ক- ত্বহারাতের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচয়:
ত্বহারাতের শাব্দিক অর্থ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জন করা।
আর পরিভাষায় শরীরে বিদ্যমান যেসব অপবিত্রতার কারণে সালাত ও এ জাতীয় ইবাদাত পালন করা নিষিদ্ধ, তা দূর করাকে ত্বহারাত বলে।
খ- পানির প্রকারভেদ:
পানি তিন প্রকার।
প্রথম প্রকার পবিত্র পানি: আর তা হলো পানি তার সৃষ্টিগত স্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্যমান থাকা। আর তা হলো যে পানি দ্বারা অপবিত্রতা ও শরীরের পবিত্র অঙ্গের আপতিত নাজাসাত দূর করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَيُنَزِّلُ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ﴾ [الانفال: ١١]
“এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন।” [সূরা আনফাল, আয়াত: ১১]
দ্বিতীয় প্রকার পবিত্র পানি: যে পানি নাজাসাত ছাড়াই রঙ বা স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ধরণের পানি নিজে পবিত্র; তবে এর যে কোনো একটি গুণাবলী পরিবর্তন হওয়ার কারণে এর দ্বারা অপবিত্রতা দূর করা যাবে না।
তৃতীয় প্রকার অপবিত্র পানি: যে পানি অল্প বা বেশি নাজাসাতের কারণে এর যে কোনো একটি গুণ পরিবর্তন হয়ে গেছে।
- অপবিত্র পানি পবিত্র হয়ে যাবে, তার পরিবর্তনের কারণ নিজে নিজে দূর হলে বা উক্ত পানি শুকিয়ে ফেললে অথবা এর সাথে এতটুকু পরিমাণ পানি মিশানো; যাতে পরিবর্তনের কারণ দূরীভূত হয়ে যায়।
- যখন কোনো মুসলিম পানির অপবিত্রতা বা পবিত্রতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে তখন সে তার নিশ্চিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে পবিত্রতা অর্জন করবে। আর তা হলো, পবিত্র বস্তুসমূহের আসল হচ্ছে পবিত্র থাকা।
- যখন কোনো পানি, যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় আর যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় না এমন কোনো পানির সাথে সন্দেহে নিপতিত করবে তখন তা বাদ দিয়ে তায়াম্মুম করবে।
- যখন কোনো পবিত্র কাপড়, অপবিত্র বা হারাম কাপড়ে সাথে সন্দেহে নিপতিত করবে তখন ইয়াকীনের ওপর ভিত্তি করবে এবং সে কাপড় দ্বারা কেবল একটি সালাত আদায় করবে।
শরী‘আতে পবিত্রতা দু’প্রকার। অপ্রকাশ্য বা আত্মিক এবং প্রকাশ্য বা বাহ্যিক পবিত্রতা। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছোট বড় নাপাকী ও নাজাসাত থেকে পবিত্র করাকে বাহ্যিক পবিত্রতা বলে। আর পাপ-পঙ্কিলতা থেকে অন্তর পবিত্র করাকে অপ্রকাশ্য বা অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা বলে।
প্রকাশ্য পবিত্রতাই ফিকহের বিষয়; যা সালাতে বাহ্যিকভাবে উদ্দেশ্য। এটি আবার দু’প্রকার: হাদাস (অদৃশ্যমান নাপাকী) থেকে পবিত্রতা ও খাবাস (দৃশ্যমান নাপাকী) থেকে পবিত্রতা। হাদাস থেকে পবিত্রতা তিনভাবে অর্জিত হয়: ১. বড় পবিত্রতা, তা গোসলের মাধ্যমে। ২. ছোট পবিত্রতা, তা অযুর মাধ্যমে। ৩. আর এ দু’টি ব্যবহার করতে অক্ষম তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করবে। অনুরূপভাবে খাবাস থেকে পবিত্রতাও তিনভাব অর্জিত হয়: গোসল, মাসেহ ও পানি ছিটানো।
পানির পাত্রের পরিচয়:
ক. শাব্দিক পরিচিতি:
পানির পাত্রকে আরবীতে (الآنية) ‘আনিয়া’ বলা হয়। যে শব্দটি (إناء) ‘ইনা’ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ আহার কিংবা পান-পাত্র। শব্দটির বহুবচনের বহুবচন হলো (أوان)। আরবী ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ হচ্ছে, (ظرف) ‘যারফ’ ও (ماعون) মা‘উন।
ফকীহগণ শাব্দিক অর্থেই এটাকে ব্যবহার করেছেন।
খ- পাত্রের প্রকারভেদ:
সত্তাগত দিক থেকে পাত্র কয়েক প্রকার। যথাঃ
১- সোনা ও রূপার পাত্র।
২- রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র।
৩- কাঁচের পাত্র।
৪- মূল্যবান ধাতুর পাত্র।
৫- চামড়ার পাত্র।
৬- হাড়ের পাত্র।
৭- উপরে বর্ণিত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য পাত্র। যেমন, চীনামাটির পাত্র, কাঠের পাত্র, পিতলের পাত্র ও সাধারণ পাত্র।
গ- পাত্রের শর‘ঈ হুকুম:
সোনা, রূপা ও রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য সব পাত্র ব্যবহার করা বৈধ; চাই তা মূল্যবান হোক বা অল্প মূল্যের হোক। কেননা হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«َلاَ تَشْرَبُوا فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، وَلاَ تَأْكُلُوا فِي صِحَافِهَا، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَنَا فِي الآخِرَةِ».
“তোমরা সোনা ও রুপা পাত্রে পান করবে না। আর এসব পাত্রে খানা খাবে না। এগুলো দুনিয়াতে তাদের (অমুসলিমের) জন্য আর আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাতে।”[1]
যে সব পাত্র ব্যবহার করা হারাম তা অন্যান্য উদ্দেশ্যে গ্রহণ করাও হারাম। যেমন, বাদ্যযন্ত্র গানের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান। কেননা হাদীসটি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
তবে এটা জানা আবশ্যক যে, সন্দেহের কারণে কোনো পাত্র অপবিত্র হবে না; যতক্ষণ নিশ্চিতভাবে অপবিত্র হওয়া জানা না যাবে। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।
ঘ- অমুসলিমের পাত্র:
অমুসলিমদের পাত্র বলতে বুঝানো হচ্ছে:
১- আহলে কিতাবীদের পাত্র।
২- মুশরিকদের পাত্র।
এসব পাত্রের শর‘ঈ হুকুম হলো এগুলো অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হলে তা ব্যবহার করা জায়েয। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।
অমুসলিমের জামা কাপড় পবিত্র, যতক্ষণ তা অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হয়।
যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ সেসব মারা গেলে সেসবের মৃত চামড়া দাবাগাত (প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার উপযোগী) করলে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে।
আর যেসব প্রাণীর জীবিত অবস্থায় কোনো অংশ বিচ্ছেদ করা হয়েছে তা মৃত-প্রাণীর মতোই অপবিত্র। তবে জীবিত অবস্থায় পশম, পালক, চুল ও লোম নেওয়া হলে তা পবিত্র।
খাবার ও পানীয় পাত্র ঢেকে রাখা সুন্নত। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
»وَأَوْكِ سِقَاءَكَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ، وَخَمِّرْ إِنَاءَكَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ، وَلَوْ تَعْرُضُ عَلَيْهِ شَيْئًا«.
“তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ বন্ধ রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। সামান্য কিছু দিয়ে হলেও তার উপর দিয়ে রেখে দাও।”[2]
[2] সহীহ বুখারী, বাদউল খালক, হাদীস নং ৩১০৬; সহীহ মুসলিম, আল-আশরিবা, হাদীস নং ২০১২; তিরমিযী, আল-আত‘ঈমা, হাদীস নং ১৮১২; আবু দাউদ, আল-আশরিবা, হাদীস নং ৩৭৩১; আহমদ, ৩/৩০৬; মালেক, আল-জামে‘, হাদীস নং ১৭২৭।
ইস্তিঞ্জা: ইস্তিঞ্জা হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা।
ইস্তিজমার: আর ইস্তিজমার হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা কাগজ বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দূর করা।
পেশাব পায়খানায় প্রবেশের সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা এবং এ দো‘আ পড়া,
« بسم اللّه، أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ»
বিসমিল্লাহ, আমি মন্দকাজ ও শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি”।[1]
আর বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দিয়ে বের হওয়া এবং এ দো‘আ পড়া,
«غُفْرَانَكَ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِي»
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং স্বস্তি দান করেছেন”।[2]
পেশাব-পায়খানার সময় বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসা মুস্তাহাব, তবে খালি জায়গায় পেশাব-পায়খানা করলে মানুষের দৃষ্টির বাহিরে নির্জন স্থানে বসা। পেশাব করার সময় নরম স্থান নির্বাচন করা, যাতে পেশাবের ছিটা থেকে পবিত্র থাকা যায়।
অতি প্রয়োজন ছাড়া এমন কোনো কিছু সাথে নেওয়া মাকরূহ যাতে আল্লাহর নাম রয়েছে। তাছাড়া জমিনের কাছাকাছি না হওয়ার আগে কাপড় তোলা, কথা বলা, গর্তে পেশাব করা, ডান হাত দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করা এবং ডান হাত দিয়ে ঢিলা ব্যবহার করা মাকরূহ।
উন্মুক্ত স্থানে পেশাব-পায়খানার সময় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ ফিরিয়ে বসা হারাম, আর ঘরের মধ্যে বসা জায়েয, তবে না বসা উত্তম।
চলাচলের রাস্তা, বসা ও বিশ্রামের জায়গায়, ফলদার ছায়াদার গাছ ইত্যাদির নিচে পেশাব-পায়খানা করা হারাম।
পবিত্র পাথর দিয়ে তিনবার শৌচকর্ম করা মুস্তাহাব। এতে ভালোভাবে পবিত্র না হলে সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা যাবে। তবে বেজোড় সংখ্যা তিন বা পাঁচ বা ততোধিক বেজোড় সংখ্যা ব্যবহার করা দ্বারা কাজটি শেষ করা সুন্নাত।
হাড়, গোবর, খাদ্য ও সম্মানিত জিনিস দ্বারা ঢিলা করা হারাম। পানি, টিস্যু ও পাতা ইত্যাদি দিয়ে ঢিলা করা জায়েয। তবে শুধু পানি ব্যবহার করার চেয়ে পাথর ও পানি একত্রে ব্যবহার করা উত্তম।
কাপড়ে অপবিত্রতা লাগলে তা পানি দিয়ে ধৌত করা ফরয। আর যদি অপবিত্র স্থান অজ্ঞাত থাকে তবে পুরো কাপড় পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
পেশাব করা সুন্নাত, তবে পেশাবের ছিটা থেকে নিরাপদ থাকলে দাঁড়িয়ে পেশাব করা মাকরূহ নয়।
[2] হাদীসের প্রথম অংশটুকু আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৩০। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আর দ্বিতীয় অংশটুকু ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৩০১। আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন।
ক- পরিচিতি: সরল পথ, সৃষ্টিগত স্বভাব। যেসব গুণাবলী মানুষের জীবনে থাকা অত্যাবশ্যকীয় সেগুলোকে স্বভাবজাত সুন্নাত বলে।
খ- স্বভাবজাত সুন্নাতসমূহ:
১- মিসওয়াক করা: এটা সব সময় করা সুন্নাত। মুখের পবিত্রতা ও রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মিসওয়াক করা হয়। অযু, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, মসজিদে ও গৃহে প্রবেশ, ঘুম থেকে জাগ্রত হলে ও মুখের গন্ধ পরিবর্তন হলে মিসওয়াক করার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
২- নাভির নিচের লোম কামানো, বগলের লোম উপড়ানো, নখ কাটা ও আঙ্গুলের গিরা ধৌত করা।
৩- মোচ কাটা, দাড়ি লম্বা করা ও ছেড়ে দেওয়া।
৪- মাথার চুলের সম্মান করা, এতে তেল দেওয়া এবং আঁচড়ানো। চুলে গোছা রাখা অথাৎ মাথার এক অংশ কামানো আর বাকী অংশ না কামানো মাকরূহে তাহরীমী; কেননা এতে স্বাভাবিক সৃষ্টিগত সৌন্দর্য নষ্ট হয়।
৫- মেহেদী বা অনুরূপ উদ্ভিদ দিয়ে চুলের সাদা অংশ পরিবর্তন করা।
৬- মিসক বা অন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৭- খৎনা করা। পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের ঢেকে থাকা চামড়া কর্তন করা যাতে এতে ময়লা ও পেশাব জমে থাকতে না পারে।
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে স্ত্রীলিঙ্গের উপরিভাগে পুংলিঙ্গ প্রবেশদ্বারের চামড়ার কিছু অংশ কেটে ফেলা, এটা বিচির মতো বা মোরগের চূড়ার (বৌল) মতো। খৎনা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ এটি জানেন। খৎনা মূলত পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য করা হয়। এতে অনেক ফযীলত রয়েছে। পুরুষের জন্য খৎনা করা সুন্নাত আর নারীর জন্য এটা করা সম্মানজনক।
ক- অযুর পরিচিতি:
শরী‘আতের নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী পবিত্র পানি চার অঙ্গে ব্যবহার করা।
খ- অযুর ফযীলত:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস অযুর ফযীলত প্রমাণ করে। তিনি বলেছেন,
«مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ».
“তোমাদের যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অযু করে এ দো‘আ পাঠ করবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।”[1]
অযুতে অপচয় না করে উত্তমরূপে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করলে কিয়ামতের দিন অযুকারীর হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকা আবশ্যক করবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ»
“কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।”[2]
গ- অযুর শর্তাবলী:
অযুর শর্তাবলী দশটি। সেগুলো হলো:
১- ইসলাম।
২- জ্ঞান বা বিবেক।
৩- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৪- নিয়ত করা এবং পবিত্রতা অর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়ত অবশিষ্ট থাকা।
৫- যেসব কারণে অযু ফরয হয় সেসব কারণ দূর হওয়া।
৬- ইস্তিঞ্জা করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা) ও ইস্তিজমার করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা পাতা বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দুর করা)।
৭- পানি পবিত্র হওয়া।
৮- পানি বৈধ হওয়া।
৯- চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধা থাকলে তা দূর করা।
১০- যে ব্যক্তির সর্বদা অপবিত্র হওয়ার সমস্যা থাকে তার ক্ষেত্রে ফরয সালাতের ওয়াক্ত হওয়া।
ঘ- অযু ফরয হওয়ার কারণ:
হাদাস বা সাধারণ অপবিত্রতা পাওয়া গেলে অযু ফরয হয়।
ঙ- অযুর ফরযসমূহ:
অযুর ফরয ছয়টি:
১- মুখমণ্ডল ধৌত করা আর মুখ ও নাক মুখমণ্ডলেরই অংশ।
২- কনুইসহ দুহাত ধৌত করা।
৩- মাথা মাসেহ করা আর দু’কানও মাথারই অংশ।
৪- দু’পা ধৌত করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ٦﴾ [المائدة: ٦]
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬]
৫- ধৌত অঙ্গের মধ্যে পরস্পর ক্রমবিন্যাস বজায় রাখা। কেননা আল্লাহ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং দু অঙ্গ ধোয়ার মধ্যে একটি মাসেহ করার বিষয় উল্লেখ করেছেন। (যা ক্রমবিন্যাস আবশ্যক হওয়া বুঝায়)।
৬- অযু করার সময় এক অঙ্গ ধৌত করার সাথে সাথেই বিলম্ব না করে অন্য অঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে করেছেন।
চ- অযুর সুন্নতসমূহ:
অযুর সুন্নতসমূহের অন্যতম হলো:
১- মিসওয়াক করা।
২- হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৩- কুলি ও নাকে পানি দেওয়া।
৪- ঘন দাড়ি ও হাত-পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা।
৫- ডান দিক থেকে শুরু করা।
৬- দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ধৌত করা।
৭- কান ধোয়ার জন্য নতুন পানি গ্রহণ করা।
৮- অযুর পরে দো‘আ পড়া।
৯- অযুর পরে দু’রাকাত সালাত আদায় করা।
ছ- অযুর মাকরূহসমূহ:
অযুর মাকরূহসমূহের অন্যতম হলো:
১- অপবিত্রতা ছিটে অযুকারীর দিকে আসতে পারে এমন অপবিত্র স্থানে অযু করা।
২- অযুতে তিনবারের অধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন তিনবার ধৌত করেছেন। তিনি বলেছেন,
«مَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ وَظَلَمَ».
“অতঃপর যে ব্যক্তি এর অধিক করে সে অবশ্যই জুলুম ও অন্যায় করে।”[3]
৩- পানি ব্যবহারে অপচয় করা। যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুদ পানি দিয়ে অযু করেছেন। আর মুদ হলো এক মুঠো। তাছাড়া যেকোনো কিছুতে অপচয় করা নিষেধ।
৪- অযুতে এক বা একাধিক সুন্নত ছেড়ে দেওয়া; কেননা সুন্নত ছেড়ে দিলে সাওয়াব কমে যায়। তাই সুন্নতের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ, ছেড়ে দেওয়া অনুচিত।
জ- অযু ভঙ্গের কারণসমূহ:
অযু ভঙ্গের কারণ সাতটি, সেগুলো হলো:
১- পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।
২- শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ থেকে কোনো কিছু বের হওয়া।
৩- পাগল, বেহুশ বা মাতাল ইত্যাদি কারণে জ্ঞানশূণ্য হওয়া।
৪- পুরুষ বা নারী কর্তৃক তাদের লজ্জাস্থান পর্দা ব্যতীত সরাসরি স্পর্শ করা।
৫- পুরুষ নারীকে বা নারী পুরুষকে কামভাবের সাথে স্পর্শ করা।
৬- উটের গোশত খাওয়া।৭- যেসব কারণে গোসল ফরয হয় সেসব কারণে অযুও ফরয হয়, যেমন ইসলাম গ্রহণ ও বীর্য বের হওয়া, তবে মারা গেলে শুধু গোসল ফরয হয়, অযু ফরয হয় না।
>[2] সহীহ বুখারী, অযু, হাদীস নং ১৩৬; সহীহ মুসলিম, ত্বহারাত, হাদীস নং ২৪৬; ইবন মাজাহ, যুহুদ, হাদীস নং ৪৩০৬; মুসনাদ আহমদ, ২/৪০০; মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৬০।
[3] সুনান নাসাঈ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪০; আবু দাউদ, ত্বহারাত, হাদীস নং ১৩৫।
ক- গোসলের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি:
দম্মা যোগে (الغُسل) গুসল অর্থ পানি, ফাতহা যোগে (الغَسل) গাসল অর্থ গোসল করা আর কাসরা যোগে (الغِسل) গেসল অর্থ পরিস্কার করার উপাদান।
শরী‘আতের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মাথার অগ্রভাগ থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত সারা শরীরে পবিত্র পানি প্রবাহিত করা। এতে নারী ও পুরুষ সবাই সমান, তবে হায়েয ও নিফাসের গোসলের সময় রক্তের চিহ্ন পরোপুরিভাবে দূর করতে হবে যাতে রক্তের দুর্গন্ধ দূর হয়।
খ- গোসল ফরয হওয়ার কারণসমূহ:
গোসল ফরয হওয়ার কারণ ছয়টি:
১- নারী বা পুরুষের কামভাবের সাথে সজোরে বীর্য বের হওয়া।
২- পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ স্ত্রীর যৌনাঙ্গের ভিতর প্রবেশ করলে।
৩- আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যতীত অন্যসব মুসলিম মারা গেলে গোসল ফরয।
৪- প্রকৃত কাফির বা মুরতাদ ইসলাম গ্রহণ করলে।
৫- হায়েয হলে।
৬- নিফাস হলে।
গ- ইসলামে মুস্তাহাব গোসলসমূহ:
১- জুমু‘আর দিনের গোসল।
২- ইহরামের গোসল।
৩- মাইয়্যেতকে গোসলকারী ব্যক্তির গোসল।
৪- দুই ‘ঈদের গোসল।
৫- কারো পাগল বা বেহুশ অবস্থা কেটে গেলে।
৬- মক্কায় প্রবেশের গোসল।
৭- সূর্যগ্রহণ ও বৃষ্টি প্রার্থনার সালাতের জন্য গোসল।
৮- মুস্তাহাযা তথা প্রদররোগগ্রস্তা নারীর প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য গোসল।
৯- সব ধরণের ভালো সম্মেলনের জন্য গোসল।
ঘ- গোসলের শর্তাবলী:
গোসলের শর্তাবলী সাতটি:
১- যে কারণে গোসল ফরয হয় তা শেষ হওয়া।
২- নিয়ত করা।
৩- ইসলাম।
৪- আকল বা বুদ্ধি-বিবেক।
৫- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৬- পবিত্র ও বৈধ পানি।
৭- চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধা থাকলে তা দূর করা।
ঙ- গোসলের ওয়াজিবসমূহ:
গোসলের ওয়াজিব হলো বিসমিল্লাহ বলা, ভুলে গেলে এ ওয়াজিব রহিত হয়ে যায়, ইচ্ছাকৃত বাদ দিলে ওয়াজিব ছুটে যাবে।
চ- গোসলের ফরযসমুহ:
নিয়ত করা, সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা, মুখ ও নাকে পানি প্রবেশ করানো। পানি পৌঁছল কিনা এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা হলেই যথেষ্ট হবে।
কেউ সুন্নাত বা ফরয গোসলের নিয়ত করলে এক নিয়ত অন্য নিয়াতের জন্য যথেষ্ট হবে।
জানাবাত ও হায়েযের গোসল একই নিয়াতে যথেষ্ট হবে।
ছ- গোসলের সুন্নাতসমুহ:
১- বিসমিল্লাহ বলা।
২- গোসলের শুরুতে শরীরে বিদ্যমান অপবিত্রতা বা ময়লা দূর করা।
৩- পাত্র হাত ঢুকানোর পূর্বে দুহাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
৪- গোসলের শুরুতে অযু করা।
৫- ডান দিক থেকে শুরু করা।
৬- ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
৭- সারা শরীরে হাত মর্দন করা।
৮- গোসল শেষে দুপা অন্য স্থানে সরে ধৌত করা।
জ- গোসলের মাকরূহসমূহ:
গোসলে নিম্নোক্ত কাজ করা মাকরূহ:
১- পানির অপব্যয় করা।
২- অপবিত্র স্থানে গোসল করা।
৩- দেয়াল বা পর্দা ছাড়া খোলা জায়গায় গোসল করা।
৪- স্থির পানিতে গোসল করা।
ঝ- জুনুবী বা বড় অপবিত্র ব্যক্তির জন্য যেসব কাজ করা হারাম:
১- সালাত আদায় করা।
২- বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা।
৩- গিলাফ ব্যতীত কুরআন ষ্পর্শ করা ও বহন করা।
৪- মসজিদে বসা।
৫- কুরআন পড়া।
ক- নাজাসাত (নাপাকী) এর শাব্দিক ও শর‘ঈ অর্থ:
নাজাসাতের শাব্দিক অর্থ ময়লা, যেমন বলা হয় نجس الشيء نجسا বস্তুটি ময়লা হয়েছে। আবার বলা হয়, تنجس الشيء: صار نجسا: تلطخ بالقذر অর্থাৎ ময়লা মাখিয়ে দেওয়া।
শরী‘আতের পরিভাষায় ‘নাজাসাত’ হলো, নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়লা যা সালাত ও এ জাতীয় ইবাদাত করতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন, পেশাব, রক্ত ও মদ।
খ- নাজাসাতের ধরণ:
নাজাসাত দু’ধরণের:
১- সত্তাগত বা প্রকৃত নাজাসাত।
২- হুকমী তথা বিধানগত নাজাসাত।
সত্তাগত বা প্রকৃত নাজাসাত হলো কুকুর ও শূকর ইত্যাদি। এসব নাজাসাত ধৌত করা বা অন্য কোনো উপায়ে কখনো পবিত্র হয় না।
আর হুকমী তথা বিধানগত নাজাসাত হলো ঐ নাপাকী যা পবিত্র স্থানে পতিত হয়েছে।
গ- নাজাসাতের প্রকারভেদ:
নাজাসাত তিন প্রকার। যথা:
১- এক ধরনের নাপাকী (নাজাসাত) রয়েছে যা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত।
২- আরেক ধরনের নাপাকী (নাজাসাত) রয়েছে যা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন।
৩- আরেক ধরনের নাপাকী (নাজাসাত) রয়েছে যা অপবিত্র হওয়ার পরও ক্ষমার পর্যায়ে। অর্থাৎ কোনো ক্ষতি হয় না।
যার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ:
১- যেসব নাজাসাত অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত, সেগুলো হলো:
ক- সব স্থলচর মৃতপ্রাণী। জলচর মৃতপ্রাণী পবিত্র এবং খাওয়া হালাল।
খ- প্রবাহিত রক্ত, যা স্থলচর প্রাণী জবেহ করার সময় প্রবাহিত হয়।
৩- শূকরের মাংস।
৪- মানুষের পেশাব।
৫- মানুষের পায়খানা।
৬- মযী বা কামরস[1]।
৭- অদী[2]।
৮- যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল নয় তার গোশত।
৯- জীবিত প্রাণীর কর্তিত অংশ। যেমন, জীবিত ছাগলের বাহু কেটে ফেললে।
১০- হায়েযের রক্ত।
১১- নিফাসের রক্ত।
১২- ইস্তেহাযা বা প্রদরগ্রস্ত নারীর রক্ত।
২- যেসব জিনিস অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন তা হলো:
১- যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল সেসব প্রাণীর প্রশাব।
২- যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল সেসব প্রাণীর গোবর।
৩- বীর্য।
৪- কুকুরের লালা।
৫- বমি।
৬- রক্তহীন মৃতপ্রাণী, যেমন মৌমাছি, তেলাপোকা, পাখাবিহীন ক্ষুদ্র কীট ইত্যাদি।
৩- যেসব নাজাসাত অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মার্জনা করা হয়েছে, অর্থাৎ দোষমুক্ত। সেগুলো হলো:
১- রাস্তার মাটি।
২- সামান্য রক্ত।
৩- মানুষ বা গোশত খাওয়া যায় এমন হালাল প্রাণীর বমি ও পুঁজ।
নাজাসাত পবিত্র করার পদ্ধতি:
গোসল, পানি ছিটিয়ে দেওয়া, ঘর্ষণ ও মুছে ফেলার মাধ্যমে নাজাসাত পবিত্র করা যায়।
অপবিত্র কাপড় পবিত্রকরণ: যদি নাজাসাত আকার ও আয়তন বিশিষ্ট দৃশ্যমান বস্তু হয় তবে প্রথমে তা ঘষে তুলে ফেলতে হবে অতঃপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর যদি নাজাসাত ভেজা হয় তবে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
শিশুর পেশাব পবিত্রকরণ: যেসব শিশু আলাদা খাদ্য খায় না সেসব শিশুর পেশাব পানি ছিটিয়ে দিলে পবিত্র হয়ে যায়।
জমিনে লেগে থাকা নাজাসাত আকার আয়তন বিশিষ্ট দৃশ্যমান নাজাসাত দূর করার মাধ্যমে পবিত্র করা হবে। আর যদি জমিনের সাথে থাকা নাজাসাত তরল বস্তু হয় তবে তাতে পানি ঢেলে পবিত্র করতে হবে। আর জুতা মাটিতে ঘর্ষণ বা পবিত্র জায়গায় হাটলে পবিত্র হয়ে যায়। মসৃণ জিনিস যেমন, কাঁচ, চাকু, প্রস্তরফলক ইত্যাদি মুছে ফেললে পবিত্র হয়ে যায়। কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধৌত করতে হবে, তবে একটিবার মাটি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
[2] পেশাবের আগে পরে নির্গত রস। -অনুবাদক।
১- তায়াম্মুমেম শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি:
ক- তায়াম্মুমেম শাব্দিক অর্থ: ইচ্ছা করা, কামনা করা, মনস্থ করা।
খ- তায়াম্মুমেম পারিভাষিক অর্থ: পবিত্র মাটি দ্বারা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মুখ ও দু হাত মাসাহ করা।
আল্লাহ এ উম্মতের জন্য যেসব বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা দান করেছেন তায়াম্মুম সেসব বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। এটি পানির পরিবর্তে পবিত্র হওয়ার মাধ্যম।
২- কার জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ:
ক- পানি পাওয়া না গেলে বা পানি দূরে থাকলে।
খ- কারো শরীরে ক্ষত থাকলে বা অসুস্থ হলে এবং সে পানি ব্যবহার করলে ক্ষত বা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে।
গ- পানি অতি ঠাণ্ডা হলে এবং গরম করতে সক্ষম না হলে।
ঘ- যদি মজুদ পানি ব্যবহারের কারণে নিজে বা অন্য কেউ পিপাসায় নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা করে।
৩- তায়াম্মুম ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
ক- বালেগ বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়া।
খ- মাটি ব্যবহারে সক্ষম হওয়া।
গ- অপবিত্রতা নষ্টকারী কোনো কিছু ঘটা।
৪- তায়াম্মুম শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:
ক- ইসলাম।
খ- হায়েয বা নিফাসের রক্ত শেষ হওয়া।
গ- আকল বা বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া।
ঘ- পবিত্র মাটি পাওয়া।
৫- তায়াম্মুমের ফরযসমূহ:
ক- নিয়ত।
খ- পবিত্র মাটি।
গ- একবার মাটিতে হাত মারা।
ঘ- মুখমণ্ডল ও হাতের তালু মাসাহ করা।
৬- তায়াম্মুমের সুন্নাতসমূহ:
ক- বিসমিল্লাহ বলা।
খ- কিবলামুখী হওয়া।
গ- সালাতের আদায়ের ইচ্ছা করার আগে করা
ঘ- দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত মারা।
ঙ- ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
চ- এক অঙ্গের সাথে বিরতিহীন অন্য অঙ্গ মাসাহ করা।
ছ- আঙ্গুল খিলাল করা।
৭- তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণসমূহ:
ক- পানি পাওয়া গেলে।
খ- উল্লিখিত অযু ও গোসল ভঙ্গের কারণসমূহ পাওয়া গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা তায়াম্মুম হলো অযু ও গোসলের স্থলাভিষিক্ত, আর মূল পাওয়া গেলে তার স্থলাভিষিক্তের কাজ শেষ হয়ে যায়।
৮- তায়াম্মুমের পদ্ধতি:
প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দুহাত মাটিতে মারবে, অতঃপর এর দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ধারাবাহিক ও বিরতিহীনভাবে মাসাহ করবে।
৯- ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম:
কারো হাড় ভেঙ্গে গেলে বা শরীরে ক্ষত বা জখম হলে পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা করলে ও কষ্ট হলে তবে ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম করবে এবং বাকী অংশ ধুয়ে ফেলবে।
কেউ পানি ও মাটি কোনটিই না পেলে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই সালাত আদায় করে নিবে। তাকে উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।
মোজা ও বন্ধ ফলকের উপর মাসাহ:
১- ইবন মুবারক বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই। ইমাম আহমাদ বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে আমার অন্তরে কোনো সংশয় নেই। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চল্লিশটি হাদীস বর্ণিত আছে। পা ধোয়ার চেয়ে মোজার উপর মাসাহ করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উত্তমটিই তালাশ করতেন।
২- সময়সীমা:
মুকিমের জন্য একদিন ও একরাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন ও তিনরাত মাসাহ করা জায়েয। মোজা পরিধান করার পরে প্রথম বার অপবিত্র হওয়া থেকে সময়সীমা শুরু হয়।
৩- মোজার উপর মাসাহর শর্তাবলী:
পরিধেয় মোজা বৈধ ও পবিত্র হওয়া। ফরয পরিমাণ অংশ ঢেকে থাকা এবং মোজা পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা।
৪- মোজার উপর মাসাহর পদ্ধতি:
পানিতে হাত ভিজিয়ে পায়ের উপরিভাগের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে নলা পর্যন্ত একবার মাসাহ করা। পায়ের নিচে ও পিছনে মাসাহ নয়।
৫- মোজার উপর মাসাহ ভঙ্গের কারণসমূহ:
নিচের চারটির যে কোনো একটি কারণে মোজার উপর মাসাহ নষ্ট হয়ে যায়:
১- পায়ের থেকে মোজা খুলে ফেললে।
২- মোজা খুলে ফেলা অত্যাবশ্যকীয় হলে, যেমন গোসল ফরয হলে।
৩- পরিহিত মোজা বড় ছিদ্র বা ছিড়ে গেলে।
৪- মাসাহের মেয়াদ পূর্ণ হলে।
সব ধরণের পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে না ফেলা পর্যন্ত তার উপর মাসাহ করা জায়েয, এতে মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক বা জানাবত তথা বড় নাপাকী লাগুক।