লগইন করুন
ইবাদতের জন্য যেমন মূলনীতি আছে, তেমনি দা‘ওয়াতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি রয়েছে। নিম্নে সেগুলি বর্ণনা করা হলো:
১। আল্লাহ তা‘আলার জন্য একনিষ্ঠভাবে আমল করা এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পদ্ধতিতে দা‘ওয়াতী কাজ করা।
২। হিকমাত-কৌশল, উত্তম উপদেশ, সুন্দর কথা, ভাল আমল এবং মানুষের মর্যাদা বজায় রেখে দা‘ওয়াত দেয়া।
৩। গ্রাম-শহর, হাট-বাজার, বাড়ি-ঘরসর্বত্রই দা‘ওয়াত দেয়া।
৪। দিন-রাত্রি সর্বদাই দা‘ওয়াতী কাজ করা। ছালাতে আদায় ওছিয়াম পালনকরার সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কিন্তু দা‘ওয়াতী কাজ সব সময় ও সব জায়গায় করাই শরী‘আত সম্মত।
৫। নিরাপত্তা-ভীতি, সহজ-কঠিন, সচ্ছলতা-দরিদ্রতা সর্বাবস্থায়ই দা‘ওয়াতী কাজ করা।
৬। দা‘ওয়াতী কাজের বিনিময় গ্রহণ না করা। কেননা, আল্লাহ তা‘আলাই দাঈকে পুরস্কৃত করবেন।
৭। উদারতার সাথে দা‘ওয়াতী কাজ করা। মানুষের নিকট দা‘ওয়াতী কাজের বিনিময় না চাওয়া। যেমন-সূর্যের কাজ বিনিময় ছাড়া আলো বিকিরণ করা, যা থেকে মানুষসহ সব কিছুই উপকৃত হয়।
৮। জীবন চলার পথে, গোপনে, প্রকাশ্যে সবক্ষেত্রে দাঈ হবে মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ।
৯। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, কোমলতা, দয়া, বিনম্রতা, হেদায়াতের জন্য দু‘আ করা ও কাউকে অবহেলা না করা ইত্যাদি গুণাবলীর মাধ্যমে দ্বীনের দা‘ওয়াত দেয়া। আর সব ধরণের বিপদাপদেধৈর্য ধারণ করা।
আর দা‘ওয়াতের বড় মূলনীতি হলো:
- মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদ, তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও শরীকবিহীন আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া।
- দৃশ্যমান কোন কিছুর প্রভাব ও কর্তৃত্ব নাকচ করা, অদৃশ্য বিষয়াদি বিশ্বাস করা, সৃষ্টিকে ডিঙ্গিয়ে স্রষ্টার শরণাপন্ন হওয়া, আকৃতিকে ডিঙ্গিয়ে আকৃতিদাতার শরণাপন্ন হওয়া।
- সর্বক্ষেত্রে যাবতীয় পথ পরিহার করে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পথ অনুসরণ করা। মানুষকে দুনিয়া থেকে আখেরাতমুখী করা। যাবতীয় প্রথা ও প্রচলন ছেড়ে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুসরণ করা, অবৈধসম্পদ অর্জন ও কু-প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ না করে ঈমান ও সৎ আমল পূর্ণ করা।
- নিজের প্রিয় বস্ত্তর চেয়ে রবের প্রিয় বস্ত্তকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং দ্বীনের পথে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাড়া অন্য কারো প্রচেষ্টা ছেড়ে তাঁর প্রচেষ্টা অনুসরণ করা।
- কেউ এসব মূলনীতি অনুসরণ করে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দিলে তিনি নানা পরীক্ষা ও কষ্টের সম্মুখীন হবেন। সুতরাং তার উচিত ধৈর্য ধারণ করা, মার্জনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, কোমল আচরণ করা এবং কঠোর ও কর্কশ না হওয়া-যাতে তারা বিমুখ না হয়।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ (125)) ... [النحل: 125]
‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতর পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রব-ই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’(সূরা আন-নাহল: ১২৫)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْحَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ (159)) ... [آل عمران: 159]
‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন’(সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَايُوقِنُونَ (60)) [الروم: 60].
‘অতএব, তুমি সবর কর। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা হক। আরযারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না, তারা যেন তোমাকে অস্থির করতে না পারে’(সূরা আর-রূম: ৬০)।