আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরকে এমন কিছু সুন্দর সুন্দর দোয়া (প্রার্থনা ও মুনাজাত) শিক্ষা দিয়েছেন, যা আকারে ছোট, কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত অর্থ সুদূর-প্রসারী।
আবু বকর (রাঃ) তাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দেয়ার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আবেদন করলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- বলুন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ. فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমি আমার প্রতি অনেক জুলুম করেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না; সুতরাং আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন এবং আপনি আমাকে দয়া দরুন; কেননা নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল পরম করুণাময়।”
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস (রাঃ)-কে বলেছেন-
اِسْاَلِ اللهَ العَفْوَ والعَافِيَةَ
“আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও সুস্থতা প্রার্থনা করুন।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে বলেছেন- “বলুন-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدِّدْنِي
“হে আল্লাহ! আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাইদ ইবন হুছাইনকে (রাঃ) বলেছেন- “বল,
اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَقِنِىْ شَرَّ نَفْسِي
“হে আল্লাহ! আমাকে সঠিক পথের দিকে চালিত করুন এবং আমাকে আমার নিজের (আত্মার) ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন।”
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ)-কে বলতে বলেছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الثَّبَاتَ فِي الْأَمْرِ، وَالْعَزِيمَةَ عَلَى الرُّشْدِ، وَأَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ، وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ قَلْبَاً سَلِيمَاً، وَلِسَانَاً صَادِقَاً، وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا تَعْلَمُ، إِنَّكَ أنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ
ভাবাৰ্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট (দ্বীনি) কাজে একনিষ্ঠতা চাই। সঠিক পথে থাকার স্থির সংকল্প, দৃঢ়তা ও অটলতা চাই। আপনার নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করার তওফীক ও আপনার ইবাদত উত্তমরূপে করার তাওফীক চাই। আপনার নিকট প্রশান্ত চিত্ত ও সত্য কথা বলার জিহ্বা চাই। আপনার অবগত সকল ভালো বিষয় আপনার নিকট চাই। আপনার জানা সকল মন্দ বিষয় হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আপনার জানা আমার সকল পাপ থেকে আপনার নিকট ক্ষমা চাই। কেননা, আপনি অবশ্যই সকল অজানা (গায়েবি) বিষয় অবগত আছেন।”
উপরোক্ত দোয়াতে যেসব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধারণার উপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে তা হলো- পরকালের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা আল্লাহর নিকট আমাদের চাওয়া উচিত। আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট আমাদের আকুল আবেদন করা উচিত এবং তার ইবাদত ও তার শোকরিয়া আদায় করার জন্য তার নিকট আমাদের তাওফীক চাওয়া উচিত। এসব ধারণার একটি সর্বসম্মত বা সাধারণ কারণ আছে। তা হলো আল্লাহর নিকট যা আছে তা আমাদের চাওয়া উচিত আর এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া উচিত অর্থাৎ স্বভাবতই বিলীয়মান পার্থিব জিনিসপত্রের প্রতি আমাদের লোভ করা উচিত নয়।