মহান আল্লাহ তার বান্দার নিকট তার পূর্ণজ্ঞান, ক্ষমতা ও মহানত্ব প্রমাণ করার জন্য এই মহাজগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি এই মহাজগতের সবকিছুকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, সবকিছুই তাদের প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে। মানুষ যখন এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে, তখন তার প্রতিপালকের ইবাদতের দিকে ধাবিত হবে, যিনি একক এবং যার কোন শরীক নেই। আর সে মহান আল্লাহ ও তার রাসূলগণের আনুগত্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। সাথে সাথে সে আল্লাহর পূর্ণ দাসত্ব ও আনুগত্যে অন্যান্য সৃষ্টির সাথেও অংশগ্রহণ করতে পারবে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا (12)) ... [الطلاق: 12].
‘তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তাঁর নির্দেশ অবতীর্ণ হয়, যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে’(সূরা আত-তালাক্ব:১২)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ (56) مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَاأُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ (57) إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ (58)) [الذاريات: 56 - 58]
‘আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোন রিযক চাই না; আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে। নিশ্চয় আল্লাহই রিযকদাতা, তিনি শক্তিধর, পরাক্রমশালী’(সূরা আয-যারিয়াত:৫৬-৫৮)।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করে তার জন্য কতিপয় স্তর, কাল, স্থান ও অবস্থার বন্দোবস্ত করেছেন, যেগুলি তাকে অতিক্রম করতে হয়। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাত বা জাহান্নামে স্থায়ী হয়ে যায়।
মানুষ যেসব স্তর অতিক্রম করে, সেগুলি চারটি:
প্রথম: মায়ের পেট: এটি প্রথম স্তর, যা মানুষকে অতিক্রম করতে হবে এবং প্রথম গৃহ, যেখানে সে বাস করে। এখানে মানুষ (সাধারণতঃ) নয় মাস বসবাস করে। মহাজ্ঞানী, ক্ষমতাবান আল্লাহ এ অন্ধকার ঘরে তার জন্য খাদ্য-পানীয় এবং তার উপযোগী বাসস্থান ও আশ্রয়স্থলসহ যা কিছু তার প্রয়োজন, তার সবই প্রস্ত্তত করে দিয়েছেন। এইঘরে অক্ষমতা ও দুর্বলতার কারণে সে কোন প্রকার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। এ ঘরে তার অস্তিত্ব লাভের দু’টি রহস্য আছে: ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণ হওয়া। আর বাহিরের অঙ্গ-প্রত্যেঙ্গ পরিপূর্ণ হওয়া। ভেতর ও বাইরে তার সৃষ্টিগত পরিপূর্ণতা লাভের পর সে দুনিয়ায় বেরিয়ে আসে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ (12) ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ (13) ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ (14)) [المؤمنون: 12 - 14]
‘আর অবশ্যই আমি মানুষকে মাটির নির্যাস হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে সংরক্ষিত আঁধারে স্থাপন করেছি। তারপর শুক্রবিন্দুকে আমি রক্তপিণ্ড পরিণত করি। তারপর রক্তপিণ্ডকে মাংসপিণ্ড পরিণত করি। তারপর মাংসপিণ্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে মাংস দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তা অন্য এক সৃষ্টরূপে গড়ে তুলি। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময় (সূরা আল-মুমিনূন: ১২-১৪)।
দ্বিতীয়: দুনিয়া: মায়ের পেটের চেয়ে এ ঘরের প্রশস্ততা অনেক বেশি। পাহাড়ের সাথে অতি ক্ষুদ্র বস্ত্তর তুলনা যেমন, মায়ের পেটের সাথে দুনিয়ার তুলনা তেমন। মায়ের পেটের চেয়ে অধিক সময় দুনিয়ায় অবস্থান করে। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য দুনিয়ায় সকল প্রকার প্রয়োজনীয় নেয়ামতের ব্যবস্থা করেছেন। তাকে বিবেক, শ্রবণ এবং দর্শন শক্তি দান করেছেন, রাসূল প্রেরণ করেন, আসমানী কিতাব নাযিল করে এর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। আর কুফরী ও সব ধরণের অবাধ্যতা থেকে তিনি নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে জান্নাতের এবং কাফেরদেরকে জাহান্নামের অঙ্গিকার করেছেন।
দুনিয়ায় মানুষের অস্তিত্ব লাভের রহস্য দু’টিঃ (ক) ঈমান পূর্ণ করা। (খ) সৎ আমল পূর্ণ করা। মানুষ আমলসহ দুনিয়া ছেড়ে কবরের জগতের দিকে যাত্রা করে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْنِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُنِيرٍ (20)) ... [لقمان: 20].
‘তোমরা কি দেখ না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে। আর তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামত ব্যাপক করে দিয়েছেন; মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক করে জ্ঞান, হেদায়াত ও আলো দানকারী কিতাব ছাড়া’ (সূরা লুকমান: ২০)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(يَاأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ(21) الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (22)) ... [البقرة: 21 - 22]
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পারো। যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আসমানকে ছাদ এবং আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি তোমাদের জন্য রিযকস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২১-২২)।
তৃতীয়: দারুল বারযাখ বা কবরের জগত। কবর আখেরাতের প্রথম মঞ্জিল বা ঘর। সকল সৃষ্টির মৃত্যু সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মানুষ এখানে অবস্থান করতে থাকবে। তারপর ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। দুনিয়ায় অবস্থানের চেয়ে এখানের স্থায়ীত্ব বেশি। এখানে দুনিয়ার চেয়ে ঘনিষ্ঠতা ও দুঃখ-দুর্দশা বেশি ও পরিপূর্ণ। দুনিয়ার আমলানুযায়ী এখানে প্রতিদান দেয়া হয়। সেটা হয়তো জান্নাতের বাগান অথবা জাহান্নামের গর্ত হবে।এখানেই প্রতিদান দেওয়া শুরু হবে এবং এখান থেকেই চিরস্থায়ী গৃহ জান্নাত বা জাহান্নামে স্থানান্তরিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ (30) نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ (31) نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ (32)) [فصلت: 30 - 32].
‘নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতামণ্ডলী তাদের কাছে অবতীর্ণ হন এবং বলেন, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার ওয়াদাপ্রাপ্ত তোমরা হয়েছিলে। আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু ও আখেরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে, যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরও থাকবে, যা তোমরা দাবী করবে পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ’ (সূরা হামীম সাজদা: ৩০-৩২)।
চতুর্থ: আখেরাত। এখানে চিরকাল অবস্থান করতে হবে। এটা স্থায়ী ঘর। যারা দুনিয়ায় আল্লাহ তা‘আলা যে ঈমান, আমল এবং আখলাক্বকে ভালবাসেন, তা সম্পন্ন করবে, ক্বিয়ামতের দিন সে যে স্থায়ীত্ব ও নেয়ামত পেতে চায়, আল্লাহ তার জন্য তা পূর্ণ করবেন, যা কোন দিন কোন চোখ দেখেনি, যার কথা কান শুনেনি এবং যা কোন মানুষের কল্পনায়ও কখনও আসেনি। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধের কারণ কুফর, শিরক এবং পাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, তার প্রতিফল হলো জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল থাকবে।
প্রথম দু’টি ঘর (মায়ের পেট ও দুনিয়া) প্রত্যক্ষ বা দৃশ্য। আর পরবর্তী দু’টি ঘর (কবর ও আখেরাত) পরোক্ষ বা অদৃশ্য। তবে, সবগুলোই সত্য। প্রতিটি ঘরই মানুষ দেখবে এবং জানবে। মুমিন ব্যক্তি যখনই কোন পর্যায় ত্যাগ করবেন, তখনই পূর্ববর্তী পর্যায়কে তুচ্ছ জ্ঞান করবেন, অবশেষেজান্নাতে স্থায়ী হবেন।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَتَفَرَّقُونَ (14) فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ (15) وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ فَأُولَئِكَ فِي الْعَذَابِ مُحْضَرُونَ (16)) [الروم: 14 - 16].
‘আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। অতএব, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে জান্নাতে পরিতুষ্ট করা হবে। আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াত ও আখেরাতের সাক্ষাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে’(সুরা আর-রূম: ১৪-১৬)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا
وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (72)) ... [التوبة: 72].
‘আল্লাহ মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিয়েছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থান সমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহা সফলতা’ (সূরা আত-তাওবা: ৭২)।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, অন্যান্য বহু সৃষ্টির উপর তাকে সম্মান দান করেছেন আর তার প্রত্যেকটি অঙ্গের এমন পূর্ণতা দিয়েছেন, যা তাকে আনন্দিত ও ভাগ্যবান করে। তিনি চোখের পূর্ণতা দিয়েছেন দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে, কানের পূর্ণতা দিয়েছেন শ্রবণশক্তির মাধ্যমে এবং জিহবার পূর্ণতা দিয়েছেন বাকশক্তির মাধ্যমে। এভাবে অন্যান্য অঙ্গেরও পূর্ণতা দিয়েছেন। এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পূর্ণতা হারালে সেগুলি বেদনা, ত্রুটি ও দুশ্চিন্তা অনুভব করবে।
এভাবে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অন্তরের পূর্ণতা, নেয়ামত, আনন্দ, স্বাদ এবং প্রশান্তি দান করেছেন তার রবকে জানা, তাকে ভালবাসা, তার ইবাদত করা, তার সাথে বন্ধুত্ব, তারই উপর ভরসা, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা, তার আনুগত্য এবং তার সন্তুষ্টিমূলক আমলের মধ্যে।
আর যখন অন্তরে এগুলো থাকবে না, তখনকারও চোখের আলোও কানের শ্রবণশক্তি না থাকলে যেমন কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হয়, তার চেয়েও অধিকশাস্তি ও বিপদের সম্মুখীন হবে।
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালক ও তার উপর যা ওয়াজিব, সে ব্যাপারে অজ্ঞ, সে স্থায়ী শাস্তি ভোগ করবে। কেননা তার যা চাওয়া ও ভালবাসা উচিত ছিল, তা করা থেকে সে বঞ্চিত ছিল। সে কারণে, চোখ যেমন সূর্য দেখে, তেমনি কলুষমুক্ত অন্তর সত্যকে দেখে, আর এ অন্তর ঈমান এবং সৎ আমলের মাধ্যমে ঠিক তেমন স্বাদ আস্বাদন করে, যেমন শরীর খাদ্য-পানীয় দ্বারা তৃপ্তি অনুভব করে।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন যেন সে গোলাম হতে পারে। আর এক্ষেত্রে তার স্বাধীনতা রয়েছে, সে হয় আল্লাহর গোলাম হবে, না হয় শয়তানের গোলাম হবে। আল্লাহ তা‘আলা ঈমান, আনুগত্য এবং কল্যাণের নির্দেশ দেন। অপরপক্ষক্ষ শয়তান কুফর, পাপ এবং অকল্যাণের নির্দেশ দেয়। যে তার নিজেকে ঈমান ও আনুগত্যের মধ্যে পাবে, সে আল্লাহর হিসাবে গোলাম। আর যে নিজেকে কুফর ও পাপের মধ্যে পাবে, সে শয়তানের গোলাম।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ (28)) [الرعد: 28].
‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’(সূরা আর-রা‘দ: ২৮)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُواأَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (257)) [البقرة: 257]
‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে, তাদের অভিভাবক হল ত্বাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে’(সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৫৭)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْأَصْحَابِ السَّعِيرِ) ... [فاطر: 6]
‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব, তোমরা তাকে শত্রু হিসাবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়’(সূরা ফাতিবর: ৬)।
ইবাদত যেন শরীর, আর দাসত্ব যেন আত্মা। ইবাদতের শুরু ও শেষ আছে। যেমন-ছালাত, ছিয়াম, হাজ্জ ইত্যাদি ইবাদত। কিন্তু দাসত্ব হলো আত্মিক আমল, যা বান্দা থেকে কখনই পৃথক হয় না। সব সময় অনুভব করবে যে, তুমি আল্লাহর একজন বান্দা। ইবাদতের আত্মা হচ্ছে দাসত্ব। আর দাসত্ব হচ্ছে, সদা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার মুখাপেক্ষী হওয়া। আর কুফরীর আত্মা হচ্ছে, সীমালঙ্ঘন ও আল্লাহর তোয়াক্কা না করা।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নিকট থেকে দাসত্বের পূর্ণতা চান দুইভাবেঃ
(ক) পূর্ণাঙ্গ দাসত্ব (খ) শরী‘আত সম্মত ইবাদত।
চারটি বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে আগ্রহ তৈরি হয়ঃ
(ক) আল্লাহ তা‘আলার প্রতি এবং তার নামসমূহও গুণাবলীর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা
(খ) আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস রাখা
(গ) আল্লাহর শান্তির অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা
(ঘ) আল্লাহর শাস্তির অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করা।
যখন এসব বিষয়ে অথবা এসবের আংশিক কোন বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়, তখন মানুষ আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখ হয়, অবাধ্যতায় লিপ্ত হয় আর শয়তানের আনুগত্য করতে থাকে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ ) [الأنعام: 102]
‘তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। তিনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর তত্ত্বাবধায়ক (সূরা আল-আন‘আম: ১০২)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا) [الكهف: 110]
‘সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’(সূরা আল-কাহাফ: ১১০)।