(ক) খানাপিনা সহ সকল শুভ কাজের শুরুতে বলবে- بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি)।[15]
(খ) শেষে বলবে- اَلْحَمْدُ ِللهِ ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।[16]
(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা বিসমিল্লাহ বল, যখন তোমরা দরজা-জানালা বন্ধ কর অথবা কোন খাদ্য ও পানীয়ের পাত্রে ঢাকনা দাও। যদি ঢাকনা দেওয়ার কিছু না পাও, তাহ’লে পাত্রের উপর কোন কাঠি বা কাষ্ঠখন্ড রেখে দাও। যার ফলে তা অনিষ্ট হ’তে নিরাপদ থাকবে। [17]
উল্লেখ্য যে, কোন অন্যায় কাজের শুরুতে ও শেষে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ বলা যাবে না বা আল্লাহর সাহায্য চাওয়া যাবে না। কেননা এগুলি শয়তানের কাজ। আর আল্লাহর অনুগ্রহ কেবল ন্যায় ও সৎ কাজের সাথে থাকে।
২.
(ক) মঙ্গলজনক কিছু দেখলে বা শুনলে বলবে,اَلْحَمْدُ ِللهِ‘আলহামদুলিল্লা-হ’
(খ) পসন্দনীয় কিছু দেখলে বা শুনলে বলবে,اَلْحَمْدُ ِللهِ الَّذِيْ بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‘আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী বিনি‘মাতিহি তাতিম্মুছ ছা-লিহা-ত’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যার অনুগ্রহে সকল শুভ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে)।
(গ) অপছন্দনীয় কিছু দেখলে বা শুনলে বলবে, اَلْحَمْدُ للهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ ‘আলহামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লে হা-ল’ (সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা)।[18]
(ঘ) বিস্ময়কর কিছু দেখলে বা শুনলে বলবে, سُبْحَانَ اللهِ ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ (মহাপবিত্র তুমি হে আল্লাহ!)। অথবা বলবে,اَللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়)।[19]
(ঙ) ভয়ের কারণ ঘটলে বলবে, لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)।[20] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ ِللهِ ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহামদুলিল্লা-হ’ এ দু’টি বাক্য আসমান ও যমীনের মধ্যের ফাঁকা স্থানকে ছওয়াবে পূর্ণ করে দেয়। اَلْحَمْدُ ِِللهِ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ মীযানের পাল্লাকে ছওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয়। [21]
৩. দুঃখজনক কিছু দেখলে, ঘটলে বা শুনলে বলবে,
(ক) إِنَّا ِللهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ ‘ইন্না লিল্লা-হে ওয়া ইন্না ইলাইহে রা-জে’উন’ (আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী)।
(খ) অতঃপর নিজের ব্যাপারে হ’লে বলবে, اَللَّهُمَّ أَجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا-
‘আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুছীবাতী ওয়া আখলিফলী খায়রাম মিনহা’ (হে আল্লাহ! এই বিপদে তুমি আমাকে আশ্রয় দাও এবং আমাকে এর উত্তম বিনিময় দান কর)।[22] যদি বিপদ সর্বাত্মক হয়, তাহ’লে ‘নী’ (نِىْ)-এর স্থলে ‘না’ (نَا) বলবে।
[16] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৯৯, ৪২০০, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১।
[17] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৯৪-৯৬, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, অনুচ্ছেদ-৫।
[18] . ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৩, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৩, অনুচ্ছেদ-৫৫; হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৫।
[19] . বুখারী হা/৬২১৮-১৯, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৭৮, ১২১ অনুচ্ছেদ; ঐ, হা/৪৭৪১, ‘তাফসীর’ অধ্যায় সূরা হজ্জ (২২), অনুচ্ছেদ-১।
[20] . বুখারী হা/৩৫৯৮, ‘মর্যাদা সমূহ’ অধ্যায়-৬১, ‘নবুঅতের আলামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২৫।
[21] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮১, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।
[22] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৮, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩।
(ক) হাঁচি দিলে বলবে, اَلْحَمْدُ ِللهِ ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ (আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা)। অথবা বলবে, اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘আলহামদুলিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’ (বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা)। [23] অথবা বলবে, اَلْحَمْدُ ِللهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ ‘আলহামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লে হা-ল’ (সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা)।[24]
(খ) হাঁচির জবাবে বলবে, يَرْحَمُكَ اللهُ ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন)।
(গ) হাঁচির জবাব শুনে বলবে, يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ‘ইয়াহদীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউছলিহু বা-লাকুম’ (আল্লাহ আপনাকে (বা আপনাদেরকে) হেদায়াত করুন এবং আপনার (বা আপনাদের) সংশোধন করুন)।[25] অথবা বলবে, يَغْفِرُ اللهُ لِىْ وَلَكُمْ ‘ইয়াগফিরুল্লা-হু লী ওয়া লাকুম’ (আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে (বা আপনাদেরকে) ক্ষমা করুন)।[26]
(ঘ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি কেউ হাঁচির পরে ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ না বলে, তাহ’লে তুমি তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলো না। [27]
(ঙ) যদি কোন অমুসলিম হাঁচি দেয়, তখন কোন মুসলিম তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলবে না। কেবল তাকে ‘ ইয়াহদীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউছলিহু বা-লাকুম’ বলবে।[28]
(চ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ হাঁচি পসন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় এবং ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলে, তখন যে মুসলিম তা শুনে, তার উপরে কর্তব্য হয়ে যায় ঐ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলে দো‘আ করা। তিনি বলেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। অতএব যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে, তখন সে যেন সাধ্যপক্ষে তা চাপা দেয়। কেননা তোমাদের কেউ হাই তুললে ও ‘হা’ করে মুখ খুলে শব্দ করলে শয়তান হাসে। [29] তিনি একথাও বলেছেন যে, তোমাদের যখন হাই আসে, তখন মুখে হাত দিয়ে তা চেপে রাখবে। নইলে শয়তান সেখানে ঢুকে পড়বে।[30]
(ছ) ছালাতের মধ্যে হাঁচি আসলে ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা যাবে। কিন্তু তার জওয়াবে মুখে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলা যাবে না। [31]
[24] . তিরমিযী, দারেমী, হাকেম, মিশকাত হা/৪৭৩৯, ৪৭৪৪, অধ্যায়-২৫, অনুচ্ছেদ-৬।
[25] . বুখারী, মিশকাত হা/৪৭৩৩, অধ্যায়-২৫, অনুচ্ছেদ-৬।
[26] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৭৪১।
[27] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৩৫।
[28] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৭৪০।
[29] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৩২, অধ্যায়-২৫, অনুচ্ছেদ-৬।
[30] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৩৭। উল্লেখ্য যে, এ সময় ‘লা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ বলার কোন প্রমাণ নেই।
[31] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯৯২; মুসলিম, মিশকাত হা/৯৭৮।
ইসলামে সম্ভাষণ রীতি হ’ল পরস্পরকে সালাম করা। ‘সালাম’ অর্থ ‘শান্তি’। আল্লাহর অপর নাম ‘সালাম’। জান্নাতকে বলা হয় ‘দারুস সালাম’ (শান্তির গৃহ)। ইসলাম শব্দের মাদ্দাহ হ’ল ‘সালাম’। ইসলামের অনুসারীকে বলা হয় মুসলিম বা মুসলমান। অতএব মুসলমানের জীবন ও সমাজ ‘সালাম’ তথা শান্তি দ্বারা পূর্ণ। তার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হ’ল পরকালে দারুস সালামে প্রবেশ করা। অতএব মুসলিম সমাজে কেবলই থাকে সালাম আর সালাম অর্থাৎ শান্তি আর শান্তি। এই সম্ভাষণ দ্বারা মুসলমান তার পক্ষ হ’তে আগন্তুক ব্যক্তিকে শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা বেশী বেশী সালাম কর। চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম কর। আরোহী পায়ে হাঁটা লোককে সালাম দিবে। কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দিবে। ছোটরা বড়দের সালাম দিবে। দলের পক্ষ থেকে একজন সালাম বা সালামের জবাব দিলে চলবে।[32] কোন গাছ, দেওয়াল বা পাথরের আড়াল পেরিয়ে দেখা হ’লে পুনরায় পরস্পরে সালাম দিবে।[33] কোন মজলিসে প্রবেশকালে ও বসার সময় এবং উঠে যাওয়ার সময় সালাম দিবে।[34] তিনি বলেন, আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যিনি প্রথমে সালাম দেন’।[35] কোন সম্মানী ব্যক্তিকে এগিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানানো মুস্তাহাব। [36]
উল্লেখ্য যে, সম্ভাষণ কালে حَيَّاكَ اللهُ হাইয়া-কাল্লা-হ (আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখুন) বলার হাদীছ ‘যঈফ’।[37] তবে حَفِظَكَ اللهُ হাফেযাকাল্লা-হ (আল্লাহ আপনাকে নিরাপদ রাখুন) বলার হাদীছ ‘ছহীহ’।[38] কেউ আহবান করলে لَبَّيْكَ লাববায়েক (আমি হাযির) বলে জওয়াব দেওয়ার হাদীছ ‘ছহীহ’। [39]
ফাসেক ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়াই ছিল সালাফে ছালেহীনের রীতি। যেমন ছাহাবী জাবের (রাঃ) ফাসেক গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সালাম দেননি। [40] রাষ্ট্রনেতাদেরকে ইসলামী সালাম ব্যতীত অতিরঞ্জিত কোন বিশেষণে সম্ভাষণ জানানো ঠিক নয়। ওছমান বিন হুনাইফ আনছারী (রাঃ) আমীর মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে স্রেফ ইসলামী সালাম দিয়েছিলেন, যেভাবে তিনি খলীফা আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-কে দিতেন। [41]
(ক) সালাম : اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ ‘আসসালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’। অর্থ : ‘আপনার (বা আপনাদের) উপর শান্তি ও আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হৌক’।
(খ) জওয়াবে বলবে- وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ‘ওয়া আলাইকুমুস সালা-মু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহূ’। অর্থ: ‘আপনার (বা আপনাদের) উপরেও শান্তি এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া সমূহ বর্ষিত হৌক’। ‘আসসালা-মু আলায়কুম’ বললে ১০ নেকী, ‘ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ যোগ করলে ২০ নেকী এবং ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’ যোগ করলে ৩০ নেকী পাবে।[42] ‘ওয়া মাগফিরাতুহূ’- যোগ করার হাদীছটি ‘যঈফ’।[43]
(গ) যদি কেউ কাউকে সালাম পাঠায়, তবে জওয়াবে বলবে- ‘আলায়কা ওয়া আলাইহিস সালাম’ অর্থ : ‘আপনার ও তাঁর উপরে শান্তি বর্ষিত হউক’। [44]
(ঘ) ছালাত অবস্থায় কেউ সালাম দিলে মুখে জওয়াব দেওয়া যাবে না। কেবল (ডান হাতের) আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা যাবে।[45]
প্রকাশ থাকে যে, জাহেলী যুগে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে أَنْعَمَ اللهُ بِكَ عَيْنًا আন‘আমাল্লা-হু বিকা ‘আইনান’ (আল্লাহ আপনার চক্ষু শীতল করুন) এবং اَنْعِمْ صَبَاحًا ‘আন‘ইম ছাবা-হান’ ‘সুপ্রভাত’ (Good morning) বলা হ’ত। ইসলাম আসার পরে উক্ত প্রথা বাতিল হয় [46] এবং সালামের প্রচলন হয়।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুসলিম-অমুসলিম মিলিত মজলিস এবং মহিলা ও শিশুদেরকে সালাম দিতেন’।[47]
(ঙ) অমুসলিমরা সালাম দিলে উত্তরে বলবে ‘ওয়া আলায়কুম’ (আপনার উপরেও)।[48]
(চ) অমুসলিমদের শিষ্টাচার মূলক সম্ভাষণ করা যাবে। কিন্তু আক্বীদা ও আমল বিরোধী কিছু বলা বা করা যাবে না। যেমন কোন হিন্দুকে ‘নমস্কার’ বলা যাবে না। কেননা এর অর্থ ‘আমি আপনার সামনে মাথা ঝুঁকাচ্ছি। আপনি কবুল করুন’। অমনিভাবে ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। কেননা এর অর্থ ‘আমি আপনার সামনে ঝুঁকছি’। বরং উভয়ে উভয়কে ‘আদাব’ বলা উচিৎ। যার অর্থ ‘আমি আপনার প্রতি শিষ্টাচার প্রদর্শন করছি’।
(ছ) কথা বলার পূর্বে সালাম দিবে’।[49] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে শুরু করে না, তাকে অনুমতি দিয়ো না’।[50]
(জ) মুছাফাহা : অর্থ পরস্পরের হাতের তালু মিলানো (إلصاق صفح الكف بالكف)। মুছাফাহার সময় একে অপরের ডান হাতের তালু মিলিয়ে করমর্দন করতে হয়। ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরে মুছাফাহা করতেন।[51] আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকল শুভ কাজ ডান হাত দিয়ে করা পসন্দ করতেন’। [52] দুইজনের চার হাত মিলানো ও বুকে হাত লাগানোর প্রচলিত প্রথা সুন্নাত বিরোধী আমল। সাক্ষাতকালে মাথা ঝুঁকানো, বুকে জড়িয়ে ধরা, কোলাকুলি করা, হাতে বা কপালে চুমু খাওয়া নয়, কেবল সালাম ও মুছাফাহা করবে।[53] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, দুইজন মুসলমান সাক্ষাতকালে যখন পরস্পরে মুছাফাহা করে, তখন তাদের উভয়কে ক্ষমা করা হয়, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়।[54] হাতে চুমু খাওয়া ও পায়ে হাত দিয়ে কদমবুসি করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ ‘যঈফ’। [55]
অতএব ঈদের দিন কোলাকুলি নয়, বরং পরস্পরে দো‘আ করা আবশ্যক। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পরে সাক্ষাতে বলতেন,‘তাক্বাব্বালাল্লা-হু মিন্না ওয়া মিনকা’ অথবা ‘মিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনার বা আপনাদের পক্ষ হ’তে কবুল করুন! -তামামুল মিন্নাহ ৩৫৪ পৃঃ)। অতএব সালাম ও ঈদ মোবারক বললেও সাথে সাথে উক্ত দো‘আটি পড়া উচিৎ।
[33] . আবুদাঊদ হা/৫২০০, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৪৯।
[34] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৬০, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।
[35] . আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৪৬।
[36] . আবুদাঊদ হা/৫২১৫-১৭ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৫৮।
[37] . বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৯, তাহকীক আলবানী।
[38] . আবুদাঊদ হা/৫২২৮ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৬৭।
[39] . আবুদাঊদ হা/৫২৩৩ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৭০।
[40] . বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৫।
[41] . বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৪।
[42] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৪৪।
[43] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৪৫।
[44] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫৫।
[45] . তিরমিযী, মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৯৯১, ১০১৩, ‘ছালাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।
[46] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫৪, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।
[47] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৩৪-৩৯; আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৪৭।
[48] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৩৭।
[49] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮১৬।
[50] . বায়হাক্বী- শু‘আব; মিশকাত হা/৪৬৭৬, ‘অনুমতি প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-২; ছহীহাহ হা/৮১৭।
[51] . বুখারী, মিশকাত হা/৪৬৭৭, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘মুছাফাহা ও মু‘আনাকা’ অনুচ্ছেদ-৩।
[52] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪০০ ‘তাহারৎ’ অধ্যায়-৩, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; বুখারী হা/১৬৮, ‘ওযূ’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৩১,(عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ) মুসলিম হা/৬১৭ (২৬৮/৬৭), ‘ত্বাহারৎ’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১৯।
[53] . ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২; তিরমিযী হা/২৭২৮; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৮০, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘মুছাফাহা ও মু‘আনাকা’ অনুচ্ছেদ-৩।
[54] . আবুদাঊদ হা/৫২১২; আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৬৭৯।
[55] . তিরমিযী হা/২৭৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০৪-০৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭৫-৭৬, ‘কদমবুসি’ অনুচ্ছেদ।
(ক) ঘর হ’তে বের হওয়াকালীন দো‘আ :
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ-
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কাল্তু ‘আলাল্লা-হি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ ।
অনুবাদ : ‘আল্লাহর নামে, (বের হচ্ছি), তাঁর উপরে ভরসা করছি। নেই কোন ক্ষমতা নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত’।[56]
(খ) বিদায় দানকারীর দো‘আ : সফরের উদ্দেশ্যে কাউকে বিদায় দেবার সময় পরস্পরের উদ্দেশ্যে নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবেন। একা হ’লে পরস্পরের (ডান) হাত ধরে দো‘আটি পড়বেন। বহুবচনে ‘কুম’ এবং একবচনে ‘কা’ উভয় লিঙ্গে বলা যাবে। সম্মানিত ব্যক্তিকে ‘কুম’ বলতে হয়।
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكُمْ وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِيْمَ أَعْمَالِكُمْ-
(১) উচ্চারণ : আসতাওদি‘উল্লা-হা দ্বীনাকুম ওয়া আমা-নাতাকুম ওয়া খাওয়া-তীমা আ‘মা-লিকুম’ ।
অনুবাদ : আমি (আপনার বা আপনাদের) দ্বীন, ও আমানত সমূহ এবং শেষ আমল সমূহকে আল্লাহর হেফাযতে ন্যস্ত করলাম।[57] এখানে ‘আমানত সমূহ’ বলতে তার পরিবারের দায়িত্ব ও সফরকালীন দায়-দায়িত্ব সমূহকে বুঝানো হয়েছে। ‘শেষ আমল সমূহ’ বলতে حسن الخاتمة অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে তার শেষ নেক আমল সমূহকে বুঝানো হয়েছে (মিরক্বাত)।
বিদায় দানকারীগণ উপরের দো‘আটির সাথে নিম্নের দো‘আটি যোগ করতে পারেন,
زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُ مَا كُنْتَ-
(২) উচ্চারণ: যাউয়াদাকাল্লা-হুত্ তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যাম্বাকা ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খায়রা হায়ছু মা কুন্তা’।
অনুবাদ : আল্লাহ আপনাকে তাক্বওয়ার পুঁজি দান করুন! আপনার গোনাহ মাফ করুন এবং আপনি যেখানেই থাকুন আপনার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন’। [58]
উল্লেখ্য যে, ফী আমা-নিল্লা-হ বলে বিদায় দেওয়ার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই। বিদায় দানকালে তাঁর সাথে কিছুদূর সাথে হেঁটে যাওয়া মুস্তাহাব। [59]এ সময় পরস্পরে দো‘আ চেয়ে বর্ণিত নিম্নের বহুল প্রচলিত হাদীছটি ‘যঈফ’।- أَشْرِكْنَا يَا أُخَيُّ فِي دُعَائِكَ وَلاَ تَنْسَنَا فِي دُعَائِكَ (হে আমার ভাই! আপনার দো‘আয় আমাকে শরীক রাখবেন এবং আপনার দো‘আয় আমাকে ভুলবেন না)। [60]
(গ) কেউ দো‘আ চাইলে তার জন্য দো‘আ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খাদেম আনাস-এর জন্য তার মা উম্মে সুলায়েম দো‘আ চাইলে তিনি তার জন্য দো‘আ করেন, اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ، وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ আল্লা-হুম্মা আকছির মা-লাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বা-রিক লাহু ফীমা আ‘ত্বায়তাহু’ (হে আল্লাহ! তুমি তার মাল ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দাও এবং তাকে তুমি যা কিছু দিয়েছ, তাতে বরকত দাও)। আনাস (রাঃ) বলেন, এতে আমার সম্পদে ও সন্তানাদিতে খুবই প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল। [61]
উল্লেখ্য যে, উক্ত দো‘আ ব্যক্তি বুঝে পড়া যাবে, সকলের ক্ষেত্রে নয়। কেননা রোগী ও বিপদগ্রস্তের জন্য পৃথক দো‘আ রয়েছে। তবে বর্ণিত দো‘আর শেষ অংশটি اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহু ফীমা আ‘ত্বায়তাহু’ অধিকাংশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথবা বলবে, بَارَكَ اللهُ لَكَ বা-রাকাল্লা-হু লাকা অথবা বহুবচনে ‘লাকুম’ (আল্লাহ আপনার মধ্যে প্রবৃদ্ধি দান করুন)। অথবা بَارَكَ اللهُ فِىْ أَهْلِكَ وَمَالِكَবা-রাকাল্লা-হু ফী আহলিকা ওয়া মা-লিকা’ অথবা বহুবচনে ‘কুম’ (আল্লাহ আপনার পরিবারে ও সম্পদে প্রবৃদ্ধি দান করুন)। [62]
(ঘ) অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে (ডান) পা পরিবহনের উপর রাখবে এবং আরোহনের সময় নিম্নস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে থাকবে। [63] অতঃপর সীটে বসে আলহামদুলিল্লাহ বলবে।[64] পরিবহন চলা শুরু করলে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করবে।-
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ، اَللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِيْ سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى، اَللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ لَنَا بُعْدَهُ، اَللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَ الْأَهْلِ-
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার (৩ বার)। সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীনা, ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনক্বালিবূন। আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা ওয়াত তাক্বওয়া ওয়া মিনাল ‘আমালে মা তারযা; আল্লা-হুম্মা হাওভিন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াত্বভে লানা বু‘দাহূ, আল্লা-হুম্মা আনতাছ ছা-হিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালীফাতু ফিল আহ্লি ওয়াল মা-লি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ওয়া‘ছা-ইস সাফারি, ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি, ওয়া সূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহ্লি ।
অর্থ: ‘আল্লাহ সবার চেয়ে বড় (তিনবার)। মহা পবিত্র সেই সত্তা যিনি এই বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা একে অনুগত করার ক্ষমতা রাখি না। আর আমরা সবাই আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’।[65] হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকটে আমাদের এই সফরে কল্যাণ ও তাক্বওয়া এবং এমন কাজ প্রার্থনা করি, যা আপনি পসন্দ করেন। হে আল্লাহ! আমাদের উপরে এই সফরকে সহজ করে দিন এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনি এই সফরে আমাদের একমাত্র সাথী এবং পরিবারে ও মাল-সম্পদে আপনি আমাদের একমাত্র প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে পানাহ চাই সফরের কষ্ট, খারাব দৃশ্য এবং মাল-সম্পদ ও পরিবারের নিকটে মন্দ প্রত্যাবর্তন হ’তে।[66]
(ঙ) নতুন গন্তব্য স্থলে পৌঁছে কিংবা কোন ক্ষতিকর বস্ত্ত থেকে বাঁচার জন্য পড়বে- أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব’ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টকারিতা হ’তে পানাহ চাচ্ছি)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এই দো‘আ পাঠ করলে, ঐ স্থান হ’তে প্রস্থান করা পর্যন্ত তাকে কোন কিছুই ক্ষতি করবে না’।[67] তিনি বলেন, ‘যদি এটা সন্ধ্যাবেলা পড়া হয়, তাহ’লে ঐ রাতে তাকে সাপ-বিচ্ছু দংশন করবে না’। [68]
(চ) সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর দো‘আ :
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لآ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، آيِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ سَاجِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ...
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার (৩ বার)। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আ-য়িবূনা তা-য়িবূনা ‘আ-বিদূনা সা-জিদূনা লিরব্বিনা হা-মিদূনা।
অর্থ : ‘আল্লাহ সবার চেয়ে বড় (তিনবার), আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা কেবল তাঁর জন্যই। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তন করলাম তওবাকারী, ইবাদতকারী, সিজদাকারী এবং আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী রূপে...’।[69] অতঃপর পরিবহন থেকে নামার সময় বলবে ‘সুবহানাল্লাহ’ । [70]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সফর থেকে ফিরে সাধারণত: প্রথমে মসজিদে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন।[71]
(ছ) গৃহে প্রবেশকালে দো‘আ :
প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে।[72] অতঃপর গৃহবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম দিবে (নূর ২৪/৬১)।
(জ) কারো গৃহে প্রবেশকালে অনুমতি প্রার্থনা করবে এবং দরজার বাইরে থেকে অনধিক তিনবার সরবে ‘সালাম’ দিবে। অনুমতি না পেলে ফিরে যাবে। [73] এই সময় নিজের নাম বলা উত্তম।[74] সালাম দেওয়ার পরে অনুমতি গ্রহণ করতে পারবে এবং গলায় শব্দ করবে।[75]
[57] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৩৫।
[58] . তিরমিযী হা/৩৪৪৪; মিশকাত হা/২৪৩৭।
[59] . আহমাদ হা/২২১০৫; ঐ, মিশকাত হা/৫২২৭ ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, পরিচ্ছেদ-৩।
[60] . আবুদাঊদ হা/২৪৯৮; তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৪৮ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯।
[61] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬১৯৯, ‘মর্যাদা সমূহ’ অধ্যায়-৩০, ‘সমষ্টিগত মর্যাদা সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১২।
[62] . ইবনু মাজাহ হা/১৯০৬-০৭; নাসাঈ, মিশকাত হা/২৯২৬।
[63] . বুখারী, মিশকাত হা/২৪৫৩ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
[64] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৪৩৪ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
[65] . যুখরুফ ৪৩/১৩-১৪।
[66] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২০, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
[67] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২২।
[68] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২৩; তিরমিযী হা/৩৪৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪২৭।
[69] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪২৫, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
[70] . বুখারী, মিশকাত হা/২৪৫৩ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
[71] . বুখারী হা/৪৪৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৮, অনুচ্ছেদ-৫৯; ঐ, হা/৪৬৭৭ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-১৮।
[72] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬১, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১।
[73] . নূর ২৪/২৭-২৮; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৬৭, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, অনুচ্ছেদ-২।
[74] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৬৯।
[75] . নূর ২৪/২৭; মুসলিম, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৬৬৮, ৪৬৭৫; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮১৭-১৮।
প্রথমে সতর্ক হতে হবে যে, খাদ্যটি হালাল ও পবিত্র (ত্বাইয়িব) কি-না (বাক্বারাহ ২/১৬৮)। নইলে তা খাবে না। অতঃপর খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালভাবে ডান হাত ধুয়ে নিবে। ধোয়া হাত দিয়ে অন্য কিছু ধরলে খাওয়ার শুরুতে পুনরায় হাত ধুবে। যেন অলক্ষ্যে সেখানে কিছু লেগে না থাকে। ঘুম থেকে উঠে এলে অবশ্যই আগে মিসওয়াক করে নিবে। অতঃপর খাওয়ার শেষে দাঁতে খিলাল করবে ও খাদ্য কণা বের করে ফেলে দিবে। কেননা এগুলি থাকলে পচে পোকা হয় এবং তা পেটে গিয়ে পেট নষ্ট করে। অবশেষে পেট ও দাঁত দু’টিই বিনষ্ট হয়। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে।
(ক) খানাপিনার শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তুমি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বল। ডান হাত দিয়ে খাও ও নিকট থেকে খাও, মাঝখান থেকে নয়।[76] বাম হাতে খাবে না বা পান করবে না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে। [77]
(খ) খাদ্য পড়ে গেলে সেটা ছাফ করে খাও। শয়তানের জন্য রেখে দিয়ো না। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার পূর্বে ভালভাবে প্লেট ও আঙ্গুল চেটে খাও। কেননা কোন খাদ্যে বরকত আছে, তোমরা তা জানো না’।[78] অনেকে প্লেট ধুয়ে খান। কেউ আঙ্গুল দিয়ে প্লেট না চেটে সরাসরি জিভ দিয়ে প্লেট চাটেন। এগুলি স্রেফ বাড়াবাড়ি। খাওয়ার শেষে ভালভাবে (সাবান ইত্যাদি দিয়ে) হাত ধুয়ে ফেলবে। যেন সেখানে কিছুই লেগে না থাকে। [79]
(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ভান্ডের মুখে মুখ লাগিয়ে এবং দাঁড়িয়ে খেতে ও পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।[80] তবে তিনি যমযমের পানি এবং ওযূ শেষে পাত্রে অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।[81] পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ফেলবে না বরং তিনবার বাইরে শ্বাস ফেলবে (ও ধীরে ধীরে পানি পান করবে)।[82]
(ঘ) খাদ্য পরিবেশনের সময় ডান দিক থেকে শুরু করবে।[83]
(ঙ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আদম সন্তানের জন্য কয়েক লোকমা খাদ্য যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার কোমর সোজা রাখতে পারে (ও আল্লাহর ইবাদত করতে পারে)। এরপরেও যদি খেতে হয়, তবে পেটের তিনভাগের এক ভাগ খাদ্য ও একভাগ পানি দিয়ে ভরবে এবং একভাগ খালি রাখবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য’। [84] তিনি বলেন, এক মুমিনের খানা দুই মুমিনে খায়। দুই মুমিনের খানা চার মুমিনে খায় এবং চার মুমিনের খানা আট মুমিনে খায় (অর্থাৎ সর্বদা সে পরিমাণে কম খায়)।[85] কেননা মুমিন এক পেটে খায় ও কাফের সাত পেটে খায় (অর্থাৎ সে সর্বদা বেশী খায়)।[86]
(চ) কাত হয়ে বা ঠেস দিয়ে খেতে নেই।[87]
(ছ) খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে শয়তান তার সাথে খায়।[88]
(জ) খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে (শেষ হওয়ার আগেই) বলবে, بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهُ وَآخِرَهُ ‘বিসমিল্লা-হি আউওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’ (আল্লাহর নামে এর শুরু ও শেষ)।[89]
(ঝ) খাওয়া ও পানি পান শেষে বলবে, (১) الْحَمْدُ ِللهِ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। [90] অথবা বলবে, (2) الْحَمْدُ ِللهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّيْ وَلاَ قُوَّةٍ-
(২) আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাঝাক্বানীহি মিন গায়রে হাওলিম মিন্নী ওয়ালা ক্বুউওয়াতিন’ (সেই আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আমাকে আমার ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই এই খাবার খাইয়েছেন এবং এই রূযী দান করেছেন)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এটি পাঠ করবে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হবে।[91]
অথবা বলবে, (3) اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ-
(৩) আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া আত্ব‘ইমনা খায়রাম মিনহু’ (‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য এই খাদ্যে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চাইতে উত্তম খাওয়াও’)।[92]
(৪) দুধ পান শেষে বলবে, اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ-
আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া ঝিদনা মিনহু’ (হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দান কর এবং এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করে দাও)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটা এ কারণে যে, দুগ্ধ ব্যতীত খাদ্য ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়, এমন কোন খাদ্য নেই।[93]
এছাড়াও খানাপিনার অন্যান্য দো‘আ রয়েছে।
(ঞ) খাওয়া শেষে প্লেট বা দস্তারখান উঠানোর সময় বলবে, اَلْحَمْدُ ِللهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِِ আলহামদুলিল্লা-হি হামদান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’... (আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা, যা অগণিত, পবিত্র ও বরকত মন্ডিত...)। [94]
(ট) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিষ্টি ও মধু পসন্দ করতেন।[95]
[77] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৩।
[78] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৫, ৪১৬৭।
[79] . আবুদাঊদ হা/৩৮৫২, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, অনুচ্ছেদ-৫৪।
[80] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৬৪, ৪২৬৬; ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৫২৭৫ (২০২৪/১১৩) ‘পানীয় সমূহ’ অধ্যায়-৩৬, অনুচ্ছেদ-১৪; তিরমিযী হা/১৮৭৯।
[81] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৪২৬৮-৬৯, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।
[82] . আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪২৭৭; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৬৩।
[83] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৭৩, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।
[84] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫১৯২, ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, পরিচ্ছেদ-২।
[85] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৭৮, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১।
[86] . বুখারী, মিশকাত হা/৪১৭৩।
[87] . বুখারী, মিশকাত হা/৪১৬৮।
[88] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬০, ৪২৩৭, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১ ও ৩।
[89] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, হা/৪২০২, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-২।
[90] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪২০০, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৪৩, ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২।
[91] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৩; ইরওয়া হা/১৯৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০৮৬। উল্লেখ্য যে, এ সময় আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা ওয়া সাক্বা-না.... বলা মর্মে প্রচলিত দো‘আটি যঈফ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪২০৪, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-২ সনদ যঈফ)।
[92] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪২৮৩, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।
[93] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪২৮৩, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩; ছহীহাহ হা/২৩২০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮১।
[94] . বুখারী, মিশকাত হা/৪১৯৯, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১।
[95] . বুখারী, মিশকাত হা/৪১৮২।
মেযবানের জন্য দো‘আ :
(1) اَللَّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ
(ক) আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াসক্বি মান সাক্বা-নী’ (হে আল্লাহ! তুমি তাকে খাওয়াও যিনি আমাকে খাইয়েছেন এবং তাকে পান করাও যিনি আমাকে পান করিয়েছেন)।[96] বহুবচনে ‘না’ বলবে। অথবা বলবে,
(২) أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمْ الْأَبْرَارُ وَ صَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ
(খ) আফত্বারা ইনদাকুমুছ ছা-য়েমূন, ওয়া আকালা ত্বা‘আ-মাকুমুল আবরা-রু, ওয়া ছাল্লাত আলায়কুমুল মালা-য়েকাহ’ (ছায়েমগণ আপনার নিকট ইফতার করুন। নেককার ব্যক্তিগণ আপনার খাদ্য গ্রহণ করুন এবং ফেরেশতাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন)।[97] অথবা বলবে,
(৩) اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْلَهُمْ وَارْحَمْهُمْ
(গ) আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফীমা রাঝাক্বতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম’ (হে আল্লাহ! তুমি তাদের যে রূযী দান করেছ, তাতে প্রবৃদ্ধি দান কর। তুমি তাদের ক্ষমা কর ও তাদের উপর রহম কর)।[98]
[97] . আবুদাঊদ হা/৩৮৫৪; ইবনু মাজাহ হা/১৭৪৭; শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/৪২৪৯।
[98] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২৭, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
(ক) ঘুমানোর সময় ডান কাতে শুয়ে বলবে, بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوْتُ وَأَحْيَا‘বিসমিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’ (হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি মরি ও বাঁচি’। অর্থাৎ তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনরায় জাগ্রত হব)।
(খ) ঘুম থেকে ওঠার সময় বলবে, اَلْحَمْدُ ِللهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আহইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’ (সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করলেন এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই হবে আমাদের পুনরুত্থান)। [99]
(ক) ইফতারের দো‘আ :بِسْمِ اللهِ‘বিসমিল্লা-হ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি)।
(খ) ইফতার শেষে দো‘আ :اَلْحَمْدُ ِللهِ আলহামদুলিল্লা-হ’ (আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা)। অথবা (ঐ সাথে) বলবে,
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَآءَ اللهُ
‘যাহাবায যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরূক্বু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহ’ (তৃষ্ণা দূর হ’ল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হ’ল এবং আল্লাহ চাহে তো পুরস্কার নিশ্চিত হ’ল)।[100]
(গ) লায়লাতুল ক্বদরের বিশেষ দো‘আ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিতে পড়ার জন্য নিম্নের দো‘আটি শিক্ষা দিয়েছিলেন।-
اَللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুববুন তোহেববুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী’ (হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা কর)।[101]
[101] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২০৯১, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়-৭, অনুচ্ছেদ-৮।
কারু থেকে ভয় থাকলে পড়বে :
اَللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ-
(ক) আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়া না‘ঊযুবিকা মিন শুরূরিহিম’ (হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে ওদের মুকাবিলায় পেশ করছি এবং ওদের অনিষ্ট সমূহ হ’তে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। [102] (খ) অথবা বলবে, اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা ‘আমিলতু ওয়া শাররি মা লাম আ‘মাল’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, ঐসব কাজের অনিষ্টকারিতা হ’তে, যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি)।[103]
[102] . আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৪৪১, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
শয়তান ছালাতের মধ্যে ঢুকে ছালাত ও ক্বিরাআতের মধ্যে গোলমাল সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এরা হ’ল ‘খিনযাব’ (শয়তানের একটি বিশেষ দল)। যখন তুমি এদের অস্তিত্ব বুঝতে পারবে, তখন শয়তান থেকে আল্লাহর পানাহ চেয়ে আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নিররাযীম বলে বাম দিকে তিনবার থুক (থুঃ থুঃ থুঃ) মারবে। রাবী ওছমান বিন আবুল ‘আছ বলেন, এরূপ করাতে আল্লাহ আমার থেকে ঐ শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেন।[104]