(التعارض) এর আভিধানিক অর্থ: বাধা সৃষ্টি করা, পরস্পরে মুখোমুখি হওয়া।
পারিভাষিক অর্থ:
تقابل الدليلين بحيث يخالف أحدهما الآخر
অর্থাৎ تعارض দু’টি দলীল এমনভাবে মুখোমুখি অবস্থান করা যে, একটি অপরটির সাথে বিরোধপূর্ণ হয়।
প্রথম প্রকার: দু’টি عام দলীলের মাঝে تعارض এর ৪টি অবস্থা রয়েছে।
উভয়টির মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হবে। এটি এভাবে হবে যে, প্রত্যেকটিকে এমন অবস্থার উপর প্রয়োগ করা হবে যে, একটি অপরটির সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। এক্ষেত্রে সমন্বয় করা ওয়াজিব। এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর বাণী:
وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন (সূরা আশ-শুরা ৪২:৫২)।’’ অপর আয়াতে তিনি বলেছেন,
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ
‘‘আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না’’ (সূরা আল-ক্বাছাছ ২৮:৫৬)।
উভয় আয়াতের মাঝে সমন্বয় করা যায় এভাবে যে, প্রথম আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, হক্বের পথ প্রদর্শন। এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাব্যস্ত বিষয়।
দ্বিতীয় আয়াতের উদ্দেশ্য হলো আমলের তাওফীক্ব দেয়ার হিদায়াত। এটি আল্লাহর হাতে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কেউ এর ক্ষমতা রাখেন না।
যদি সমন্বয় করা সম্ভব না নয়, তাহলে কোন দলীল আগে এসেছে আর কোন দলীল পরে এসেছে, তার ইতিহাস জানা থাকলে পরের দলীল রহিতকারী সাব্যস্ত হবে এবং তদানুযায়ী আমল করতে হবে। প্রথমটি অনুযায়ী আমল করা হবে না। এর দৃষ্টান্ত হলো আল্লাহর বাণী:
فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ
‘‘যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয় (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৮৪)।’’
অত্র আয়াতটি ছিয়াম পালন করা ও ছিয়াম রাখার বদলে অন্যকে খাদ্য খাওয়ানোর মাঝে ঐচ্ছিকতা প্রদান করার ফায়দা দেয়, সাথে সাথে আয়াতটির মাধ্যমে ছিয়াম পালনের দিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কিন্তু পরের আয়াতে বলা হচ্ছে
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
‘‘তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৮৫)।’’
এ আয়াতটি মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের ছিয়াম পালন করা এবং মুসাফির ও রোগীদের ছিয়াম ক্বাজা করার বিধান নির্দিষ্ট হওয়ার ফায়দা দেয়। কিন্তু এ আয়াতটি প্রথম আয়াতের পরে অবতীর্ণ হয়েছে, তাই এটি পূর্বের আয়াতটিকে রহিত করে দিবে। যেমনটা প্রমাণ করে বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত সালামা বিন আকওয়ার ছহীহ হাদীছ।[1]
যদি (আগে-পরে বর্ণিত হওয়ার) ইতিহাস জানা না যায়, তাহলে অগ্রগণ্য দলীল অনুসারে আমল করা হবে, যদি সেখানে অগ্রাধিকার দানকারী কোন বিষয় থাকে। এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
«مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ»
‘‘যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে, সে যেন উযূ করে।’’[2]
অপর হাদীছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে, তার উপর কি ওযু আবশ্যক? তিনি বললেন, না। এটি তো তোমারই অঙ্গ বিশেষ।[3]
এখানে প্রথম হাদীছটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেননা, এটি অধিকতর সতর্কতামূলক।
এ হাদীছের সনদ সংখ্যা অনেক। একে ছহীহ আখ্যায়িতকারী মুহাদ্দিসের এর সংখ্যাও বেশি। উপরন্তু এটি أصل (উযূ ওয়াজিব না হওয়া) সম্পর্কে বিবরণ। তাই এতে অতিরিক্ত ইলম রয়েছে।[4]
যদি অগ্রাধিকার দানকারী কোন বিষয় না পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে মুলতবী রাখা ওয়াজিব। আর এর বিশুদ্ধ কোন উদাহরণ পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয় প্রকার: দু’টি খাছ দলীলের মাঝে تعارض হবে। এটিরও চারটি অবস্থা রয়েছে।
১. উভয়টির মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হলে, সমন্বয় করা ওয়াজিব। এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হজ্জের বিবরণ সম্পর্কে জাবের (রা.) এর হাদীছ। তিনি বলেছেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم صلى الظهر يوم النحر بمكة
‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যূহরের ছ্বলাত মক্কাতে পড়েছেন।’’[5]
অপর দিকে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) এর হাদীছে রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনাতে যূহরের ছ্বলাত আদায় করেছেন। [6]
উভয়ের মাঝে সমন্বয় করা হবে এভাবে যে, তিনি যোহরের ছ্বলাত প্রথমে মক্কাতে পড়েন। এরপর যখন তিনি মিনাতে যান, সেখানকার ছাহাবীদের নিয়ে যোহরের ছালাত পুনরায় আদায় করেন।
২. যদি উভয়ের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে ইতিহাস জানা থাকলে দ্বিতীয়টি ناسخ বা রহিতকারী সাব্যস্ত হবে। এর দৃষ্টান্ত হলো আল্লাহর বাণী:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آَتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّك وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ
‘‘হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার আওতাধীন করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে (সূরা আল-আহযাব ৩৩:৫০)।’’
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِنْ بَعْدُ وَلَا أَنْ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ
‘‘এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে (সূরা আল-আহযাব ৩৩:৫২)।’’
এক্ষেত্রে এক মতানুসারে দ্বিতীয় আয়াতটি রহিতকারী প্রথম আয়াতকে।
(৩) যদি ‘রহিতকরণ’ সম্ভব না হয়, তাহলে অগ্রাধিকার যোগ্য দলীল অনুসারে আমল করা হবে, যদি সেখানে অগ্রাধিকার দানকারী কোন বিষয় থাকে।
এর উদাহরণ হলো মাইমুনার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছেন।[7]
কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন আববাসের হাদীছে রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইমুনাকে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেছেন।[8]
এখানে প্রথম হাদীছটি অগ্রাধিকার যোগ্য। কেননা, মাইমুনাহ (রা.) ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। কাজেই এসম্পর্কে তিনিই বেশি অবগত।
উপরন্তু তার হাদীছকে আবু রাফে বর্ণিত হাদীছ শক্তিশালী করে। হাদীছটি হলো আবু রাফে‘ (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মুনাকে (রা.) হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। আর আমি উভয়ের মাঝে মধ্যস্থতাকারী ছিলাম।[9]
(৪) যদি (কোন একটি দলীলকে) অগ্রাধিকার দান করে এমন কোন বিষয় না থাকে, তবে উভয় দলীল মুলতবী রাখা ওয়াজিব।
তৃতীয় প্রকার: عام ও خاص দলীলের মাঝে تعارض হবে। এক্ষেত্রে خاص দ্বারা عام কে خاص বা বিশেষায়িত করা হবে। এর উদাহরণ হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
فيما سقت السماء العشر
‘বৃষ্টির পানি দ্বারা যা উৎপন্ন হয়, তাতে এক দশমাংশ উশর দিতে হবে।’’ [10] অপর হাদীছে রয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপর বাণী:
ليس فيما دون خمسة أوسق صدقة
‘‘পাঁচ ওয়াসাকের কম ফসলে কোন উশর নেই।’’[11]
এখানে দ্বিতীয় দলীল দ্বারা প্রথমটাকে خاص করা হবে। কাজেই পাঁচ ওয়াসাক পরিমাণ সম্পদ না পৌঁছলে তাতে যাকাত ফরয হবে না।
চতুর্থ প্রকার: এমন দুটি نص এর মাঝে تعارض হবে; যার একটি অপরটি থেকে একদিক দিয়ে অধিকতর عام আবার অপর দিক দিয়ে অধিকতর خاص । এর তিনটি অবস্থা:
(১) একটির عام কে অপরটি দ্বারা خاص করার মর্মে দলীল প্রতিষ্ঠিত হলে, তা দ্বারা خاص করা হবে। এর দৃষ্টান্ত হলো আল্লাহর বাণী:
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا
‘‘তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যু বরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন ঐ স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা (সূরা আল-বাক্বারা ২:২৩৪)।’’ অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
‘‘গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত (সূরা আত-ত্বালাক্ব ৬৫:৪)।’’
প্রথম আয়াতটি ঐ মহিলার সাথে خاص যার স্বামী মারা গিয়েছে। গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার দিক দিয়ে عام। আবার দ্বিতীয় আয়াতটি গর্ভবতী মহিলার জন্য خاص , তবে স্বামী মারা যাওয়া বা না যাওয়া এ দিক দিয়ে عام। কিন্তু প্রথম আয়াতের عام কে দ্বিতীয় আয়াত দ্বারা خاص করার মর্মে দলীল রয়েছে।
দলীল হলো সাবিয়া আল আসলামী নাম্নী মহিলা ছাহাবীর স্বামী মারা যাওয়ার কয়েক রাত্র পর সন্তান প্রসব করেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করার অনুমতি দেন।[12]
সুতরাং এ ভিত্তিতে গর্ভবতী মহিলার ইদ্দতের সময়সীমা হলো, সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। চাই তার স্বামী মৃত্যু বরণ করুক অথবা বেঁচে থাক।
(২) যদি একটি عام কে অপরটি দ্বারা خاص করার মর্মে কোন দলীল প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে উভয়ের মাঝে অগ্রাধিকারযোগ্য দলীল অনুসারে আমল করা হবে। এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
اذا دخل احدكم المسجد فلا يجلس حتي يصلي ركعتين
‘‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দু’রাকা‘আত ছ্বলাত আদায় না করা পর্যন্ত না বসে।’’[13] অপর হাদীছে তিনি বলেন,
لا صلاة بعد الصبح حتي تطلع الشمس ولا صلاة بعد العصر حتي تغرب الشمس
‘‘ফযরের ছ্বলাতের পর কোন ছ্বলাত নেই যতক্ষণ না সূর্যোদয় হয়। আছরের পরও কোন ছ্বলাত নেই, যতক্ষণ না সূর্যাস্ত যায়।’’[14]
প্রথম হাদীছটি তাহিয়্যাতুল মসজিদের ছ্বলাতের সাথে خاص এবং সময়ের ক্ষেত্রে عام। অপর দিকে দ্বিতীয় হাদীছটি সময়ের ক্ষেত্রে خاص কিন্তু ছ্বলাতের ক্ষেত্রে عام যা তাহিয়্যাতুল মসজিদের ছ্বলাত ও অন্যান্য সব ছ্বলাতকে অন্তর্ভুক্ত করে।[15]
কিন্তু অগ্রগণ্য মত হলো, দ্বিতীয় হাদীছের عام কে প্রথম হাদীছ দ্বারা خاص করা। সুতরাং নিষিদ্ধ সময়ের عام ছ্বলাত থেকে خاص করে তাহিয়্যাতু্ল মসজিদের ছ্বলাত আদায় করা জায়েয হবে।
আমরা এ মতটিকে অগ্রাধিকার দিলাম। কেননা, তাহিয়্যাতুল মসজিদের ছ্বলাত ছাড়াও অন্য ছ্বালাতের মাধ্যমে দ্বিতীয় হাদীছের عام কে خاص করা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন: ফরয ছ্বলাত ক্বাযা করা, পুনরায় জামা‘আত করা প্রভৃতি। সুতরাং এর عمومية টি দুর্বল বলে গণ্য।[16]
যদি (একটি عام কে অপরটি দ্বারা خاص করার মর্মে কোন) দলীল প্রতিষ্ঠিত না থাকে এবং একটি عام কে অপরটি দ্বারা خاص করার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দানকারী কোন বিষয়ও যদি না থাকে, তাহলে উভয় ক্ষেত্রে কোন বিরোধ নেই বলে ধরা হবে, এ অবস্থায় উভয় দলীল অনুযায়ী আমল করা হবে এবং যে ক্ষেত্রে উভয় দলীল বিরোধপূর্ণ, ঐ অবস্থায় আমল করা স্থগিত রাখা হবে।
কিন্তু সত্ত্বাগতভাবে نص সমূহের মাঝে এ ধরণের تعارض হওয়া সম্ভব নয় যে, তাতে সমন্বয় করা সম্ভব হবে না, রহিত করাও হবে না এবং একটিকে অগ্রাধিকার দেয়াও সম্ভব হবে না। কেননা, نص সমূহ মূলতঃ পরস্পর বিরোধপূর্ণ নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন এবং প্রচার করে গিয়েছেন। তবে জ্ঞানের ক্রটির কারণে মুজতাহিদদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অনেক সময় এ ধরণের تعارض সংঘটিত হয়। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
[2]. ছ্বহীহ: আবূ দাউদ হা/১৮১, তিরমিযী হা/৮২
[3]. আবূ দাউদ হা/১৮২, তিরমিযী হা/৮৫, ইবনু মাজাহ হা/৪৮৩
[4]. কোন কিছু করলে ওযু নষ্ট হবে না, এটাই أصل বা মূলনীতি। কাজেই যে হাদীসে বলা হচ্ছে ওযু করতে হবে না, সেটি মূলতঃ উক্ত সাধারণ মূলনীতির উপরই রয়েছে। পক্ষান্তরে যে হাদীছে বলা হচ্ছে উযূ করতে হবে, এটি মূলতঃ উক্ত মূলনীতি সম্পর্কে অতিরিক্ত বর্ণনা দিচ্ছে। কাজেই এই হাদীসে অতিরিক্ত ইলম রয়েছে, বিধায় এটি অগ্রাধিকার পাবে।
[5]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১২১৮
[6]. ছ্বহীহ বুখারী হা/১৬৫৩, ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৩০৯
[7]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৪১১
[8]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৫১১৪, ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৪১০
[9]. ইবনু হিববান হা/১২৭২, তিরমিযী হা/৮৪১, যঈফ আলবানী।
[10]. ছ্বহীহ বুখারী/১৪৮৩।
[11]. ছ্বহীহ বুখারী/১৪৮৪, ছ্বহীহ মুসলিম /৯৭৯। উল্লেখ্য যে, এই সম্পর্কে আলোচনা خاص অধ্যায়ে চলে গিয়েছে।
[12]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৫৩১৮, ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৪৮৫
[13]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৪৪৪, ছ্বহীহ মুসলিম হা/৭১৪
[14]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৫৮৬, ছ্বহীহ মুসলিম হা/৮২৭
[15]. অর্থাৎ প্রথম হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, তাহিয়্যাতুল মসজিদের দু’রাক‘আত ছ্বলাত মসজিদে প্রবেশ করলেই আদায় করতে হবে, তা যে সময়েই প্রবেশ করুক না কেন। কিন্তু দ্বিতীয় হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, ফযরের পর ছ্বলাত আদায় নিষেধ, তা যে ছ্বলাতই হোক না কেন।
[16]. অর্থাৎ দ্বিতীয় হাদীছের عام দুর্বল। কেননা, এ হাদীছের عام এর দাবি অনুযায়ী যে কোন ছ্বলাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু ফজর ও আছরের পর ক্বাযা ছ্বলাত আদায় যায়, দ্বিতীয় জামা‘আত করা যায়। সুতরাং এর عام এর দাবি দুর্বল বলে গণ্য। তাই যেহেতু এর عام টি বহাল থাকে নি, সুতরাং এর عام কে অন্য হাদীছ দ্বারা خاص করারও অবকাশ রয়েছে। কেননা, কোন عام কে যখন خاص করা হয়, তখন এ ব্যাপারে কিছু বিদ্বান বলেছেন, ঐ عام আর عام থাকে না। কিন্তু গ্রহণযোগ্য মত হলো عام দলীল যখন অন্য দলীলের মাধ্যমে خاص হয়, তখন خاص করার পর অবশিষ্ট عام বহাল থাকবে। সমূলে বাদ হয়ে যাবে না। সুতরাং যে ছ্বলাত কোন কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেই কারণ গুলি যখনই পাওয়া যাবে, তখনই ছ্বলাত আদায় করা যাবে এবং এগুলি দ্বিতীয় হাদীছের عام কে خاص করে দিবে। বাকী অন্যান্য সাধারণ নফল দ্বিতীয় হাদীসের عام নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে নিষিদ্ধ গণ্য হবে। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।