আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা এবং হক্বকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা

ব্যাখ্যা: আল্লাহ, তার রসূল এবং হক্বের প্রতি মিথ্যারোপ করা জাহিলী রীতির অন্তর্ভুক্ত। যেমন জাহিলরা নগ্ন হয়ে কাবা তাওয়াফের সময় বলতো,

(وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا) [الأعراف: 28]

আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আরাফ ৭:২৮)। এটাই আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِباً) [الأنعام: 21]

আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে (সূরা আন‘আম ৬:২১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ) [آل عمران: 78]

তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা বলে, অথচ তারা জানে (সূরা আল ইমরান, ৩:৭৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ بِآياتِ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ) [النحل : 105]

একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী (সূরা আন নাহল, ১৬:১০৫)।

وَلا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لا يُفْلِحُونَ

তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না। (সূরা আন নাহল ১৬ : ১১৬)।

অনুরূপভাবে যারা রসূলের উপর মিথ্যারোপ করে, (তারা বলে) তিনি যে হাদীছ বর্ণনা করেন, তা মিথ্যা। আর যে, বিশস্ততা ও প্রমাণ ছাড়া হাদীছ বর্ণনা করে, সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ কারণে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

من حدّث عني بحديث وهو يرى أنه كذب فهو أحد الكاذبين

যে আমার পক্ষ থেকে এমন হাদীছ বর্ণনা করে অথচ সে জানে তা মিথ্যা, সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।[1]

আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করাই জাহিলদের অভ্যাস। যেমন তারা ধারণা করে, আল্লাহ তাদেরকে নগ্ন হয়ে কাবা তাওয়াফ করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তারা তা হারাম করে। তারা আরোও ধারণা করে যে, আল্লাহ তা‘আলা এটা তাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِنْ دُونِهِ مِنْ شَيْءٍ ... ) [النحل: 35]

আর যারা শির্ক করেছে, তারা বলল, যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা তাকে ছাড়া কোন কিছুর ইবাদত করতাম না (সূরা নাহাল ১৬:৩৫)।

(لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكْنَا) [الأنعام: 148]

আল্লাহ যদি চাইতেন, আমরা শিরক করতাম না (সূরা আন‘আম ৬:১৪৮)।

(لَوْ شَاءَ الرَّحْمَنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ) [الزخرف : 20]

পরম করনাময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের ইবাদাত করতাম না (সূরা যুখরূফ ৪৩:২০)।

এসবই আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ। কেননা, জাহিলরা যে রীতির উপর আছে তা অস্বীকার করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা রসূলগণকে প্রেরণ করেছেন।

সার কথা হলো আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করা জাহিলী কর্ম। সুতরাং এ নিকৃষ্ট কর্ম থেকে মুসলিমদের সতর্ক থাকা আবশ্যক। মুসলিম কখনো আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে না। আর সে আল্লাহ ও তার রসূলের নির্দেশ ও ফাতওয়া পরিবর্তনের চেষ্টা করে না। আর যে ব্যক্তি কোন কিছু বর্ণনা করে, যা ভুল ও দলীলবিহীন, আর তা মানুষের মাঝে প্রচার করে, সে হবে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। আর এরূপ বর্ণনা ও প্রচারের মাধ্যমে সে মানুষের ক্ষতি সাধন করে।

আবশ্যক-ওয়াজীব হলো মিথ্যা-জাল হাদীছ যেন প্রচার ও বর্ণনা করা না হয়, বরং প্রচারণার পথ বন্ধ করা ও তাতে কঠোরতা আরোপ করা হবে। আর উপদেশ দাতা ও দা‘ঈগণ আল্লাহ ও রসূল সম্পর্কে যা বলেন সে ব্যাপারে যেন তারা সাবধানতা অবলম্বন করেন। অনুরূপভাবে হালাল, হারাম ও ফাতওয়া সম্পর্কেও তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে যেন তারা তাড়াহুড়া না করেন। কেননা, ইলম-জ্ঞান ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে ভুল বলার সম্ভাবনা আছে। অনুরূপভাবে আল্লাহ ও রসূল থেকে প্রমাণিত হক্ব সম্পর্কে মিথ্যারোপ করা থেকেও তারা সতর্ক হবে। আর আল্লাহ ও রসূল সম্পর্কে অন্যায়ভাবে মিথ্যারোপ করে তারা যেন কোন কিছু বর্ণনা না করেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

(فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللَّهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ إِذْ جَاءَهُ) [الزمر: 32]

সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে। জাহান্নামেই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়? (সূরা যুমার ৩৯:৩২)।আল্লাহ ও তার রসূলের কথা যখন কু-প্রবৃত্তির অনুকূলে না হয়, তখন প্রবৃত্তি পূজারীদের মত আল্লাহ ও রসূলের কথা মিথ্যা দ্বারা পরিবর্তন করে তাতে তারা সন্দেহ সৃষ্টি করে।

>
[1]. মুসলিম হা/১, বিশস্ত রাবী হতে হাদীছ বর্ণনা করা ওয়াজীব এবং মিথ্যুক রাবীদের হাদীছ পরিত্যাজ্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মিথ্যারোপে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।