হক্বপন্থীদের বিরুদ্ধে শাসক শ্রেণীকে ক্ষেপিয়ে তোলা

জাহিলরা দলীল-প্রমাণে পরাজিত হলে শাসকের নিকট অভিযোগ করে। যেমন জাহিলরা বলেছিল, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ) [الأعراف: 127]

আপনি কি মূসা ও তার জাতিকে ছেড়ে দেবেন যাতে তারা যমীনে ফাসাদ করে (সূরা আরাফ ৭:১২৭)।

..........................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী সমস্যা হলো দলীল প্রমাণে পরাজিত হলে, তারা শাসকের নিকট আশ্রয় গ্রহণের দাবি পেশ করে। আর এখানে (غلبوا بالحجة) গুলিবু বিল হুজ্জাহ তথা দলীলের মাধ্যমে পরাভূত হওয়া বলতে জাহিলরা যে বাতিল-মিথ্যা রীতির উপর বহাল ছিল তার বিরূদ্ধে দলীল পেশ করা হয়েছে। জাহিলদের নিকট এমন কোন দলীল নেই, যা তারা পেশ করবে। বরং হক্ব প্রতিষ্ঠায় বাধাদানের জন্য তারা শক্তির আশ্রয় গ্রহণ করে। যেমন মূসা আলাইহিস সালামকে ফেরআউন বলেছিল,

(لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَهاً غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ) [الشعراء: 29]

ফের‘আউন বলল, ‘যদি তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব (সূরা শু‘আরা ২৬:২৯)।

فإنهم يلجأون إلى القوة لمنع القائم بالحق، كما قال فرعون لموسى عليه السلام (لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَهاً غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ) [الشعراء: 29]

আল্লাহর নাবীকে পরাভূত করার জন্য তার নিকট যখন কোন দলীল ছিল না, তখন রাজত্বের শক্তিকে আশ্রয় করে সে বলেছিল,

(لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ) [الشعراء: 29]

অবশ্যই আমি তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব (সূরা শু‘আরা ২৬:২৯)।

এটাই পরাজিত দলের পন্থা। অনুরূপভাবে ফেরআউনের অনুসারী সম্প্রদায়ের বিরূদ্ধে তাদের চুক্তিকৃত মহা সমাবেশে মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছিলেন। আর মূসা আলাইহিস সালাম এর নিকট যে নিদর্শন ছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য ফেরআউন পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের সব যাদুকরকে একত্রিত করে। কেননা, ফেরআউন ধারণা করেছিল মূসা আলাইহিস সালাম একজন যাদুকর। তাই সে সব যাদুকরদের ডেকেছিল। আর ফেরআউন মূসা আলাইহিস সালাম এর নিকট থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিল, যাতে মূসা আলাইহিস সালাম যাদুকরদের সামনে তার নিদর্শন তুলে ধরে এবং যাদুকররাও তাদের যাদু প্রদর্শন করে। তার উদ্দেশ্যে ছিল, যাদুকররা যেন মূসা আলাইহিস সালাম কে জনগণের সামনে পরাজিত করে এবং তার নিকট যে মু‘জিযা আছে তা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে।

অতঃপর অঙ্গীকার পূরণের সময় হলো এবং যা ঘটবে তা প্রত্যেক্ষ করার জন্য জনগণ একত্রিত হয়। যাদুকররা তাদের যাদু প্রদর্শন করলে তা দ্বারা প্রাঙ্গণ পূর্ণ হয়, আর তাদের নিকট যে লাঠি, দড়ি ছিল তা তন্ত্র দিয়ে প্রদর্শন করলে কিছুক্ষণ পর অনেক সাপে পরিনত হয়ে নড়াচড়া করতে আরম্ভ করে। আর যাদুকররা মূসা আলাইহিস সালাম এর মু‘জিযার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চায়। এমতবস্থায় মূসা আলাইহিস সালাম এর লাঠি সাপে পরিণত হয়। অতঃপর তারা বড় বড় যাদু প্রদর্শন করে যেমনভাবে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, মূসা আলাইহিস সালাম ভীত হয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى) [طه: 67]

মূসা তার অন্তরে কিছুটা ভীতি অনুভব করল (সূরা ত্ব-হা ২০:৬২)।

যাদুকররা জনগণের সামনে ধ্রূমজাল তৈরি করতে পারে এ ব্যাপারে তিনি শঙ্কিত ছিলেন। যেহেতু মূসা আলাইহিস সালাম মু‘জিযা ও আল্লাহর সাহায্য পাবেন বলে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু আশঙ্কাবোধ করছিলেন যে, যাদুকররা জনগণের সামনে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। কেননা, যাদুকররাও ভীত ছিল যে, মূসার মু‘জিযা তাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ) [الأعراف: 118-122]

ফলে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যা কিছু করছিল তা বাতিল হয়ে গেল। তাই সেখানে তারা পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে গেল। আর যাদুকররা সিজদায় পড়ে গেল। তারা বলল, ‘আমরা সকল সৃষ্টির রবের প্রতি ঈমান আনলাম, মূসা ও হারূনের রবের প্রতি (সূরা আরাফ ৭:১২২-১১৮)।

কেননা, তারা বুঝতে পেরেছিল যে, মূসা আলাইহিস সালাম এর নিকট যা আছে তা যাদু নয়। অবশেষে যখন যাদুকররা ঈমান আনয়ন করলো এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট সিজদায় অবনত হলো, তখন ফেরআউন তাদেরকে হত্যা করা ও শুলে চড়ানোর হুমকি দেয়। পরিশেষে ঈমানদার ও তাওবাকারী যাদুকরদেরকে সে হত্যা করে এবং শুলে চড়ায়। আর বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা ঈমান আনে তাদের দিকে তারা মনোযোগ দিল এবং ফেরআউনকে তারা বললো, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءَهُمْ وَنَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ) [الأعراف: 127-128]

‘আপনি কি মূসা ও তার জাতিকে ছেড়ে দেবেন যাতে তারা যমীনে ফাসাদ করে এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যগুলোকে বর্জন করে?’ সে বলল, ‘আমরা অতিসত্বর তাদের ছেলেদেরকে হত্যা করব আর মেয়েদেরকে জীবিত রাখব। আর নিশ্চয় আমরা তাদের উপর ক্ষমতাবান।’ মূসা তার কওমকে বলল, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় যমীন আল্লাহর। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে তিনি চান তাকে তার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য (সূরা আল আরাফ ৭:১২৭-১২৮)।

এখান থেকে বুঝা গেল যে, তারা রাষ্ট্রশক্তির নিকট আশ্রয় চেয়েছিল এবং তারা ফেরআউনের নিকট অভিযোগ পেশ করেছিল যাতে হক্ব ও ঈমান পরাভূত হয়। আর জাহিলদের মত এহেন কর্মকান্ড সবযুগেই ঘটে চলছে।