আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত পাওয়ার জন্য ইস্তিগফার করা জরুরি। ইস্তিগফারের কারণে আল্লাহ তাওবাকারীর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন। নূহ (আ.) তার জাতিকে তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কয়েকটি প্রতিদানে কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আ.)-এর বক্তব্য তার কালামে উল্লেখ করেছেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّه كَانَ غَفَّارًا -يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
‘‘আর আমি বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের রব-এর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি অতীব ক্ষমাশীল’। ‘তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’।’’[1]
এই আয়াতগুলোতে ইস্তিগফারের ৫টি লাভের কথা বলা হয়েছে :
মুষলধারে বৃষ্টি লাভ;
ধন-সম্পদ লাভ;
সন্তান-সন্ততি লাভ;
বাগ-বাগিচা লাভ;
নদী-নালা লাভ।
এতগুলো লাভ শুধু ইস্তিগফার করলে। তারপরও আমরা কেন ইস্তিগফার করবো না?
আমরা ইস্তিগফার করবো পাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য। প্রখ্যাত ফকীহ তাবিঈ বাক্র বিন আবদুল্লাহ আল মুযানী (মৃ. ১০৬ হি.) একদিন কোথাও যাওয়ার পথে দেখলেন, তাঁর সামনে এক কাঠুরে ‘‘আল হামদুলিল্লাহ’’, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহ’’ বলতে বলতে পথ চলছিল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কি এ ছাড়া অন্য কিছু জান না?’ কাঠুরে বলল, অবশ্যই জানি। আমি কুরআনের হাফিয এবং জানিও অনেক কিছু (দু‘আ-জিকির)। কিন্তু মানুষ সর্বদা পাপে নিমজ্জিত ও নি‘আমতে ডুবে থাকে। তাই আমি পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর দেয়া নি‘আমতের জন্য প্রশংসা করি।’ এ কথা শুনে বাক্র আল মুযানী বললেন, ‘বাক্র হল অজ্ঞ, আর কাঠুরে হল বিজ্ঞ।’[2]
আমরা কেউ পাপমুক্ত নই। তাই আসুন, পাপ বর্জন করি এবং সংকল্প করি, আর পাপ করব না। আর সেই সাথে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।
আমরা ইস্তিগফার করবো হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। গুনাহ করতে করতে আমরা একটা পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি যে, আমরা এত গুনাহ করেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন? এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের দ্বারা আরও গুনাহ করায়।
শয়তানকে আমরা তিনবার সফল করি : প্রথমবার গুনাহ করে; দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে; তৃতীয়বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ না করে গুনাহ করতে থেকে। তাই শয়তানকে ব্যর্থ করে আমরা যদি সফল হতে চাই এবং হতাশা থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং সকল গুনাহ মাফ করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلٰى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّه هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।’’[3]
এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে, শয়তানের প্ররোচনায় যত গুনাহই আমরা করে ফেলি না কেনো আমাদের হতাশ হওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমতের আশায় আশাবাদী হয়ে তাঁর কাছে মাফ চাইতে থাকতে হবে। তিনি ছাড়া মাফ করার আর কে আছে?
[2]. পাপ, তার শাস্তি ও মুক্তির উপায় দ্র.।
[3]. সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩।