প্রথমতঃ তা কবীরা গুনাহসমূহের একটি। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক অনেক নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমনকি তা যে কারোর তাওহীদ বিনষ্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর তা এভাবে যে, এ নেশায় পড়ে শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর তা একদা তাকে শির্ক পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। কখনো ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, সে ধীরে ধীরে অশ্লীলতাকে ভালোবেসে ফেলে এবং সাধুতাকে ঘৃণা করে। তখন সে হালাল মনে করেই সহজভাবে উক্ত কর্মতৎপরতা চালিয়ে যায়। তখন সে কাফির ও মুরতাদ হতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বাস্তবে দেখা যায় যে, যে যত বেশি শির্কের দিকে ধাবিত সে তত বেশি এ কাজে লিপ্ত। তাই লূত সম্প্রদায়ের মুশরিকরাই এ কাজে সর্বপ্রথম লিপ্ত হয়।
এ কথা সবারই জানা থাকা উচিৎ যে, শির্ক ও ইশক পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর ব্যভিচার ও সমকামিতার পূর্ণ মজা তখনই অনুভূত হয় যখন এর সাথে ইশক জড়িত হয়। তবে এ চরিত্রের লোকদের ভালোবাসা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তনশীল। আর তা একমাত্র শিকারের পরিবর্তনের কারণেই হয়ে থাকে।
প্রথমতঃ সমকামই হচ্ছে চারিত্রিক এক অধঃপতন। স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। এরই কারণে লজ্জা কমে যায়, মুখ হয় অশ্লীল এবং অন্তর হয় কঠিন, অন্যদের প্রতি দয়া-মায়া সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয়ে একেবারেই তা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়, পুরুষত্ব ও মানবতা বিলুপ্ত হয়, সাহসিকতা, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়। নির্যাতন ও অঘটন ঘটাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাহসী করে তোলে। উচ্চ মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বেকুব বানিয়ে তোলে। তার ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যায়। তার দিকে মানুষ খিয়ানতের সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয় এবং উত্তরোত্তর সার্বিক উন্নতি থেকে ক্রমান্বয়ে পিছে পড়ে যায়।
উক্ত কর্মের অনেকগুলো মানসিক অপকার রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
১. অস্থিরতা ও ভয়-ভীতি অধিক হারে বেড়ে যায়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই ভয় করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্য সকল ভয় থেকে মুক্ত রাখবেন। আর যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে না তাকে সকল ভয় এমনিতেই ঘিরে রাখবে। কারণ, শাস্তি তো যে কোনো অপরাধ মূলক কাজের অনুরূপ হওয়াই শ্রেয়।
২. মানসিক বিশৃঙ্খলতা ও মনের অশান্তি তার নিকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সে ব্যক্তির জন্য নগদ শাস্তি যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসবে। আর এ সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হবে মনের অশান্তি ততই বেড়ে যাবে।
আল্লামা ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, এ কথা সবারই জানা উচিৎ যে, কেউ কাউকে ভালোবাসলে (যে ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নয়) সে প্রিয় ব্যক্তি অবশ্যই তার প্রেমিকের ক্ষতি সাধন করবে এবং এ ভালোবাসা অবশ্যই প্রেমিকের যে কোনো ধরনের শাস্তির কারণ হবে।
৩. এ ছাড়াও উক্ত অবৈধ সম্পর্ক অনেক ধরনের মানসিক রোগের জন্ম দেয় যা বর্ণনাতীত। যার দরুন তাদের জীবনের স্বাদ একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
৪. এ জাতীয় লোকেরা একাকী থাকাকেই বেশি ভালোবাসে এবং তাদের একান্ত শিকার অথবা উক্ত কাজের সহযোগী ছাড়া অন্য কারোর সাথে এরা একেবারেই মিশতে চায় না।
৫. এ জাতীয় লোকদের মাঝে স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বহীনতা ধীরে ধীরে জন্ম নেয় এবং তাদের মেযাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কোনো কাজে এরা স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
৬. এদের নিজেদের মাঝে ক্রমান্বয়ে পরাজয় ভাব জন্ম নেয়। নিজের ওপর তখন এরা কোনো ব্যাপারেই আস্থাশীল হতে পারে না।
৭. এ জাতীয় মানুষের নিজের মধ্যে এক জাতীয় পাপ বোধ জন্ম নেয়। যার দরুন সে মনে করে সবাই আমার ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে। সুতরাং মানুষের ব্যাপারে তার একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়।
৮. এ জাতীয় লোকদের মাঝে হরেক রকমের ওয়াসওয়াসা ও অমূলক
চিন্তা জন্ম নেয়। এমনকি ধীরে ধীরে সে পাগলের রূপ ধারণ করে।
৯. এ জাতীয় লোক ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণহীন যৌন তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সদা সর্বদা সে যৌন চেতনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
১০. এদের মধ্যে ধীরে ধীরে মানসিক টানাপড়েন ও বেপরোয়াভাব জন্ম নেয়।
১১. তেমনিভাবে এদের মধ্যে বিরক্তি ভাব, নিরাশা, কুলক্ষুণে ভাব, আহাম্মকি জযবাও জন্ম নেয়।
১২. এদের দেহের কোষসমূহের ওপরও এর একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে। যার দরুন এ ধরনের লোকেরা নিজকে পুরুষ বলে মনে করে না। এ কারণেই এদের কাউ কাউকে মহিলাদের সাজ-সজ্জা গ্রহণ করতেও দেখা যায়।
শারীরিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছু দিন পর পরই এ সংক্রান্ত নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ জাতীয় কোনো একটি রোগের ঔষুধ খুঁজতে খুঁজতেই দেখা যায় নতুন আরেকটা রোগ আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এই তো হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যিকার ফলাফল।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ ، حَتَّى يُعْلِنُوْا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِيْ لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِيْ أسْلاَفِهِمْ الَّذِيْنَ مَضَوْا»
“কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে অবশ্যই মহামারি ও বহু প্রকারের রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিলো না”।[1]
সুতরাং ব্যাধিগুলো নিম্নরূপ:
১. এ জাতীয় মানুষের নিজ স্ত্রীর প্রতি ধীরে ধীরে অনীহা জন্ম নেয়।
২. এ জাতীয় মানুষের লিঙ্গের কোষগুলো একেবারেই ঢিলে হয়ে যায়। যদ্দরুন পেশাব ও বীর্যপাতের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকে না।
৩. এ জাতীয় লোকেরা টাইফয়েড এবং ডিসেন্ট্রিয়া রোগেও আক্রান্ত হয়।
৪. এরই ফলে সিফিলিস রোগেরও বিশেষ প্রাদুর্ভাব ঘটে। লিঙ্গ, হৃদ্পিন্ড, আঁত, পাকস্থলী, ফুসফুস ও অণ্ডকোষের ঘা এর মাধ্যমেই এ রোগের শুরু। এমনকি পরিশেষে তা অঙ্গ বিকৃতি, অন্ধত্ব, জিহ্বা’র ক্যান্সার এবং অঙ্গহানীর বিশেষ কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এটি ডাক্তারদের ধারণায় একটি দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি।
৫. কখনো কখনো এরা গনোরিয়ায়ও আক্রান্ত হয় এবং এ রোগে
আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণতঃ একটু বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে উক্ত রোগে প্রায় পঁচিশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। বর্তমানে ধারণা করা হয়, এ জাতীয় রোগীর হার বছরে বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি। যার অধিকাংশই যুবক।
এ জাতীয় রোগে প্রথমত লিঙ্গে এক ধরনের জ্বলন সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি তাতে বিশ্রী ধরনের এক প্রকার পুঁজও জন্ম নেয়। এটি বন্ধ্যত্বের একটি বিশেষ কারণও বটে। এরই কারণে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। উক্ত জ্বলনের কারণে ধীরে ধীরে লিঙ্গাগ্রের ছিদ্রের আশপাশ লাল হয়ে যায়। পরিশেষে সে জ্বলন মুত্রথলী পর্যন্ত পৌঁছোয়। তখন মাথা ব্যাথা, জ্বর ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া শরীরের রক্তে পৌঁছলে তখন হৃদপিণ্ডে জ্বলন সৃষ্টি হয়, আরো কতো কী?
৬. হেরপেস রোগও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম ব্যাধি। আমেরিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়, হেরপেসের এখনো কোনো চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয় নি এবং এটি ক্যান্সারের চাইতেও মারাত্মক। শুধু এমেরিকাতেই এ রোগীর হার বছরে বিশ কোটি এবং ব্রিটিনে এক লক্ষ।
এ রোগ হলে প্রথমে লিঙ্গাগ্রে চুলকানি অনুভূত হয়। অতঃপর চুলকানির জায়গায় লাল ধরনের ফোস্কা জাতীয় কিছু দেখা দেয় যা দ্রুত বড় হয়ে পুরো লিঙ্গে এবং যার সাথে সমকাম করা হয় তার গুহ্যদ্বারে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর ব্যাথা খুবই চরম এবং এগুলো ফেটে গিয়ে পরিশেষে সেস্থানে জ্বলন ও পুঁজ সৃষ্টি হয়। কিছু দিন পর রান ও নাভীর নীচের অংশও ভীষণভাবে জ্বলতে থাকে। এমনকি তা পুরো শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং তা মগজ পর্যন্তও পৌঁছোয়। এ রোগের শারীরিক ক্ষতির চাইতেও মানসিক ক্ষতি আরো অনেক বেশি।
৭. এইডসও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম রোগ। এ রোগের ভয়ঙ্করতা নিম্নের ব্যাপারগুলো থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়ঃ
ক. এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।
খ. এ রোগ খুবই অস্পষ্ট। যার দরুন এ সংক্রান্ত প্রশ্ন অনেক বেশি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সেগুলোর তেমন আশানুরূপ কোনো উত্তর দিতে পারছেন না।
গ. এ রোগের চিকিৎসা একেবারেই নেই অথবা থাকলেও তা অতি স্বল্প মাত্রায়।
ঘ. এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
এইডস-এর কারণে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুন যে কোনো ছোট রোগও তাকে সহজে কাবু করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ রোগে আক্রান্ত শতকরা ৯৫ জনই সমকামী এবং এ রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৯০ জনই তিন বছরের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে।
৮. এ জাতীয় লোকেরা “ভালোবাসার ভাইরাস” অথবা “ভালোবাসার রোগ” নামক এক নতুন ব্যাধিতেও কখনো কখনো আক্রান্ত হয়। তবে এটি এইডস চাইতেও অনেক ভয়ানক। এ রোগের তুলনায় এইডস একটি খেলনা মাত্র। এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে ছয় মাস যেতে না যেতেই তার পুরো শরীর ফোস্কা ও পুঁজে ভরে যায় এবং দ্রুত ক্ষরণ হতে হতেই সে পরিশেষে মারা যায়। সমস্যার ব্যাপার হলো এই যে, এ রোগটি একেবারেই লুক্কায়িত থাকে যতক্ষণ না যৌন উত্তেজনা প্রশমনের সময় এ সংক্রান্ত হরমোনগুলো উত্তেজিত হয়। আর তখনই উক্ত ভাইরাসগুলো নব জীবন পায়। তবে এ রোগ যে কোনো পন্থায় সংক্রমণ করতে সক্ষম। এমনকি বাতাসের সাথেও।
>