আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের কাছে চাওয়া সকল নেক আমলকে ধ্বংস করে

হে ভাই! কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যকে ডাকাই মূলত পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ [الاحقاف: ٥]

“তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কাউকে ডাকে যে কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না। আর তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে উদাসীন।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৫]

আর যখন ফিরিশতাগণ তাদের মৃত্যু দান করেন তখন যা বলা হয় তা শোন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوۡنَهُمۡ قَالُوٓاْ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالُواْ ضَلُّواْ عَنَّا وَشَهِدُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ كَٰفِرِينَ ٣٧﴾ [الاعراف: ٣٧]

“অবশেষে যখন আমার ফিরিশতারা তাদের নিকট আসবে তাদের জান কবজ করতে, তখন তারা বলবে, ‘তারা কোথায়, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে’? তারা বলবে, ‘তারা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৭]।

আর কাফিররা তাদের ‘আমল বিনষ্টকারী। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا [الفرقان: ٢٢]

“আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২২]

আর এটা এ কারণে যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিরোধিতা করেছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলার আদেশের বিরোধিতা করা যেমনটি পূর্বের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের বিপরীত চলার মধ্যে অবাধ্যতা লুকিয়ে রয়েছে। কেননা তিনি আদেশ করেছেন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো কাছে প্রার্থনা না করতে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله»

“যখন তুমি কোনো কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন কোনো সাহায্য চাইবে তখনও আল্লাহর কাছেই চাইবে।”[1]

আর শির্ক কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সমস্ত নেক কর্মসমূহ নষ্ট করে দেয়। যেমন, সালাত, সাওম, হজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ [الزمر: ٦٥]

“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائ‍دة: ٧٢]

‘‘যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হলো জাহান্নাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২]

অতঃপর হে মুসলিম ভাইসব..

শির্ক ও শির্কের মাধ্যমসমূহ থেকে সর্তক হও। যেমন কবরের উপর মসজিদ বা অনুরূপ স্থাপনা নির্মাণ অথবা সেসব কবরের উদ্দেশ্য করা থেকেও সাবধান হও, যেসব কবরের কাছে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো কাছে চাওয়া হয় অথবা সেসব কবরবাসীদের জন্য যবেহ করা হয়। আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার নিজের ব্যাপারেও শির্কের অশংকা করেছেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা কুরআনে মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন এভাবে যে,

وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ [ابراهيم: ٣٥]

“আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা হতে দূরে রাখুন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৫]

অর্থাৎ হে আমাদের রব, আপনি ব্যতীত তাদেরকে ডাকা থেকে আমাদের দূরে রাখুন। আর মূর্তিসমূহ জানে নিশ্চয় তারা জড় পদার্থ; কিন্তু বস্তুত তারা হচ্ছে পূর্ববর্তী নেককার ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি।

ইবরাহীম আত-তাইমী বলেন, [ইবরাহীমের পরে (মূর্তিপূজার) পরীক্ষায় নিপতিত হওয়ার থেকে নিরাপদ কে হতে পারে?]

হে আমার মুসলিম ভাই,

তোমাদের কর্তব্য হলো মানুষকে এসব নির্বুদ্ধিতা, অভ্যাস ও জাহেলী যুগের শির্ক যা প্রথম জাহেলিয়াতের সময় ছিল তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। আর আল্লাহ তা‘আলার জন্যই একনিষ্ঠভাবে দো‘আ করবে আর মহান স্রষ্টার ডাকে সাড়া দিবে। কারণ আল্লাহ বলেন,

ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ [غافر: ٦٠]

“তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]

“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, (তাদেরকে বলবে) আমি তো নিকটই। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৬]

>
[1] ইমাম আহমদ (১/৩০৬) ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি সহীহ: সহীহ জামে‘ (৭৯৫৭)