পরিচ্ছেদঃ ৪৪/২৮. আবু যার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

১৬০৭. ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের খবর যখন আবূ যার (রাঃ) এর কাছে পৌছল, তখন তিনি তাঁর ভাইকে বললেন, তুমি এ উপত্যকায় গিয়ে ঐ লোক সম্পর্কে জেনে আস যে লোক নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান হতে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাঁর ভাই রওয়ানা হয়ে ঐ লোকের কাছে পৌছে তার কথাবার্তা শুনলেন। এরপর তিনি আবূ যারের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম আখলাক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম যা পদ্য নয়। এতে আবু যার (রাঃ) বললেন, আমি যে জন্য তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে না।

আবূ যার সফরের জন্য সামান্য পাথেয় সগ্রহ করলেন এবং একটি ছােট্ট পানির মশকসহ মক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খোঁজ করতে লাগলেন। তিনি তাঁকে চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাও পছন্দ করতেন না। এ অবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। ’আলী (রাঃ) তাঁকে দেখে বুঝলেন যে, লোকটি বিদেশী। যখন আবূ যার ’আলী (রাঃ)-কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবূ যার (রাঃ) পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন ’আলী (রাঃ) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখনও কি মুসাফিরের গন্তব্য স্থানের সন্ধান হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। এ অবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। ’আলী (রাঃ) পূর্বের ন্যায় তাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তুমি কি আমাকে বলবে না কোন জিনিস এখানে আসতে তোমাকে অনুপ্রেরিত করেছে? আবূ যার (রাঃ) বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক রাস্তা দেখানোর পাকা অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। আলী (রাঃ) অঙ্গীকার করলেন এবং আবু যার (রাঃ)-ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বললেন।

’আলী (রাঃ) বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যখন ভাের হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন ব্যাপার আমি দেখতে পাই তবে আমি রাস্তার পাশে চলে যাব যেন আমি পেশাব করতে চাই। আর যদি আমি সোজা চলতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবূ যার (রাঃ) তাই করলেন। ’আলী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তার (’আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐখানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে। আবূ যার (রাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মসজিদে হারামে গিয়ে হাজির হলেন এবং উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, (أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ) লোকজন তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং মারতে মারতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দিল।

এমন সময় আব্বাস (রাঃ) তাকে রক্ষা করলেন এবং বললেন, আমাদের বিপদ অবধারিত। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর আমাদের ব্যবসায়ী কাফেলাগুলিকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াত করতে হয়। এ কথা বলে তিনি তাদের হাত হতে আবু যারকে রক্ষা করলেন। পরদিন সকালে তিনি ঐরূপই বলতে লাগলেন। লোকরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে ভীষণভাবে মারতে লাগল। আব্বাস (রাঃ) তাকে সামলে নিলেন।

من فضائل أبي ذر رضي الله عنه

حديث ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: لَمَّا بَلَغَ أَبَا ذَرٍّ مَبْعَثُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ لأَخِيهِ: ارْكَبْ إِلَى هذَا الْوَادِي فَاعْلَمْ لِي عِلْمَ هذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ يَأْتِيهِ الْخَبَرُ مِنَ السَّمِاءِ وَاسْمَعْ مِنْ قَوْلِهِ ثُمَّ ائْتِنِي فَانْطَلَقَ الأَخُ حَتَّى قَدِمَهُ، وَسَمِعَ مِنْ قَوْلِهِ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَبِي ذَرٍّ، فَقَالَ لَهُ: رَأَيْتُهُ يَأْمُرُ بِمَكَارِمِ الأَخْلاَقِ، وَكَلاَمًا، مَا هُوَ بِالشِّعْرِ فَقَالَ: مَا شَفَيْتَنِي مِمَّا أَرَدْتُ فَتَزَوَّدَ وَحَمَلَ شَنَّةً لَهُ، فِيهَا مَاءٌ، حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ فَأَتَى الْمَسْجِدَ فَالْتَمَسَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلاَ يَعْرِفُهُ وَكَرِهَ أَنْ يَسْأَلَ عَنْهُ، حَتَّى أَدْرَكَهُ بَعْضُ اللَّيْلِ فَرآهُ عَلِيٌّ، فَعَرَفَ أَنَّهُ غَرِيبٌ فَلَمَّا رَآهُ تَبِعَهُ فَلَمْ يَسْأَلْ وَاحِدٌ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَنْ شَيْءٍ حَتَّى أَصْبَحَ ثُمَّ احْتَمَلَ قِرْبَتَهُ وَزَادَهُ إِلَى الْمَسْجِدِ، وَظَلَّ ذلِكَ الْيَوْمَ، وَلاَ يَرَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى أَمْسى فَعَادَ إِلَى مَضْجَعِهِ فَمَرَّ بِهِ عَلِيٌّ، فَقَالَ: أَمَا نَالَ لِلرَّجُلِ أَنْ يَعْلَمَ مَنْزِلَهُ فَأَقَامَهُ، فَذَهَبَ بِهِ مَعَهُ، لاَ يَسْأَلُ وَاحِدٌ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَنْ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الثَّالِثِ، فَعَادَ عَلِيٌّ مِثْلَ ذلِكَ، فَأَقَامَ مَعَهُ ثُمَّ قَالَ: أَلاَ تُحَدِّثُنِي مَا الَّذِي أَقْدَمَكَ قَالَ: إِنْ أَعْطَيْتَنِي عَهْدًا وَمِيثَاقًا لَتُرْشِدَنَّنِي، فَعَلْتُ فَفَعَلَ، فَأَخْبَرَهُ قَالَ: فَإِنَّهُ حَقٌّ، وَهُوَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا أَصْبَحْتَ فَاتَّبِعْنِي، فَإِنِّي إِنْ رَأَيْتُ شَيْئًا أَخَافُ عَلَيْكَ قُمْتُ كَأَنِّي أُرِيقُ الْمَاءَ فَإِنْ مَضَيْتُ فَاتَّبِعْنِي، حَتَّى تَدْخُلَ مَدْخَلِي فَفَعَلَ، فَانْطَلَقَ يَقْفُوهُ، حَتَّى دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَدَخَلَ مَعَهُ، فَسَمِعَ مِنْ قَوْلِهِ، وَأَسْلَمَ مَكَانَهُ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ارْجِعْ إِلَى قَوْمِكَ فَأَخْبِرْهُمْ حَتَّى يَأْتِيَكَ أَمْرِي قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بَيَدِهِ لأَصْرُخَنَّ بِهَا بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى الْمَسْجِدَ، فَنَادَى بِأَعْلَى صَوْتِهِ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ثُمَّ قَامَ الْقَوْمُ فَضَرَبُوهُ حَتَّى أَضْجَعُوهُ وَأَتَى الْعَبَّاسُ، فَأَكَبَّ عَلَيْهِ قَالَ: وَيْلَكُمْ أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ مِنْ غِفَارٍ، وَأَنَّ طَرِيقَ تِجَارِكُمْ إِلَى الشَّامِ فَأَنْقَذَهُ مِنْهُمْ ثُمَّ عَادَ مِنَ الْغَدِ لِمِثْلِهَا، فَضَرَبُوهُ، وثَارُوا إِلَيْهِ، فَأَكَبَّ الْعَبَّاسُ عَلَيْهِ

حديث ابن عباس قال لما بلغ ابا ذر مبعث النبي صلى الله عليه وسلم قال لاخيه اركب الى هذا الوادي فاعلم لي علم هذا الرجل الذي يزعم انه نبي ياتيه الخبر من السماء واسمع من قوله ثم اىتني فانطلق الاخ حتى قدمه وسمع من قوله ثم رجع الى ابي ذر فقال له رايته يامر بمكارم الاخلاق وكلاما ما هو بالشعر فقال ما شفيتني مما اردت فتزود وحمل شنة له فيها ماء حتى قدم مكة فاتى المسجد فالتمس النبي صلى الله عليه وسلم ولا يعرفه وكره ان يسال عنه حتى ادركه بعض الليل فراه علي فعرف انه غريب فلما راه تبعه فلم يسال واحد منهما صاحبه عن شيء حتى اصبح ثم احتمل قربته وزاده الى المسجد وظل ذلك اليوم ولا يراه النبي صلى الله عليه وسلم حتى امسى فعاد الى مضجعه فمر به علي فقال اما نال للرجل ان يعلم منزله فاقامه فذهب به معه لا يسال واحد منهما صاحبه عن شيء حتى اذا كان يوم الثالث فعاد علي مثل ذلك فاقام معه ثم قال الا تحدثني ما الذي اقدمك قال ان اعطيتني عهدا وميثاقا لترشدنني فعلت ففعل فاخبره قال فانه حق وهو رسول الله صلى الله عليه وسلم فاذا اصبحت فاتبعني فاني ان رايت شيىا اخاف عليك قمت كاني اريق الماء فان مضيت فاتبعني حتى تدخل مدخلي ففعل فانطلق يقفوه حتى دخل على النبي صلى الله عليه وسلم ودخل معه فسمع من قوله واسلم مكانه فقال له النبي صلى الله عليه وسلم ارجع الى قومك فاخبرهم حتى ياتيك امري قال والذي نفسي بيده لاصرخن بها بين ظهرانيهم فخرج حتى اتى المسجد فنادى باعلى صوته اشهد ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله ثم قام القوم فضربوه حتى اضجعوه واتى العباس فاكب عليه قال ويلكم الستم تعلمون انه من غفار وان طريق تجاركم الى الشام فانقذه منهم ثم عاد من الغد لمثلها فضربوه وثاروا اليه فاكب العباس عليه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
আল-লুলু ওয়াল মারজান
৪৪/ সাহাবাগণের মর্যাদা (كتاب فضائل الصحابة)