অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কাবীরা ও সগীরা সকল গুনাহ-ই কি মাফ হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো, হ্যাঁ, আল্লাহ চাইলে সকল গুনাহ-ই মাফ করতে পারেন। তবে তিনি কুরআনে বলে দিয়েছেন যে, তিনি শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ মাফ করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শির্ক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।’’[1]
শির্ক ছাড়া অন্যান্য কাবীরা গুনাহগুলো মাফ পেতে সাধারণত তাওবাহ্ করার দরকার হয়। কিন্তু সগীরা গুনাহ মাফের জন্য সবসময় তাওবার প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কিছু ‘আমলের মাধ্যমে এসব ছোট-খাট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। তাই কাবীরা গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে সগীরা গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন,
إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا
‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কাবীরা গুনাহগুলো বা গুরুতর/বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের (ছোট) লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।’’[2]
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
‘‘যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া কাবীরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত থাকে। নিশ্চয় তোমার রব অপরিসীম ক্ষমাশীল।’’[3]
আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلٰى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ
‘পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমু‘আহ্ থেকে আরেক জুমু‘আহ্ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান; এর মাঝে সংঘটিত (সগীরা) গুনাহ মুছে ফেলে, যদি কাবীরা গুনাহ থেকে সে বেঁচে থাকে তাহলে (নতুবা নয়)।’[4]
অর্থাৎ কেউ যদি ফজরের সলাত আদায় করে, তারপর যোহরের সময় যোহরের সলাত আদায় করে তাহলে সে ফজরের সলাতের পর থেকে যোহরের সলাত পর্যন্ত যে সব সগীরা গুনাহ করেছে, যোহরের সলাত আদায় করার সাথে সাথে তার সেই গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। এ রকমই এক সপ্তাহে জুমু‘আহর সলাত আদায় করে পরের সপ্তাহের জুমু‘আর সলাত আদায় করলে এই দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সাত দিনের সগীরা গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে।
একইভাবে এ বছর যারা রমাযান মাসের সিয়াম পালন করেছে এবং পরবর্তী বছরও রযামানের সিয়াম পালন করলে তার এই দুই রমাযানের মাঝের এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে এই সময়গুলোতে কাবীরা গুনাহ করা যাবে না।
আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
الصَّلاَةُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ
‘‘পাঁচ ওয়াক্তের সলাত, এক জুমু‘আহ্ থেকে আরেক জুমু‘আহ্ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সব পাপের মোচনকারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি কাবীরা গুনাহসমূহ তাকে আবিষ্ট না করে (অর্থাৎ সে কোন কাবীরা গুনাহ না করে)।’’[5]
আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُه صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذٰلِكَ الدَّهْرَ كُلَّه
‘‘যে ব্যক্তি ফরয সলাত উপস্থিত হলে সে জন্য উত্তমরূপে উযূ করবে। (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকূ‘’ করবে। তাহলে তার সলাত পূর্বে সংঘটিত কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য পাপরাশির জন্য কাফ্ফারা বা মাফের অবলম্বন হয়ে যাবে। আর এ বিধান সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।’’[6]
সাধারণভাবে ভালো কাজ খারাপ কাজকে মুছে ফেলে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ
‘‘নিশ্চয় ভালো কাজগুলো মন্দকাজগুলোকে মিটিয়ে দেয়।’’[7]
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহ আল্লাহ তা‘আলা সাধারণ নেক কাজের মাধ্যমে এমনিতেই ক্ষমা করে দেন। এর জন্য বিশেষ তাওবাহ্ জরুরি নয়। বিভিন্ন ‘আমলের মাধ্যমেই এসব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, কিছু কিছু কাবীরা গুনাহও বিশেষ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
ذَاكَ جِبْرِيلُ أَتَانِي فَقَالَ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ
‘‘তিনি জিবরীল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে (অর্থাৎ শির্ক না করে) মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও’।’’[8]
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
إِنِّى لِأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولًا الْجَنَّةَ وَآخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا رَجُلٌ يُؤْتٰى بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ اعْرِضُوا عَلَيْهِ صِغَارَ ذُنُوبِه وَارْفَعُوا عَنْهُ كِبَارَهَا. فَتُعْرَضُ عَلَيْهِ صِغَارُ ذُنُوبِه فَيُقَالُ عَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا وَعَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا. فَيَقُولُ نَعَمْ. لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يُنْكِرَ وَهُوَ مُشْفِقٌ مِنْ كِبَارِ ذُنُوبِه أَنْ تُعْرَضَ عَلَيْهِ. فَيُقَالُ لَه فَإِنَّ لَكَ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ حَسَنَةً. فَيَقُولُ رَبِّ قَدْ عَمِلْتُ أَشْيَاءَ لا أَرَاهَا هَا هُنَا. فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُه
‘‘নিশ্চয় আমি সেই জান্নাতী ব্যক্তি সম্পর্কে জানি, যে সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সবার শেষে জাহান্নাম থেকে বের হবে। সে এমন এক ব্যক্তি, যাকে ক্বিয়ামাতের দিন হাজির করা হবে এবং বলা হবে, ‘ওর ছোট-ছোট পাপগুলো ওর কাছে পেশ কর এবং বড়-বড় পাপগুলো তুলে নাও।’ তারপর তার ছোট-ছোট পাপগুলো তার কাছে পেশ করা হবে এবং বলা হবে, ‘তুমি অমুক দিনে এই পাপ করেছ, অমুক দিনে এই এই পাপ করেছ? সে বলবে, হ্যাঁ। সে তো অস্বীকার করতে পারবে না। সে তার বড় পাপগুলো পেশ করার ভয়ে ভীত থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, ‘তোমার প্রত্যেক পাপের স্থলে একটি করে পুণ্য দেয়া হল।’ তখন সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তো অনেক কিছু (এমন পাপ) করেছি, যা এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি না।’ এ ঘটনা বর্ণনা করে নাবী (সা.) এমনভাবে হেসে ফেললেন যাতে তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে গেল।’’[9]
উপরিউক্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেলো আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ প্রেক্ষাপটে কিছু কাবীরা গুনাহ বান্দার অজান্তে তাওবাহ্ ছাড়াও মাফ করেন।
কাবীরা গুনাহ ক্ষমা সম্পর্কে ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)[10] বলেন :
أن الكبائر إنما تكفرها التوبة أو رحمة الله تعالى وفضله والله أعلم
‘‘কাবীরা গুনাহ শুধু তাওবাহ্ অথবা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের মাধ্যমে মাফ হয়। আল্লাহ অধিক জানেন।’’[11]
অধিকাংশ (জুমহূর) ‘আলিমগণের মতে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যমূলক বিভিন্ন ‘আমল এবং ফরয ‘আমলগুলো সগীরা গুনাহগুলোকে মাফ করিয়ে দেয়; কাবীরা গুনাহ মাফ করায় না। যা উপরিউক্ত আলোচনার প্রথমদিকের দলীলগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। কাবীরা গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য অবশ্যই তাওবাহ্ করতে হবে। তবে হদ্দ বা দন্ড-বিধির আলোকে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত শাস্তির রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট কাবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায় যে কথা আমরা সামনে আলোচনা করবো।
সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)[12] এ ব্যাপারে ‘আলিমগণের মতভেদ উল্লেখ করার শেষে বলেন,
‘‘কিন্তু বলা যেতে পারে যে, আমরা এরূপ কথা বলা (মতভেদ করা) থেকে নীরব থেকে আল্লাহর নিকট এই আশা রাখব যে, তিনি (সগীরা-কাবীরা) সকল গুনাহকেই ক্ষমা করে দেবেন। বিশেষ করে যখন হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘তার পাপ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে।’’[13] আর আল্লাহর কাছে এই আশা রাখব যে, কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত না থাকলেও সে ক্ষমা বহাল থাকবে। বলাবাহুল্য, এ কথা বিচ্যুতি থেকে অধিক দূরে এবং আশার ব্যাপারে বেশি বলিষ্ঠ।’’[14]
আল্লাহ গাফুর (ক্ষমাশীল), রহীম (দয়ালু); তিনি চাইলে যে কোন ওয়াসীলায় আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। অতএব, আমরা সর্বদা গুনাহ মাফের ব্যাপারে আশাবাদী থাকবো, কখনো হতাশ বা নিরাশ হবো না। তাই হতাশ না হয়ে আশাবাদী থাকাটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর।
[2]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৩১।
[3]. সূরা আন্ নাজ্ম ৫৩ : ৩২।
[4]. সহীহ মুসলিম : ৫৭৪।
[5]. সহীহ মুসলিম : ৫৭২; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২১৪।
[6]. সহীহ মুসলিম : ৫৬৫।
[7]. সূরা হূদ ১১ : ১১৪।
[8]. সহীহুল বুখারী : ৬৪৪৪; সহীহ মুসলিম : ২৩৫১।
[9]. সহীহ মুসলিম : ৪৮৭, মুসনাদ আহমাদ : ২১৩৯৩।
[10]. জন্ম : ৪৭৬ হি./১০৮৩ ঈ. - মৃত্যু : ৫৪৪ হি./১১৪৯ ঈ.।
[11]. শারহু সহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১০৬ ও ১২৭।
[12]. জন্ম : ১৯৪৭ হি./১৯২৫ ঈ. - মৃত্যু : ১৪২১ হি./২০০১ ঈ.।
[13]. পূর্ণ হাদীস ও রেফারেন্স সামনে আসছে।
[14]. শারহু বুলূগিল মারাম, খ. ৭, পৃ. ৫৪, পাপ, তার শাস্তি ও মুক্তির উপায় গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে মাফ করার অনেকগুলো উপায় বলে দিয়েছেন। এই উপায়গুলো দুই ধরনের :
* উপলক্ষযুক্ত উপায়;
* উপলক্ষহীন উপায়।
* উপলক্ষযুক্ত উপায় :
উপলক্ষযুক্ত উপায় বলতে কোন কথা বলা, কাজ করা বা বিপদ, পরীক্ষা, রোগ-বালাই ইত্যাদির উপলক্ষÿ বান্দার গুনাহ মাফ করানো। তা হতে পারে বান্দার তাওবাহ্ করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর-এর আনুগত্যমূলক কাজ যেমন সলাত, সিয়াম, দু‘আ, দান-সদাক্বাহ্ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে; হতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন পরীক্ষার মাধ্যমে, যার দ্বারা আল্লাহ তার বান্দার গুনাহগুলোকে মাফ করে দিবেন, তাঁর রবের সাথে সম্পর্ক নবায়ন করবেন, এমনকি বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের কারণে তিনি বান্দাকে অতিরিক্ত সাওয়াব দান করবেন।
কখনো কখনো বান্দা জীবিত থাকা অবস্থায়ই তার জন্য অন্যদের দু‘আ ও ইস্তিগফার করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করা হয়। আবার বান্দা মৃত্যুবরণ করার পরও কিছু মাধ্যমে গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ আছে। যেমন- জানাযার সলাত, পরকালে বিচারের মাঠে শাফা‘আতের মাধ্যমে গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায়। আবার মৃতব্যক্তির জন্য জীবিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে দু‘আ, ইস্তিগফার, দান-সদাকাহ্, ওয়াক্ফ, সিয়াম রাখা, হাজ্জ বা ‘‘উমরাহ্ করা ইত্যাদি ‘আমলের মাধ্যমেও বান্দা মাফ পেতে পারে। এগুলো সবই গুনাহ মাফের উপলক্ষযুক্ত উপায়।
* উপলক্ষহীন উপায় :
উপলক্ষহীন উপায় বলতে মূলত আল্লাহর ইচ্ছাকেই বুঝানো হচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছার উপরে খবরদারি করার কেউ নেই। তিনি একান্ত তাঁর অনুগ্রহবশত কোন বান্দাকে মাফ করে দিতে পারেন। এ জন্য কারও কাছে তাঁর কোন জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি যেমন সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিয্ক্বদাতা ঠিক একইভাবে তিনিই আইনদাতা এবং সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তাই তিনি ইচ্ছামত কারণ ছাড়া ও জবাবদিহিতা ছাড়াই বান্দার জন্য যে কোনও কিছু বরাদ্দ বা ফায়সালা করতে পারেন, তার কোন বান্দাকে মাফও করে দিতে পারেন। এটি হচ্ছে গুনাহ মাফের উপলক্ষহীন উপায়।
তাওবাহ্ ছাড়া অন্যান্য প্রায় সকল উপায় দ্বারা শুধু সগীরা গুনাহ মাফ করা হয়। কোন কোন ‘আলিম বলেছেন, বান্দার যদি সগীরা গুনাহ না থাকে তাহলে এর দ্বারা কাবীরা গুনাহকে হালকা করে দেয়। আবার কিছু কিছু উপায় আছে যেগুলো আল্লাহর হকের সাথে সম্পৃক্ত সগীরা ও কাবীরা-সকল গুনাহ মাফ করে দেয়। কখনো গুনাহ মাফের সাথে সাথে বান্দার মর্যাদাও বাড়িয়ে দেয়।
আর তাওবাহ্ ছোট-বড় সকল গুনাহ মোচন করে দেয়, যদি শর্ত পূরণ করে যথাযথভাবে তাওবাহ্ করা হয়। আল্লাহ চাইলে যে কাউকে নিজের রহমতে মাফ করে দিতে পারেন। আবার কখনো কখনো মাযলূম ব্যক্তিকে যুল্মের ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করেও বান্দার হক কেন্দ্রিক গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এর মানে এই নয় যে, কোন মুসলিম যদি দুনিয়ায় দন্ডযোগ্য অপরাধজনিত গুনাহ যেমন চুরি, ব্যভিচার, অপবাদ/মানহানী করা ইত্যাদি করে, তারপর আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে, তাহলে তার উপর থেকে দন্ড-বিধি বা শাস্তি রহিত হয়ে যাবে। কখনো না, বরং যখন যথাযথ আদালতের রায়ের মাধ্যমে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি অপরাধীর উপরে বাস্তবায়ন করা হবে তখন সে ঐ অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে। এবং তার এই তাওবাই হলো সত্যিকারের তাওবা, যা তার অন্তরকে পবিত্র করবে এবং তার সাওয়াবের পাল্লাকে ভারি করবে।[1]
গুনাহ মাফের যতগুলো উপায় কুরআন ও গ্রহণযোগ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তার মধ্য থেকে ধারাবাহিকভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ উপায় দলীলসহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো। এখানে বড় বড় উপায়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরবী শব্দ ‘ইস্তিগফার’ (الإستغفار) শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় দু‘আ ও তাওবাহ্ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে ‘ইস্তিগফার’ বলা হয়। পাপ মোচনের প্রথম মাধ্যম হলো ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
মহান আল্লাহ নূহ (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّه كَانَ غَفَّارًا
‘‘(নূহ (আ.) বললেন) অতঃপর আমি বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের রব-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল’।’’[1]
পাপের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার নাম ইস্তিগফার। কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন,
وَاسْتَغْفِرِ اللهَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘‘আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[2]
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّه كَانَ تَوَّابًا
‘‘তুমি তোমার রব-এর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা জ্ঞাপন কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবাহ্ গ্রহণকারী।’’[3]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
أَنَّمَا إِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ
‘‘তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব তাঁরই পথ অবলম্বন কর এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য।’’[4]
আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রশংসা করে বা তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেছেন,
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلٰى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ-أُولٰئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ
‘‘আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না বা এর উপরে তারা অটল থাকে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর ‘আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!’’[5]
কিছু পাপের শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। কিন্তু পাপ করার পর তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকলে তিনি পাপীকে শাস্তি দেন না। তিনি বলেন,
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
‘‘আর আল্লাহ কখনো এমন নন যে, তাদেরকে ‘আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে কখনো ‘আযাবদানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’’[6]
কেউ যদি কোন পাপ করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি বলেছেন,
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَه ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুল্ম করবে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[7]
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন :
يَا عِبَادِى إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِى أَغْفِرْ لَكُمْ
‘‘হে আমার বান্দারা! তোমরা রাত-দিন পাপ করে থাকো, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।’’[8]
নাবী (সা.) বলেছেন :
إِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ وَعِزَّتِكَ يَا رَبِّ لَا أَبْرَحُ أُغْوِىْ عِبَادَكَ مَا دَامَتْ أَرْوَاحُهُمْ فِىْ أَجْسَادِهِمْ قَالَ الرَّبُّ وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ لَا أَزَالُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِىْ
‘‘নিশ্চয় শয়তান বলেছে, ‘হে আমার রব! আপনার ইয্যতের ক্বসম! আমি আপনার বান্দাদেরকে অবিরামভাবে পথভ্রষ্ট করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকবে।’ (শয়তানের এই কথার উত্তরে) রব বলেছেন, ‘আর আমার ইয্যত ও উচ্চ মর্যাদার ক্বসম! আমি অবিরামভাবে তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব, যতক্ষণ তারা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।’’[9]
আনাস ইবনু মালিক বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلٰى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً
‘হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের যে পর্যন্ত দৃষ্টি যায়/প্রকাশ পায় সে পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি জমিন ভরা গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে আমি জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।’’[10]
আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَه وَمَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَه وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَه
‘‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার নিকট প্রার্থনা করে? আমি তাকে দান করব। এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চায়? আমি তাকে ক্ষমা করব।’’[11]
নাবী (সা.) (সামান্য অন্যমনস্কতার জন্য) প্রতিদিন ১০০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি বলেছেন,
إِنَّه لَيُغَانُ عَلٰى قَلْبِىْ وَإِنِّىْ لِأَسْتَغْفِرُ اللهَ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ
‘‘আমার অন্তর ক্ষণিক বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর আমি দিনে ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।’’[12]
তিনি আরও বলেছেন,
وَاللهِ إِنِّىْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً
‘‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ও তাওবাহ্ করে থাকি।’’[13]
ইবন ‘উমার বলেন, একই মজলিসে বসে নাবী (সা.)-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ করা অবস্থায় ১০০ বার পর্যন্ত গুণতাম,
رَبِّ اغْفِرْ لِىْ وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
‘‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর, আমার তাওবাহ্ কবূল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তাওবাহ কবূলকারী, পরম দয়াময়।’’[14]
নাবী (সা.)-এর জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়ার পরও অর্থাৎ তিনি নিষ্পাপ হওয়ার পরও যদি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার মহান রব-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাওবাহ্ করেন তাহলে আমার-আপনার মতো পাপীদের কী করা উচিত? প্রতিদিন কতবার ইস্তিগফার ও তাওবাহ করা উচিত?
ইস্তিগফারের কিছু ইতিবাচক প্রভাব আছে। যেমন প্রতিদিন ১০০ বার ইস্তিগফার পড়লে মন-মস্তিষ্কে তার বিশেষ প্রভাব পড়ে। কারণ বারবার উচ্চারিত কথা মনে-ব্রেনের নির্দিষ্ট জায়গায় স্থান করে নেয় এবং সেই অনুযায়ী মানুষের চরিত্র ও আচরণে বিশেষ প্রভাব পড়ে। সুতরাং পাপ থেকে বারবার ক্ষমা চাইলে পাপ করার প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে যায়।
শাস্তির দিন এসে পড়ার আগে পাপীর উচিত পাপ বর্জন করে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। নাবী (সা.) একদিন মহিলাদের উদ্দেশে বললেন,
يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ وَأَكْثِرْنَ الاِسْتِغْفَارَ فَإِنِّى رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ
‘‘হে নারীসমাজ! তোমরা দান-সাদকাহ করতে থাক ও বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা কর। কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই তোমাদেরকে দেখলাম।’’[15]
পরকালে যার ‘আমলনামায় বেশি বেশি ইস্তিগফার পাওয়া যাবে তার জন্য সুসংবাদ। ‘আবদুল্লাহ ইবন বুস্র বলেন, নাবী (সা.) বলেছেন :
طُوبٰى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا
‘‘যে ব্যক্তি তার ‘আমলনামায় অধিক পরিমাণে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দবার্তা।’’[16]
[2]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ১০৬।
[3]. সূরা আন্ নাস্র ১১০ : ৩।
[4]. সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ্ ৪১ : ৬।
[5]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৩৫-৩৬।
[6]. সূরা আল আনফাল ০৮ : ৩৩।
[7]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ১১০
[8]. সহীহ মুসলিম : ৬৭৩।
[9]. মুসনাদ আহমাদ : ১১২৩৭; মুসতাদরাক হাকীম : ৭৬৭২, হাদীসটি সহীহ, আস-সিলসিলা আস্ সহীহাহ্ : ১০৪।
[10]. জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২৮০৫, হাদীসটি সহীহ।
[11]. সহীহুল বুখারী : ১১৪৫, ৭৪৯৫; সহীহ মুসলিম : ১৮০৮।
[12]. সহীহ মুসলিম : ৭০৩৩।
[13]. সহীহুল বুখারী : ৬৩০৭।
[14]. সুনান আবূ দাঊদ : ১৫১৮; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৪৩৪, হাদীসটি সহীহ।
[15]. সহীহুল বুখারী : ২০৪, সহীহ মুসলিম : ২৫০।
[16]. সুনান ইবনু মাজাহ : ৩৮১৮, হাদীসটি সহীহ।
আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত পাওয়ার জন্য ইস্তিগফার করা জরুরি। ইস্তিগফারের কারণে আল্লাহ তাওবাকারীর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন। নূহ (আ.) তার জাতিকে তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কয়েকটি প্রতিদানে কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আ.)-এর বক্তব্য তার কালামে উল্লেখ করেছেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّه كَانَ غَفَّارًا -يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
‘‘আর আমি বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের রব-এর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি অতীব ক্ষমাশীল’। ‘তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’।’’[1]
এই আয়াতগুলোতে ইস্তিগফারের ৫টি লাভের কথা বলা হয়েছে :
মুষলধারে বৃষ্টি লাভ;
ধন-সম্পদ লাভ;
সন্তান-সন্ততি লাভ;
বাগ-বাগিচা লাভ;
নদী-নালা লাভ।
এতগুলো লাভ শুধু ইস্তিগফার করলে। তারপরও আমরা কেন ইস্তিগফার করবো না?
আমরা ইস্তিগফার করবো পাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য। প্রখ্যাত ফকীহ তাবিঈ বাক্র বিন আবদুল্লাহ আল মুযানী (মৃ. ১০৬ হি.) একদিন কোথাও যাওয়ার পথে দেখলেন, তাঁর সামনে এক কাঠুরে ‘‘আল হামদুলিল্লাহ’’, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহ’’ বলতে বলতে পথ চলছিল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কি এ ছাড়া অন্য কিছু জান না?’ কাঠুরে বলল, অবশ্যই জানি। আমি কুরআনের হাফিয এবং জানিও অনেক কিছু (দু‘আ-জিকির)। কিন্তু মানুষ সর্বদা পাপে নিমজ্জিত ও নি‘আমতে ডুবে থাকে। তাই আমি পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর দেয়া নি‘আমতের জন্য প্রশংসা করি।’ এ কথা শুনে বাক্র আল মুযানী বললেন, ‘বাক্র হল অজ্ঞ, আর কাঠুরে হল বিজ্ঞ।’[2]
আমরা কেউ পাপমুক্ত নই। তাই আসুন, পাপ বর্জন করি এবং সংকল্প করি, আর পাপ করব না। আর সেই সাথে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।
আমরা ইস্তিগফার করবো হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। গুনাহ করতে করতে আমরা একটা পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি যে, আমরা এত গুনাহ করেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন? এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের দ্বারা আরও গুনাহ করায়।
শয়তানকে আমরা তিনবার সফল করি : প্রথমবার গুনাহ করে; দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে; তৃতীয়বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ না করে গুনাহ করতে থেকে। তাই শয়তানকে ব্যর্থ করে আমরা যদি সফল হতে চাই এবং হতাশা থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং সকল গুনাহ মাফ করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلٰى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّه هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।’’[3]
এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে, শয়তানের প্ররোচনায় যত গুনাহই আমরা করে ফেলি না কেনো আমাদের হতাশ হওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমতের আশায় আশাবাদী হয়ে তাঁর কাছে মাফ চাইতে থাকতে হবে। তিনি ছাড়া মাফ করার আর কে আছে?
[2]. পাপ, তার শাস্তি ও মুক্তির উপায় দ্র.।
[3]. সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩।
পাপ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। মহান আল্লাহ বলেছেন :
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَه ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুল্ম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[1]
তিনি আরো বলেছেন :
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلٰى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ
‘‘আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তার উপর অটল থাকে না।’’[2]
পাপ হয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেউ যদি কৃত পাপের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে ফেরেশতারা ঐ পাপ লেখেন না, বরং ছেড়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
إنّ صاحِبَ الشِّمالِ لَيَرْفَعُ القَلَمَ سِتَّ ساعات عنِ العَبْدِ المُسْلِمِ المخْطِىءِ فإنْ نَدِمَ واسْتَغْفَرَ الله مِنْها ألقاها وَإلَّا كُتِبَت وَاحِدَةً
‘‘কোন গুনাহগার মুসলিম বান্দা কোন গুনাহ করে ফেলার পর ডান কাঁধের ফেরেশতা ছয় ঘণ্টা গুনাহ লেখা থেকে কলম উঠিয়ে রাখে (অর্থাৎ গুনাহ লেখে না)। যদি সে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে গুনাহ থেকে ক্ষমা চায় তাহলে ফেরেশতা গুনাহটি না লিখে ছুঁড়ে ফেলে দেন, অন্যথায় একটি গুনাহ লেখা হয়।’’[3]
তাছাড়া বিশেষ বিশেষ ‘ইবাদাতের শেষে ইস্তিগফার করার বিধান রয়েছে। হাদীসে এসেছে, সাওবান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثً
রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সলাত শেষ করতেন তখন তিনবার ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আল ওয়ালীদ তার শিক্ষক আল আওযা‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে ইস্তিগফার করতে হয়? তিনি বললেন, ‘‘আস্তাগফিরুল্লাহ’’ বলা।[4]
এ হাদীস দ্বারা বোঝা গেলো যে, ফরয সলাতের সালাম ফেরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্লাহ’’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলা সুন্নাহ।
হাজ্জের সময় ইস্তিগফারের আদেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন :
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘‘অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, যেখান থেকে মানুষেরা প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[5]
বিশেষ বিশেষ সময়ে ইস্তিগফার করা উচিত। যেমন সলাতের মধ্যে একাধিক জায়গায় ইস্তিগফার করা হয়। যেমন- রুকূ‘ ও সাজদায়, শেষ বৈঠকে ইত্যাদি। শেষ রাতে ফজরের পূর্বে ইস্তিগফার করা মু’মিন-মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য এবং অনেক ফযীলতের। সেজন্যই আল্লাহ তা‘আলা এই সময়ে যারা আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চায় তাদের প্রশংসা করে বলেছেন,
الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَار
‘‘যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল ও ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।’’[6]
অন্য আয়াতে জান্নাতবাসী মুত্তাকীদের দুনিয়ার জীবনধারা বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ - آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِينَ - كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ - وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
‘‘নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়, তাদের রব তাদের যা দিবেন তা তারা খুশীতে গ্রহণকারী হবে। ইতঃপূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) এরাই ছিল সৎকর্মশীল। রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত।’’[7]
রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধ রাতের পরে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আসমানে নেমে এসে গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাকারী আর তাওবাকারীদের খুঁজতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন :
فَإِذَا مَضٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ أَوْ نِصْفُ اللَّيْلِ نَزَلَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا جَلَّ وَعَزَّ فَقَالَ هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَه هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَه هَلْ مِنْ تَائِبٍ فَأَتُوبَ عَلَيْهِ هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأُجِيبَه
‘‘রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধাংশ চলে যাওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে ঘোষণা দিতে থাকেন, আছো কি কোন প্রার্থনাকারী? আমি তাকে দান করবো; আছো কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো; আছো কি কোন তাওবাকারী? আমি তার তাওবাহ্ গ্রহণ করবো। আছো কি কোন দু‘আকারী? আমি তার দু‘আর জবাব দেবো।’’[8]
বৈঠক শেষে ইস্তিগফার করা সুন্নাহ। নাবী (সা.) বলেছেন :
مَنْ جَلَسَ فِي مَجْلِسٍ فَكَثُرَ فِيهِ لَغَطُه فَقَالَ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ مِنْ مَجْلِسِه ذٰلِكَ سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ إِلَّا غُفِرَ لَه مَا كَانَ فِي مَجْلِسِه ذٰلِكَ
‘‘যে ব্যক্তি এমন সভায় বসে, যাতে খুব বেশি কথা-বার্তা হয় (ভুলের সম্ভাবনা তৈরি হয়), অতঃপর যদি উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে এই দু‘আ পড়ে,
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তাওবাহ্ (প্রত্যাবর্তন) করছি।
তাহলে উক্ত মজলিসে কৃত অপরাধ তার জন্য ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’[9]
উযূ করার পর ইস্তিগফার করা সুন্নাহ। নাবী (সা.) বলেছেন :
مَنْ تَوَضَّأَ فَقَالَ سُبْحَانَكَ اَللهم وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا إِلٰهَ اِلَّا أَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبَ إِلَيْكَ كُتِبَ فِىْ رِقٍّ ثُمَّ طُبِعَ بِطَابِعٍ فَلَمْ يُكْسَرُ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
‘‘যে ব্যক্তি উযূর পর (নিম্নের জিকির) বলে, তার জন্য তা একটি পাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর তা সীল করে দেয়া হয়, যা ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত ভঙ্গ করা হয় না।’’
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।
অর্থ : তোমার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র সত্য ইলাহ। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন (তাওবাহ্) করছি।[10]
সকাল-সন্ধ্যায় ইস্তিগফার করার জন্য ‘‘সায়্যিদুল ইস্তিগফার’’ নামক দু‘আটি পড়া খুবই ফযীলতের। দু‘আটি হলো,
اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ، وَأَبُوْءُ لَكَ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ، فَإِنَّه لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাক্তানী ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা- ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা সনা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী, ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার দাস। আমি তোমার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গিকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি যা করেছি তার অনিষ্ট থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর তোমার যে অনুদান/অবদান রয়েছে তা আমি নি‘আমত স্বীকার করছি এবং আমি আমার গুনাহ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।
এই দু‘আটির ফযীলত সম্পর্কে নাবী (সা.) বলেছেন :
وَمَنْ قَالَهَا مِنْ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِه قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ
‘‘যে ব্যক্তি দিনে (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু‘আটি পড়বে অতঃপর সে সেই দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (সন্ধ্যায়) এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে অতঃপর সে সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যাবে, তাহলে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’[11]
দিন-রাত সব সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি। কারণ আমরা প্রায় সব সময়ই পাপে ডুবে থাকি। কীভাবে যে পাপ হয়ে যাচ্ছে আমরা হয়তো টেরও পাচ্ছি না। তাই আমাদের উচিত সদা সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা। ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য ব্যাপক কোন প্রস্ত্ততির প্রয়োজন হয় না। অন্তত ‘‘আস্তাগফিরুল্লাহ’’ পড়লেও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। তবে বুঝে বুঝে দু‘আ করা উচিত। আমি যা বলছি তা যদি না-ই বুঝি তাহলে কীভাবে আমার আবেদন কবুলের আশা করতে পারি? ক্ষমা প্রার্থনা করলে পাপের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমাকে ভালোবাসেন। তাই আমাদের উচিত গুনাহ মোচনের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা।
[2]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৩৫।
[3]. সহীহ আল জামি‘ : ২০৯৭, হাদীসটি সহীহ; সিলসিলাহ সহীহাহ্ : ১২০৯।
[4]. সহীহ মুসলিম : ১৩৬২।
[5]. সূরা আল বাক্বারাহ্ ০২ : ১৯৯।
[6]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৭।
[7]. সূরা আয্ যা-রিয়া-ত ৫১ : ১৫-১৮।
[8]. মুসনাদে আহমাদ : ৯৫৯১, বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
[9]. জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৪৩৩, হাদীসটি হাসান সহীহ।
[10]. আস-সুনান আল কুবরা : ৯৯০৯; আল মু‘জামুল আওসাত : ১৪৫৫; সহীহুত তারগীব : ২২৫; হাদীসটি সহীহ।
[11]. সহীহুল বুখারী : ৬৩০৬, ৬৩২৩।
যে কোন মু’মিন ব্যক্তি নিজে নিজে দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তা যেমন কবূল করেন তেমনি কোন মু’মিন অপর কোন মু’মিনের জন্য যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে বা দু‘আ করে তাহলে তাও আল্লাহ কবূল করেন। নাবীগণের মধ্য থেকে আমরা দেখতে পাই ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি চরম অবিচার করে তার ভাইয়েরা যে অন্যায় করেছিলেন তার জন্য অনুতপ্ত হয়ে তারা তাদের পিতা ইয়া‘কূব (আ.)-কে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছিলেন এবং তাদের অনুরোধ শুনে তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তাদের কথপোকথন উল্লেখ করেছেন এভাবে,
قَالُوا يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ - قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي إِنَّه هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘‘তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা, আপনি আমাদের গুনাহ মাফের জন্য ক্ষমা চান। নিশ্চয় আমরা ছিলাম গুনাহকারী’। তিনি বললেন, ‘অচিরেই আমি তোমাদের জন্য আমার রব-এর নিকট ক্ষমা চাইব, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।’’[1]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বশেষ নাবী মুহাম্মাদ (সা.)-কেও একাধিকবার আদেশ করেছেন মু’মিন নর-নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে। যেমন আল্লাহ বলেন :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
‘‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি রূঢ়ভাষী (কঠোর স্বভাবের), কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে মাফ করে দাও এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর। অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালোবাসেন।’’[2]
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرَسُولِه وَإِذَا كَانُوا مَعَه عَلٰى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتّٰى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولٰئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَرَسُولِه فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘‘মু’মিন শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে এবং তাঁর সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে থাকলে অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না। নিশ্চয় তোমার কাছে যারা অনুমতি চায় তারাই কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে; সুতরাং কোন প্রয়োজনে তারা তোমার কাছে বাইরে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দেবে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’’[3]
নাবী (সা.)-কে মু’মিন নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,
يٰۤاَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلٰى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئًا وَّلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَه بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘‘হে নাবী! যখন মু’মিন নারীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বাই‘আত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তারা জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না। তখন তুমি তাদের বাই‘আত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[4]
রাসূলুল্লাহ (সা.) কারো জন্য প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবূল করতেন এবং যার জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তাকে তিনি মাফ করে দিতেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
‘‘আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়। আর যদি তারা যখন নিজেদের প্রতি যুল্ম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবাহ্ কবূলকারী, দয়ালু হিসেবে পেত।’’[5]
নাবী (সা.) সাধারণভাবে পৃথিবীর সকল মু’মিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। নিম্নের আয়াতের বাস্তবায়ন তিনি করতেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ
‘‘হে নাবী! তুমি নিজের জন্য এবং মু’মিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।’’[6]
সহীহ মুসলিম-এর ৬২৩৪ নং হাদীসে এ আয়াতের বাস্তবায়নের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) কারো খাবার খেলে তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। একদিন তিনি এক বাড়িতে দা‘ওয়াত খেয়ে তাদের জন্য দু‘আ করেছেন এভাবে,
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِىْ مَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফী মা- রযাকতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন এবং তাদেরকে মাফ করুন আর তাদের ওপর রহম করুন।[7]
নাবী (সা.) অন্য এক ঘটনায় আল্লাহর প্রিয় বান্দার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করতে আদেশ দিয়েছেন।[8] তিনি মুসলিমদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের জন্য নিজে ক্ষমা চাইতেন এবং সাহাবীদেরকে তাদের জন্য ক্ষমা চাইতে আদেশ দিতেন।
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার জন্য মাফ চাওয়ার আদেশ দিয়ে তিনি বলেছেন,
اَسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيكُمْ وَسَلُوْا لَهُ التَّثْبِيتَ فَإِنَّهُ الآنَ يُسْأَلُ
‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার জন্য দৃঢ়তার দু‘আ করো। কেননা তাকে এখনই প্রশ্ন করা হবে।’’[9]
তবে কোন অমুসলিম বা মুনাফিকের জন্য ক্ষমা চাওয়া বৈধ নয়। এরূপ কোন দু‘আ আল্লাহ কবূল করবেন না। তাই ইস্তিগফার করতে হবে মু’মিন-মুসলিমদের জন্য। মু’মিনদের জন্য কখন কিভাবে ইস্তিগফার করতে হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের উচিত সাধারণভাবে পৃথিবীর সকল মু’মিন-মুসলিমের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং নির্দিষ্টভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশী, ছাত্র-শিক্ষক, অফিসের বস-সহকর্মী-কর্মচারী, জীবিত-মৃত ইত্যাদি ব্যক্তিদের জন্য নাম ধরে ক্ষমা চাওয়া।
[2]. সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৫৯।
[3]. সূরা আন্ নূর ২৪ : ৬২।
[4]. সূরা আল মুমতাহিনাহ্ ৬০ : ১২।
[5]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৬৪।
[6]. সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ১৯।
[7]. সহীহ মুসলিম : ৫৪৪৯, সুনান আবূ দাঊদ : ৩৭৩১, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৫৭৬।
[8]. সহীহ মুসলিম : ৬৬৫৪-৬৬৫৬।
[9]. সুনান আবূ দাঊদ : ৩২২৩, হাদীসটি সহীহ।
(اَلتَّوْبَةُ) ‘তাওবাহ্’ আরবী শব্দ। এর অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণায় আল্লাহর পথ থেকে বিপথে চলে গেলে তার জন্য আবার আল্লাহর পথে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগের নাম-ই ‘তাওবাহ্’। সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তাওবাহ্ হলো,
اَلرُّجُوْعُ مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ تَعَالٰى إِلٰى طَاعَتِه
‘‘আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা থেকে তাঁর আনুগত্যে ফিরে আসা।’’[1] সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ তাওবাহ্ হলো কুফর ও শির্ক থেকে তাওবাহ্ করে ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসা। তারপর গুরুত্বপূর্ণ তাওবাহ্ হলো কাবীরা গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করা। আর সর্বশেষ তাওবাহ্ হলো সগীরা গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করা।
ছোট-বড় সমস্ত পাপ থেকে তাওবাহ্ করা ওয়াজিব। তাওবাহ্ কবূল হওয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদা ও সম্মানের ব্যপার। হকপন্থী আলেমগণের মতে আংশিক পাপ থেকে তাওবাহ্ করলে সেই তাওবাহ্ গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে এবং অবশিষ্ট পাপ রয়ে যাবে। তাওবাহ্ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান।
তাওবাহ্ করলে মহান আল্লাহ তাঁর গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِه وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ
‘‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবাহ্ কবূল করেন এবং পাপসমূহ মোচন করেন। আর তোমরা যা কর, তিনি তা জানেন।’’[1]
আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারীর গুনাহ মাফ করে তাকে পরকালে জান্নাত দান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
يٰۤاَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسٰى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে।’’[2]
তাওবাকারী তাওবাহ্ করার পর এমন অবস্থায় পৌঁছে যেন সে কোন গুনাহই করেনি অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে তাওবাকারী নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
التَّائِبُ مِنْ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
‘‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী সেই ব্যক্তির মত, যার কোন গুনাহই নেই।’’[3]
নাবী (সা.) আরো বলেছেন :
وَيَتُوبُ اللهُ عَلٰى مَنْ تَابَ
‘‘আর যে তাওবাহ্ করে, আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করেন।’’[4]
তিনি (সা.) আরো বলেছেন :
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَه بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَه بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন; যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তাওবাহ্ করে। এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তাওবাহ্ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিকে থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’’[5]
তাওবাকারী বান্দা সফল বান্দা। বান্দা তাওবাহ্ করলে আল্লাহ তা‘আলা খুশী হন। কোন বান্দা গুনাহ করার পর তাওবাহ্ করলে আল্লাহ কতটা আনন্দিত হন তার উদাহরণ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
اللهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِه مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلٰى بَعِيرِه وَقَدْ أَضَلَّه فِي أَرْضِ فَلَاةٍ
‘‘আল্লাহ তা‘আলা নিজ বান্দার তাওবাহ্ করার জন্য ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট মরুভূমিতে হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় ফিরে পায়।’’[6]
সহীহ মুসলিম-এর অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে যে,
لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِه حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلٰى رَاحِلَتِه بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُه وَشَرَابُه فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتٰى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِى ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِه فَبَيْنَا هُوَ كَذٰلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَه فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللّٰهُمَّ أَنْتَ عَبْدِى وَأَنَا رَبُّكَ.أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার তাওবায় যখন সে তাওবাহ্ করে তোমাদের সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশি হন, যে তার বাহন (উট)-এর উপর চড়ে কোন মরুভূমি বা জনহীন প্রান্তর অতিক্রমকালে বাহনটি তার নিকট থেকে পালিয়ে যায়। আর খাদ্য ও পানিয় সব ওর পিঠের উপর থাকে। বহু খোঁজাখুঁজির পর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বাহনটি (উটটি) হঠাৎ তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সে তার লাগাম ধরে খুশির চোটে বলে ওঠে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আর আমি তোমার রব!’ সীমাহীন খুশির কারণে সে ভুল করে ফেলে।’’[7] উল্লেখ্য, এ জাতীয় অনিচ্ছাকৃত ভুল মার্জনীয়।
তাওবাহ্ আল্লাহর রহমতের অংশ। বান্দা গুনাহ করলে আল্লাহ তাঁর রহমতের কারণে বান্দাকে মাফ করে দেন। তবে তার জন্য বান্দাকে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করতে হবে। শুধু তাওবা-ই নয়, তাওবার পর সৎ ‘আমলের উপরে অটল থাকতে হবে, তাহলেই আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ তার এই রহমতের কথা এভাবে বলেছেন,
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلٰى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّه مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ بَعْدِه وَأَصْلَحَ فَأَنَّه غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘‘আর যারা আমাদের আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তুমি বল, ‘তোমাদের উপর সালাম’। তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর লিখে নিয়েছেন দয়া, নিশ্চয় যে তোমাদের মধ্য থেকে না জেনে খারাপ কাজ করে তারপর তাওবাহ্ করে এবং শুধরে নেয়, তবে তিনি অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[8]
আল্লাহ তা‘আলার এই রহমতের শতকরা মাত্র ১ ভাগ অর্থাৎ ১০০ রহমতের মধ্যে মাত্র ১টি রহমত দুনিয়ার সকল সৃষ্টির মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। এই রহমতের কারণেই মা-বাবা তাদের সন্তানকে লালনপালনে এতো কষ্ট সহ্য করেন এবং আদর করেন। গাভী তার বাছুরকে জিহবা দিয়ে আদর করে। আরও যত রহমত ও দয়ার দৃষ্টান্ত আমরা সৃষ্টিজগতে দেখতে পাই তার সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার ১০০টি রহমতের ১টির প্রভাব। বাকী ৯৯টি রহমত আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামাতের জন্য রেখে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সা.) বলেছেন :
إِنَّ اللهَ خَلَقَ الرَّحْمَةَ يَوْمَ خَلَقَهَا مِائَةَ رَحْمَةٍ فَأَمْسَكَ عِنْدَه” تِسْعًا وَتِسْعِينَ رَحْمَةً وَأَرْسَلَ فِىْ خَلْقِهِ كُلِّهِمْ رَحْمَةً وَاحِدَةً فَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ بِكُلِّ الَّذِىْ عِنْدَ اللهِ مِنْ الرَّحْمَةِ لَمْ يَيْئَسْ مِنْ الْجَنَّةِ وَلَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ بِكُلِّ الَّذِىْ عِنْدَ اللهِ مِنْ الْعَذَابِ لَمْ يَأْمَنْ مِنْ النَّارِ
‘‘আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেন সেদিন ১০০টি রহমত সৃষ্টি করেছেন। ৯৯টি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং ১টি মাত্র রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত প্রতিটি রহমত সম্পর্কে জানে তাহলে সে জান্নাত লাভে নিরাশ হবে না। আর মু’মিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি আছে সে সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে না।’’[9]
আর দুনিয়ার ঐ ১টি রহমতের কারণেই আল্লাহ বান্দার ছোট-বড় সকল গুনাহ মাফ করেন।
[2]. সূরা আত্ তাহরীম ৬৬ : ৮।
[3]. সুনান ইবনু মাজাহ : ৪২৫০; শু‘আবুল ঈমান : ৭১৯৬, সহীহুত তারগীব : ৩১৪৫, হাদীসটি হাসান।
[4]. সহীহুল বুখারী : ৬৪৩৪, ৬৪৩৯; সহীহ মুসলিম : ২৪৬২।
[5]. সহীহ মুসলিম : ৭১৬৫।
[6]. সহীহুল বুখারী : ৬৩০৯; সহীহ মুসলিম : ৭১২৮।
[7]. সহীহ মুসলিম : ৭১৩৬।
[8] সূরা আল আন্‘আম ০৬ : ৫৪।
[9]. সহীহুল বুখারী : ৬৪৬৯।
গতানুগতিকভাবে শুধু গদবাধা তাওবার বাক্য পাঠ করলেই তাওবাহ্ করা হয় না। তাওবাহ্ করা মানে ফিরে আসা। তাই তাওবাহ্ করতে হবে খাঁটি, বিশুদ্ধ ও সত্যিকারের তাওবাহ্। মহান আল্লাহ বান্দাকে সত্যিকারের তাওবাহ্ করতে বলেছেন,
﴿يٰۤاَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ কর, খাঁটি তাওবা।’’[1]
‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ‘‘তাওবাতুন্ নাসূহ’’-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে যে,
اَلتَّوْبَةُ النَّصُوْحُ أَنْ يَّتُوْبَ مِنَ الذَّنْبِ ، ثُمَّ لَا يَعُوْدُ إِلَيْهِ ، كَمَا لَا يَعُوْدُ اللَّبَنُ فِى الضَّرْعِ
‘‘তাওবাতুন্ নাসূহ’’ হলো গুনাহ থেকে এভাবে ফিরে আসা যাতে আর কখনো সেদিকে ফিরে না যায় যেমনিভাবে দুধ দোহন করার পর আর তা ফিরিয়ে দেয়া যায় না।’’[2]কৃত গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ বিরত হয়ে তার জন্য লজ্জিত হয়ে ভবিষ্যতে আর না করার দৃঢ় সংকল্প করে যে তাওবাহ্ করা হয় তাকেই ‘‘তাওবাতুন্ নাসূহ’’ বা সত্যিকারের তাওবাহ্ বা খাঁটি তাওবাহ্ বলে।
[2]. ফায়সাল বিন ‘আবদুল ‘আযীয আলে মুবারক, তাতরীয রিয়াদুস্ সালিহীন, তাহকীক : ড. ‘আবদুল ‘আযীয বিন ‘আবদুল্লাহ বিন ইবরাহীম আলে হাম্দ, রিয়াদ : দারম্নল আসিমাহ, ১৪২৩ হি., পৃ. ২০।