আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, অন্যান্য বহু সৃষ্টির উপর তাকে সম্মান দান করেছেন আর তার প্রত্যেকটি অঙ্গের এমন পূর্ণতা দিয়েছেন, যা তাকে আনন্দিত ও ভাগ্যবান করে। তিনি চোখের পূর্ণতা দিয়েছেন দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে, কানের পূর্ণতা দিয়েছেন শ্রবণশক্তির মাধ্যমে এবং জিহবার পূর্ণতা দিয়েছেন বাকশক্তির মাধ্যমে। এভাবে অন্যান্য অঙ্গেরও পূর্ণতা দিয়েছেন। এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পূর্ণতা হারালে সেগুলি বেদনা, ত্রুটি ও দুশ্চিন্তা অনুভব করবে।
এভাবে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অন্তরের পূর্ণতা, নেয়ামত, আনন্দ, স্বাদ এবং প্রশান্তি দান করেছেন তার রবকে জানা, তাকে ভালবাসা, তার ইবাদত করা, তার সাথে বন্ধুত্ব, তারই উপর ভরসা, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা, তার আনুগত্য এবং তার সন্তুষ্টিমূলক আমলের মধ্যে।
আর যখন অন্তরে এগুলো থাকবে না, তখনকারও চোখের আলোও কানের শ্রবণশক্তি না থাকলে যেমন কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হয়, তার চেয়েও অধিকশাস্তি ও বিপদের সম্মুখীন হবে।
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালক ও তার উপর যা ওয়াজিব, সে ব্যাপারে অজ্ঞ, সে স্থায়ী শাস্তি ভোগ করবে। কেননা তার যা চাওয়া ও ভালবাসা উচিত ছিল, তা করা থেকে সে বঞ্চিত ছিল। সে কারণে, চোখ যেমন সূর্য দেখে, তেমনি কলুষমুক্ত অন্তর সত্যকে দেখে, আর এ অন্তর ঈমান এবং সৎ আমলের মাধ্যমে ঠিক তেমন স্বাদ আস্বাদন করে, যেমন শরীর খাদ্য-পানীয় দ্বারা তৃপ্তি অনুভব করে।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন যেন সে গোলাম হতে পারে। আর এক্ষেত্রে তার স্বাধীনতা রয়েছে, সে হয় আল্লাহর গোলাম হবে, না হয় শয়তানের গোলাম হবে। আল্লাহ তা‘আলা ঈমান, আনুগত্য এবং কল্যাণের নির্দেশ দেন। অপরপক্ষক্ষ শয়তান কুফর, পাপ এবং অকল্যাণের নির্দেশ দেয়। যে তার নিজেকে ঈমান ও আনুগত্যের মধ্যে পাবে, সে আল্লাহর হিসাবে গোলাম। আর যে নিজেকে কুফর ও পাপের মধ্যে পাবে, সে শয়তানের গোলাম।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ (28)) [الرعد: 28].
‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’(সূরা আর-রা‘দ: ২৮)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُواأَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (257)) [البقرة: 257]
‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে, তাদের অভিভাবক হল ত্বাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে’(সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৫৭)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْأَصْحَابِ السَّعِيرِ) ... [فاطر: 6]
‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব, তোমরা তাকে শত্রু হিসাবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়’(সূরা ফাতিবর: ৬)।