আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অনুসরণ-অনুকরণ করি না

অনুরূপ আরও ফিতনা হচ্ছে, তুমি দেখতে পাবে বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও মানুষ, যাদেরকে ধনবান, মর্যাদাবান ও ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হয়ে থাকে অথবা তারা মানুষের নিকট বাহ্যিক দিক থেকে জ্ঞানী বলে মনে করা হয়ে থাকে, তাদেরকে তুমি দেখবে যে, তারা কবরের নিকট তাই করছে যা করতো পূর্ববর্তী জাহেলরা। আবার কখনো কখনো মানুষ তাদেরকে এ কাজের হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা এসব কাজ নিষিদ্ধ শির্ক এর পর্যায়ে পড়ে না বলে অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। ফলে মানুষ এ ব্যাপারে তাদের অনুসরণ করে; কিন্তু জ্ঞানীরা এমনটি করে না। তারা বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের রেখে যাওয়া নীতি কি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? (অর্থাৎ রাসূল ও সাহাবীগণ তো এমন কাজ কখনও করেন নি। সুতরাং আমাদের জন্য তাদের অনুসরণ-অনুকরণই যথেষ্ট।)

সুতরাং যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সারা জীবনে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ডাকেন নি, শান্তিতে কিংবা যুদ্ধের ময়দানে, গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে তাঁর থেকে এমন কোনো কিছু প্রকাশ পায় নি; বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, যখন তিনি কোনো বিপর্যয়ে পতিত হতেন অথবা তার ওপর কোনো বিপদ আসতো তখন তিনি বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতেন,

«يا بلال أرحنا بها»

“হে বেলাল, সালাতের মাধ্যমে আমাকে প্রশান্তি দাও।’’[1]

আর প্রত্যেক সালাতে আমরা পড়ে থাকি,

إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ [الفاتحة: ٥]

‘‘আমরা তোমারই ইবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫]

অর্থাৎ আমরা তুমি ব্যতীত কারো ইবাদত করি না এবং তুমি ব্যতীত অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি না। আর মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ [الاحزاب: ٢١]

‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]

তিনি এ কথা বলেন নি যে, নিশ্চয় তোমাদের জন্য তোমাদের যুগের লোকদের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। আর বনী ইসরাঈলের দিকে লক্ষ্য কর, যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতায় তাদের দরবেশ ও ‘আলেমদের আনুগত্য করল তখন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কী বললেন?

ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ [التوبة: ٣١]

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১] অতঃপর যখন আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উপর্যুক্ত বিষয় শুনলেন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে যখন খ্রিস্টান ছিলাম তখন তাদের ইবাদত করি নি, তখন তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«أليس يحرمون ما أحل الله فتحرمونه ويحلون ما حرم الله فتحلونه » ، قال : بلى . قال : فتلك عبادتهم»

“আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তারা কি তা হালাল করে না? ফলে তোমরাও তা বৈধ করে নিয়েছ। আর আল্লাহ যা বৈধ করেছেন তারা তা হারাম করে নিয়েছে। ফলে তোমরা তা হারাম করে নাও নি? তখন সে বলল নিশ্চয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটাই হলো তাদের ইবাদত।[2]

হে আমার ভাই...

কী পার্থক্য ঐ ব্যক্তির মধ্যে যে বলে, ঈসা আল্লাহর পুত্র আর তার কাছে রয়েছে উলুহিয়্যাতের কিছু অংশ যেমনটি খ্রিস্টানরা মনে করে থাকে এবং ঐ ব্যক্তির মধ্যে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকে এই বিশ্বাসে যে, নিশ্চয় তিনি তাদের প্রার্থনা কবূল করবেন? আর এটা খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে দোষারূপ যা তারা বর্তমান যুগের ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্তদের ওপর আরোপ করে থাকে। আর বিদ‘আতীরা তাদের এসব কর্মকাণ্ড মুসলিমদের বলে চালিয়ে দেয় অথচ তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ তাদের মৃতগণ, ওলীগণ ও সালেহীনের অসীলা ধরার মাধ্যমে বিদ‘আতী শির্কে লিপ্ত।

অত্যন্ত আফসোসের বিষয় যে, কতিপয় খ্রিস্টান যারা আমাদের পূর্বপুরুষ জাহেলী লোকদের জীবনী সম্পর্কে অধ্যয়ন করে তারা বলে, এরা (বিদ‘আতী ওসিলা ধারণকারীরা) তাদের পূর্বপুরুষ মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়েছে। অথচ এসব খ্রিস্টান ভুলে গেছে অথবা ভুলার ভান করছে যে, তারা এদের চেয়ে অনেক বড় বিষয়ে পতিত হয়েছে যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করেছে অথচ আল্লাহ কারো কাছ থেকে জন্ম নেওয়া অথবা কাউকে জন্ম দেওয়া থেকে অনেক পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ

‘‘তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বশ্রেষ্ঠ।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَلَدٗا ٨٨ لَّقَدۡ جِئۡتُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِدّٗا ٨٩ تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرۡنَ مِنۡهُ وَتَنشَقُّ ٱلۡأَرۡضُ وَتَخِرُّ ٱلۡجِبَالُ هَدًّا ٩٠ أَن دَعَوۡاْ لِلرَّحۡمَٰنِ وَلَدٗا ٩١ وَمَا يَنۢبَغِي لِلرَّحۡمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ٩٢﴾ [مريم: ٨٨، ٩٢]

“আর তারা বলে, পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। অবশ্যই তোমরা এক জঘন্য বিষয়ের অবতারণা করেছ। এতে আসমানসমূহ ফেটে পড়ার, জমিন বিদীর্ণ হওয়ার এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবী করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভণীয় নয়।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮৮-৯২]

>
[1] ইমাম আহমাদ,(৫/২৬৪) এক নও মুসলিম সাহাবী হতে,দেখুন সহীহ বুখারী(৭৮৯২)

[2] তিরমিযী,(৫/২৫৯) আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। হাদীসটি হাসান, দেখুন: গায়াতুল মারাম ফী তাখরীজে আহাদিসীল হালাল ওয়াল হারাম, নং (৬)