আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে মাফ করার অনেকগুলো উপায় বলে দিয়েছেন। এই উপায়গুলো দুই ধরনের :
* উপলক্ষযুক্ত উপায়;
* উপলক্ষহীন উপায়।
* উপলক্ষযুক্ত উপায় :
উপলক্ষযুক্ত উপায় বলতে কোন কথা বলা, কাজ করা বা বিপদ, পরীক্ষা, রোগ-বালাই ইত্যাদির উপলক্ষÿ বান্দার গুনাহ মাফ করানো। তা হতে পারে বান্দার তাওবাহ্ করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর-এর আনুগত্যমূলক কাজ যেমন সলাত, সিয়াম, দু‘আ, দান-সদাক্বাহ্ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে; হতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন পরীক্ষার মাধ্যমে, যার দ্বারা আল্লাহ তার বান্দার গুনাহগুলোকে মাফ করে দিবেন, তাঁর রবের সাথে সম্পর্ক নবায়ন করবেন, এমনকি বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের কারণে তিনি বান্দাকে অতিরিক্ত সাওয়াব দান করবেন।
কখনো কখনো বান্দা জীবিত থাকা অবস্থায়ই তার জন্য অন্যদের দু‘আ ও ইস্তিগফার করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করা হয়। আবার বান্দা মৃত্যুবরণ করার পরও কিছু মাধ্যমে গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ আছে। যেমন- জানাযার সলাত, পরকালে বিচারের মাঠে শাফা‘আতের মাধ্যমে গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায়। আবার মৃতব্যক্তির জন্য জীবিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে দু‘আ, ইস্তিগফার, দান-সদাকাহ্, ওয়াক্ফ, সিয়াম রাখা, হাজ্জ বা ‘‘উমরাহ্ করা ইত্যাদি ‘আমলের মাধ্যমেও বান্দা মাফ পেতে পারে। এগুলো সবই গুনাহ মাফের উপলক্ষযুক্ত উপায়।
* উপলক্ষহীন উপায় :
উপলক্ষহীন উপায় বলতে মূলত আল্লাহর ইচ্ছাকেই বুঝানো হচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছার উপরে খবরদারি করার কেউ নেই। তিনি একান্ত তাঁর অনুগ্রহবশত কোন বান্দাকে মাফ করে দিতে পারেন। এ জন্য কারও কাছে তাঁর কোন জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি যেমন সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিয্ক্বদাতা ঠিক একইভাবে তিনিই আইনদাতা এবং সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তাই তিনি ইচ্ছামত কারণ ছাড়া ও জবাবদিহিতা ছাড়াই বান্দার জন্য যে কোনও কিছু বরাদ্দ বা ফায়সালা করতে পারেন, তার কোন বান্দাকে মাফও করে দিতে পারেন। এটি হচ্ছে গুনাহ মাফের উপলক্ষহীন উপায়।
তাওবাহ্ ছাড়া অন্যান্য প্রায় সকল উপায় দ্বারা শুধু সগীরা গুনাহ মাফ করা হয়। কোন কোন ‘আলিম বলেছেন, বান্দার যদি সগীরা গুনাহ না থাকে তাহলে এর দ্বারা কাবীরা গুনাহকে হালকা করে দেয়। আবার কিছু কিছু উপায় আছে যেগুলো আল্লাহর হকের সাথে সম্পৃক্ত সগীরা ও কাবীরা-সকল গুনাহ মাফ করে দেয়। কখনো গুনাহ মাফের সাথে সাথে বান্দার মর্যাদাও বাড়িয়ে দেয়।
আর তাওবাহ্ ছোট-বড় সকল গুনাহ মোচন করে দেয়, যদি শর্ত পূরণ করে যথাযথভাবে তাওবাহ্ করা হয়। আল্লাহ চাইলে যে কাউকে নিজের রহমতে মাফ করে দিতে পারেন। আবার কখনো কখনো মাযলূম ব্যক্তিকে যুল্মের ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করেও বান্দার হক কেন্দ্রিক গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এর মানে এই নয় যে, কোন মুসলিম যদি দুনিয়ায় দন্ডযোগ্য অপরাধজনিত গুনাহ যেমন চুরি, ব্যভিচার, অপবাদ/মানহানী করা ইত্যাদি করে, তারপর আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে, তাহলে তার উপর থেকে দন্ড-বিধি বা শাস্তি রহিত হয়ে যাবে। কখনো না, বরং যখন যথাযথ আদালতের রায়ের মাধ্যমে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি অপরাধীর উপরে বাস্তবায়ন করা হবে তখন সে ঐ অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে। এবং তার এই তাওবাই হলো সত্যিকারের তাওবা, যা তার অন্তরকে পবিত্র করবে এবং তার সাওয়াবের পাল্লাকে ভারি করবে।[1]