ক- নাজাসাত (নাপাকী) এর শাব্দিক ও শর‘ঈ অর্থ:
নাজাসাতের শাব্দিক অর্থ ময়লা, যেমন বলা হয় نجس الشيء نجسا বস্তুটি ময়লা হয়েছে। আবার বলা হয়, تنجس الشيء: صار نجسا: تلطخ بالقذر অর্থাৎ ময়লা মাখিয়ে দেওয়া।
শরী‘আতের পরিভাষায় ‘নাজাসাত’ হলো, নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়লা যা সালাত ও এ জাতীয় ইবাদাত করতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন, পেশাব, রক্ত ও মদ।
খ- নাজাসাতের ধরণ:
নাজাসাত দু’ধরণের:
১- সত্তাগত বা প্রকৃত নাজাসাত।
২- হুকমী তথা বিধানগত নাজাসাত।
সত্তাগত বা প্রকৃত নাজাসাত হলো কুকুর ও শূকর ইত্যাদি। এসব নাজাসাত ধৌত করা বা অন্য কোনো উপায়ে কখনো পবিত্র হয় না।
আর হুকমী তথা বিধানগত নাজাসাত হলো ঐ নাপাকী যা পবিত্র স্থানে পতিত হয়েছে।
গ- নাজাসাতের প্রকারভেদ:
নাজাসাত তিন প্রকার। যথা:
১- এক ধরনের নাপাকী (নাজাসাত) রয়েছে যা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত।
২- আরেক ধরনের নাপাকী (নাজাসাত) রয়েছে যা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন।
৩- আরেক ধরনের নাপাকী (নাজাসাত) রয়েছে যা অপবিত্র হওয়ার পরও ক্ষমার পর্যায়ে। অর্থাৎ কোনো ক্ষতি হয় না।
যার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ:
১- যেসব নাজাসাত অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত, সেগুলো হলো:
ক- সব স্থলচর মৃতপ্রাণী। জলচর মৃতপ্রাণী পবিত্র এবং খাওয়া হালাল।
খ- প্রবাহিত রক্ত, যা স্থলচর প্রাণী জবেহ করার সময় প্রবাহিত হয়।
৩- শূকরের মাংস।
৪- মানুষের পেশাব।
৫- মানুষের পায়খানা।
৬- মযী বা কামরস[1]।
৭- অদী[2]।
৮- যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল নয় তার গোশত।
৯- জীবিত প্রাণীর কর্তিত অংশ। যেমন, জীবিত ছাগলের বাহু কেটে ফেললে।
১০- হায়েযের রক্ত।
১১- নিফাসের রক্ত।
১২- ইস্তেহাযা বা প্রদরগ্রস্ত নারীর রক্ত।
২- যেসব জিনিস অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন তা হলো:
১- যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল সেসব প্রাণীর প্রশাব।
২- যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল সেসব প্রাণীর গোবর।
৩- বীর্য।
৪- কুকুরের লালা।
৫- বমি।
৬- রক্তহীন মৃতপ্রাণী, যেমন মৌমাছি, তেলাপোকা, পাখাবিহীন ক্ষুদ্র কীট ইত্যাদি।
৩- যেসব নাজাসাত অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মার্জনা করা হয়েছে, অর্থাৎ দোষমুক্ত। সেগুলো হলো:
১- রাস্তার মাটি।
২- সামান্য রক্ত।
৩- মানুষ বা গোশত খাওয়া যায় এমন হালাল প্রাণীর বমি ও পুঁজ।
নাজাসাত পবিত্র করার পদ্ধতি:
গোসল, পানি ছিটিয়ে দেওয়া, ঘর্ষণ ও মুছে ফেলার মাধ্যমে নাজাসাত পবিত্র করা যায়।
অপবিত্র কাপড় পবিত্রকরণ: যদি নাজাসাত আকার ও আয়তন বিশিষ্ট দৃশ্যমান বস্তু হয় তবে প্রথমে তা ঘষে তুলে ফেলতে হবে অতঃপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর যদি নাজাসাত ভেজা হয় তবে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
শিশুর পেশাব পবিত্রকরণ: যেসব শিশু আলাদা খাদ্য খায় না সেসব শিশুর পেশাব পানি ছিটিয়ে দিলে পবিত্র হয়ে যায়।
জমিনে লেগে থাকা নাজাসাত আকার আয়তন বিশিষ্ট দৃশ্যমান নাজাসাত দূর করার মাধ্যমে পবিত্র করা হবে। আর যদি জমিনের সাথে থাকা নাজাসাত তরল বস্তু হয় তবে তাতে পানি ঢেলে পবিত্র করতে হবে। আর জুতা মাটিতে ঘর্ষণ বা পবিত্র জায়গায় হাটলে পবিত্র হয়ে যায়। মসৃণ জিনিস যেমন, কাঁচ, চাকু, প্রস্তরফলক ইত্যাদি মুছে ফেললে পবিত্র হয়ে যায়। কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধৌত করতে হবে, তবে একটিবার মাটি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
[2] পেশাবের আগে পরে নির্গত রস। -অনুবাদক।