শরীরে প্রাণের উপস্থিতি যেমন জরুরী, তেমনি মানব জাতির জন্য দ্বীন ইসলাম অত্যাবশ্যক। শরীর থেকে প্রাণ বের হলে তা যেমন অকেজো হয়, তেমনি মানব জাতি দ্বীন হারালে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত সবই নষ্ট হয়। আর দেহের মাপ অনুযায়ী দুনিয়াতে ফাসাদ ও নোংরামি ছড়ায়। দ্বীন ব্যতীত মানুষ খালি কৌটার মত মূল্যহীন। মানুষ সঠিক দ্বীন থেকে বিচ্যুত হলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত ইচ্ছানুযায়ী জীবন যাপন করে, ফাসাদ সৃষ্টির ব্যাপারে হিংস্র জন্তুর মত হয়ে যায় এবং অনিষ্ট সাধন, অপকৌশল ও ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে শয়তানদের মত হয়ে যা। মহান আল্লাহ এই মানুষের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং তাকে অন্যদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। যেমনঃ তিনি তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, তার মাঝে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, ফেরেশতামণ্ডলী দ্বারা তার সামনে সেজদা করিয়ে নিয়েছেন, জ্ঞানের উপকরণ শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও বিবেক দিয়ে তাকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং তাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের দা‘ওয়াত দেওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছেন, যাতে দ্বীন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় এবং সকল মানুষ তাদের একমাত্র প্রভূর ইবাদত করতে পারে- যার কোন শরীক নেই। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের গুরুত্ব বিবেচনা করে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে বিস্তারিত ও পরিপূর্ণ বিবরণী পেশ করেছেন। বিভিন্ন যুগে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে নবীগণের জীবন-চরিত বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি নবীগণের জাতিদের সাথে তাঁদের ঘটনাবলি বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যেমন নূহ, হূদ, ছালেহ, ইবরাহীম, ইসমাঈল, মূসা, ঈসা, দাঊদ, সুলাইমান, লূত, শু‘আইব, ইউসুফ (আ.) প্রমুখের কাহিনী ।
দা‘ওয়াত হচ্ছে আমলের মূল। দা‘ওয়াতের গুরুত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের ইবাদতের কথা বিস্তারিত বর্ণনা করেননি, না ইবরাহীম (আ.)-এর ছালাত, না আদম (আ.)-এর হাজ্জ, না দাঊদ (আ.)-এর ছিয়াম। তবে, তিনি সংক্ষেপে এ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা কোন একজন নবীর ইবাদতের কাহিনীও কুরআনে বিস্তারিত বর্ণনা করেননি। অথচ তিনি নবীগণের দা‘ওয়াতী পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, তিনি মানুষের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দিতে তাঁদের জীবন-চরিত ও প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। এর কারণ হচ্ছে, এই মুসলিম উম্মতকে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের জন্য পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণই তাদের আদর্শ, যাতে তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবমণ্ডলীর নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের পথনির্দেশ অনুযায়ী চলতে পারে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (2)) [الجمعة: 2]
‘তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তিলাওয়াত করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন‘কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল’ (সূরা আল-জুমুআ': ২)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَالْمُسْلِمِينَ) [فصلت: 33]
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যিনি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন, সৎকর্ম করেন এবং বলেন যে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩৩)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْهَدَى اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ (36)) [النحل: 36]
‘আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এমর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর ত্বাগূতকে। অতঃপর তাদের মধ্য হতে আল্লাহ কাউকে হেদায়াত দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য হতে কারো উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, মিথ্যাবাদীদের পরিণতি কীরূপ হয়েছে’ (সূরা আন-নাহল: ৩৬)।
আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দানের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়। আর তা হলো, এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা, যার কোন শরীক নেই। অতএব, দা‘ওয়াত সকল আমলের মূল। এর মাধ্যমে ফরয, সুন্নাত ও শিষ্টাচার জীবন পায় এবং এর মাধ্যমে দুনিয়ার সর্বত্র দ্বীন পুরোপুরি জীবিত থাকে। সুতরাং আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দান গুরু দায়িত্ব এবং আল্লাহর ইবাদত করা সর্ববৃহৎ কর্ম।
রাজার দায়িত্বের মতই দা‘ওয়াত দেয়া বড় দায়িত্বপূর্ণ কাজ। আর অন্যান্য কাজ রাজার নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবকদের কাজের মত। অনেক মানুষ সেবকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে, অথচ নবী-রাসূলগণের কাজ আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত প্রদান, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজ থেকে নিষেধ এবং মুসলিমদেরকে নছীহত প্রদানকে ছেড়ে দিয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ (33)) [فصلت: 33].
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যিনি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন, সৎকর্ম করেন এবং বলেন যে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩৩)।
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর দা‘ওয়াতী কাজ করা ওয়াজিব। প্রত্যেকে তার জ্ঞান ও সামর্থ অনুযায়ী দা‘ওয়াত দিবে, যাতে দ্বীন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় এবং আল্লাহর কালেমা সুউচ্চ হয়। সেজন্য, দা‘ওয়াত দান উম্মতের সকলের উপর আবশ্যক। অনুরূপভাবে, তা জাতির সকলের জন্য প্রয়োজনও বটে। কারণ দা‘ওয়াত দান হেদায়াত প্রাপ্তি, ঈমান বৃদ্ধি ও বেশি বেশি সৎ আমল করার বড় মাধ্যম।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ (108)) ... [يوسف: 108].
‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতর পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রব-ই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’ (সূরা আন-নাহল: ১২৫)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)।
وَعَنْ أبِي بَكْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ فِي حِجةِ الوَداعِ: « ..إنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأمْوَالَكُمْ، وَأعْرَاضَكُمْ، بَيْنَكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا، لِيُبَلِّغ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَإنَّ الشَّاهِدَ عَسَى أنْيُبَلِّغَ مَنْ هُوَ أوْعَى لَهُ مِنْهُ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (67) واللفظ له، ومسلم برقم (1679)
৪। আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় হজ্জের সময় বলেন: তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধনসম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়। কেননা, উপস্থিত ব্যক্তি সম্ভবত এমন ব্যক্তির নিকট পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার চেয়ে অধিক অনুধাবন করতে পারবে (ছহীহ বুখারী, হা/৬৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৭৯)।
وَعَنْ عَبْدِاللهِ بْنِ عَمْرو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلا حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ». أخرجه البخاري برقم (3461).
৫। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, যদি তা এক আয়াতও হয়। আর বানী ইসরাঈলের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে পারো, এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছে করে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে জাহান্নামকেই তার ঠিকানা বানিয়ে নিবে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১)।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا ِمنَ الْمُشْرِكِينَ (108)) [يوسف: 108]
‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী ব্যাপক অর্থবোধক যা স্থান-কাল পাত্রভেদে সবসময় প্রযোজ্য এবং আরব-অনারব, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, জাতি-বর্ণ, মালিক-ভৃত্য এবং ধনী-গরিব সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(هَذَا بَلَاغٌ لِلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوا بِهِ وَلِيَعْلَمُوا أَنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ (52)) [إبراهيم: 52]
‘ইহা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনি কেবল এক ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা ইব্রাহীম: ৫২)।
অতএব, সকল মানুষের জন্য দা‘ওয়াত দান ওয়াজিব। কেননা, দ্বীন ইসলাম সকল মানুষের জন্য। তাই মুসলিম হওয়ার পর মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উম্মত ও অনুসারী গণ্য হওয়ায় তাদেরদা‘ওয়াতী কাজ করা আবশ্যক।
৩। প্রত্যেকের উপর দায়িত্ব হলো তার যোগ্যতা অনুযায়ী দ্বীন প্রচার করা। আর দা‘ওয়াত দানের সর্বনিম্ন যোগ্যতা হলো একটি আয়াত অথবা একটি সুন্নাহ বা হাদীছ জানা। এরূপ যে জানবে, তার উপর আবশ্যক হলো তা পৌঁছে দেয়া।
৪। মুসলিম দু’প্রকার:
(ক) আলেম, যিনি নিজ উদ্যোগে হক্ব-দ্বীন প্রচার করেন এবং মানুষকে তার অনুসরণ করার জন্য আহবান করেন। যেমনটি মুমিন ফির‘আউনের দলবলের মুমিন ব্যক্তি বলেছিলেন:
(وَقَالَ الَّذِي آمَنَ يَاقَوْمِ اتَّبِعُونِ أَهْدِكُمْ سَبِيلَ الرَّشَادِ (38) يَاقَوْمِ إِنَّمَاهَذِهِ الْحَيَاةُالدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ (39)) [غافر: 38 - 39]
‘আর যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিল, সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার আনুগত্য কর; আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাব। (৩৮) ‘হে আমার সম্প্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল ক্ষণকালের ভোগ; আর নিশ্চয় আখেরাতই হল স্থায়ী আবাস’ (সূরা গফির:৩৮-৩৯)।
(খ) মুসলিম কিন্তু আলেম নন: তিনি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আলেমগণের অনুসরণ করার জন্য আহবান করবেন। যেমন- মহান আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইয়াসীনে জনৈক দাঈ সম্পর্কে বলেন:
(وَجَاءَ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَاقَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ (20) اتَّبِعُوا مَنْ لَا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُمْ مُهْتَدُونَ (21)) [يس:20 - 21].
‘আর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌঁড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলগণের অনুসরণ কর। (২০) তোমরা তাদের অনুসরণ কর, যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না আর তারা সৎপথপ্রাপ্ত’ (সূরা ইয়াসীন: ২০-২১)।
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত, দা‘ওয়াতী কাজ করা। আলেমগণ হক্বের দিকে দা‘ওয়াত দিবেন। আর যারা আলেম নন, তারা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সেসব আলেমের অনুসরণের দিকে আহবান করবেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত।
৫। যোগ্যতা অনুযায়ী আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়া প্রত্যেকের উপর ফরয। কেননা, তা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। ঠিক যেমন ছালাত আদায় করা প্রত্যেকের উপর ফরয। কেননা, সেটিও আল্লাহর নির্দেশ।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে ইবাদত ও দা‘ওয়াত উভয়ই মুসলিম জাতির সকলের উপর ফরয ছিল। অতঃপর আল্লাহর ইবাদত সকল মুসলিমের উপর ফরযগণ্য করা হলেও শুধুমাত্র কতিপয় মুসলিমের উপর দা‘ওয়াতী কাজ করা ফরয বলে গণ্য করা হয়। ফলে, খোদ ইবাদতই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানুষ দ্বীন থেকে বের হতে শুরু করে। আর এই উম্মতের শেষের দিকের মানুষকে ঠিক করতে পারে শুধুমাত্র সেই বিষয়, যা দ্বারা উম্মতের প্রথম দিকের মানুষ ঠিক হয়েছিল।
সুতরাং ইবাদত ও দা‘ওয়াতী কাজ উভয়ই এ উম্মতের প্রত্যেকের উপর ফরযে আইন।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (77)) [الحج: 77]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ‘ কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে’ (সূরা আল-হাজ্জ: ৭৭)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রব-ই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াত প্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’ (সূরা আন-নাহল: ১২৫)।
৬। উম্মতের প্রত্যেকের উপর কর্তব্য আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়া এবং তা প্রত্যেকের পালন করা প্রয়োজন। দা‘ওয়াত দানের মাধ্যমে হেদায়াত লাভ হয়, ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং মুমিনদের সংখ্যা বেড়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ ) [العنكبوت: 69]
‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন’ (সূরা আল-আনকাবূত: ৬৯)।
৭। দা‘ওয়াতী কাজ করা, ইবাদত করা, চরিত্রবান হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলিমকে সর্বাবস্থায় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا (21)) ... [الأحزاب: 21]
‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহর অনেক যিকর করে’ (সূরা আল-আহযাব: ২১)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِوَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ (158)) [الأعراف: 158].
‘বল, ‘হে মানুষ!আমি তোমাদের সবার নিকট আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত নিরক্ষর নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণী সমূহের প্রতি ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হেদায়াত লাভ করবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮)।
৮। বিভিন্ন জাতির মধ্যে থেকে আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে বাছাই করেছেন এবং তাদেরকে নবীগণের মুকুট পরিয়েছেন। আর তা হলো, আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়া, সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (সূরা আলে ইমরান: ১১০)।
৯। ঈমান ও বিধি-বিধান নাযিল হওয়ার মধ্যে সময়ের দূরত্ব আছে। কিন্তু ঈমান ও দা‘ওয়াতী কাজের মাঝে কোন সময়ের দূরত্ব নেই। কেননা, নবীগণের মতই দা‘ওয়াতী কাজের জন্য এ জাতি প্রেরিত হয়েছে।
প্রথম সারির ছাহাবীগণ শুরু থেকেই দা‘ওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেক নবীই তার উম্মতকে প্রথমে ঈমান শিক্ষা দিতেন, অতঃপর বিধি-বিধান শিখাতেন।
আর মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আল্লাহ তা‘আলা তার উম্মতকে প্রথমে ঈমান শিক্ষা দেয়ার, তারপর দা‘ওয়াতী কাজ করার, তারপর বিধি-বিধান শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা মদীনায় অবতীর্ণ হয়। কেননা, নবীগণের আদর্শের উপর এ মুসলিম জাতি প্রেরিত হয়েছে।
১০। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সর্বত্র হক্ব প্রচারের জন্য আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যেমন আলোকিত করার জন্য সূর্য, বৃষ্টি বর্ষণের জন্য মেঘমালা এবং উদ্ভিদ উৎপন্ন করার জন্য যমীনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এ তিনটিই তাদের আমানত যথারীতি রক্ষা করে চলেছে। সেজন্যই, সৃষ্টির দুনিয়াবী যিন্দেগী ঠিকমত চলছে। আমরাও যদি মানবতার নিকট আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের আমানত পৌঁছে দেই, তাহলে তাদের ইহকাল ও পরকাল সুন্দর হবে।
আলো, পানি ও উদ্ভিদ যেমন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য, তেমনি হক্ব, কুরআন ও ইসলামও সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। মহান আল্লাহ বলেন:
(هَذَا بَلَاغٌ لِلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوا بِهِ وَلِيَعْلَمُوا أَنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ (52)) [إبراهيم: 52]
‘ইহা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনি কেবল এক ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে’(সূরা ইব্রাহীম:৫২)।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ (33)) [فصلت: 33]
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যিনি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন, সৎকর্ম করেন এবং বলেন যে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩৩)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ )[العنكبوت: 69]
‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন’ (সূরা আল-আনকাবূত: ৬৯)।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَىهُدىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْشَيْئاً». أخرجه مسلم برقم (2674)
৪। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হেদায়াতের দিকে ডাকে, তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকে, তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে।এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকাও হবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪)।
وَعَنْ سَهْل بن سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ لِعَلِيِّ بْنِ أبِي طَالِبٍيَوْمَ خَيْبَرَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلامِ، وَأخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ فِيهِ، فَوَاللهِ لأنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (4210) , ومسلم برقم (2406)
৫। সাহল ইবনু সা‘দ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলী ইবনু আবী ত্বালেব (রা.) কে খায়বারের দিন বললেন: তুমি বর্তমান অবস্থায় তাদের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে হাজির হও, এরপর তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহবান করো এবং তাদের উপর আল্লাহর যে অধিকার, সে সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত কর। আল্লাহর কসম! তোমার দা‘ওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ যদি একজন মাত্র মানুষকেও হেদায়াত দেন, তাহলে তা তোমার জন্য লাল রঙ্গের (মূল্যবান) উটের চেয়েও উত্তম’(ছহীহ বুখারী, হা/৮২১০; ছহীহ মুসলিম, হা/৬২৪০)।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পদ্ধতিতে যে-ই দা‘ওয়াতী কাজ করবে, মহান আল্লাহ তাদের প্রত্যেককেই মহা প্রতিদান ও প্রতিফল দিয়ে সম্মানিত করবেন। দা‘ওয়াতের কারণে দাঈর হেদায়াত, দ্বীনের উপর অবিচলতা, ঈমান বৃদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধি, বিভিন্নমুখী প্রচুর আমল এবং পূর্ণ বিশ্বাস লাভ হয়। মানুষদের মধ্যে যাদেরকে তিনি দা‘ওয়াত দিবেন, তাদের সংখ্যা অনুযায়ী তার নেকী অর্জিত হয়। তার কারণে যারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে, তাদের নেকী সমপরিমাণ নেকী তিনিও পান। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের কারণে প্রত্যেক দাঈকে যা কিছু দ্বারা আল্লাহ সম্মানিত করেন, সেগুলির কয়েকটি নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
- সম্মান প্রাপ্তির কোন কারণ তার কাছে না থাকলেও মহান আল্লাহ তা‘আলা তাকে দা‘ওয়াতের কারণে সম্মান দান করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বিলাল (রা.) ও সালমান (রা.) কে সম্মানিত করেছিলেন।
- আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনের সকল আমল তার কাছে প্রিয় করে দিবেন। ফলে, সেগুলি তিনি নিজে যেমন আমল করবেন, তেমনি অন্যকেও সেগুলির দিকে দা‘ওয়াত দিবেন।
- সৃষ্টির হৃদয়ে তার প্রতি ভালবাসা, ভক্তি ও সম্মান তৈরি করে দিবেন।
- তার চতুষ্পার্শ্বের বাতিল শক্তিকে পরাস্ত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা তার অদৃশ্য সাহায্য দ্বারা তাকে শক্তিশালী করবেন। তিনি তার দো‘আ কবূল করবেন এবং আখেরাতে তাকে জান্নাত দান করবেন।
সুতরাং দা‘ওয়াতী কাজ সকল উত্তম কাজ, সব ধরনের নেকী এবং সব ধরনের মর্যাদাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দানের গুরুত্ব বিবেচনায় স্বয়ং আল্লাহ দা‘ওয়াত দিয়েছেন, তার রাসূলগণকে দা‘ওয়াতী কাজের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং দা‘ওয়াতী কাজের ভার দিয়ে এই উম্মতের উপর অনুগ্রহ করেছেন।
১। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ) [يونس: 25]
‘আর আল্লাহ তা‘আলা শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দেন সরল পথের দিকে’ (সূরা ইউনুস: ২৫)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ (33)) [فصلت: 33]
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যিনি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন, সৎকর্ম করেন এবং বলেন যে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩৩)।
ইবাদতের জন্য যেমন মূলনীতি আছে, তেমনি দা‘ওয়াতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি রয়েছে। নিম্নে সেগুলি বর্ণনা করা হলো:
১। আল্লাহ তা‘আলার জন্য একনিষ্ঠভাবে আমল করা এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পদ্ধতিতে দা‘ওয়াতী কাজ করা।
২। হিকমাত-কৌশল, উত্তম উপদেশ, সুন্দর কথা, ভাল আমল এবং মানুষের মর্যাদা বজায় রেখে দা‘ওয়াত দেয়া।
৩। গ্রাম-শহর, হাট-বাজার, বাড়ি-ঘরসর্বত্রই দা‘ওয়াত দেয়া।
৪। দিন-রাত্রি সর্বদাই দা‘ওয়াতী কাজ করা। ছালাতে আদায় ওছিয়াম পালনকরার সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কিন্তু দা‘ওয়াতী কাজ সব সময় ও সব জায়গায় করাই শরী‘আত সম্মত।
৫। নিরাপত্তা-ভীতি, সহজ-কঠিন, সচ্ছলতা-দরিদ্রতা সর্বাবস্থায়ই দা‘ওয়াতী কাজ করা।
৬। দা‘ওয়াতী কাজের বিনিময় গ্রহণ না করা। কেননা, আল্লাহ তা‘আলাই দাঈকে পুরস্কৃত করবেন।
৭। উদারতার সাথে দা‘ওয়াতী কাজ করা। মানুষের নিকট দা‘ওয়াতী কাজের বিনিময় না চাওয়া। যেমন-সূর্যের কাজ বিনিময় ছাড়া আলো বিকিরণ করা, যা থেকে মানুষসহ সব কিছুই উপকৃত হয়।
৮। জীবন চলার পথে, গোপনে, প্রকাশ্যে সবক্ষেত্রে দাঈ হবে মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ।
৯। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, কোমলতা, দয়া, বিনম্রতা, হেদায়াতের জন্য দু‘আ করা ও কাউকে অবহেলা না করা ইত্যাদি গুণাবলীর মাধ্যমে দ্বীনের দা‘ওয়াত দেয়া। আর সব ধরণের বিপদাপদেধৈর্য ধারণ করা।
আর দা‘ওয়াতের বড় মূলনীতি হলো:
- মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদ, তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও শরীকবিহীন আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া।
- দৃশ্যমান কোন কিছুর প্রভাব ও কর্তৃত্ব নাকচ করা, অদৃশ্য বিষয়াদি বিশ্বাস করা, সৃষ্টিকে ডিঙ্গিয়ে স্রষ্টার শরণাপন্ন হওয়া, আকৃতিকে ডিঙ্গিয়ে আকৃতিদাতার শরণাপন্ন হওয়া।
- সর্বক্ষেত্রে যাবতীয় পথ পরিহার করে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পথ অনুসরণ করা। মানুষকে দুনিয়া থেকে আখেরাতমুখী করা। যাবতীয় প্রথা ও প্রচলন ছেড়ে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুসরণ করা, অবৈধসম্পদ অর্জন ও কু-প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ না করে ঈমান ও সৎ আমল পূর্ণ করা।
- নিজের প্রিয় বস্ত্তর চেয়ে রবের প্রিয় বস্ত্তকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং দ্বীনের পথে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাড়া অন্য কারো প্রচেষ্টা ছেড়ে তাঁর প্রচেষ্টা অনুসরণ করা।
- কেউ এসব মূলনীতি অনুসরণ করে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দিলে তিনি নানা পরীক্ষা ও কষ্টের সম্মুখীন হবেন। সুতরাং তার উচিত ধৈর্য ধারণ করা, মার্জনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, কোমল আচরণ করা এবং কঠোর ও কর্কশ না হওয়া-যাতে তারা বিমুখ না হয়।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ (125)) ... [النحل: 125]
‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতর পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রব-ই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’(সূরা আন-নাহল: ১২৫)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْحَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ (159)) ... [آل عمران: 159]
‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন’(সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَايُوقِنُونَ (60)) [الروم: 60].
‘অতএব, তুমি সবর কর। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা হক। আরযারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না, তারা যেন তোমাকে অস্থির করতে না পারে’(সূরা আর-রূম: ৬০)।
তিনটি বিষয় আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন:
- আল্লাহর দিকে আহবান করা
- আল্লাহর কাছে পৌঁছার রাস্তা সম্পর্কে অবহিত করা ও
- আল্লাহর নিকট পৌঁছার পর মানুষের যা ঘটবে, সে সম্পর্কে অবহিত করা।
প্রথমটিই হচ্ছে, আল্লাহর একত্ব (তাওহীদ) ও তার প্রতি বিশ্বাস (ঈমান) সম্পর্কে বর্ণনা করা।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, শরী‘আতের বিধি-বিধান বর্ণনা করা।
তৃতীয়টি হচ্ছে, আখেরাত এবং আখেরাতে শান্তি-শাস্তি, জান্নাত-জাহান্নাম যা কিছু ঘটবে, তদ্বিষয়ের বর্ণনা দেওয়া।
বিস্তারিত বর্ণনা
১। প্রথমতঃ মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা, তার নামসমূহ, গুণাবলী ও কার্যাদি, তার মহানত্ব, ক্ষমতা ও সৃষ্টির প্রতি দয়া সম্পর্কে পরিচয় দানের মাধ্যমে তার দিকে দা‘ওয়াত দিতে হবে। অতএব, আমরা মানুষের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করবো যে,আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র মহান-যাতে তারা আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করে। তিনিই একমাত্র বড়, যাতে তারা তার বড়ত্ব ঘোষণা করে। তিনিই একমাত্র সর্বশক্তিমান, যাতে তারা তাকে ভয় করে। তিনিই একমাত্র মহামহিম, যাতে তারা তাকে ভালবাসে। তিনিই একমাত্র দাতা, যাতে তারা তার কাছেই চায়। তার ভাণ্ডার পরিপূর্ণ, যাতে তারা শুধুমাত্র তার দরজায় দাঁড়ায়।
তাদেরকে আমরা আরো বর্ণনা করবো যে, পবিত্র আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র স্রষ্টা আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই সৃষ্ট। তিনিই একমাত্র মালিক আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই তার মালিকানাধীন। তিনিই কেবল রিযিক্বদাতা আর তিনি ছাড়া সবাই রিযিক্বপ্রাপ্ত। একমাত্র তিনিই অমুখাপেক্ষী আর তিনি ব্যতীত সবকিছুই তার মুখাপেক্ষী।
আমরা আরো বর্ণনা করবো যে, সবকিছু শুধুমাত্র তার হাতে এবং তিনি ছাড়া কারো হাতে কিছুই নেই। সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব তারই এবং তার জন্যই রাজত্ব ও প্রশংসা। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আমরা মানুষদেরকে আরো বলবো যে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র ইবাদতের উপযুক্ত। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। যখন মানুষ আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ ও গুণাবলীর পরিপূর্ণতা, তার মহানত্ব ও ক্ষমতার পরিপূর্ণতা, তার রহমত ও জ্ঞানের প্রশস্ততা, তার নিদর্শনাবলী ও সৃষ্টিজগতের বিশালতা এবং তার নেয়ামতসমূহের প্রতুলতা সম্পর্কে জানবে, তখনই তারা তার প্রতি ঈমান আনবে, তার মহানত্ব বর্ণনা করবে, তাকে ভালবাসবে এবং তার আনুগত্য ও ইবাদতে ঝাপিয়ে পড়বে।
এরপর আমরা ঈমানের অন্যান্য রুকন বর্ণনা করবো। যেমন-ফেরেশতামণ্ডলী, আসমানী কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনা; এতে গায়েবের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হবে।
এগুলো হলো দা‘ওয়াতী কাজের সর্বপ্রথম, সুউচ্চ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ) [فصلت: 33]
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম,যিনি আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন, সৎকর্ম করেন এবং বলেন যে, অবশ্যই ‘আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩৩)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ(22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (24)) [الحشر: 2 - 24]
‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞাতা; তিনিই পরম করণাময়, দয়ালু। (২২) তিনিই আল্লাহ; যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে, তা হতে পবিত্র মহান। (২৩) তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও যমীনে যা আছে, সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশারী, প্রজ্ঞাময়’(সূরা আল-হাশর: ২২-২৪)।
(৩)আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ (19)) [محمد: 19]
‘অতএব, জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯)।
২। অতঃপর আখেরাত ও তাতে যা কিছু ঘটবে তার মাধ্যমে দা‘ওয়াত দিতে হবে। যেমন-পুনরুত্থান, হাশর (ক্বিয়ামতের দিন একত্রিত হওয়া), পুলছিরাত, মীযান (দাঁড়িপাল্লা), জান্নাত ও জাহান্নাম; যাতে মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তার আনুগত্যে আগ্রহী হয় এবং কুফরী ও অবাধ্যতা ছেড়ে দেয়। আর যেন তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করে।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَتَفَرَّقُونَ (14) فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ (15) وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ فَأُولَئِكَ فِي الْعَذَابِ مُحْضَرُونَ (16)) [الروم: 14 - 16]
‘আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে. সেদিন তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। (১৪) অতএব, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে পরিতুষ্ট করা হবে। (১৫) আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাদেরকেই আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে’(সূরা আর-রূম: ১৪-১৬)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِأَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ) [التوبة: 72]
‘আল্লাহ মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহা সফলতা’ (সূরা আত-তাওবা: ৭২)।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا هِيَ حَسْبُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ (68)) ... [التوبة: 68].
‘আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটি তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের লা‘নত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব’ (সূরা আত-তাওবা: ৬৮)।
৩। অতঃপর দ্বীন ও শরী‘আতের বিধি-বিধান বর্ণনা করা, হালাল-হারাম, ফরয-সুন্নাত, ইবাদত ও লেন-দেন, অধিকার ও দণ্ডবিধি বর্ণনা করার মাধ্যমে দা‘ওয়াতী কাজ করা। দা‘ওয়াতী কাজে এটিই ছিল নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশনা।
মক্কায় দা‘ওয়াতী কাজ ছিল আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহবান করা এবং পরকাল ও উত্তম চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করা। আর রাসূলগণ ও তাদের জাতির অবস্থা বর্ণনা করা।
অতঃপর মদীনায় আল্লাহ তা‘আলা শরী‘আতের বিধি-বিধানের মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা দান করেন। ফলে, যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছিলেন, তারা সেগুলি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কাফের ও মুনাফিকরা দ্বীন ইসলামের মাধ্যমে পরাস্ত হয়েছে। অতঃপর মানুষেরা দলেদলে দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং দ্বীন পরিপূর্ণ হয়েছে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا) [المائدة: 3]
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম আরতোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে’ (সূরা আল-মায়েদা: ৩)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ (1) وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا (2) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (3)) [النصر:1 - 3].
‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে (১) এবং তুমি লোকদেরকে দলে দলে আল্লাহর দীনে দাখিল হতে দেখবে, (২) তখন তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী’ (সূরা আন-নাছর: ১-৩)।
দাঈ মানুষের নিকট নিম্নোক্ত হক্ব দায়িত্ব নিয়ে উপস্থিত হবে:
- শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে এবং পর্যায়ক্রমেদা‘ওয়াতী কাজে অগ্রসর হবে
- সহজ করবে ও সুসংবাদ দিবে
- বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে ও কোমল আচরণ করবে
- ভালবাসা ও দয়া প্রদর্শন করবে
- হাসিমুখে কথা বলবে ও আন্তরিকতা বজায় রাখবে
- আহবান করবে ও দু‘আ করবে
- আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে
- সম্মান ও বিনম্রতা বজায় রাখবে
- ধৈর্য ধারণ করবে ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করবে
- সু-ধারণা করবে। কেননা, কু-ধারণার মাধ্যমে নয়টি খারাপ ও ক্ষতিকর বিষয়ের উদ্ভব ঘটে। সেগুলি হলো: গোয়েন্দাগিরী, অতঃপর সন্দেহ, অতঃপর গীবত, অতঃপর চোগলখোরী, অতঃপর বিদ্বেষভাব পোষণ, অতঃপর শত্রুতা, অতঃপর সম্পর্কছিন্ন, অতঃপর অন্যের পিছে লেগে থাকা।
- আমরা মানুষের যথাযথ প্রশংসা করে আন্তরিকতা সৃষ্টি করব। তাদের ভাল বিষয়সমূহ আলোচনা করব, তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিব, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখব। তাদের পছন্দনীয় বৈধ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিব। ফলে তারা আমাদেরকে ভালবাসবে, আমাদের কথা শুনবে, তারা আমাদের উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে, সর্বোপরি আমাদের দ্বীনি ব্যাপারে আগ্রহী হবে। অতঃপর আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হবে।
- অতঃপর আমরা তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার মহানত্ব, তার নামসমুহ ও গুণাবলীর মহানত্ব ওমর্যাদা বর্ণনা করব, যাতে তারা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে।
- অতঃপর আমরা আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত এবং তার বান্দাদের উপর তার অনুগ্রহ বিশেষ করে এই দ্বীনের মাধ্যমে তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তা বর্ণনা করব-যাতে তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ও তার আনুগত্য করে। তা হলে আল্লাহ তাদের প্রতি তার অনুগ্রহ বাড়িয়ে দিবেন।
- অতঃপর আমরা তাদেরকে ইবাদত, সৃষ্টি, নামসমূহ ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার আহবান জানাব। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একক আনুগত্যের আহবান জানাব। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবংতার রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাড়া প্রকৃত কোন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব নেই।
- অতঃপর আমরা রবের নিকট মানুষের মুখাপেক্ষীতা ও তাদের দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করব- যাতে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হয়।
- অতঃপর ঈমান, সৎচরিত্র ও সৎ আমলের ফযীলত বর্ণনা করব।
- তারপর জান্নাত ও তার স্থায়ী নেয়ামত, যা আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন, সে সম্পর্কে আমরা তাদেরকে বর্ণনা করব। আর কাফেরদের জন্য জাহান্নাম এবং এর মধ্যে যে শাস্তি আল্লাহ প্রস্ত্তত করে রেখেছেন, তার কথা বর্ণনা করব।
এসব বিষয় মানুষ যখন জানবে, তখন তাদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হবে, আগ্রহ সৃষ্টি হবে দ্বীনের উপর আমল করার এবং দা‘ওয়াতী কাজ করার। পাশাপাশি এসব বিষয়ে তাদের ধৈর্য ধারণ করা সহজ হবে।
- দ্বীন প্রচার ও আল্লাহর কালিমা উড্ডীনের নিমিত্তে আমরা আমাদের সবকিছু ব্যয় করব। হক্ব প্রচারের জন্য আমরা আমাদের জীবন, ধন-সম্পদ, সময়, পরিবার-পরিজন, ঘর-বাড়ি, ইচ্ছা-আকাঙ্খাসহ সবকিছু উৎসর্গ করব; ঠিক যেমনটি করেছিলেন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম। অবশেষে আল্লাহ তার দ্বীনকে বিজয়ী করেছিলেন। এভাবে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি, দুনিয়ায় শান্তি এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারব।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (100)) ... [التوبة: 100].
‘আর মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে স্থায়ী থাকবে। এটাই মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তাওবা: ১০০)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُولَئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ(88) أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ(89)) [التوبة: 88 - 89].
‘কিন্তু রাসূল ও তার সাথে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে, আর সে সব লোকদের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (৮৮) আল্লাহ তাদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাতসমূহ, যার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটিই মহা সফলতা’ (সূরা আত-তাওবা: ৮৮-৮৯)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ ) [آل عمران: 159]
‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।
৪। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ (102)) ... [الأنعام: 102]
‘তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। তিনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর তত্ত্বাবধায়ক’ (সূরা আল-আন‘আম: ১০২)।
৫। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا (21)) ... [الأحزاب: 21]
‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহর অনেক যিকর করে’ (সূরা আল-আহযাব: ২১)।
চিন্তা-চেতনা, আমল ও সময়ের সমন্বয়ে ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন। প্রত্যেকটি ইবাদতের নির্দিষ্ট সময় ও উপলক্ষ্য রয়েছেএবং এর রয়েছে শুরু ও শেষ। যেমন-ছালাত, ছিয়াম, হাজ্জ ইত্যাদি। ।
কিন্তু আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দান সর্বদা, সর্বাবস্থায় ও সব জায়গায় চালু থাকবে। মুসলিমদের কর্তব্য হলো, এমনভাবে তাদের সময় কাটানো, ঠিক যেমনভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাটিয়েছেন- যাতে তারা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে গণ্য হতে পারে, যেমনটি ছাহাবায়ে কেরাম করেছিলেন।
সুতরাং তারা আল্লাহ তা‘আলার ফরযসমূহ পালন করবে। সর্বাবস্থায় তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলবে।
জীবিকা নির্বাহ ও উপার্জনের জন্য অল্প কিছু সময় ব্যয় করবে। আর অধিকাংশ সময় দা‘ওয়াতী কাজে ব্যয় করবে, যাতে মানুষ এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে, যার কোন শরীক নেই।
সময় পেলে অথবা যাকে সে দা‘ওয়াত দিতে চায়, তাকে দা‘ওয়াত দেওয়া কঠিন হলে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত থাকবে অথবা মুসলিমদেরকে দ্বীনের বিধি-বিধান শিক্ষা দিবে। যাতে তারা জ্ঞান শিক্ষা করে নিজেদের ও অন্যদের অজ্ঞতা দূর করতে পারে।
আর সময়পেলে অথবা দ্বীন শিক্ষা দেয়া অথবা জ্ঞানার্জন করা কঠিন হলে তার মুসলিম ভাইদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। তাদের প্রয়োজনের দিকে নজর রাখবে। সৃষ্টির প্রতি সদয় হবে এবং ভাল ও তাক্বওয়ার (আল্লাহ ভীতি) কাজে সহযোগিতা করবে।
সময় হলে বা উপরের কাজগুলো করা সম্ভব না হলে নফল ইবাদত করবে। যেমন-সাধারণ সুন্নাত আদায় করা, যিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা। এরূপ অন্যান্য আমল ও সৎকাজ করা।
তবে, সর্বদা এমন কাজকে অগ্রাধিকার দিবে, যার উপকারিতা মুসলিম ও অন্যান্যদের জন্য তুলনামূলক বেশী ব্যাপক। সুতরাং মুসলিমরা নিজেদের ও অন্যদের সংশোধনের জন্য সর্বদা ব্যস্তথাকবে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَاللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ (108)) [يوسف: 108].
‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا (103)) ... [النساء: 103]
‘নিশ্চয় ছালাত ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয’ (সূরা আন-নিসা: ১০৩)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ (79)) [آل عمران: 79].
‘বরং তিনি বলবেন, তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’ (সূরা আলে ইমরান: ৭৯)।
৪। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ ) [القصص: 77]
‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখেরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’ (সূরা আল-ক্বছাছ: ৭৭)।
৫। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)) [العصر: 1 - 3].
‘মহাকালের শপথ, (১) মানুষ অবশ্যই ক্ষতিতে আছে। (২) তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়’(সূরা আল-আছর:১-৩)।