উত্তর: বলুন, আমার রব আল্লাহ। তিনি সবকিছুর মালিক, স্রষ্টা, ব্যবস্থাপক, আকৃতি দানকারী, অভিভাবক ও বান্দাদের সংশোধনকারী এবং তাদের যাবতীয় বিষয়াদির আঞ্জাম দাতা। তার নির্দেশ ব্যতীত কোনো কিছুই অস্তিত্ব লাভ করে না এবং তার ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতীত কোনো স্থির বস্তু নড়াচড়া করে না।
উত্তর: তাহলে তুমি বল, তার সম্পর্কে ইলম, তার অস্তিত্ব সম্পর্কে স্বভাবজাত স্বীকৃতি, তার সম্মান ও ভীতি আর ক্ষমতা যা দিয়ে তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন সে সবের আলোকেই আমি তাকে চিনেছি। যেমনি ভাবে আমি তাকে চিনেছি তার নিদর্শনসমূহ ও সৃষ্টিগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিয়ে ও চিন্তা-গবেষণা করে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ٣٧﴾ [فصلت: ٣٧]
“আর তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৭] এই সু-শৃঙ্খল, সুক্ষ্ম ও সুন্দর বিশাল এ সৃষ্ট-জগত নিজে নিজে কখনো সৃষ্ট হতে পারে না। অবশ্যই অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করার জন্য তার স্রষ্টা রয়েছে। এটিই শক্তিশালী, মহান ও প্রজ্ঞাময় স্রষ্টার অস্তিত্বের বড় প্রমাণ। প্রত্যেক মাখলুক তাদের স্রষ্টা, মালিক, রিযিক দাতা ও তাদের বিষয়াদির ব্যবস্থাপককে স্বীকার করে। তবে মুষ্টিমেয় কতক নাস্তিক ব্যতীত। তার মাখলুকের মধ্যে আরো রয়েছে সাত আসমান, সাত যমীন ও তার অন্তর্ভুক্ত মাখলুকসমূহ, যার সংখ্যা, হাকীকত ও অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও রিযিকের ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা, চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٣]
“নিশ্চয় তোমাদের রব হলেন আল্লাহ, যিনি ছয় দিনে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন অতঃপর আরশে আরোহণ করেছেন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা ঢেকে দেন, ফলে ওদের একে অন্যকে অতি দ্রুত অন্বেষণ করে। আর সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজিকে তাঁর নির্দেশের অধীন করেছেন। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। মহা বিশ্বের রব বরকতময় আল্লাহ।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৪]
উত্তর: তখন বল, আমার দীন ইসলাম। আর ইসলাম হচ্ছে তাওহীদের সাথে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্যের সাথে তার বশ্যতা মেনে নেওয়া এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে মুক্ত হওয়া। যেমন— আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ ١٩﴾ [ال عمران: ١٩]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম।” [সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৯] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন: “আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৮৫] আল্লাহ কোনো দীন গ্রহণ করবেন না একমাত্র তার দীন ব্যতীত, যা দিয়ে তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। কারণ, তাঁর দ্বীন পূর্বের সকল শরীয়তকে রহিতকারী। অতএব ইসলাম ব্যতীত যে অন্য দীন অন্বেষণ করবে সে হিদায়াত থেকে বিচ্যুত এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে ও জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জাহান্নাম খুব নিকৃষ্ট ঠিকানা।
উত্তর: তুমি বল, ঈমানের রুকন ছয়টি। আর তা হচ্ছে, তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকাল দিবসের প্রতি। তুমি আরো ঈমান আনবে, ভালো ও মন্দ—সবকিছুর তাকদীরের প্রতি।
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত যেভাবে প্রমাণ করে সেভাবে এসকল রুকনসমূহের ওপর ঈমান আনা ছাড়া কারো ঈমান পূর্ণ হবে না। আর যে কেউ এর একটি অস্বীকার করবে, সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। এর ওপর প্রমাণ হলো, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿لَّيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۧنَ وَءَاتَى ٱلۡمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلۡمُوفُونَ بِعَهۡدِهِمۡ إِذَا عَٰهَدُواْۖ وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ١٧٧ ﴾ [البقرة: ١٧٧]
“ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দি মুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তাঁরাই সত্যবাদী ও মুত্তাকী”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন তিনি বলেছেন, “তুমি ঈমান আনবে আল্লাহ, ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, পরকাল দিবস ও ভালো-মন্দের তাকদীরের প্রতি”। (এটি বর্ণনা করেছেন সহীহ মুসলিম)
উত্তর: বল, আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব এবং তার রুবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত ও তার নাম ও সিফাতসমূহের প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর একত্বের প্রতি বিশ্বাস, সত্যায়ন ও স্বীকার করা দ্বারা।
উত্তর: বল, ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান হচ্ছে, তাদের অস্তিত্ব, গুণাবলি, ক্ষমতা, কাজ এবং তাদের যা নির্দেশ করা হয় তা পালন করা ইত্যাদির প্রতি সত্যায়ন ও দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। সেই সঙ্গে আরো বিশ্বাস করা যে, তারা আল্লাহর মর্যাদাবান মহান সৃষ্টি। আল্লাহ তাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [التحريم: ٦]
“আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে তারা অবাধ্য হয় না। আর তারা তাই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা আত-তাহরীম: ৬] তাদের পাখা রয়েছে দু’টো দু’টো, তিনটে তিনটে, চারটে চারটে এবং তার চেয়েও অধিক। তাদের সংখ্যা অনেক। আল্লাহ ব্যতীত তাদের সংখ্যা কেউ জানে না। আল্লাহ তাদেরকে বড় বড় অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের কেউ আরশের ধারক, কেউ মাতৃগর্ভের দায়িত্বে, কেউ আমল সংরক্ষণ করার কাজে, কেউ বান্দাদের হিফাযত করার কাজে, কেউ জান্নাত ও জাহান্নামের পাহারাদারি প্রভৃতি গুরু দায়িত্বে নিয়োজিত। আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি নবীদের ওপর নাযিলকতৃ অহীর দায়িত্বে নিয়োজিত। অতএব আমরা তাদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে ঈমান আনব। যেরূপ সংবাদ দিয়েছেন আমাদের রব তার কিতাবে ও তার রাসূল স্বীয় সুন্নতে। সুতরাং যে ব্যক্তি ফিরিশতাদের অস্বীকার করবে কিংবা মনে করবে, তাদের হাকীকত আল্লাহ যেরূপ সংবাদ দিয়েছেন সেরূপ নয় সে কাফির। কারণ, সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদকে অস্বীকার করেছে।
উত্তর: তুমি বল যে, আপনার এ বিশ্বাস করা ও সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তা‘আলা তার নবী ও রাসূলগণের ওপর অনেক কিতাব নাযিল করেছেন। তা থেকে কতিপয় তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইবরাহীমের সহীফা, তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর ও কুরআন। ইবরাহীমের সহীফাগুলো ইবরাহীমের ওপর, তাওরাত মূসার ওপর, ইঞ্জীল ঈসার ওপর, যাবূর দাউদের ওপর ও কুরআন শেষ নবী মুহাম্মাদের ওপর নাযিল হয়েছে। তাদের সবার ওপর সালাত ও সালাম।
এসবের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে কুরআন। এটি আল্লাহর কালাম। তিনি কুরআন দিয়ে প্রকৃতপক্ষে কথা বলেছেন। তার শব্দ ও অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি এটা জিবরীলকে শুনিয়েছেন এবং তার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “এটা নিয়ে জিবরীল অবতরণ করেছেন”। [আশ-শুআরা, আয়াত: ১৯৩] তিনি আরো বলেন: “নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি পর্যায়ক্রমে কুরআন নাযিল করেছি”। [সূরা ইনসান, আয়াত: ২৩] তিনি আরো বলেন: فأجره حتى يسمع كلام الله“অতঃপর তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে”। [সুরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে বিকৃতি, বৃদ্ধি ও হ্রাস থেকে হিফাযত করেছেন। এটি শেষ যামানায় কিয়ামত কায়েম হওয়ার পূর্বে মুমিনদের মৃত্যু পর্যন্ত কাগজে ও বক্ষদেশে সংরক্ষিত থাকবে। অতঃপর আল্লাহ এটি উঠিয়ে নিবেন। ফলে তার কোনো অংশ আর অবশিষ্ট থাকবে না।
উত্তর: বল, আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, তারা মানুষ এবং তারা বনী আদম থেকে মনোনীত ব্যক্তিবর্গ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদের ওপর যে শরীয়ত নাযিল করেছেন, তা পৌঁছানোর জন্য তাদেরকে বাঁচাই ও নির্বাচন করেছেন। তারা তাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করেন, যিনি একক, যার কোনো শরীক নেই এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে মুক্ত থাকতে বলেন। নবুওয়াত আল্লাহর মনোনয়ন ও নির্বাচন, যা নিজের পরিশ্রম, অধিক ইবাদত, যোগ্যতা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে হাসিল করা যায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥ “আল্লাহ ভালো জানেন কোথায় তিনি স্বীয় রিসালাত রাখবেন”। [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১২৪]
নবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম হলেন আদম আলাইহিস সালাম। আর সর্বপ্রথম রাসূল হলেন নূহ আলাইহিস সালাম। আর তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কুরাইশী আল-হাশেমী। আল্লাহর অসংখ্য সালাত ও সালাম তাদের সবার ওপর। যে কেউ একজন নবীকে অস্বীকার করবে সে কাফির। আর যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে যে নবুওয়াতের দাবি করবে সেও কাফির এবং আল্লাহকে অস্বীকারকারী। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী”। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার পরে কোনো নবী নেই”।
উত্তর: বল, মৃত্যুর পর যা কিছু হবে বলে আল্লাহ সংবাদ দিয়েছেন সেগুলোর প্রতি কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ও স্বীকার করা দ্বারাই আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনা হয়। যেমন, কবরের প্রশ্ন, কবরের নি‘আমত ও আযাব, পুনরুত্থান, হিসাব ও ফয়সালার জন্য সমস্ত মখলুককে একত্রিত করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও কিয়ামতের ময়দানে আরো যা কিছু সংঘটিত হবে, তার ওপর বিশ্বাস করা, যেমন— দীর্ঘ অবস্থান, সূর্য এক মাইল পরিমাণ নিকটে চলে আসা, হাউয, মীযান, আমলনামা প্রদান, জাহান্নামের ওপর পুলসিরাত স্থাপন প্রভৃতি ঘটনা। জান্নাতিরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আরো যেসব ভয়ানক ঘটনা সে মহান দিনে ঘটবে সেগুলোর বর্ণনা যেভাবে আল্লাহর কিতাবে ও তার রাসূলের সুন্নাতে এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস করা। কিয়ামতের যেসব আলামত দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে, সেগুলোর প্রতি ঈমান আনাও পরকাল দিবসের ওপর ঈমান আনার মধ্যে শামিল। যেমন- ব্যাপক যুদ্ধ-বিগ্রহ, হত্যা, ভূমিকম্প, ভূমি ধস, দাজ্জাল বের হওয়া, ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করা, ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়া, পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়া ইত্যাদি।
এসবই আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ হাদীসসমূহে প্রমাণিত, যা সহীহ, সুনান ও মুসনাদের গ্রন্থাবলীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
উত্তর: বল, হ্যাঁ, আল্লাহ তা`আলা ফির`আউন সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦﴾ [غافر: ٤٦]
“সকাল-সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের কাছে উপস্থিত করা হয়। আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ফিরআউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও”। [সূরা গাফির, আয়াত: ৪৬]
অপর আয়াতে বলেন,
﴿وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ يَتَوَفَّى ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَضۡرِبُونَ وُجُوهَهُمۡ وَأَدۡبَٰرَهُمۡ وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٥٠﴾ [الانفال: ٥٠]
“আর যদি তুমি দেখতে, যখন ফিরিশতারা কাফিরদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের চেহারায় ও পশ্চাতে আঘাত করছিল, আর (বলছিল) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন কর”। [সূরা আনফাল, আয়াত: ৫০]
﴿يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ ٢٧﴾ [ابراهيم: ٢٧]
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ঈমানদারদেরকে দুনিয়াতে ও আখিরাতে সুদৃঢ় বাণীর ওপর অবিচল রাখেন”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ২৭]
আর বারা‘ ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি দীর্ঘ কুদসী হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তাতে বলা হয়, “অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। অতএব তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য একটি দরজা জান্নাতের দিকে খুলে দাও। ফলে তার নিকট জান্নাতের সুবাতাস ও সুঘ্রাণ আসতে থাকবে এবং তার কবরকে তার জন্য চোখের দৃষ্টি পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে।” আর কাফিরের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে বলেন, “অতঃপর তার রূহকে তার শরীরে ফেরত দেওয়া হবে এবং তার নিকট দু’জন ফিরিশতা আসবে এবং তাকে বসাবে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করবে, তোমার রব কে? ফলে সে বলবে, হাহা হাহা আমি জানি না। অতঃপর তারা তাকে বলবেন, তোমার দীন কি? সে বলেব, হাহা হাহা আমি জানি না। অতঃপর তারা তাকে বলবেন, এই যে লোকটিকে তোমাদের মধ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি কে? সে বলবে, হাহা হাহা আমি জানি না। অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষক ঘোষণা দেবে যে, সে মিথ্যা বলেছে। অতএব তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। ফলে জাহান্নামের গরম বাতাস ও বিষ-বাষ্প তার কাছে আসতে থাকবে এবং তার কবরকে তার ওপর এত সংকীর্ণ করা হয় যে, তার এক পাশের হাঁড় অপর পাশের হাঁড়ে প্রবেশ করবে”। অপর বর্ণনায় বৃদ্ধি করা সহ এভাবে আছে যে, “অতঃপর তার জন্য নিযুক্ত করা হয় অন্ধ ও বধির ফিরিশতাকে। তার সাথে থাকবে লোহার হাতুড়ি, যদি তা দ্বারা পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তবে সেটিও মাটিতে পরিণত হয়ে যাবে। আর সে তা দিয়ে তাকে এমন একটি আঘাত করবে, যা জিন ও মানুষ ব্যতীত পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সবাই শুনতে পায়। আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ জন্যই প্রত্যেক সালাতে আমাদেরকে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতে আদেশ করা হয়েছে।