আর যদি তুমি বলো, এই নবী বা ওলী যখন আল্লাহকে ডাকবেন, তখন আল্লাহ তার ডাকে অধিক সাড়া দিবেন, আমি সরাসরি ডাকলে যে সাড়া পাবো না। বস্তুতই এটাই হলো দ্বিতীয় প্রকার।
দ্বিতীয় প্রকার: তা হলো তুমি তার কাছ থেকে কোনো কাজ না চাইবে না এবং তাকে আহ্বানও জানাবে না, কিন্তু তাকে তুমি তোমার জন্য দো‘আ করতে বলবে। যেমন তুমি জীবিত কারও কাছে গিয়ে বলবে, ‘আমার জন্য দো‘আ কর।’ যেমনটি সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ দো‘আ প্রার্থনা করতেন। এটা জীবিতদের কাছে চাওয়া জায়েয, যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে; কিন্তু মৃত নবী, ওলী ও অন্যান্যদের কাছে দো‘আ চাওয়া জায়েয হবে না। সুতরাং এভাবে বলা জায়েয হবে না যে, ‘আমার জন্য দো‘আ কর।’ আর এটা বলাও জায়েয হবে না যে, ‘আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে কিছু চাও।’ কারণ সাহাবায়ে কেরাম ও তাবে‘ঈদের কেউ এমনটি করেন নি, এমনকি এমনটি করতে কোনো ইমামও নির্দেশ দেন নি। আর এ বিষয়ে কোনো হাদীসও আসে নি; বরং সহীহ হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যখন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময়ে অনাবৃষ্টি দেখা দিল তখন তিনি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। তিনি বলেছিলেন,
«اللهم إنا كنا إذا أجدبنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا»
“হে আল্লাহ! আমরা যখন অনাবৃষ্টিতে পতিত হতাম তখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর দো‘আর মাধ্যমে প্রার্থনা করতাম। ফলে আমাদের বৃষ্টি দেওয়া হতো। আর এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর চাচার দো‘আর মাধ্যমে চাচ্ছি। সুতরাং আমাদের বৃষ্টি দিন’ ফলে বৃষ্টি বর্ষিত হতো।”[1] তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে যান নি একথা বলতে যে, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এবং আমাদের জন্য বৃষ্টি চান। তারা কবরের কাছে এটাও বলতেন না যে, আমরা আপনার কাছে আমাদের ওপর যা আপতিত হয়েছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করছি এবং অনুরূপ কিছু। কখনো কোনো সাহাবী এমনটি করেন নি। বরং এটি বিদ‘আত। আল্লাহ তা‘আলাও এ ব্যাপারে কোনো দলীল-প্রমাণ নাযিল করেন নি, বরং যখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে যেতেন তখন তারা তাঁর ওপর সালাম দিতেন। অতঃপর যখন দো‘আ করতে চাইতেন তখন পবিত্র কবরকে সামনে রেখে দো‘আ করতেন না; বরং সেখান থেকে সরে যেতেন এবং কিবলামুখী হতেন। তখন তারা কেবল এক আল্লাহকেই ডাকতেন, যাঁর কোনো শরীক নেই, যেমন তারা অন্যান্য স্থানেও কেবল আল্লাহকেই ডাকতো। (অর্থাৎ তারা দো‘আ কেবল আল্লাহর কাছেই করতেন, কবরবাসীর কাছে নয়)
আর এটা এ কারণে যে মুওয়াত্তা ও অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এসেছে তিনি বলেছেন,
«اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُعْبَدُ، اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»
“হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে এমন মূর্তি-বিগ্রহ বানাবে না, যার ইবাদত করা হয়। মহান আল্লাহর অধিক ক্রোধ আপতিত হয়েছে ঐ জাতির প্রতি যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানায়।”[2]
আর সুনান গ্রন্থসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
«لاَ تَتَّخِذُوا قَبْرِي عِيدًا، وَلاَ بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَصَلُّوا عَلَيَّ حَيْثُ مَّا كُنْتُمْ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي».
“তোমরা আমার কবরকে ঈদের (সম্মেলন ও আনন্দ উৎসবের) স্থান বানাবে না। তোমরা যেখানে থাক সেখান থেকেই আমার ওপর সালাম পাঠাও। কেননা তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছানো হয়”।[3]
তাছাড়া সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যে শয্যা থেকে আর আরোগ্য হন নি সে মৃত্যু শয্যায় বলেছিলেন,
«لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»
“ইয়াহূদী ও নাসারাদের ওপর মহান আল্লাহর লা‘নত, এজন্যে যে তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে”।[4] তিনি সাবধান করছেন সে কাজ থেকে যা তারা করেছে। আশেয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “যদি এ সম্ভাবনা না হতো তবে অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের কবর উন্মুক্ত ময়দানে দেওয়া হতো; কিন্তু তিনি কবরকে মসজিদ বানানো অপছন্দ করেছেন।
অনুরূপভাবে সহীহ মুসলিমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে বলেছিলেন:
«إنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ الْقُبُورَ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ فَإِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ»
“নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তীরা কবরসমূহে মসজিদ বানাতো। সাবধান, তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। কেননা আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি।”[5]
তদ্রূপ সুনান আবু দাউদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন,
«لَعَنَ اللَّه زَائِرَات الْقُبُور وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِد وَالسُّرُج»
“মহান আল্লাহ কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের অভিসম্পাত দিয়েছেন এবং যারা তার উপর মসজিদ নির্মাণ ও আলোকচ্ছটার ব্যবস্থা করে।”[6]
এ কারণে আমাদের আলেমগণ বলেছেন, কোনো কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ জায়েয নেই। তারা আরও বলেন, কবরের উদ্দেশ্যে মানত করা বৈধ নয় এবং আরও বৈধ নয় কবরের পার্শ্ববর্তী লোকদের জন্য কোনো কিছু মানত করা। না কোনো অর্থ, না কোনো তেল, না কোনো মোমবাতি, কোনো পানি বা অন্য কিছু। এ সবকিছুই অবাধ্যতার মানত। অথচ সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন,
«من نذر أن يطيع الله فليطعه، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه»
“যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর অবাধ্যতার মানত করে সে সেন অবাধ্যতা না করে।”[7] (অর্থাৎ অন্যায় কাজটির মানত করলেও তা পূরণ করা যাবে না)।আর এজন্যই আলিমগণ মানতকারীর ওপর কসমের কাফফারা বর্তাবে কি? এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন, এ ব্যাপারে দু’ ধরণের বক্তব্য রয়েছে।
>[2] মুয়াত্তা ইমাম মালেক, (১/১৮৫); মুসনাদে আহমাদ (২/২৪৬)।
[3] সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ২০৪২; মুসনাদে আহমাদ (২/৩৬৮)।
[4] সহীহ বুখারী, (৩/১৫৬,১৯৮); সহীহ মুসলিম (১/৩৭৭)।
[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩২।
[6] সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ৩২৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩২০।
[7] সহীহ বুখারী (৮/১৭৭); আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২৮৯; জামে তিরমিযী, হাদীস নং ১৫২৬।
বস্তুত কবরের নিকট সালাত আদায় করা কিংবা মাযারে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব বা এতে ফযীলত রয়েছে বলে আমাদের ইমামদের মধ্য থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য পূর্বসূরী বলেন নি। আর তারা এটাও বলেন নি যে, সেখানে সালাত আদায় ও দো‘আ করা অন্যান্য স্থানে সালাত আদায় ও দো‘আ করা থেকে উত্তম; বরং সকলের ঐকমত্যে মসজিদ ও ঘরে সালাত আদায় করা নবী ও ওলীদের কবরের নিকট সালাত আদায় থেকে উত্তম। চাই সেটা মাযার নামকরণ করা হোক বা না হোক।
আর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদসমূহে এমন কিছু কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন যা মাযারে করতে অনুমতি দেন নি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَآۚ ١١٤﴾ [البقرة: ١١٤]
“আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এগুলো বিরাণ করার চেষ্টা করে?” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১১৪] তিনি মাযারের ব্যাপারে তা বলেন নি। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿َوَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِ﴾ [البقرة: ١٨٧]
“আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় থাক।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭] মাযারে ই‘তিকাফ করতে বলা হয় নি।
﴿قُلۡ أَمَرَ رَبِّي بِٱلۡقِسۡطِۖ وَأَقِيمُواْ وُجُوهَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ﴾ [الاعراف: ٢٩]
“বলুন, আমার রব আমাকে ইনসাফ করার নির্দেশ দিয়েছে, আরও নির্দেশ দিয়েছে যেন তোমরা তোমাদের চেহারাকে প্রতিষ্ঠিত কর প্রতিটি মসজিদের স্থানে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَلَمۡ يَخۡشَ إِلَّا ٱللَّهَۖ فَعَسَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُهۡتَدِينَ ١٨﴾ [التوبة: ١٨]
“তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨]
“আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। কাজেই আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة الرجل في الجماعة تفضل على صلاته في بيته وسوقه خمساً وعشرين درجة»
“কোনো ব্যক্তির মসজিদে সালাত আদায় করা বাড়ী ও বাজার হতে পঁচিশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ।”[1]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى الله لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন।” অথচ কবর, যাকে মসজিদ বানানোর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত আছে এবং যে এমন কাজ করবে তাকে তিনি অভিসম্পাত দিয়েছেন। যা একাধিক সাহাবী ও তাবে‘ঈও উল্লেখ করেছেন। যেমনটি ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর তাবরানী ও অন্যান্যরাও তাদের তাফসীরসমূহে বর্ণনা করেছেন। আর এ বিষয়টি ওয়াসিমা ও অন্যান্যগণ (কাসাসুল আম্বিয়া) গ্রন্থে আল্লাহ তা‘আলার নিন্মোক্ত বাণীর তাফসীরে বর্ণনা করেছেন:
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣﴾ [نوح: ٢٣]
“আর তারা বলেছে, ‘তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে; পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে”। [সূরা নূহ, আয়াত: ২৩] তারা বলেছেন, “এসব হচ্ছে নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের নেককার ব্যক্তিবর্গের নাম। অতঃপর যখন তারা মারা গেলো তারা তাদের কবরের প্রতি আসক্ত হলো। তারপর দীর্ঘসময় তাদের ওপর অতিবাহিত হলো, অতঃপর তারা তাদের আকৃতিগুলোকে মূর্তিরূপে গ্রহণ করে। বস্তুত কবরের প্রতি তাদের আসক্তি, সেগুলোর স্পর্শ, চুম্বন ও কবরবাসীদের নিকট দো‘আ করা প্রভৃতিই হলো শির্কের মূল-ভিত্তি এবং মূর্তিপূজার গোড়ার কথা। আর একারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُعْبَدُ»
“হে আল্লাহ! আপনি আমার কবরকে এমন মূর্তি বানাবেন না, যার ইবাদত করা হয়।”[2]
আর আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কোনো লোক যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করে অথবা তিনি ব্যতীত অন্যান্য নবী ও ওলীদের তথা সাহাবী ও আহলে বাইত ও অন্যান্যদের কবর যিয়ারত করে, সে তা স্পর্শ করবে না এবং চুম্বনও করবে না; বরং পৃথিবীতে পাথরসমূহের মধ্যে হাজরে আসওয়াদ ছাড়া আর কোনো পাথরকে চুম্বন করা বৈধ নয়। আর সে জন্যই সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«والله إِنِّي لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُك»
“আল্লাহর শপথ করে বলছি। নিশ্চয় আমি জানি তুমি একটি পাথর মাত্র। কোনো ক্ষতি ও উপকার কারতে পার না, যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তবে তোমাকে চুম্বন করতাম না।”[3]
আর একারণেই ইমামগণের ঐকমত্যে কোনো ব্যক্তির জন্য সুন্নত নয় কাবাঘরের হাজরে ইসমাঈল বা হাতীম সংলগ্ন বাকী দুটি রুকন অথবা কাবার দেয়াল অথবা মাকামে ইবরাহীম অথবা বায়তুল মুকাদ্দাসের পাথর, কিংবা কোনো নবী বা ওলীর কবর চুম্বন অথবা স্পর্শ করা সুন্নাত নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারের ওপর হাত রাখা, যা তখন বর্তমান ছিল, তাতেও তারা মতানৈক্য করেছেন। ইমাম মালেক রহ. ও অন্যান্যরা এটা মাকরূহ বলেছেন। কেননা এটা বিদ‘আত। আর মালেক যখন ‘আতা রহ.-কে এ কাজ করতে দেখলেন তখন তিনি তার থেকে ইলম গ্রহণ করেন নি। যদিও ইমাম আহমাদ ও অন্যান্যগণ এটাতে রুখসত বা ছাড় আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এমনটি করেছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর স্পর্শ করা ও চুমো দেওয়াকে সকল ইমাম অপছন্দ ও নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। কেননা তারা জানত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্কের যাবতীয় উপায়-উপকরণ ও সকল ছিদ্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং আর তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন আর দীনকে একনিষ্টভাবে একমাত্র সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন।
>[2] মুয়াত্তা মালেক (১/১৮৫); মুসনাদে আহমদ (২/২৪৬)।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৭০।
আর এর মাধ্যমেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ওলীর জীবদ্দশায় চাওয়া ও তার মৃত্যুর পর ও তার অনুপস্থিতিতে তার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য সুষ্পষ্ট হয়ে যায়। কেননা তার জীবদ্দশায় কেউ তার ইবাদত করতে পারবে না। তাই যখন নবীগণ ও ওলীগণ জীবিত থাকেন তখন তারা তাদের উপস্থিতিতে কাউকে আল্লাহর সাথে শরীক করতে ছাড় দিতেন না; বরং তারা তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করতেন এবং এর জন্য তাদের শাস্তি দিতেন। আর এ কারণে মসীহ আলাইহিস সালাম বলেন,
﴿مَا قُلۡتُ لَهُمۡ إِلَّا مَآ أَمَرۡتَنِي بِهِۦٓ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۚ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧﴾ [المائدة: ١١٧]
“আপনি আমাকে যে আদেশ করেছেন তা ছাড়া তাদেরকে আমি কিছুই বলি নি। তা এই যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১১৭]
আর কোনো এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘আল্লাহ ও আপনি চাইলে’, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«أجعلتني لله ندا قل ما شاء الله وحده»
“তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে অংশীদার বানিয়েছো? বল, একমাত্র আল্লাহ যা চেয়েছেন।”[1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لا تقولوا ما شاء الله وشاء محمد ولكن قولوا ما شاء الله ثم شاء محمد»
“তোমরা বলবে না, আল্লাহ ও মুহাম্মদ যা চেয়েছেন, কিন্তু তোমরা বলো: আল্লাহ যা চেয়েছেন তারপর মুহাম্মদ যা চেয়েছেন।”[2]
আর যখন ছোট এক মেয়ে বলেছিল, ‘আমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল আছেন তিনি আগামীকাল যা হবে তা সম্পর্কে জানেন’, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«دَعِي هَذَا وَقُولِي الَّذِي كُنْتِ تَقُولِينَ»
“এটা ছেড়ে দাও এবং যেটা বলছিলে সেটা বলতে থাক।”[3]
তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«لا تطروني كما أطرت النصارى عيسى بن مريم فإنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله»
“তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না যেরূপে নাসারারা ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। আমি তো একজন বান্দা বা দাস। অতএব, তোমরা বলো: “আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল”।[4]
আর যখন সাহাবীগণ তাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন,
«لَا تَقُومُوا كَمَا تَقُومُ الْأَعَاجِمُ، يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا»
“তোমরা অনারবী লোকজন যে পদ্ধতিতে একে অপরকে দাঁড়িয়ে সম্মান করে সেভাবে আমাকে সম্মান করবে না।”[5]
অনুরূপ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সাহাবীগণের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কোনো প্রিয় ব্যক্তি ছিল না, আর সাহাবীগণ যখন তাঁকে দেখতো তখন দাঁড়াত না, যেহেতু তারা জানত যে, তিনি এটা অপছন্দ করেন।
তদ্রূপ মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাজদাহ করে বসল, তখন তিনি তাকে তা করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন,
«لَا يَصْلُحُ لِبَشَرٍ أَنْ يَسْجُدَ لِبَشَرٍ، وَلَوْ صَلَحَ لِبَشَرٍ أَنْ يَسْجُدَ لِبَشَرٍ، لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا، مِنْ عِظَمِ حَقِّهِ عَلَيْهَا»
“মানুষের জন্য অন্য কোনো মানুষকে সাজদাহ করা উপযোগী নয়। আর যদি আমি কাউকে সাজদাহ করার অনুমতি দিতাম তবে অবশ্যই তোমাদের স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তারা যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে যেহেতু তার অধিকার বেশি।”[6]
অনুরূপভাবে “যখন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে সে সব যিন্দীকদের নিয়ে আসা হলো যারা তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছিল, সীমালঙ্ঘন করেছিল এবং তার ওপর ইলাহ হওয়ার বিশ্বাস আরোপ করেছিল তখন তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
এই হচ্ছে আল্লাহর নবী ও অলীগণের কাজ। (তারা তাওহীদের সীমারেখা রক্ষা করে চলেন)। একমাত্র যে যমীনে অহংকার ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় সে-ই তো কেবল বাড়াবাড়ি ও অযথা সম্মান প্রদর্শনের স্বীকৃতি দেয়। যেমন, ফির‘আউন ও অন্যান্যরা; অনুরূপ পথভ্রষ্ট পীর-মাশাইখরাও এ কাজের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে, যারা উদ্দেশ্য হলো যমীনের বাড়াবাড়ি করা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা। আর নবী ও ওলীদের নিয়ে ফেতনায় ফেলা এবং তাদেরকে রব সাব্যস্ত করা আর তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করা, এসবই তাদের অনুপস্থিতিতে এবং তাদের মৃত্যুর পরই কেবল সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন, মসীহ ও উযাইয়ের সাথে (তাদের অনুসারীদের) শির্ক। (কারণ, তারা কেবল মাসীহ ও উযায়ের এর অনুপস্থিতি ও মৃত্যুর পরই তা করতে সমর্থ হয়েছিল)।
সুতরাং এটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেককার লোকদের জীবদ্দশায় ও উপস্থিতিতে চাওয়া এবং তাদের মৃত্যুর পর ও অনুপস্থিতিতে চাওয়ার পার্থক্য নির্দেশ করে। সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাবে-তাবে‘ঈগণের মধ্য থেকে এ উম্মতের কোনো গ্রহণযোগ্য পূর্বসূরী কেউই নবীগণের কবরে সালাত, দো‘আ ও তাদের নিকট অন্য কিছু প্রার্থনা করত না। আর তারা তাদের দ্বারা কোনো উদ্ধারও কামনা করতো না। তাদের অনুপস্থিতিতেও নয়, কবরের কাছেও নয়। অনুরূপভাবে তারা কবরের কাছে অবস্থানও করতো না।
অন্যতম বড় শির্ক হলো: কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কোনো মৃত ব্যক্তি বা অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। যেমনটি প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ বড় শির্ক হচ্ছে, বিপদের সময় তাদের দ্বারা উদ্ধার কামনা করা। যেমন এটা বলা যে, হে আমার অমুক নেতা! মনে হচ্ছে সে যেন এ আহ্বান দ্বারা তার কাছে কোনো ক্ষতি বা অনিষ্ট দূর করার প্রার্থনা করছে অথবা উপকার লাভ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে। বস্তুত এটাই তো ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার মা, পাদ্রী ও সংসার বিরাগীদের সাথে নাসারাদের আচরণ। অথচ সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টিজীব হলেন, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তার সাহাবীগণ তার মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তারপরও তাদের কেউ তার অনুপস্থিতিতে এবং মৃত্যুর পরে এমনটি করেন নি।
মূলত এ মুশরিকরা তাদের শির্কের সাথে মিথ্যারও সংমিশ্রণ ঘটায়। কেননা মিথ্যা শির্কের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ وَأُحِلَّتۡ لَكُمُ ٱلۡأَنۡعَٰمُ إِلَّا مَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡۖ فَٱجۡتَنِبُواْ ٱلرِّجۡسَ مِنَ ٱلۡأَوۡثَٰنِ وَٱجۡتَنِبُواْ قَوۡلَ ٱلزُّورِ ٣٠ حُنَفَآءَ لِلَّهِ غَيۡرَ مُشۡرِكِينَ بِهِ﴾ [الحج: ٣٠، ٣١]
“কাজেই তোমরা বেঁচে থাক মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে এবং বর্জন কর মিথ্যা কথা। আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং তাঁর কোনো শরীক না করে।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩০-৩১]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عُدِلَتْ شَهَادَةُ الزُّورِ بِالْإِشْرَاكِ بِاللَّهِ» ثَلَاثَ مَرَّات»
“মিথ্যা সাক্ষ্য আল্লাহর সাথে শির্কের সমপর্যায়ে চলে গেছে” কথাটি তিনি দু’বার বা তিনবার বলেছেন।”[7]
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ ٱلۡعِجۡلَ سَيَنَالُهُمۡ غَضَبٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَذِلَّةٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُفۡتَرِينَ ١٥٢﴾ [الاعراف: ١٥٢]
“নিশ্চয় যারা গো-বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, দুনিয়ার জীবনে তাদের ওপর তাদের রবের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই। আর এভাবেই আমরা মিথ্যা রটনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫২]
অনুরূপভাবে ইবরাহীম খলীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
﴿أَئِفۡكًا ءَالِهَةٗ دُونَ ٱللَّهِ تُرِيدُونَ ٨٦ فَمَا ظَنُّكُم بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٧﴾ [الصافات: ٨٦، ٨٧]
“তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অলীক বা মিথ্যা ইলাহগুলোকে চাও? ‘তাহলে সকল সৃষ্টির রব সম্বন্ধে তোমাদের ধারণা কী?” [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৮৬-৮৭] তাদের মারাত্মক মিথ্যাচারের উদাহরণ হলো, তাদের কেউ কেউ তার পীর সাহেব সম্পর্কে বলে, মুরীদ বা ভক্ত যদি পশ্চিমে থাকে আর তার পীর পূর্বে থাকে, তাতেও তাদের মধ্যকার পর্দা উন্মোচিত হয়ে যায় এবং সে মুরীদের ডাকে সাড়া দিবে। তারা আরও বলে, যদি পীর সাহেব এমন না হবেন তো তিনি পীর হতে পারেন না। আবার কখনও কখনও শয়তান তাদের গোমরাহ করে দেয়, যেমনিভাবে সে মুর্তিপজকদেরকে পথভ্রষ্ট করে। যেভাবে শয়তান জাহেলী যুগে আরবদেরকে মূর্তির মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করত এবং তারকাপূজারী ও তন্ত্র-মন্ত্রবাদীদেরকে শির্ক ও জাদুর মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করে। যেমনিভাবে তাতারী, হিন্দী, সুদানীসহ অন্যান্য মুশরিকদের মধ্যেও শয়তান প্রলুব্ধ ও সম্বোধণ ইত্যাদি করে বিভিন্নভাবে পথভ্রষ্ট করতো। ঠিক এসব পীর মুরিদদের বেলাতেও একই ধরনের কিছু কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিষধ্বনি ও হাততালি শুনার সময়। কেননা শয়তান তাদের ওপর অবতীর্ণ হয়। আবার তাদের কারও কারও অবস্থা হয় মূর্ছিতের অবস্থার মতো, যেমন তাদের মুখ থেকে ফেনা বের হয়, ময়লা বের হয়, বিকট চিৎকার হতে থাকে, এমনসব কথা বলে যা সে নিজে কিংবা উপস্থিত কেউই বুঝতে পারে না। অনুরূপ আরও কত কিছু যে এসব পথভ্রষ্টদের দ্বারা ঘটে থাকে তার ইয়ত্তা নেই।
>[2] হাদীসটির সনদ সহীহ। সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২১১৮; মুসনাদে আহমাদ(৫/৩৯৩)।
[3] সহীহ বুখারী (২/৩৫২); মুসনাদে আহমাদ (৬/৩৫৯-৩৬০)।
[4] সহীহ বুখারী (৬/৩৫৪-৩৫৫); মুসনাদে আহমাদ (১/২৩-২৪)।
[5] হাদীসটির সনদ দুর্বল। আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৩০; মুসনাদে আহমাদ (৫/২৫৩)।
[6] হাদীসটির সনদ দুর্বল, হাদীস সহীহ। মুসনাদে আহমদ (৫/২২৭); মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ (৪/৩০৫)।
[7] হাদীসটির সনদ দুর্বল। আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩০০।