আমল করার জন্য আদেশ করি। সেগুলো হচ্ছেঃ
১) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। যে লোক আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির সাথে, যে নিজের খাঁটি স্বর্ণ বা রৌপ্যের সম্পদ দ্বারা একজন ক্রীতদাস খরিদ করে নিয়ে আসল তারপর তাকে বলল, এটা আমার গৃহ আর এ হচ্ছে আমার কাজ। কাজ কর আর উপার্জন আমার কাছে জমা দাও। সে কাজ করতে লাগলো কিন্তু উপার্জন মালিক ভিন্ন আরেক লোকের কাছে জমা দিল। তোমাদের মধ্যে কোন লোক আছে কি কৃতদাসের এই ব্যবহারে সন্তুষ্ট হবে?
২) আল্লাহ্ তোমাদেরকে নামাযের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা নামায আদায় করলে এদিক-ওদিক তাকাবে না। কেননা বান্দা যতক্ষণ এদিক-ওদিক না তাকায় ততক্ষণ আল্লাহ্ তার মুখমণ্ডল বান্দার মুখমণ্ডল ে স্থাপন করে রাখেন।
৩) তিনি তোমাদেরকে সিয়ামের নির্দেশ দিয়েছেন। সিয়ামের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির সাথে যে এক দল লোকের মধ্যে অবস্থান করছে, যার কাছে আছে মিসকে-আম্বর ভর্তি একটি কলসি। সবাই তার ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে। রোযাদারের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকে-আম্বরের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।
৪) তিনি তোমাদেরকে দান-সাদকার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির সাথে যাকে শত্রুরা বন্দী করে নিয়ে গেছে। তার হাতকে গলার সাথে বেঁধে দিয়েছে। তার শিরচ্ছেদ করার জন্য অগ্রসর হয়েছে। এমন সময় সে বলল, আমি তোমাদেরকে আমার অল্প-বেশী যাবতীয় সম্পদের বিনিময়ে আমার জানের ফিদিয়া প্রদান করছি। অতঃপর সে মুক্তিপন দিয়ে তাদের থেকে ছাড়া পেয়ে গেল।
৫) তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহকে স্মরণ করার। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির সাথে যাকে শত্রুরা পাকড়াও করার জন্য ধাওয়া করছে। সে পালিয়ে এসে একটি সুরক্ষিত কেল্লায় ঢুকে পড়ল এবং তাদের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিল। অনুরূপভাবে বান্দা আল্লাহর যিকির ছাড়া নিজেকে শয়তান থেকে বাঁচাতে পারবে না।
নবী (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি। আল্লাহ্ আমাকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেনঃ (১) নেতার কথা শোনা (২) তার কথা মান্য করা (৩) জিহাদ করা (৪) হিজরত করা এবং (৫) জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকা। কেননা যে লোক মুসলমানদের জামাআত থেকে এক বিঘত দূরে চলে যাবে, তার কাঁধ থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে যাবে- যতক্ষণ সে তওবা করে তাতে ফিরে না আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলীয়াতের দিকে আহবান করবে, সে জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’
জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল! যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে? তিনি বললেনঃ ’’যদিও সে নামায পড়ে, রোযা রাখে। তোমরা আল্লাহর কথা বলে আহবান করবে। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান, মুমিন- আল্লাহর বান্দা।’’
(তিরমিযী ২৮৬, নাসাঈ হাদীছটির কিছু বর্ণনা করেছেন। আরো বর্ণনা করেছেন ইবনে খুযাইমা ২/৬৪, ইবনে হিব্বান ৬২০০ ও হাকেম ১/২৩৬। এই হাদীছের বাক্য তিরমিযীর, হাকেম বলেনঃ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ্)
الترهيب من الالتفات في الصلاة وغيره مما يذكر
(صحيح) عن الْحَارِثَ الْأَشْعَرِيَّ حَدَّثَهُ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا قَالَ عِيسَى إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنْ آمُرَهُمْ فَقَالَ يَحْيَى أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلَأَ وَقَعَدَّوْا عَلَى الشُّرَفِ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ
1- أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ فَقَالَ هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَيَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ 2- وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلَاةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلَا تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ
3- وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ
4- وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَ أَنَا أَفْدِيهِ نَفْسِي مِنْكُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ
5- وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لَا يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنْ الشَّيْطَانِ إِلَّا بِذِكْرِ اللَّهِ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَقَالَ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمْ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللَّهِ
رواه الترمذي وهذا لفظه وقال حديث حسن صحيح والنسائي ببعضه وابن خزيمة وابن حبان في صحيحيهما والحاكم وقال صحيح على شرط البخاري ومسلم