ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَيَعْصِمُ وَيُعَافِي فَضْلًا وَيُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَخْذُلُ وَيَبْتَلِي عَدْلًا
আল্লাহ অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা, তাকে হেদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।
.................................
ব্যাখ্যা: এখানে মুতাযেলাদের ঐ কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে, যেখানে তারা বলেছে যে, বান্দার জন্য যা কিছু কল্যাণকর ও উপকারী আল্লাহ তা‘আলার উপর তার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এ মাস‘আলাটি বান্দাকে সঠিক পথ দেখানো এবং বিপথগামী করার মাস‘আলার সাথে সম্পৃক্ত। মুতাযেলারা বলেছে, আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দাকে হেদায়াত করার অর্থ হলো, বান্দার জন্য সঠিক পথ বর্ণনা করে দেয়া। এর বাইরে তাকে হেদায়াত গ্রহণের তাওফীক দেয়া কিংবা সাহায্য করা তার কাজ নয়। আর তাকে গোমরাহ করার অর্থ হলো বান্দাকে কেবল গোমরাহ হিসাবে নামকরণ করা এবং বান্দা যখন নিজের জন্য গোমরাহী সৃষ্টি করে তখন তাকে গোমরাহ হিসাবে নাম দেয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়। আল্লাহ বান্দাকে গোমরাহ করেন কিংবা বান্দার জন্য গোমরাহী সৃষ্টি করেন, এমনটি নয়। তারা তাদের বাতিল মূলনীতির উপরই এ কথার ভিত্তি রচনা করেছে। তাদের অন্যতম মূলনীতি হলো, বান্দারাই তাদের কাজ-কর্ম সৃষ্টি করে।
আল্লাহ তা‘আলাই বান্দাকে স্বীয় অনুগ্রহে প্রকৃতপক্ষেই হেদায়াত করেন এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতেই কাউকে গোমরাহ করেন। এ বিষয়ে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘‘তুমি যাকে পছন্দ করো, তাকে হেদায়াত করতে পারবে না[1], তবে আল্লাহ্ তা‘আলাই যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের পথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই অধিক অবগত আছেন’’। (সূরা কাসাস: ৫৬)
সুতরাং হেদায়াত অর্থ যদি শুধু রাস্তা বলে দেয়া হতো, তাহলে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হেদায়াতকে নাকোচ করা সঠিক হতো না। কেননা তিনি তার শত্রু-বন্ধু সকলের জন্যই পরিস্কারভাবে রাস্তা বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا
‘‘আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সৎপথে আনয়ন করতাম’’। (সূরা সাজদাহ: ১৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
يُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হেদায়াত দান করেন’’। (সূরা মুদ্দাছ্ছির: ৩১)
আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়াতের অর্থ যদি কেবল রাস্তা বর্ণনা করাই হতো, তাহলে ইচ্ছার সাথে শর্তযুক্ত করা হতো না। কেননা তিনি সকল সৃষ্টির জন্যই সঠিক পথ বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّي لَكُنتُ مِنَ الْمُحْضَرِينَ
‘‘আমার রবের মেহেরবাণী না হলে আমিও আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শামিল হতাম’’। (সূরা সাফফাত: ৫৭) আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন‘আমের ৩৯ নং আয়াতে বলেন,
مَن يَشَإِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন’’।
সুতরাং বুঝা গেল, আল্লাহ তা‘আলা যে বান্দাদের শুধু হেদায়াতের পথ বর্ণনা করেন, তাই নয়; বরং তিনি হেদায়াতের তাওফীকও দান করেন।
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ
‘‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না’’। (সূরা ইউনূস: ১০০) নূহ (আ.) তার পুত্রকে হেদায়াত করতে পারেননি, স্ত্রীকেও সৎ পথে আনতে পারেননি। ইবরাহীম খলীল (আ.) তার পিতাকে দ্বীনের পথে আনয়ন করার চেষ্টা করেও সফল হননি। লুত (আ.)এর ক্ষেত্রেও একই কথা। তার স্ত্রীকে সুপথে আনতে পারেননি। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম ও ইসহাক (আ.)এর ব্যাপারে বলেন,
وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَى إِسْحَاقَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِنَفْسِهِ مُبِينٌ
‘‘তাকে (ইবরাহীমকে) এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করেছি। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মী এবং কতক নিজেদের উপর স্পষ্ট যুলুমকারী। (সূরা সাফফাত: ১১৩)
আর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে প্রকার হেদায়াত করতে সক্ষম বলে কুরআন সাক্ষ্য দিয়েছে, তা হচ্ছে হেদায়াতের পথ দেখানো। তিনি এবং সকল নাবী-রসূলই মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা সূরা শুরার ৫২ নং আয়াতে বলেন, وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ‘‘নিশ্চয় আপনি সরল পথপ্রদর্শন করেন’’।