ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
فَلَوِ اجْتَمَعَ الْخَلْقُ كُلُّهُمْ عَلَى شَيْءٍ كَتَبَهُ اللَّهُ تَعَالَى فِيهِ أَنَّهُ كَائِنٌ، لِيَجْعَلُوهُ غَيْرَ كَائِنٍ -لَمْ يَقْدِرُوا عَلَيْهِ, وَلَوِ اجْتَمَعُوا كُلُّهُمْ عَلَى شَيْءٍ لَمْ يَكْتُبْهُ اللَّهُ تَعَالَى فِيهِ، لِيَجْعَلُوهُ كَائِنًا- لَمْ يَقْدِرُوا عَلَيْهِ. جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
যা সংঘটিত হবে বলে আল্লাহ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তা যদি সকল সৃষ্টি একত্রিত হয়েও রোধ করতে চায় তারা সেটা করতে সক্ষম হবে না। পক্ষান্তরে, তাতে যে বিষয় সংঘটিত হবার কথা তিনি লিখেননি, সমস্ত সৃষ্টি একত্রিত হয়েও তা ঘটাতে পারবে না। কিয়ামত দিবস পর্যন্ত যা ঘটবে তা লিপিবদ্ধ হয়ে কলমের কালি শুকিয়ে গেছে।
........................................................
ব্যাখ্যা: জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, সুরাকা বিন মালেক বিন জু’শুম আগমন করে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের দ্বীনের বিষয়গুলো এভাবে বর্ণনা করুন যে, মনে করবেন আমাদেরকে কেবল এ মাত্র সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আজ কীসের জন্য আমল করবো? ঐ বিষয়ের জন্য যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং তাকদীর নির্ধারণ হয়ে গেছে? নাকি আমরা ঐ বিষয়ের জন্য আমল করছি, যা ভবিষ্যতে নির্ধারণ করা হবে? জবাবে তিনি বললেন, না। বরং তোমরা ঐ বিষয়ের জন্য আমল করছো, যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং তাকদীর নির্ধারণ হয়ে গেছে।[1]
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে বসাছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন,
يا غلام ألا أعلمك كلمات احفظ الله يحفظك، احفظ الله تجده تجاهك، إذا سألت فاسأل الله، وإذا استعنت فاستعن بالله وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رفعت الأقلام، وجفت الصحف
‘‘আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখবো। তুমি আল্লাহর হকসমূহের সংরক্ষণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকার সমূহের হেফাযত করো। তাহলে তুমি আল্লাহকে সামনে পাবে। যখন কিছু চাইবে তখন কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সাহায্য চাইবে তখন কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে। জেনে রাখ! দুনিয়ার সব মানুষ মিলেও যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তাথাপি তারা শুধু তোমার ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে দিয়েছেন। আর যদি তারা মিলিত হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তথাপি তারা শুধু সেই পরিমাণ ক্ষতিই করতে পারবে, যা আল্লাহ তা‘আলা তোমার উপর লিখে দিয়েছেন। যা কিছু লিখার ছিল তা লিখার পর কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং পুস্তকে লিখার পর কালি শুকিয়ে গেছে’’।[2] ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর হাসান ছহীহ বলেছেন।
তিরমিযী ব্যতীত অন্যান্য কিতাবে হাদীছটি এভাবে এসেছে, তুমি আল্লাহর হকসমূহের হেফাযত করো, তাহলে আল্লাহকে সামনে পাবে। স্বাচ্ছন্দের সময় তুমি আল্লাহকে চিনবে, তাহলে আল্লাহ তোমাকে কষ্টের সময় চিনবেন। তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে যে, ‘তোমার জীবনে যা ঘটেনি তা ঘটারই ছিল না। আর যা ঘটেছে তা তোমার জীবনে ঘটারই ছিল। জেনে রাখো! সবরের সাথেই বিজয়। আপদ-বিপদের পরেই মুক্তি এবং দুঃখের পরই সুখ’’।উপরোক্ত হাদীছগুলো এবং অন্যান্য হাদীছের মধ্যে কলমকে বহুবচন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বুঝা গেল লাওহে মাহফুয যে কলম দিয়ে লিখা হয়েছে সেই প্রথম কলমটি ব্যতীত তাকদীর সমূহ লিখার আরো অনেক কলম রয়েছে।
[2]. মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন। দেখুন: শাইখের তাহকীকসহ মিশকাত, হাদীছ নং- ৫৩০২।
মোটকথা ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, কলম দিয়ে তাকদীর লিখার স্তর মোট চারটি।
(১) সমস্ত সৃষ্টির তাকদীর একসাথে লিপিবদ্ধ করণ। ইতিপূর্বে লাওহে মাহফুয সম্পর্কে আলোচনা করার সময় এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
(২) আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার সময়ও বনী আদমের তাকদীর লিখা হয়েছে। এ পর্যায়ে সমস্ত আদম সন্তানের তাকদীর লিখা হয়েছে। এ ব্যাপারে কুরআনের একাধিক আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা বনী আদমের আমল, রিযিক, হায়াত, সৌভাগ্যবান হওয়া এবং হতভাগ্য হওয়ার বিষয়টি তাদের পিতা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার সময়ই নির্ধারণ করেছেন।
(৩) মাতৃগর্ভে বীর্য থেকে সন্তান তৈরী হওয়ার সময় ফেরেশতা পাঠানো হয়। ফেরেশতা সেখানে রূহ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার আদেশ করা হয়।
(ক) রিযিক লিখার আদেশ করা হয়।
(খ) বয়স লিখার আদেশ করা হয়।
(গ) আমল লিখার আদেশ করা হয় এবং
(ঘ) সৌভাগ্যবান হবে না কি হতভাগ্য হবে, তা লিখার আদেশ করা হয়। ছহীহ হাদীছসমূহে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে।
(৪) বান্দা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়, তখন সম্মানিত লেখকদের হাতে সংরক্ষিত কিতাবসমূহেও বান্দার আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়। বান্দা যা করে ফেরেশতাগণ তা লিখে ফেলেন। কুরআন ও হাদীছের দলীলের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত।
সুতরাং বান্দা যখন জানতে পারবে যে, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে, তখন কেবল একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকেই ভয় করা আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ ‘‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না। কেবল আমাকেই ভয় করো’’। (সূরা মায়েদা: ৪৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ ‘‘তোমরা আমাকেই ভয় করো’’। (সূরা বাকারা: ৪০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ ‘‘তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো’’। (সূরা বাকারা: ৪১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
‘‘আর সফলকাম তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মেনে চলে এবং আল্লাহকে ভয় করে এবং তার নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে’’। (সূরা নূর: ৫২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, هُوَ أَهْلُ التَّقْوَىٰ وَأَهْلُ الْمَغْفِرَةِ ‘‘একমাত্র তিনিই তাকওয়া বা ভয়ের যোগ্য এবং ক্ষমাকারী’’। (সূরা মুদ্দাছছির: ৫৬)
কুরআনে এ অর্থে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। মানুষ একা বাস করতে পারে না, কারণ সে তার আশপাশের অনেক জিনিসকে ভয় করে। প্রত্যেক ব্যক্তিই একাধিক জিনিসকে ভয় করে। যদিও তিনি অনুসরণীয় রাজা-বাদশাহ হয়ে থাকেন। তিনি তার নিজের উপর এবং তার নাগরিকদের উপর একাধিক বিষয়ের আশঙ্কা ও ভয় করেন। সুতরাং জানা গেল যে, আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো জিনিসকে ভয় করি। যে আল্লাহকে ভয় করে না, সে আল্লাহর কোনো না কোনো সৃষ্টিকে ভয় করে।
ঐ দিকে প্রত্যেক সৃষ্টিই প্রত্যেক সৃষ্টিকে ভালোবাসতে পারে না। ঘৃণা করার ক্ষেত্রেও কথা একই। একই সৃষ্টিকে কেউ ভালোবাসে আবার কেউ তাকে ঘৃণা করে। কোনো মানুষের পক্ষেই দুনিয়ার সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।
ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন, মানুষকে সন্তুষ্ট করার বিষয়টি এ যে, কেউ এর শেষ সীমায় পৌঁছতে পারে না। সুতরাং যে কাজ করলে আপনি উপকৃত হবেন, তাই করা আবশ্যক। এ ছাড়া অন্যান্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত করবেন না। সমস্ত সৃষ্টিকে সন্তুষ্ট করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনাকে এ ব্যাপারে আদেশও করা হয়নি। স্রষ্টা যেহেতু একমাত্র আল্লাহ, তাই তাকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব। এর আদেশও আপনাকে করা হয়েছে। মাখলুককে ভয় করে লাভ কী? কোনো মাখলুকই আল্লাহর মোকাবেলায় আপনার কোনো উপকারে আসবে না।
আল্লাহর আযাব হতে কেউ কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। সুতরাং কোনো বান্দা যখন তার রবকে ভয় করবে, তখন তার মাওলাই তাকে মানুষের কষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা মুআবীয়া বিন আবু সুফিয়ানের কাছে লিখে পাঠালেন, যে ব্যক্তি মানুষকে অসন্তুষ্ট করে হলেও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হবেন এবং মানুষকে তার উপর সন্তুষ্ট করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে নাখোশ করে মানুষকে সন্তুষ্ট করতে যাবে তার প্রশংসাকারী অচিরেই নিন্দুকে পরিণত হবে।[1] হাদীছটি মারফু ও মাউকুফ উভয়ভাবেই বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করবে, আল্লাহ তাকে মানুষের কষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর বিলম্বে হলেও মানুষেরা তার উপর সন্তুষ্ট হবে। কেননা মুত্তাকীদের শেষ পরিণতি ভালো হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন। মানুষেরাও তাকে ভালোবাসে।
ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন,
«إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ الْعَبْدَ نَادَى يا جِبْرِيلَ: إِني أحِبُّ فُلَانًا فَأَحْبِبْهُ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، فَيُنَادِي جِبْرِيلُ فِي السَّمَاءِ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ، ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الأَرْضِ»
‘‘আল্লাহ্ যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুককে ভালবাসি। সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাসো। তাই জিবরীলও তাকে ভালোবাসেন। তারপর জিবরীল আকাশের অধিবাসীকে ডেকে বলেন, আল্লাহ্ অমুককে ভালোবাসেন। সুতরাং তোমরাও তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশবাসীও তাকে ভালবাসেন। অতঃপর যমীনেও তার জন্য কবুলিয়াত স্থাপন করা হয়’’।[2]
রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন কাউকে ঘৃণা করেন, তখনও অনুরূপ বলেন। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, প্রত্যেক মানুষই ভয় করে। হয় আল্লাহকে ভয় করে নতুবা আল্লাহর কোনো না কোনো সৃষ্টিকে ভয় করে।
মানুষকে ভয় করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিটাই হয় বেশী। এ ক্ষতি বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। আল্লাহর ভয়ের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করা যায়। আল্লাহ তা‘আলাই ভয়ের যোগ্য। তিনিই ক্ষমার অধিকারী। তিনিই গুনাহ ক্ষমা করেন। কোনো মানুষই অন্য মানুষের গুনাহ ক্ষমা করার অধিকার রাখে না। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করারও ক্ষমতা রাখে না। তিনিই আশ্রয় দেন। তাকে কেউ আশ্রয় দিতে পারে না।
কোনো কোনো সালাফ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে, আল্লাহ ছাড়া সে অন্য কারো কাছে মুখাপেÿী হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘‘আর যে আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে উদ্ধারের পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক প্রদান করেন’’। (সূরা তালাক: ২-৩)
আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদের দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন যে, মানুষেরা যেসব সংকীর্ণতার সম্মুখীন হয়ে থাকে, তিনি তাদেরকে তা থেকে নিস্কৃতি প্রদান করবেন এবং তাদেরকে ঐ স্থান থেকে রিযিক প্রদান করবেন, যার কল্পনাও তারা করতে পারে না। তা যদি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, তাদের তাকওয়ার মধ্যে দোষ-ত্রুটি রয়েছে। সুতরাং তারা যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং তার নিকট তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট’’। (সূরা তালাক: ৩) অর্থাৎ আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। তিনি তাকে অন্যের প্রতি মুখাপেক্ষী করবেন না।
[2]. মুত্তাফাকুন আলাইহি, ছহীহ বুখারী ৩২০৯, ছহীহ মুসলিম ২৬৩৭।
কিছু মানুষ মনে করে, জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা এবং উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা আল্লাহর উপর ভরসা করার পরিপন্থি। তারা আরো বলে সবকিছু যেহেতু তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে, তাই উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের ধারণা বাতিল। উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা এবং উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরয, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈধ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাকরুহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে হারাম। এ বিষয়টি যথাস্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম ভরসাকারী। তারপরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মাথায় হেলমেট পরিধান করতেন এবং জীবিকা তালাশের জন্য বাজারে যেতেন। কাফেররা নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো,
مَا لِهَٰذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ
এ কেমন রসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়? (সূরা আল ফুরকান ২৫:৭)।
এ জন্যই অনেক মানুষকে আপনি দেখবেন, যারা মনে করে জীবিকার জন্য চেষ্টা করা আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করার পরিপন্থি, তারা রিযিকের জন্য অপর মানুষের কাছে হাত পাতে। মানুষের দান-খয়রাত ও হাদীয়া-উপঢৌকনের উপর নির্ভর করে জীবন পরিচালনা করে। কখনো চাঁদাবাজি ও অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ অপহরণ করতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ের আলোচনা যথাস্থানে করা হয়েছে। এ সংক্ষিপ্ত কিতাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ
‘‘আল্লাহ যা চান নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং যা চান কায়েম রাখেন। উম্মুল কিতাব তার কাছেই আছে’’। (সূরা রা’দ: ৩৯)
এর ব্যাখ্যা করার সময় কিছু কথার প্রতি ইতিপূর্বে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ ‘‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোনো মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান: ২৯)
এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ইমাম বগবী মুকাতিল থেকে বর্ণনা করে বলেন, আয়াতটি ইহুদীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা বলেছিল, আল্লাহ তা‘আলা শনিবারের দিন কিছুই করেন না। মুফাসসিরগণ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে রত থাকেন, -এর অর্থ হলো তিনি কাউকে সৃষ্টি করেন, জীবন দান করেন, কারো মৃত্যু ঘটান, কারো রিযিকের ব্যবস্থা করেন, কাউকে সম্মান দান করেন, কাউকে অপদস্ত করেন, রোগীকে শিফা দান করেন, কয়েদী মুক্ত করেন, বিপদগ্রস্তকে বিপদ মুক্ত করেন, দু‘আকারীর দু‘আ কবুল করেন, প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং কারো গুনাহ মাফ করেন। এমনি তার সৃষ্টির মধ্যে স্বীয় ইচ্ছায় আরো অনেক কিছু করেন, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।