উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) ইলম (العلم) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ২ টি

ইলম এর সংজ্ঞা:

العلم : إدراك الشيئ على ما هو عليه إدراكا جازما

‘‘অর্থাৎ কোন জিনিসকে তার মূল স্বরূপের উপর দৃঢ়ভাবে জানা।’’ যেমন: এটা জানা যে, ‘আংশিক অপেক্ষা বৃহত্তর পূর্ণ’ ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত করা শর্ত প্রভৃতি।

আমাদের বক্তব্য: إدراك الشي (কোন জিনিস সম্পর্কে জানা) এ শব্দ দ্বারা কোন জিনিস সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে না জানা ইলম বিলুপ্ত হয়েছে। এটাকে جهل بسيط বা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা বলা হয়। যেমন: কাউকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, বদর যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল? আর সে জবাবে বলে, আমি জানি না।

আমাদের বক্তব্য: على ما هو عليه (তার মূল স্বরূপের উপর জানা) এ অংশ দ্বারা ইলম থেকে বের হয়ে গেছে এমন জিনিস যা তার মূল স্বরূপ থেকে ভিন্ন ভাবে জানা যায়। এটাকে جهل مركب বা মিশ্র অজ্ঞতা বলা হয়। যেমন: কাউকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, বদর যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল? আর সে জবাবে বলে, হিজরী তৃতীয় সালে![1]

আমাদের বক্তব্য: إدراكا جازما (দৃঢ়ভাবে জানা) এ কথা দ্বারা দৃঢ়ভাবে না জানা বিষয় বিলুপ্ত হয়েছে। এটা এভাবে যে, ব্যক্তি বিষয়টি যেভাবে জেনেছে তা দৃঢ় নয়। তাছাড়া অন্য দিকটিও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সুতরাং এভাবে জানাকে ইলম হিসাবে অভিহিত করা হবে না।

অতঃপর সম্ভাব্য দু’টি জিনিসের মাঝে একটি যদি তার নিকট অগ্রগণ্য বলে প্রতিভাত হয়, তাকে ظن বা প্রবল ধারণা প্রসূত জ্ঞান বলে। আর যার উপর অগ্রাধিকার দেয়া হলো তাকে وهم বা সংশয় বলে। পক্ষান্তরে যদি তার নিকটে উভয় জিনিসটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তাকে شك বা সন্দেহ বলে।

উক্ত আলোচনায় এটা স্পষ্ট হলো যে, কোন কিছু জানার সাথে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কযুক্ত:

  • العلم - এটি হলো কোন বিষয়কে তার মূল স্বরূপের উপর দৃঢ়ভাবে জানা।[2]
  • جهل البسيط -বা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা হলো, কোন বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে না জানা।
  • جهل مركب- মিশ্র অজ্ঞতা, এটা হলো কোন জিনিসকে তার মূল স্বরূপ থেকে ভিন্ন ভাবে জানা।
  • ظن -প্রবল ধারণা প্রসূত জ্ঞান হলো কোন বিষয়কে জানা, সাথে তার বিপরীত অগ্রগণ্য বিষয়টিও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকা।
  • وهم-সংশয় হলো কোন বিষয়কে জানা, সাথে তার বিপরীত অগ্রগণ্য জিনিসটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকা।
  • شك বা সন্দেহ হলো, কোন জিনিসকে জানা, সাথে তার বিপরীত সমপর্যায়ের জিনিসটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকা।
[1]. মিশ্র অজ্ঞতা হলো প্রথমত: সে জানে না কখন বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত: সে যে বিষয়টি জানে না- এটাও সে বুঝতে পারে না!

[2] . অর্থাৎ কোন জিনিসকে দৃঢ়তার সাথে সঠিক ভাবে জানা।

ইলম দু’প্রকার। যথা:

العلم الضروري - বাধ্যগত ইলম
العلم النظري - চিন্তা-গবেষণা নির্ভর ইলম

১. العلم الضروري -বাধ্যগত ইলম: যেখানে জ্ঞাত বিষয়ের ‘জানা’ বাধ্যগত হয়।[1] এটি এমন ভাবে হয় যে, দলীল, চিন্তা-গবেষণা ছাড়াই যা মানুষ জানতে বাধ্য হয়। যেমন: কোন কিছুর পূর্ণতা আংশিক অপেক্ষা বৃহত্তর, আগুন গরম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল প্রভৃতি জানা।[2]

২. العلم النظري -চিন্তা-গবেষণা নির্ভর ইলম: যে ইলম অর্জনে দলীল-প্রমাণ ও চিন্তা-গবেষণার প্রয়োজন হয়, তাকে العلم النظري বা চিন্তা-গবেষণা মূলক ইলম বলে। যেমন: এটা জানা যে, ছ্বালাতের ক্ষেত্রে নিয়ত ফরজ।

[1]. অর্থাৎ যা মানুষ বাধ্যগতভাবে জানে।

[2]. এ ধরণের ইলম জ্ঞানী, সাধারণ মানুষ সবাই জানতে পারে। এ ধরণের ইলম কেউ অস্বীকার করলে সে কাফির হয়ে যাবে। যেমন: আল্লাহর একত্ববাদ, ছ্বালাতের ফরজিয়্যাত, সুদ, মদ, যেনা প্রভৃতি হারাম হওয়া ইত্যাদি।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে