ওয়াজেব হওয়ার সাথে সাথে জামাআতের বিভিন্নমুখী কল্যাণ ও মাহাত্ম রয়েছে; যা জেনে জ্ঞানী নামাযীকে জামাআতে উপস্থিত হয়ে নামায আদায় করতে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হওয়া উচিৎ।
জামাআতে হাজির হয়ে যারা আল্লাহর ঘর মসজিদ আবাদ রাখে, তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত; মহান আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে বলেন,
(إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللهَ، فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ)
অর্থাৎ, আসলে তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করে, যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। আর আশা করা যায়, তারাই হল হেদায়াত-প্রাপ্ত। (কুরআন মাজীদ ৯/১৮)
জামাআতে উপস্থিতি দোযখ ও মুনাফেকী থেকে মুক্তি দেয়; মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ৪০ দিন জামাআতে নামায আদায় করবে এবং তাতে তাহ্রীমার তকবীরও পাবে, (সেই ব্যক্তির জন্য দুটি মুক্তি লিখা হবে; দোযখ থেকে মুক্তি এবং মুনাফেকী থেকে মুক্তি।” (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪০৪নং)
জামাআতে উপস্থিত নামাযীদেরকে নিয়ে মহান আল্লাহ তাঁর ফিরিশ্তাসভায় গর্ব করেন। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। এই যে তোমাদের পালনকর্তা আসমানের দরজাসমূহের একটি দরজা খুলে তাঁর ফিরিশ্তামন্ডলীর কাছে তোমাদেরকে নিয়ে গর্ব করছেন; বলছেন, ‘তোমরা আমার বান্দাদের প্রতি লক্ষ্য কর, তারা এক ফরয (নামায) আদায় করেছে এবং অন্য এক ফরয আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৮০১নং)
মহান আল্লাহ জামাআতের নামায দেখে মুগ্ধ হন। মহানবী (ﷺ) বলেন, “জামাআতের নামাযে আল্লাহ মুগ্ধ হন।” (আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৬৫২নং)
জামাআতে উপস্থিত হয়ে নামায আদায় করলে একাকীর তুলনায় ২৫ থেকে ২৭ গুণ সওয়াব বেশী পাওয়া যায়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “পুরুষের জামাআত সহকারে নামাযের মান একাকী নামাযের মান অপেক্ষা ২৭ গুণ অধিক।” (বুখারী, মুসলিম, প্রমুখ জামে ৩৮২০নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “একাকীর নামায অপেক্ষা জামাআতের নামায সাতাশ গুণ উত্তম।” (বুখারী ৬৪৫নং, মুসলিম ৬৫০নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “পুরুষের স্বগৃহে বা তার ব্যবসাক্ষেত্রে নামায পড়ার চেয়ে (মসজিদে) জামাআতে শামিল হয়ে নামায পড়ার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা, যে যখন সুন্দরভাবে ওযু করে কেবল মাত্র নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই মসজিদের পথে বের হয় তখন চলামাত্র প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে তাকে এক-একটি মর্যাদায় উন্নীত করা হয় এবং তার এক-একটি গুনাহ মোচন করা হয়। অতঃপর নামায আদায় সম্পন্ন করে যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে বসে থাকে ততক্ষণ ফিরিশ্তাবর্গ তার জন্য দুআ করতে থাকে; ‘হে আল্লাহ ওর প্রতি করুণা বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা কর। আর সে ব্যক্তি যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষা করে, ততক্ষণ যেন নামাযের অবস্থাতেই থাকে।” (বুখারী ৬৪৭নং, মুসলিম ৬৪৯নং, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নামাযের জন্য পরিপূর্ণরুপে ওযু করে কোন ফরয নামায পড়ার উদ্দেশ্যে যায় এবং তা লোকেদের সাথে অর্থাৎ জামাআত সহকারে অথবা মসজিদে পড়ে, আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন।” (মুসলিম, সহীহ ২৩২নং)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি পরিপূর্ণরুপে ওযু করে কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে (মসজিদে) যায়, অতঃপর তা ইমামের সাথে আদায় করে সে ব্যক্তির পাপরাশি মাফ হয়ে যায়।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ তারগীব ৪০১নং)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি স্বগৃহ্ থেকে ওযূ করে কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়, তার সওয়াব হল ইহ্রাম বাঁধা হাজীর মত।” (আবূদাঊদ, সুনান ৫৫৮নং)
“যে ব্যক্তি জামাআতে কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যায়, সে ব্যক্তির সওয়াব হয় একটি হজ্জ করার মত এবং যে ব্যক্তি কোন নফল (চাশতের) নামায পড়ার জন্য পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যায়, তার সওয়াব হয় নফল উমরাহ্ করার মত।” (আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ত্বাব, জামে ৬৫৫৬নং)
বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তি স্বগৃহে ওযূ করে ফরয নামায আদায় করার জন্য প্রত্যহ্ ৫ বার মসজিদে যায় এবং সে তাতে ঐ বিশাল সওয়াবের আশা রাখে, সে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন ৫টি করে; অর্থাৎ বছরে প্রায় ১৮০০টি হজ্জ করার সওয়াব লাভ করে! আর ৬০ বছরের জীবনে প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার বার হজ্জ করা হয় একজন মসজিদ-ভক্ত নামাযীর! অতএব অনায়াসে সে ৬০ বছরেই যেন ১০৮০০০ বছরের জীবন লাভ করে থাকে। বরং এত বছর বাঁচলেও সে হয়তো প্রত্যেক বছর হজ্জ করতে সক্ষম হবে না। কিন্তু জামাআতের ঐ নামায তাকে এত দীর্ঘ জীবন দান করে থাকে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “এই নামাযের জামাআতে অনুপস্থিত ব্যক্তি যদি জানত যে, তাতে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য কত সওয়াব নিহিত রয়েছে তাহলে অবশ্যই সে হাতে-পায়ে হামাগুড়ি দিয়েও হাজির হত। (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম,সহিহ তারগিব ৪০৩নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “আমি তোমাদেরকে কি সেই কথা বলে দেব না; যার দরুন আল্লাহ গুনাহসমূহকে মোচন করে দেন এবং মর্যাদা আরো উন্নত করেন?” সকলে বলল, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “কষ্টের সময় পরিপূর্ণ ওযু করা, মসজিদের দিকে অধিকাধিক পদক্ষেপ করা (চলা), আর এক নামাযের পর আগামী নামাযের অপেক্ষা করা। উপরন্তু এগুলোই হল প্রতিরক্ষা-বাহিনীর কাজের ন্যায়, এগুলোই হল প্রতিরক্ষা-বাহিনীর কাজের ন্যায়, এগুলোই হল প্রতিরক্ষা-বাহিনীর কাজের ন্যায়।” (মালেক, মুঅত্তা, মুসলিম, সহীহ ২৫১নং, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, অনুরুপ অর্থে।)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “আজ রাত্রে আমার কাছে আমার প্রতিপালকের এক দূত এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি জানেন কি, নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশ্তামন্ডলী কি নিয়ে মতভেদ করছেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, (তাঁরা মতভেদ করছেন) পাপ মোচন, মর্যাদা বর্ধন, জামাআতে শামিল হওয়ার জন্য পদক্ষেপ, প্রচন্ড ঠান্ডার সময় পরিপূর্ণরুপে ওযূ এবং নামাযের অপেক্ষা নিয়ে। যে ব্যক্তি উক্ত কর্মসমূহ সম্পাদন করতে যত্নবানহবে, সে ব্যক্তির জীবন হবে কল্যাণময় এবং মরণ হবে কল্যাণময়। আর সে তার পাপ থেকে পবিত্র হয়ে সেই দিনকার মত নিষ্পাপ হবে, যেদিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করেছিল।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান ৩২৩৩নং)
এ ব্যাপারে আরো মাহাত্ম ‘মসজিদে যাওয়ার মাহাত্ম’ শিরোনামে দ্রষ্টব্য।
জামাআতে লোক যত বেশী হবে তত বেশী সওয়াব লাভ হবে নামাযীদের। মহানবী (ﷺ) বলেন, “---এক ব্যক্তির কোন অন্য ব্যক্তির সাথে জামাআত করে পড়া নামায একাকী পড়া নামায অপেক্ষা অধিকতর উত্তম। অনুরুপ অন্য দুই ব্যক্তির সাথে জামাআত করে পড়া নামায এক ব্যক্তির সাথে জামাআত করে পড়া নামায অপেক্ষা অধিকতর উত্তম। এইভাবে জামাআতের লোক সংখ্যা যত অধিক হবে ততই আল্লাহ আয্যা অজাল্লার নিকট অধিক প্রিয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৪০৬নং)
তিনি বলেন, “১ জনের ইমামতিতে ২ জনের নামায আল্লাহর নিকট একাকী ৪ জনের নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর, ১ জনের ইমামতিতে ৪ জনের নামায আল্লাহর নিকট একাকী ৮ জনের নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর এবং ১ জনের ইমামতিতে ৮ জনের নামায আল্লাহর নিকট একাকী ১০০ জনের নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।” (বায়হাকী, বাযয়ীফ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, জামে ৩৮৩৬নং)
বিশেষ করে ফজর ও এশার নামায জামাআতে পড়ার পৃথক মাহাত্ম রয়েছে।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “লোকে যদি আযান ও প্রথম কাতারের মাহাত্ম জানত অতঃপর তা লাভের জন্য লটারি করা ছাড়া কোন অন্য উপায় না পেত তাহলে লটারিই করত। আর তারা যদি (নামাযের জন্য মসজিদের প্রতি) সকাল-সকাল আসার মাহাত্ম জানত, তাহলে অবশ্যই তার জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর যদি এশা ও ফজরের নামাযের মাহাত্ম তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে চলেও তারা উভয় নামাযে উপস্থিত হত।” (বুখারী ৬১৫নং,মুসলিম, সহীহ ৪৩৭নং)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি এশার নামায জামাআতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন অর্ধরাত্রি (নফল) নামায পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়ল, সে যেন পুরো রাত্রিই নামায পড়ল।” (মালেক, মুঅত্তা, মুসলিম, সহীহ ৬৫৬নং, আবূদাঊদ, সুনান)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের জামাআতের নামায একাকী নামাযের তুলনায় ২৫ গুণ অধিক মর্যাদা রাখে। আর রাত্রি ও দিনের ফিরিশ্তা ফজরের নামাযে একত্রিত হন।”
উক্ত হাদীস বর্ণনার পর আবূ হুরাইরা বলেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা হলে তোমরা পড়ে নাও :
(إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْداً)
অর্থাৎ, নিশ্চয় ফজরের নামাযে ফিরিশ্তা হাযির হয়। (কুরআন মাজীদ ১৭/৭৮) (বুখারী ৬৪৮, নাসাঈ, সুনান, জামে ২৯৭৪নং)
নবী (ﷺ) বলেন, “(ফজরের সময়) যে ব্যক্তি (স্বগৃহে) ওযু করে। অতঃপর মসজিদে এসে ফজরের (ফরয) নামাযের পূর্বে দুই রাকআত নামায পড়ে। অতঃপর বসে (অপেক্ষা ক’রে) ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ে, সেই ব্যক্তির সেদিনকার নামায নেক লোকদের নামায রুপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর তার নাম পরম করুণাময় (আল্লাহর) প্রতিনিধিদলের তালিকাভুক্ত হয়।” (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৪১৩নং)
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ে, সে ব্যক্তি (সন্ধ্যা পর্যন্ত) আল্লাহর দায়িত্বে থাকে।” (মুসলিম, সহীহ ৬৫৭, তিরমিযী, সুনান, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, জামে ৬৩৪৩নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিক্র করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।” বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব। (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “ইসমাঈলের বংশধরের চারটি মানুষকে দাসত্বমুক্ত করা অপেক্ষা ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যিক্রকারী দলের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক প্রিয়। অনুরুপ চারটি জীবন দাসমুক্ত করার চেয়ে আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যিক্রকারী সম্প্রদায়ের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬২নং)
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ফজরের নামায জামাআতে পড়ার জন্য কয়েকটি জিনিস জরুরী:
- আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তার সওয়াবের লোভ মনের মাঝে স্থান দিতে হবে।
- অবৈধ কাজে তো নয়ই; বরং বৈধ কাজেও বেশী রাত না জেগে আগে আগে ঘুমাতে হবে।
- জামাআত ধরার পাক্কা এরাদা হতে হবে।
- ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয় এমন অসীলা ব্যবহার করতে হবে; যেমন এলার্ম ঘড়ি, কোন সুহৃদ সাথী ইত্যাদি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, দুনিয়ার কাজের জন্য ফজরের আগেও উঠতে মানুষ অসুবিধা বোধ করে না, অথচ যত অসুবিধা বোধ করে আল্লাহর কাজে যথা সময়ে জাগতে। সুতরাং এমন মানুষের এমন অবহেলা তার ঈমানী দুর্বলতার পরিচয় নয় কি?
এখানে প্রসঙ্গত: ফজরের নামায যথা সময়ে না পড়ার যে বিধান, সে সম্পর্কিত একটি ফতোয়া উল্লেখ করা সমীচীন বলে মনে করি।
প্রত্যেক মুসলিমের জন্য প্রত্যেক নামায তার যথাসময়ে মসজিদে জামাআত সহকারে আদায় করা ওয়াজেব। আর প্রত্যেক সেই বিষয় থেকে দূরে থাকা জরুরী, যে বিষয় তাকে কোন নামায তার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা থেকে বাধা দিতে পারে। বিশেষ করে ফজরের নামাযের জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিৎ, যাতে ঘুমিয়ে থেকে জামাআত ছুটে না যায় বা তার সময় পার না হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ফজরের নামাযকে কোন মুসলিমের জন্য ভারী মনে করা উচিৎ নয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “মুনাফিকের জন্য সবচেয়ে বেশী ভারী নামায হল, এশা ও ফজরের নামায। ঐ উভয় নামাযে কি রাখা আছে তা যদি ওরা জানতো তাহলে হাঁটু গেড়ে হলেও তার জামাআতে এসে উপস্থিত হত।” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
সুতরাং এমন সব উপায় ও অসীলা অবলম্বন করা উচিৎ, যাতে যথা সময়ে উঠে ফজরের নামায জামাআত সহকারে পড়া সহ্জ হয়। যেমন সকাল-সকাল ঘুমিয়ে পড়া, বেশী রাত না জাগা, কাউকে জাগিয়ে দিতে অনুরোধ করা, এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা, ইত্যাদি।
এত বেশী রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত বা কোন ইলমী আলোচনা করাও বৈধ নয়, যার ফলে ফজরের নামায ছুটে যাওয়ার ভয় থাকে। সুতরাং টিভি-ভিসিআর দেখে, তাস খেলে অথবা অন্য কোন অবৈধ কারণে রাত জেগে ফজরের নামায নষ্ট করা যে কত বড় পাপের কাজ -তা অনুমেয়। পক্ষান্তরে যদি ইচ্ছা করে কেউফজরের আযান শুনেও না ওঠে, অথবা তাকে জাগিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও না ওঠে, পরন্তু যে জাগিয়ে দেয় তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়, অথবা ইচ্ছা করেই ঘড়িতে এলার্ম ফজরের সময় না দিয়ে সূর্য উদয় হওয়ার পর ঠিক তার ডিউটির সময়ে দেয়, তাহলে এমন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট থেকে শাস্তির উপযুক্ত এবং শাসন কর্তৃপক্ষের নিকটেও শাস্তিযোগ্য।
আর ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ওযরে ফজরের নামায সূর্য ওঠার পর আদায় করলেও যথাসময়ে নামায ত্যাগ করার জন্য (বহু উলামার ফতোয়া মতে) সে কাফের হয়ে যাবে। কারণ, মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তি হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান) আর মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন, “নামাযীদের জন্য রয়েছে ‘ওয়াইল’ দোযখ; যে নামাযীরা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন।” (সূরা মাঊন) অর্থাৎ, যারা নামায যথাসময়ে আদায় করে না। (দ্র: ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৫২, ৩৬৫)
অতএব গাফলতি ছাড়cন এবং যে কোন প্রকারে ফজর ও অন্যান্য নামায যথাসময়ে আদায় করুন। আল্লাহ আমাদেরকে খাঁটি মুসলমান করুন এবং আমাদের নামায কবুল করে নিন। আমীন।